বেদোক্ত (শতপথ ব্রাহ্মণ) মৎস অবতার ও মনুর মহাপ্লাবন নিয়ে দুইদফা অপ্রাসঙ্গিক অবান্তর খণ্ডন দেয় বর্জ্যবীর নামক এক অনার্য সংগঠন। এমনকি এই অমোঘ সত্যকে অস্বীকার করার জন্য এরা মনুর মহাপ্লাবনকে নুহের প্লাবনের সাথেও তুলনা করে। সেটার প্রমাণ আমাদের বেদোক্ত শতপথ ব্রাহ্মণের মৎস অবতার নিয়ে দ্বিতীয় ব্লগে স্ক্রিনশটসহ দেওয়া আছে।
যাইহোক বৈদিক গ্রন্থ, জ্যোতিষ, পুরাণ, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের ভিত্তিতে মৎস অবতার ও মনুর মহাপ্লাবনের প্রামাণিকতা আমরা আমাদের ব্লগে তুলে ধরেছি যা প্রায় এক বছরেও সে অনার্য সংগঠন খণ্ডন করতে পারে নি। আমরা সম্পূর্ণ ব্লগটি পয়েন্ট ধরে সাজিয়েছি যেখানে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় দুইটি ১/ বেদোক্ত মৎস অবতার ২/ মনুর মহাপ্লাবনের প্রামানিকতা।
ব্লগটি সম্পূর্ণ পড়তে,
১/ https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/2022/01/blog-post_10.html
২/ https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/2022/01/blog-post_14.html
যাইহোক আমাদের ব্লগের খণ্ডন তারা- এক বছরেও দিতে না পেরে সম্প্রতি আমাদের ব্লগের এতগুলো পয়েন্টের মধ্যে কেবল একটি বিষয়কে তুলে ধরে একটা আন-আইডেন্টিফাইড আইডি থেকে "জাগো সনাতনী" নামক একটি গ্রুপে পোস্ট দেয়, যে গ্রুপে ব্রাহ্মণ গ্রন্থ নিয়ে টানা কয়েকদিনের যুক্তিতর্কে বর্জ্যবীরের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাক-কান কাটা যায় গত বছর ৷ যেহেতু এদের হাতে আমাদের লেখার বিপরীতে শক্ত কোন যুক্তি নেই তাই হয়তো আন-আইডেন্টিফাইড আইডি থেকে লুকিয়ে দায়সারা খণ্ডন দিতে চেয়েছিলো অনার্য ঘোষ।
খণ্ডনের নামে আসলে কি হয়েছিলো সেটাই একদম হুবহু তুলে ধরছি নিচে। তিনটি পর্বে আলোচনা হয় আমরা তিনটি পর্বই তুলে ধরলাম।
প্রথম পর্বঃ
🔹 বর্জ্যবীরঃ //🔰 শোপিস (আমাদের সংগঠনের নাম বিকৃতি যেহেতু তারা অসত্য প্রকাশে বিরামহীন বর্জ্যবীর) বলেছিল, বেদ বীর আর্যের বইতে মৎস্য অবতারের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ দেয়া আছে। অথচ বেদ বীর আর্যের বইতে কোনো প্রমাণ নাই। মহাপ্লাবন হয়েছিল, এটি বাস্তব ঐতিহাসিক ঘটনা হলেও মৎস্য অবতারের ঘটনা কল্পিত। যেমন, ধরলাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক লেখক উপন্যাস লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বাস্তব হলেও, সেসব উপন্যাসের কাহিনী তো বাস্তব না।
কাজেই বেদবীর আর্যের বই দিয়ে মৎস্য অবতার প্রমাণ করা খুবই হাস্যকর।
**আর বেদবীর আর্যের বই উৎসর্গ করা হয়েছে আর্যসমাজের বিদ্বান ড. বিজয়পাল বিদ্যাবারিধিকে।//
🔸 SPS: তাদের উল্লেখিত পয়েন্ট দুইটা।
১/ বেদবীর আর্যকে দিয়ে নাকি আমরা মৎস অবতার প্রমাণ করেছি?
২/ বেদবীর আর্য তার বইটি (The chronology of India) একজন আর্য সমাজী বিদ্বানকে উৎসর্গ করেছেন।
যাইহোক আমাদের ব্লগের লিংক উপরে দেওয়া হয়েছে, পাঠকরা পড়ে দেখবেন আমাদের কোন দাবী মিথ্যা কিনা। আমাদের ব্লগে মৎস অবতারের প্রামাণিকতা নিয়ে বেদবীর আর্য প্রসঙ্গ আসে নি কারণ সেটা আমরা সরাসরি বেদের ব্রাহ্মণ ভাগ (শতপথ ব্রাহ্মণ) থেকেই দেখিয়েছি৷ কিন্তু বর্জ্যবীর যখন সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মনুর মহাপ্লাবনকে নুহের মহাপ্লাবনের অনুকরণ দাবী করে নয়-ছয় প্রচার করলো সেটা খণ্ডন করতেই বেদবীর আর্যের (তথাকথিত কদার্য নন) The Chronology of India Manu to Mahabharata গ্রন্থ থেকে মনুর মহাপ্লাবনের প্রামাণিকতা উপস্থাপন করেছিলাম মাত্র।
বেদবীর আর্যের প্রসঙ্গ কেন এসেছে সেটা ত আগে দেখতে হবে কারণ তিনি পুরাণ মানতেন এমনকি নিলমত পুরাণের মতো আঞ্চলিক পুরাণও। পুরাণ দিয়েও ইতিহাসের পাঠোদ্ধার করেছিলেন তিনি। এবার তবে এই অনার্যরা বেদবীর আর্যকে অনুসরণ করুক। এখন কোন এক টাউট আবার আমাদের এই ব্লগ খণ্ডাতে পারবে না দেখে কেবল ব্লগের লেখার ৫% অংশ ধরে তার স্বাভাবসিদ্ধ বাটপারিতে নেমেছে।
তাই যে টাউট এই মিথ্যাচার করেছে যে বেদবীর আর্যের বই থেকে আমরা মৎস অবতার প্রমাণ করেছি সেই টাউটকে এখানে ডাকা হোক অথবা এসব নয়ছয় বাটপারি না করে আমাদের ব্লগের লেখা পয়েন্ট ধরে ধরে খণ্ডন করুক যেভাবে আমরা ওদেরগুলো খণ্ডন করি। মৎস অবতারের প্রমাণ ত আমাদের শাস্ত্রেই আছে। বেদবীর আর্যের বই ব্যবহার করা হয়েছিল শুধু এটা দেখাতে যে নুহের মহাপ্লাবনের অনুকরণে নয় বরং মনুর মহাপ্লাবন আসলেই হয়েছিলো।
২য় পয়েন্টঃ দ্বিতীয় পয়েন্টে তারা আসলে কি বুঝিয়েছি আমরা স্পষ্ট নই। তবে আমরা যেটা ধারণা করতে পারি যেহেতু বেদবীর আর্য তার গবেষণাধর্মী বইটি আর্য সমাজের একজন বিদ্বানকে উৎসর্গ করেছেন তাই হয় আমাদের বেদবীর আর্যের গবেষণাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে অথবা এই গবেষণা গ্রহণ করলে আমাদেরকে সমাজীদের মত গ্রহণ করতে হবে। আচ্ছা যদি ধরে নেই বেদবীর আর্য তাদের লোক তাহলে ত সে হিসেবে বেদবীর আর্যের গবেষণালব্ধ ফলাফল তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা এবং তারা যে নুহের প্লাবন নিয়ে গরু রচনা লিখেছিলো সেটা মূর্খের প্রলাপ হিসেবে প্রমাণিত হয়৷ এরা কি আদৌ বুঝে কোন প্রসঙ্গে কি বলতে হয়!
যাইহোক আমরা দেখতে পাই বেদবীর আর্য মূলত তার শিক্ষককে (ড. বিজয়পাল) তার বই উৎসর্গ করেছেন এবং একজন ছাত্র তার শিক্ষককে নিজের বই উৎসর্গ করতেই পারে যেমন বেদবীর আর্য জগৎগুরু নিশ্চলানন্দজ্বীর কাছেও আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন। এতে কি এটা প্রমাণ হয় বেদবীর আর্য অদ্বৈতবাদী? আসলে তিনি মূলত কদার্য নন। তিনি সনাতন সংস্কৃতি, পুরাণাদি শাস্ত্র সবই মানেন।
দ্বিতীয় পর্বঃ
বর্জ্যবীরঃ //বেদবীর আর্য নিজেই বলেছেন রোমহর্ষণ সুতের লেখা পুরাণ এখন আর পাওয়া যায় না, এখনকার পুরাণ পরের রচিত। এবং বর্তমান রামায়ণ মহাভারতের অংশও সাতবাহন আমলে লেখা।//
//যেখানে বলছে আর্টিকেলের ৫% বেদ বীর আর্যের থেকে নেয়া,
আপনার আর্টিকেলের সাইজ হিসেবে ২০% আর ব্যাখ্যা হিসেবে মূলটাই (যাকে আপনারা দাবি করেছেন, মৎস্য অবতারের ভিত্তি), তার পুরোটাই বেদ বীর আর্যের বইয়ের ওপর ভিত্তি করে। অথচ বেদ বীর আর্যের বইতেই এসব কিছু নেই। বইয়ের বদলে একটি ইউটিউব ভিডিওকে দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, আপনারা লেখার আগে নিজেরাও বই পড়েন নি।
যদি বেদ বীর আর্যের ওপরে ভিত্তি করে দেয়া পুরোটাই মিথ্যা হয়, তাহলে আপনাদের লেখার মূল ভিত্তি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
আর বেদ বীর আর্যকে নিয়ে আর্যসমাজকে গালি দিলেও উনি নিজেও যে পুরাণ, রামায়ণ মহাভারতকে প্রক্ষিপ্ত মানেন, তাও প্রমাণিত।//
এবার এরা স্বভাবসিদ্ধভাবে বিশেষত অভিজিতের রায়ের আড়ালে যে টাউট ঘোষ রয়েছে মূল প্রসঙ্গ থেকে সড়ে গেলো। উপরে আমরা যে পয়েন্ট ধরে উত্তর দিয়েছিলাম সে পথে না হেটে একটা খণ্ডিত স্ক্রিনশট দিয়ে হয়তো দাবী করতো চাইলো যে বেদবীরজ্বী দাবী করেছেন পুরাণাদি শাস্ত্র, রামায়ণ ও মহাভারত প্রক্ষিপ্ত তাই আমাদেরও সেটা মানতে হবে। আচ্ছা যদি ধরেও নেই বেদবীরজ্বী পুরাণাদি শাস্ত্রসমূহকে অনার্যদের মতো প্রক্ষিপ্ত (কিন্তু সেটা করেন নি, নিচে প্রমাণ দিবো) দাবী করেছেন তবেও কি মনুর মহাপ্লাবন মিথ্যা হয়ে যাবে? মানে হঠকারিতার একটা লিমিট থাকা উচিত নয়? এখানেও একই মিথ্যাচার যে আমরা নাকি বেদবীর আর্যের বই থেকে মৎস অবতার প্রমাণ করেছি অথচ আমাদের ব্লগটি পড়লে যেকেউ বুঝতে পারবে যে এটা স্রেফ একটা মিথ্যাচার। আর প্রথম পর্বের দ্বিতীয় পয়েন্টটা এই পর্বে এসে এরা কৌশলে এড়িয়ে গেলো কিন্তু।
প্রত্যুত্তরঃ এই পর্বের দু'টো মন্তব্য দেখে মনে হলো এরা আমাদের ব্লগের মূল লেখায় না গিয়ে কেবল বেদবীরজ্বীকে দিয়েই আমাদের ঘায়েল করে খণ্ডন শেষ করবে প্ল্যান করেছে। কিন্তু আমরা সে সুযোগও দিচ্ছি না বাটপারদের। এবার বেদবীরজ্বীকে দিয়েই এদের ঘায়েল করা হবে আর দেখানো হবে যে এরা কিভাবে লেখার মাঝখান থেকে সুবিধাজনক অংশ তুলে এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এর আগে এরা আশ্বলায়ন শাখা নিয়ে ব্লগ বানানোর সময়ও এভাবে সংকলকের লেখা ভূমিকাংশ থেকে খণ্ডিত স্ক্রিনশট নিয়ে শঠতা করেছিলো যা আমাদের বেদের শাখা নিয়ে আলোচনায় পরিস্কার করে দিবো।
১ম পয়েন্টঃ
মন্তব্য-১ এর জবাবঃ দেখুন এরা যে স্ক্রিনশট দিয়েছে সেটা বেদবীরজ্বীর একটা বড় আলোচনার খণ্ডিতাংশ এবং সেখানেও অনার্যরা নিজেদের মত করে অর্থ করেছে। এটা ত ইংরেজি থেকে বাংলা করা। এখানে বেদাঙ্গের ভুল ইন্টারপ্রেটেনশন করে মনমতো ভাষ্য বা অনুবাদের সুযোগ নেই ত। শুধু এদের খণ্ডিত স্ক্রিনশটের অনুবাদ করলেও এখানে স্পষ্ট হয়না যে বেদবীর আর্য এই দাবী করেছেন যে পুরাণাদি শাস্ত্র, মহাভারত, রামায়ণ সব প্রক্ষিপ্ত যেটা অনার্যরা ঢালাওভাবে দাবী করে। তিনি এখানে বলেছেন যে অরিজিনাল পুরাণ (তাহলে অরিজিনাল পুরাণ আছে, অনার্যরা ত এতোদিন বলতো পুরাণ সাম্প্রতিক সময়ে রচিত গালগল্প) যেটা রমহর্ষণ ও তাঁর শিষ্যরা লিখেছিলেন সেই সংস্করণটা (Version) এখন আর নেই। মহাভারত ও রামায়ণের ক্ষেত্রে তিনি বলছেন (দাবী করেন নি, মনে হয়েছে বলে লিখেছেন) এগুলো সম্ভবত সাতবাহন অমলে পুনঃসংকলিত হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ঢালাওভাবে প্রক্ষিপ্ত দাবী করেন নি।
নিচের স্ক্রিনশটগুলো দেখুন অথবা চাইলে Academia তে গিয়ে বইটি (The chronology of India Manu to Mahabharata) সম্পূর্ণ পড়ে নিজেই মিলিয়ে নিবেন। এখানে বলা হচ্ছে ব্যাসদেব মহাভারতের সময়েই ১৮ পুরাণ (১৮ পুরাণের প্রামাণিকতা নিশ্চিত হল) সংকলন করেন যা ঋগবেদীয় যুগ থেকেই ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষিত হচ্ছিলো এবং মহাভারতের পরে কিছু উপপুরাণ নতুন করে সংকলিত হয়। পরবর্তীতে তাঁর শিষ্য রমহর্ষণ সবগুলোকে (পুরাণ) গুরুশিষ্য পরম্পরায়য় সংকলন করেন। পুরাণসমূহের সর্বশেষ সংকলনও হয়েছে প্রায় ২৫০০ বছর আগে এবং শুধুমাত্র ভবিষ্য পুরাণের আপডেট গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কাল অব্দি চলমান ছিল।
তাহলে অনার্যরা যে বলে বেড়ায় পুরাণসমূহ মুসলিম শাসনামলে রচিত সেই দাবী চূড়ান্তভাবে অবান্তর ও ভিত্তিহীন হয়ে গেলো। তাছাড়া খেয়াল করুন এরা খণ্ডিতাংশের স্ক্রিনশট নেওয়ার সময় এটা এড়িয়ে গেছে যে ব্যাসদেবই ১৮ পুরাণকে প্রথম সংকলন করেন, পরে সেটা শিষ্যকে দেন।
তাহলে বেদবীরজ্বী কেন পুরাণের কিছু বিষয়ে আপত্তি করলেন?
কিছু বিষয় বলতে বেদবীরজ্বীর আপত্তি মূলত পুরাণের বিভিন্ন যুগের হিসেব নিয়ে। তিনি আরও কিছু বিষয় স্পষ্ট করেন যে ব্যাসদেবের পুরাণসমূহকে ”পুরাণ-ইতিহাস সংহিতা” হিসেবে সংকলন করে ব্যাসদেবের শিষ্য রমহর্ষণ৷ তখন পুরাণ-ইতিহাস বৈদিক শিক্ষার অংশ হয়। এজন্যই পুরাণ ও ইতিহাসকে পঞ্চম বেদ বলা হয় যা বেদবীরজ্বীও দেখালেন। তারপর তাঁর শিষ্যরা ”পুরাণ সংহিতা” হিসেবে সংকলন করেন যা পরবর্তীতে লৌকিক সংস্কৃততে পুনঃসকলনের সময় বর্তমান প্রচলিত ”পুরাণ” হিসেবে আসে। বেদবীরজ্বী বলেন যে যেহেতু হাজার বছরের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ভেতর আমরা আজকের পুরাণ পেয়েছি সেজন্য হয়তো (তিনি Perhaps শব্দটি ব্যবহার করেছেন) Chronological Genealogy এর মধ্যে একটা গ্যাপ তৈরী হয়েছে। শুধু এই জায়গাটায়ই তিনি শুধুমাত্র আপত্তি করেছেন কিন্তু এটাকেও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলেন নি৷ অথচ অনার্যরা এটাকে বানিয়ে দিলো যে তিনি (বেদবীর আর্য ) পুরাণকে প্রক্ষিপ্ত বলেছেন।
তিনি পুরাণ নিয়ে আরও কিছু অবজারভেশন দেন,
★ তিনি পুরাণকে একটি A well established chronological history বলেছেন।
★ তিনি দেখান পুরাণ দিয়েই তিনি আধুনিক ইতিহাসের ভ্রান্তি দূর করা যায়।
২য় মন্তব্যের জবাবঃ
উপরে এতবার পরিস্কার করার পরও আবার একই প্রসঙ্গ বারবার উঠানো হচ্ছে ধারাবাহিক আলোচনায় উত্তর দিতে না পারে।
যাইহোক ব্লগে আমাদের লেখা সাজানো হয়েছিল দুইটি পয়েন্টে এবং হেডলাইনও দুইটি বিষয়ের উপর "মৎস অবতার ও মনুর মহাপ্লাবনের প্রামাণিকতা".. প্রতিটি পয়ন্টের উপর ধারাবাহিকভাবে একাধিক কন্টেক্সটে সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ লেখা। মৎস অবতারের প্রামাণিকতা স্বয়ং শাস্ত্র।
এখন বর্জ্যবীরের (বিভিন্ন নাস্তিক ব্লগ থেকে কাটপিস) বক্তব্য ছিলো যে মনুর মহাপ্লাবন কাল্পনিক। এটা ছিলো আমাদের দ্বিতীয় অংশের খণ্ডন। ওখানেও আলোচনা হয়েছিল ধারাবাহিকভাবে। তারপর যখন ইতিহাসের পাঠোদ্ধারের বিষয় এলো তখন জ্যোতিষ (এরাই যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধির জ্যোতিষ ব্যাখ্যা আগামাথা না বুঝে কাটপিস করেছিলো) ও পুরাণ হতে ইতিহাসের পাঠোদ্ধার নিয়ে বেদবীর আর্যের প্রসঙ্গ এলো এবং মনুর মহাপ্লাবন যে কাল্পনিক নয় বা নুহের প্লাবনের কপি-পেস্ট নয় সেটা দেখাতে আনা হলো বেদবীর আর্যের অবজারভেশন। ঠিক এই অংশেও আমরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছি যাতে বিষয়টা গোজামিল না হয় যেমনটা বর্জ্যবীর তাদের ব্লগে করেছিলো।
২য় পয়েন্টঃ
প্রথম পর্বের দ্বিতীয় পয়েন্ট এই পর্বে এসে এরা এড়িয়ে গেলেও আমরা কিছু জবাব দিলাম।
বেদবীর জ্বী তার শিক্ষককে তার বই ডেডিকেট করেছেন। যেহেতু তার শিক্ষক আর্য সমাজের তাই আমাদের ব্লগ খণ্ডন হয়ে গেলো এই কারণে যে আমাদের ব্লগে বেদবীরজ্বীর একটা অবজারভেশন যুক্ত করা হয়েছিলো!!
কে. এন. গোবিন্দাচার্য কি আরিয়া সমাজের? ড. সতীশ রেড্ডি আরিয়া সমাজের? রাজ বেদাম আর্য সমাজের? আবার ওদিকে তিনি শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ জ্বীর কাছেও আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন তাহলে অদ্বৈতবাদীরা কি বলবে বেদবীর আর্য অদ্বৈতবাদী?
★ কে এন গোবিন্দাচার্য সামনে সরস্বতী মূর্তি নিয়ে বসে আছেন তাই তিনি অবশ্যই পৌরাণিক এখন উনার কাছে যেহেতু বেদবীর আর্য প্রোফাউন্ড গ্রাটিট্যুড জানিয়েছেন তাই বেদবীর আর্যও পৌরাণিক তাই না?
★ হায় হায় যে সতীশ রেড্ডীর ধারাবাহিক মোটিভেশান ছাড়া বেদবীর আর্যের রিসার্চ সম্পন্ন হতো না তিনি দেখি করোনাকালে দুর্গা মন্দিরে ছুটছেন। এখন বেদবীর আর্যকে দুর্গা মন্দিরে দেখা যাবে ত?
৩য় পর্বঃ
বর্জ্যবীরঃ
//অবশ্যই পুরাণের কিছু অংশে কোনো কোনো রাজার উল্লেখ আছে, তাদের কথা ধরেই টাইমলাইন তৈরি করা হয়। তবে বেদ বীর আর্যের ক্রোনোলজির সাথে লাখ লাখ বছরের সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলির ক্রোনোলজির কোনো মিল নেই। তিনি শ্রীরামকেও স্থাপন করেছেন খৃস্টপূর্ব ৫৫০০ সালে আর মনুর সময়কাল ১৪০০০ খৃস্টপূর্বাব্দ।। যদি তাই হয়, তাহলে সত্যযুগের মৎস্য অবতার পুরাণ অনুযায়ী কয়েক লাখ বছর আগের ব্যাপ্তি বাদ দিয়ে, মাত্র ১৬ হাজার বছর আগে এসেছেন, এটা মানবেন আপনারা?//
//১. আপনার দাবি ছিল বেদীর আর্য বর্তমান পুরাণ বা মহাভারত রামায়ণে প্রক্ষিপ্ত মানেন নি। সেটা পরিষ্কার করেই দেখিয়ে দিয়েছি। পুরাণে থাকা কিছু রাজাদের তালিকা অনুযায়ী পুরাণের অতিরঞ্জিত কাহিনী না মেনে ঐতিহাসিক ক্রোনোলজি বানানো, আর পুরাণের গল্পগাছাকে ইতিহাস বানানো এক না।//
//* বেদ, ব্যাকরণ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, সূত্র (ব্রাহ্মণ ও বেদ আলাদা লিখেছেন) এগুলো পুরাণ থেকে গ্রহণযোগ্য ও ঐতিহাসিকভাবে প্রাচীন।
* পশ্চিমারা পুরাণের কাহিনীর তথ্যকে ব্যবহার করে মিথ্যা ঐতিহাসিক কাহিনী তৈরি করেছেন। এভাবে তারা যে ক্রোনোলজি নির্ণয় করেছেন, তা ভুল।
*তাই বৈদিক গ্রন্থাবলিতে থাকা ঐতিহাসিক তথ্য পুরাণের থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য।
*প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ও পুরাণের কাহিনীর থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য//
//বেদবীর আর্য নিশ্চলান্দের সাথে দেখা করতে গেলেই শিষ্য হয়ে যায় না।//
প্রত্যুত্তরঃ এই পর্বের প্রথম পয়েন্টে আবারও তাদের সেই পুরনো কাসুন্দি, যেহেতু আমাদের ব্লগ খণ্ডন করার ন্যুনতম সক্ষমতাটুকু নেই এদের। তবে এই পর্বে এসে বেদবীর আর্যের গবেষণা অনুযায়ী এরা মানতে বাধ্য হলো যে বেদেও ঐতিহাসিক তথ্য আছে। এরা দাবী করেছে আমরা নাকি পুরাণ থেকে মৎস অবতার দেখিয়েছি। কি নির্জলা মিথ্যাচার করলো অনার্যগুলো! যাইহোক আমাদের উত্তরগুলো নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।
১ম পয়েন্টঃ
১ম মন্তব্যঃ আবারও সেই নয়-ছয় গল্প দিলো অনার্য ঘোষ৷ উপরে ত বললামই পুরাণে যুগের হিসেব নিয়ে বেদবীরের আপত্তি আছে এবং সেটারও কারণ তিনি বলেছেন, আমরা দেখালামও।
তাহলে আবার একই গল্প নতুন করে বলার কারণ কি? এখন ক্রনলজির হিসেবে বেদবীর শ্রীরামচন্দ্রের সময়কাল কত বছর আগে দেখিয়েছেন সেটা ত আমরা ডিফেন্ড করছি না বরং আমাদের "রামায়ণের অজানা অধ্যায়" লেখায় ত আমরা রামায়ণের সময়কাল ১২,০০০ বছর আগেই দেখিয়েছি।
SPS এর ব্লগে ত গোজামিল থাকে না এটা অনার্যদের জানা উচিত৷ শাস্ত্রের যে বিষয় আমাদের বোধগম্য হয় না সেটা নিয়ে আমরা কদাপি সিদ্ধান্ত দিতে যাই না বা প্রক্ষিপ্ত বলে উড়িয়ে দেই না। যাইহোক বেদবীর আর্য পুরাণের যুগের ব্যাখ্যাটায় সমস্যা দেখিয়েছেন তাই এই সমস্যা উত্তরণে ব্যাকরণ, সংহিতা (শুধু ব্রাহ্মণ নয় সংহিতাকেও আলাদা বলেছেন কারণ মন্ত্র সংহিতা ও ব্রাহ্মণ মিলেই বেদ)), ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদকে বেশি অথেনটিক ধরেছেন যেহেতু সেগুলো প্রাচীন টেক্সট। তো আমরা কবে বললাম পুরাণ বেদের (সংহিতা, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, আরণ্যক) চেয়েও প্রাচীন টেক্সট? আর বেদবীর প্রাচীন টেক্সটকে (বেদের কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড) More authentic বলায় পুরাণ প্রক্ষিপ্ত হয়ে গেলো? আর এদিকে যে বেদবীর বলেই দিলেন পুরাণ কার রচনা এবং কোন সময়ের সংকলিত এবং একসময় বৈদিক শিক্ষার (পঞ্চম বেদ) অংশ ছিল সেগুলো মেনে নিক অনার্যরা। ভাওতাবাজীর একটা লিমিট থাকা উচিত না?
যাইহোক আমাদের ব্লগে মৎস অবতারের প্রামাণিকতা পুরাণ থেকে নয় বরং বৈদিক টেক্সট (শতপথ ব্রাহ্মণ) থেকেই নেওয়া হয়েছে সেটা অনার্যরা পড়েও দেখে নি?
২য় মন্তব্যঃ বেদবীর আর্যের লেখাগুলো আরও ভালো করে পড়া উচিত নাহলে আমাদের ঘায়েল করতে এসে নিজেরাই উড়ে যাবে। ইংরেজি লেখাকে নিজেদের সুবিধামত অর্থ করে ত লাভ নাই। এখানে ত বেদাঙ্গ মেনে ভাষ্য করার বিষয় নয়, সম্পূর্ণ পড়লে যেকেউ বুঝবে।
এই অনার্যরা আজকাল ইংরেজি লেখার স্ক্রিনশট দেয় একটা আর বাংলা অর্থ করে লেখে আরেকটা আর ভাবে এদের ভণ্ডামি কেউ বুঝবে না।
এখানে বেদবীরজ্বী কি বলতে চেয়েছেন? কলোনিয়াল ইতিহাসবিদরা যে পুরাণের Genealogical Data নিয়ে কাজ করে সেটা সায়েন্টিফিক মেথডলজি না। আমি ইংরেজি বাক্যটা হুবহু তুলে ধরতেছি মিলিয়ে নিবেন।
"Colonial historians have followed puranic genealogical data to falsify historical legends and then sometimes followed Historical legends to falsify genealogical data, which may not be the best scientific methodology."
ভালো করে পড়ুন কি লিখেছে আর অনার্যরা কি অর্থ বসিয়েছে! আর এখানে কিন্তু এটাকে ভুলও বলেন নি, বলেছেন বেস্ট মেথডলজি না।
এক্ষেত্রে আমরা আমাদের আরও প্রাচীন টেক্সট (ব্যাকরণ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ, সূত্র) ব্যবহার করতে পারি যেখানে আরও অথেনটিক হিস্টরিকাল ডাটা রয়েছে।
তো আমরা কি করেছি? ব্রাহ্মণ থেকেই ত মৎস অবতারের ঐতিহাসিক ডাটা নিলাম তাই না? আচ্ছা বেদে (বৈদিক গ্রন্থাবলী) ঐতিহাসিক ডাটা আছে বলে যে বেদবীরজ্বী বললেন অনার্যরা পরে গিয়েও (এখানে ত মেনে নিলো) মানবে ত নাকি ছলচাতুরী করে যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধির জ্যোতিষ ব্যাখ্যা দিয়ে নক্ষত্র বানিয়ে দিবে?
দ্বিতীয় পয়েন্টঃ বেদবীরজ্বী নিশ্চলানন্দজ্বীর শিষ্য হয়েছেন আমি বলি নি ত! যেমন পাকিস্তানের নোবেল জয়ী আব্দুস সালাম কলকাতায় ছুটে এসে নিজের নোবেলখানা একজন ভারতীয় হিন্দু শিক্ষককে ডেডিকেট করেন এতে কি আব্দুস সালাম ভারতীয় হয়ে গেলো নাকি হিন্দু হয়ে গেলো? এটা ছাত্রশিক্ষক সম্পর্ক। তাই বলে বেদবীরজ্বীকে আপনারা সমাজী দাবী করবেন? এগুলো কবে বুঝবেন?
এছাড়াও বেদবীর আর্যের বইয়ে আরও কিছু বিষয় পাওয়া গেলো।
★ দেব ও অসুরের যুদ্ধ।
★ চার বেদের (সংহিতা) সংকলক ব্যাসদেব।
★ প্রচুর পুরাণের রেফারেন্স ব্যাবহার করেছেন বেদবীর আর্য।
★ বেদের শাখা নিয়ে বেদবীরের ধারণা।
এবার সকলে দেখুন অনার্য ঘোষ যে বই ব্যাবহার করে আমাদের ঘায়েল করতে চেয়েছির সে বই দিয়েই অনার্যদের ৯০% অপপ্রচারের খণ্ডণ হয়ে যায়। এরা সম্প্রতি ভাগবত পুরাণের উপর আমাদের দু’টি সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যার অপ-খণ্ডন দিয়েছে লুকিয়ে লুকিয়ে যেগুলো আমরা সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যার আলোকেই উড়িয়ে দিব। যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে আমাদের সাথে উন্মুক্ত েআলোচনায় আসবে।
যাইহোক আজ এই অব্দি। আমাদের যত নাড়বে অনার্যদের ব্যবসার ভিত তত নড়িয়ে দিবো। SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটির সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতাই যেখানে এদের নেই তারা আমাদের ব্লগের খণ্ডন করবে কি! ফেইক আইডিতে পিঠ বাঁচিয়ে ছায়াযুদ্ধ না করে চাইলে এরা এই টপিকে আমাদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনায় আসতে পারে, আমরা প্রস্তুত।
©SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)
0 মন্তব্যসমূহ