২০০৭ সালের ১৩ আগস্ট ম্যানচেস্টারবিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে সে বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক ড. জর্জ জোসেফ একটি জার্নাল প্রকাশ করেন যার বরাত দিয়ে ঠিক দুইদিন পর ১৫ আগস্ট "টাইমস অফ ইন্ডিয়া" সহ ভারতের একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
[https://www.manchester.ac.uk/discover/news/indians-predated-newton-discovery-by-250-years/ ] [https://timesofindia.indiatimes.com/world/uk/indian-scholars-predated-newton-find-by-250-yrs/articleshow/2281855.cms]
সেই জার্নালে ড. জোসেফ দাবী করেন, দক্ষিণ ভারতের একটি অপরিচিত গুরুকুল/বিদ্যালয়ের (Keral School of Mathematics-Research Institution of India) কয়েকজন পণ্ডিত (মাধব, নীলকণ্ঠ) আইজ্যাক নিউটনেরও প্রায় ২৫০ বছরের পূর্বে আধুনিক গণিতশাস্ত্রের কিছু মূলসূত্র আবিষ্কার করেছিলেন।
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জর্জ গেভারঘেশ জোশেফ বলেছেন,
"ভারতের কেরাল বিদ্যালয়ের পণ্ডিতগণ আনুমানিক ১৩৫০ খ্রীস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে আধুনিক গণিত ক্যালকুলাসের অন্যতম মূল উপাদান 'অসীম ধারা' আবিষ্কার করেছিলেন যা বর্তমানে ভুলভাবে স্যার আইজেক নিউটন ও স্যার গটফ্রাইড লিবনিজের নামে চলে আসছে। অথচ এই সূত্রটি আইজ্যাক নিউটন সপ্তদশ শতকের দিকে তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।"
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জর্জ জোসেফ এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেনিশ এলমেইডার নেতৃত্বাধীন দলটি আরও দাবী করেন, কেরালার সেই বিদ্যালয়ের পণ্ডিতগণ পাই এর মান কেমন হবে এবং সেটি ব্যবহার করে প্রথমে ৯-১০ দশমিক ঘর এবং পরবর্তীতে ১৭ দশমিক ঘর পর্যন্ত মান সঠিকভাবে প্রকাশ করেছিলো। কেরালের সেই অখ্যাত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সঙ্গমাগ্রামের মাধব যা এখন ভারতের একটি অন্যতম গবেষণাকেন্দ্র।
★ গণিতের এই ধারা কেরালের সে বিদ্যালয়ে কিভাবে গেলো?
আমরা সাধারণত পশ্চিমাদের সনদপত্র না পেলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের মহান কীর্তি গুলো প্রচার করা ত দূর স্বীকার করতেও কুন্ঠা বোধ করি। অন্যথায় মহান অার্যভট্ট থেকে শুরু করে কণাদ, ব্রহ্মগুপ্ত, বরাহমিহিরা, মহর্ষি সুশ্রুতদেরকে আমরা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতাম না৷ বৈদিক যুগ থেকেই সনাতন পরম্পরায় জ্ঞানের ধারা বহমান ছিলো যা বিভিন্ন গুরুকুলে গুরু-শিষ্য (শিক্ষক-ছাত্র) পরম্পরায় চলমান ছিলো। প্রাচীন ভারতে জ্ঞানের ধারা কারও নামে প্যাটেন্ট করা ছিলো না বরং যোগ্য ধারকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। আধুনিক বিজ্ঞানের অভিকর্ষ ধারণা (নিউটনের নামে প্রচলিত), শূন্য ধারণা এবং জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে গিয়েছিলেন ব্রহ্মগুপ্ত।
[https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/2021/03/blog-post_17.html?m=1]
★ এই জ্ঞান তথা গণিতের এই ধারা পশ্চিমে কিভাবে গেলো?
জোসেফ-এলমেইডার দাবী করেন যে, পরিস্থিতির নিরিখে বেশ দৃঢ় কিছু তথ্য রয়েছে যেগুলো প্রমাণ করে ভারতীয়রা তাদের আবিষ্কৃত গাণিতিক জ্ঞানসমূহ পঞ্চদশ শতকের দিকে ভারতে পরিদর্শনে আসা খ্রিস্টীয় মিশনারিদেরকে দিয়েছিলেন। সেই জ্ঞানগুলোই কালপরিক্রমায় হয়তো নিউটনের কাছে পৌছায়।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস দ্বারা তার সর্বাধিক বিক্রিত বই 'দ্য ক্রেস্ট অফ দ্য পিকক: দ্য নন-ইউরোপিয়ান রুটস অফ ম্যাথমেটিক্স'-এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের জন্য প্রাচীন ভারতীয় কিছু কাগজপত্র চেক করার সময় ডক্টর জোসেফ এই তথ্য প্রকাশ করেন যে,
"আধুনিক গণিতের শুরুটা ইউরোপীয়দের অর্জন হিসেবে ধরা হলেও মধ্যযুগীয় ভারতে মোটামুটি চতুর্দশ এবং ষষ্টদশ শতকের মাঝমাঝি সময়ের আবিষ্কারগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে বা ভুলে যাওয়া হয়েছে।"
"সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে করা নিউটনের কাজগুলোর মান্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে বিশেষত বিষয়টি যখন ক্যালকুলাসের অ্যালগরিদম। কিন্তু কেরাল বিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের কিছু নাম, বিশেষ করে মাধব এবং নীলকান্ত, তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো উচিত কারণ তারা ক্যালকুলাস-অনন্ত ধারার অন্যান্য দুর্দান্ত উপাদান আবিষ্কার করেছেন।"
ভারতীয় জ্ঞানবিজ্ঞান শুধু পশ্চিমে নয় আরবেও পৌছেছিলো কিন্তু কে বা কারা এই ইতিহাসগুলোকে মিথ্যার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। কিছু প্রমাণ তুলে ধরা যাক।
ইতিহাসবিদ আবু রায়হান আল বিরুনী (৯৭৩ - ১০৪৮) তাঁর বই "তারিখ আল হিন্দ (ভারতীয় ইতিহাস)" এ উল্লেখ করেন, আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ভারতবর্ষ থেকে একটি বই আরবে নিয়ে আসেন এবং তা আরবিতে অনুবাদ করেন "সিন্দহিন্দ" নামে।
[https://www.bartleby.com/.../Analysis-Of-Kitab-Tarikh-Al...]
ধারণা করা হয় এ বইটি ছিলো ব্রহ্মগুপ্তের লেখা 'ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্ত'। তিনি তাঁর সমকলীন জ্যোতির্বিদদের ভুল বের করার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি যে তাঁর সময়কার এবং তদানিন্তন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিলেন সেই বিষয়ে বিখ্যাত আমেরিকান রসায়নবিদ ও ইতিহাসবিদ জর্জ সার্টনও বলে গেছেন।
[https://link.springer.com/.../10.1007%2F978-1-4020-4425-0...]
আরব জ্যোতির্বিদগণ ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে যা জেনেছেন, তার বেশিরভাগই ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্তের মাধ্যমে। আব্বাসীয় বংশের দ্বিতীয় খলিফা আল মনসুর (শাসনকাল ৭৫৪ - ৭৭৫) তাইগ্রিসের তীরে বাগদাদ নগরীর পত্তন করেন, এবং একে জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলেন। ৭৭০ সালে তিনি উজ্জাইন থেকে কংকা নামের এক ভারতীয় পণ্ডিতকে বাগদাদে আমন্ত্রণ জানান, যিনি ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্তের সাহায্যে গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যার ভারতীয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। গণিতজ্ঞ, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ আল ফাজারী খলিফার নির্দেশে ব্রহ্মগুপ্তের লেখা আরবিতে অনুবাদ করেন।
[1/https://en.m.wikipedia.org/.../Indian_influence_on...]
2/https://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_ibn_Musa_al-Khwarizmi]
পারস্যের বিখ্যাত গণিতবিদ আল-খারিজমি (৮০০-৮৫০ খ্রিস্টাব্দ) তার ল্যাটিন ভাষায় রচিত "Algorithmo de Numero Indroum" গ্রন্থে ভারতীয় সংখ্যাতত্ত্বের বিস্তর ব্যবহার করেন এবং সেখানে ব্রহ্মগুপ্তের ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্তের প্রভাব ছিল ব্যাপক।
[https://www.livemint.com/.../al.../amp-11573750172516.html]
অর্থাৎ যারা বলে আমাদের তথা হিন্দুদের পূর্বপুরুষ ছিলো কুসংস্কারচ্ছন্ন তাদেরকে জানানো প্রয়োজন যে ভারতের হিন্দুরা হাজার হাজার বছর ধরেই জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত এবং আধুনিক বিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক এমনকি তথাকথিত বর্বরীয় মধ্যযুগেও ভারতের হিন্দু পণ্ডিতরা জ্ঞানবিজ্ঞানের পথ হতে বিচ্যুত ছিলেন না। হিন্দুদের এই গৌরবময় ইতিহাসগুলো মুছে ফেলার পেছনে ব্রিটিশ সরকারের নীলনকশা থাকলেও ব্রিটিশ পরবর্তী ভারতের তথাকথিত স্যাকুলার সরকারও কম দায়ী নয়।
যাইহোক, সনাতন যেমন চিরন্তন সত্যও তেমন চিরন্তন। সত্য উদঘাটন ও প্রচারের দায়িত্ব কেবল আমাদের।
জয় সনাতন 🙏
জয়তু SPS ✊🚩
©স্টিমন অনিক
প্রচারেঃ
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)
সনাতনী ঐক্য, প্রচার ও কল্যাণে অবিচল।।
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ হয়েছে দাদা
উত্তরমুছুন