সনাতন শাস্ত্রে দানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য।।


 

★ দান কি❓

স্বত্ব ত্যাগ করে কাউকে কোন বস্তু বা বিষয় আদি অর্পণ বা বিতরণই দান। জীব কল্যাণে বিশেষ কিছু উৎসর্গ বা ত্যাগও দান হিসেবে বিবেচ্য।

       দানম্ এব পরো ধর্মঃ অর্থাৎ দান ই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।।

যাজ্ঞবল্ক্য মুনি বলেছেন, 

"দাতব্যং প্রাতহং পাত্রে নিমিত্তেষু বিশেষত।

যাচিতে নাপি দাতব্যঃ শ্রদ্ধাপুতস্ত্তশক্তিতঃ।।"

অর্থাৎ প্রতিদিন শ্রদ্ধাপূর্বক ও পবিত্র মনে (শ্রদ্ধাপূতচিত্তে) যাচককে (সাহায্য প্রার্থী) দান করবে। 

🔸 দানের গুরুত্বঃ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদভগবদগীতার ১৮/৫ নং শ্লোকে বলেছেন, 

"যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাজ্য নয়, তা অবশ্যই করা কর্তব্য। যজ্ঞ, দান ও তপস্যা মনীষীদেরও (পণ্ডিতগণের) চিত্তকে শুদ্ধ করে।"

অর্থাৎ দান অবশ্যই কর্তব্যকর্ম এবং চিত্তশুদ্ধিতে কার্যকরী।

সনাতন শাস্ত্রের আদি গ্রন্থ বেদেও দান সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

🔹 অথর্ববেদের একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে, "শাত হস্ত সমাহার, সহস্র হস্ত সংকির।" (অথর্ববেদ-৩/২৪/৫)

অর্থাৎ অর্থ উপার্জনে দুই হাতকে শতগুণ কর্মক্ষম করো এবং দান করতে তা যেন সহস্রগুন উদার হয়।

🔹 ঋগবেদ ১০/১১৭/৫ মন্ত্রেও দরিদ্রদের দান করতে বলা হয়েছে কারণ অর্থ/ধন হচ্ছে রথের চাকার মতো যা আজকে তোমার কাল সেটা অন্যের হবে তাই সে অর্থ যেন দরিদ্রের কল্যাণেই ব্যয় হয়। 

🔹 মহর্ষি মনু মনুসংহিতার প্রথম অধ্যায়ের ৮৮, ৮৯ ও ৯০ নং শ্লোকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের জন্য দানকে মূখ্য কর্ম বলেছেন।।

🔹 তৈত্তেরিয় উপনিষদে ১/১১/৩ মন্ত্রেও বলা হয়েছে, 'শ্রিয়া দেয়ম্', 'হ্রিয়া দেয়ম্' ও 'সংবিদা দেয়ম্' অর্থাৎ সামর্থ্য অনুযায়ী নম্রতার সাথে বিবেকবোধকে কাজে লাগিয়ে দান করতে বলা হয়েছে। দাতাকে অবশ্যই ধনবান হওয়ার পাশাপাশি নম্র ও বিবেকবানও হতে হবে, তবেই তিনি প্রকৃত দাতা। 

🔹 ব্যাস সংহিতার ২৪-২৫ শ্লোকে বলা হচ্ছে যে, একদিন ত অবশ্যই প্রাণ ত্যাগ করতে হবে, কিন্তু তার আগে যদি এমন কোন ব্যক্তিকে দান করা যায় যিনি অভাবে আছেন এবং তখনও তিনি অন্যের সাহায্য কামনা করেন নি তবে সেটা মুখ্য দান হিসেবেই বিবেচিত হবে। অর্থাৎ একজন অতি দরিদ্র্য ব্যক্তি নিজ থেকে সাহায্য কামনা করার পূর্বেই তাকে দান করা উত্তম। 

🔹 সর্বশাস্ত্রবিদ বেদব্যাস বলেছেন যে, "যে অর্থে ধর্ম নাই, কীর্ত্তি নাই যা পরিত্যাগ করে ইহ সংসার হতে প্রস্থান করতে হবে; দান ব্যতীত সে অর্থের প্রয়োজন কি?"

★ দান কি শ্রেষ্ঠ ধর্ম? 

🚩 কলি যুগে দানকেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা হয়েছে বিভিন্ন শাস্ত্রে। পরাশর স্মৃতির প্রথম অধ্যায়ের ২২ং শ্লোকে স্পষ্টই বলা হচ্ছে,

"তপঃ পরং কৃতযুগে ত্রেতায়াং জ্ঞানমুচ্যতে। 

দ্বাপরে যজ্ঞমিত্যুচুৰ্দ্দানমেকং কলৌ যুগে।।"

অর্থাৎ তপস্যাই সত্যযুগে পরম ধৰ্ম, ত্রেতাতে জ্ঞান, দ্বাপরে যজ্ঞ, কলিযুগে কেবল একমাত্র দানই প্রধান ধৰ্ম হিসেবে নির্দিষ্ট।

🚩 মহানির্বান তন্ত্রেও বলা হয়েছে, "কলৌ দান মহেশানি সর্বসিদ্ধিকরং ভবেৎ" অর্থাৎ কলিযুগে একমাত্র দানই সমুদয় সিদ্ধির কারণ। "দানং হি সর্ব ব্যসনানি হস্তি" অর্থাৎ যত অমঙ্গল আছে সবই দানে নষ্ট হয়।

★ সকল দানই কি সমান?  

না, সকল দানই সমান নয়৷ শ্রীমদভগবদগীতায় তিন প্রকার দানের কথা বলা হয়েছে।।

🙏"দান করা কর্তব্য বলে মনে করে প্রত্যুপকারের আশা না করে উপযুক্তস্থানে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত পাত্রে যে দান করা হয় তাকে সাত্ত্বিক দান বলে।"

- শ্রীমদভগবদগীতা (১৭/২০)

অর্থাৎ, দান করতে হবে সত্ত্ব ত্যাগ করে দানের বিনিময়ে কিছু পাওয়ার জন্য নয়, এমন ব্যাক্তিকে দান করতে হবে দান যার আসলেই প্রয়োজন, এমন জায়গায় দান করতে হবে যেখানে এই দান সত্যিকার প্রয়োজনে আসবে। 

🙏"যে দান প্রত্যুপকারের আশা করে বা স্বর্গাদি লাভের উদ্দেশ্যে এবং অনিচ্ছা সত্ত্বে করা হয়, তাকে রাজসিক দান বলে। অশুচি স্থানে, অশুভ সময়ে, অযোগ্য পাত্রে অবজ্ঞা সহকারে এবং অনাদরে যে দান করা হয় তাকে তামসিক দান বলে।"

- শ্রীমদভগবদগীতা (১৭/২১-২২)

অর্থাৎ, আপনি দান করলেন বিনিময়ে কিছু পাবেন আশা করে কিংবা স্বর্গ লাভের মোহে কিংবা আপনার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু বাধ্য হয়ে দান করলেন অথবা নিজের প্রতিপত্তি লোকসমাজে জাহির করার জন্য দান করলেন এগুলো রাজসিক দান হিসেবে গণ্য হবে যেখানে দানের ফলাফল শতভাগ পাবেন আশা করা যায় না।।

দ্বিতীয়ত যদি আপনি যেখানে সেখানে যাকে তাকে তাচ্ছিল্যের সাথে দান করেন কিংবা যার এই দান প্রয়োজনই নেই তাকে দান করেন তবে তাকে তামসিক দান বলে। তামসিক দানের পূণ্যফল খুবই সামান্য। 

©স্টিমন অনিক।

প্রচারেঃ Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)সনাতনী ঐক্য, প্রচার ও কল্যাণে অবিচল।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ