রামসেতু - An Engineering Marvel






সমুদ্র তীর থেকে লঙ্কা পর্যন্ত পাথর দ্বারা ভাসমান সেতুবন্ধনের পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু বানরেরা বড় বড় পাথর এনে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা মাত্রই তা সমুদ্রের জলে ডুবে যেতে থাকে। এমতাবস্থায় হনুমান পরামর্শ দিলেন পাথরগুলোতে রাম নাম লিখে দিতে। যেই না মাত্র রাম নাম লেখা পাথরগুলো সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা হলো, সেগুলো ডুবে না গিয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে ভেসে থাকতে শুরু করে। 

রামায়ণের সেতুবন্ধনের এই ঘটনা আমরা সকলেই শুনেছি বা দেখেছি। কিন্তু বিষয়টা কি আসলেই এত সরল ছিল? নাকি এর পিছে ছিল কোন প্রকৌশলী বুদ্ধিমত্তা এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা? আজকে সেটাই আমরা তলিয়ে দেখার চেষ্টা করব বাল্মিকী রামায়ণ থেকে। 

তবে বাল্মিকী রামায়ণে ঢোকার আগে আমরা একটু ঘুরে আসি কৃত্তিবাসী রামায়ণ ও রামচরিতমানস থেকে। কি বলছে সেখানে? কৃত্তিবাসী রামায়ণে সমুদ্রে পাথর ভাসা শ্রীরামের নয় বরং নলের কৃতিত্ব। সেখানে নল এই বর পেয়েছিলেন যে তার স্পর্শে পাথর জলে ভাসবে। “নলস্পর্শে সলিলেতে ভাসিবে পাষান”। এই বরকে কাজে লাগিয়েই নল সেতু নির্মাণ শুরু করেন। দেখা যাচ্ছে, সমুদ্রের তীরে জন্মানো নলখাগড়ার ঝাড় প্রথমে জলে ভাসানো হলো। এরপর ক্রমান্বয়ে তার উপরে গাছ পাথর ইত্যাদি বসিয়ে সেতু নির্মিত হল। অর্থাৎ রাম নাম লিখে পাথরকে জলে ভাসানোর উল্লেখ এখানে পাওয়া যায় না। 

কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখা যায় রামচরিতমানসে। খুবই নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে সেতুবন্ধন সম্পূর্ণ হয়েছে এখানে। এখানে নলের এই বিশেষ বর বা সেতুবন্ধনে তার কৃতিত্বের কথা উল্লেখ নেই। এমনকি রাম নাম লিখে পাথরকে জলে ভাসানোর উল্লেখও এতে পাওয়া যায় না। শুধু রামের মহিমা এবং রামের প্রতি বানরদের ভক্তির জোরেই যেন পাথরগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেসে থাকলো সমুদ্রের জলে। 

তবে এক্ষেত্রে বাল্মিকী রামায়ণ অনবদ্য। সেতুবন্ধন বর্ণনায় তিনি কোনো উপমা, রূপক বা প্রতীকের আশ্রয় নেননি। তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ব্যাখ্যা করেছেন কি করে এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি সংঘটিত হলো, যা দেখে রামসেতুকে কোন অলৌকিক ঘটনা নয় বরং সুপরিকল্পিত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট বলেই মনে হয়। 

সঠিকভাবে ব্যাখ্যার জন্য আমরা বাল্মিকী রামায়ণের যুদ্ধ কাণ্ডের ২২ তম সর্গের সেতুবন্ধন সম্পর্কিত শ্লোক গুলোকে ৪টি সেক্টরে ভাগ করবো। 

1. Survey
2. Initial Phase
3. Bridge Construction
4. Dimensions of the Bridge

Survey: 

এই বিষয়ে সরাসরি কোনো শ্লোক না থাকলেও পরবর্তী শ্লোকের ভিত্তিতে আমরা কিছু বিষয় ধারণা করতে পারি। সেতু নির্মিত হয়েছিল সমুদ্রের জলে গাছ ও পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যেই বিষয়, তা হল সমুদ্রের মাঝে তুলনামূলক কম গভীর এবং লঙ্কা হতে নিকটতম স্থান খুঁজে বের করা। এবং বানর সেনারা তাই করেছিল। নিচের ছবিগুলো জলশূন্য পৃথিবীপৃষ্ঠের ছবি। এখান থেকে বিষয়টা স্পষ্ট হতে পারে।

নং ছবিটি লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে, ভারত লঙ্কার মধ্যবর্তী সমুদ্রতল স্বাভাবিক সমুদ্র তলের চেয়ে অনেকটাই অগভীর। উল্লেখ্য, উক্ত সংকীর্ণ স্থানটি বর্তমানে রবার্ট পকের নামানুসারে "পক প্রণালী" নামে খ্যাত, যার গভীরতা সর্বনিম্ন ৯.১ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১০০ মিটার। (Ref: wikipedia, britannica)। নিচের চিত্র দুটি থেকে পক প্রণালীর অবস্থান ও এর গভীরতার স্কেল সম্পর্কে আরো পরিস্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে। রবার্ট পকের বহু পূর্বেই বানরসেনাদের আবিষ্কৃত ভারত ও লঙ্কার মধ্যবর্তী এই প্রণালীটিই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।







তবে অগভীর হলেও যেকোনো জায়গা থেকেই কিন্তু সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে সেই স্থানটিই নির্বাচন করা হয়েছে যা লঙ্কা থেকে নিকটতম। নিচের ছবিটি দেখলে এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। 

সুতরাং, এই বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা যায় যেবানর সেনারা বিক্ষিপ্তভাবে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেনি বরং এর পূর্বে সার্ভে করে সেতু নির্মাণের জন্য উপযুক্ত সাইট নির্বাচন করেছিল। 

Initial Phase:

এই সেক্টরে আমরা দেখব সাইট নির্বাচনের পর কিভাবে বানর সেনা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করছে। প্রথমত, সেতুটি শুধু পাথর নয় বরং পাথর বৃক্ষ অর্থাৎ কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

তে নগান্ নগসংকাশাঃ শাখামৃগগণর্ষভাঃ।
বভঞ্জুঃ পাদপাংস্তত্র প্রচকর্ষুশ্চ সাগরম্।। ৫৫

তখন পর্বততুল্য বিশালাকায় বানরশ্রেষ্ঠগণ পর্বতশিখরসমূহ এবং বৃক্ষরাজি ভগ্ন করে সমুদ্রতটে টেনে আনতে লাগলেন। 

শুধু তাই নয়, কোন কোন বৃক্ষ ব্যবহৃত হয়েছিল সেতু নির্মাণের কাজে তার সুনির্দিষ্ট বর্ণনা রয়েছে পরের কয়েকটি শ্লোকে। 

তে সালৈশ্চাশ্বকর্ণৈশ্চ ধবৈর্বংশৈশ্চ বানরাঃ।
কুটজৈরজুনৈস্তালৈস্তিলকৈস্তিনিশৈরপি ৫৬

বিল্বকৈঃ সপ্তপর্ণৈশ্চ কর্ণিকারৈশ্চ পুষ্পিতৈঃ।
চূতৈশ্চাশোকবৃক্ষৈশ্চ সাগরং সমপূরয়ন্৷৷ ৫৭

সমূলাংশ্চ বিমূলাংশ্চ পাদপান্ হরিসত্তমাঃ।
ইন্দ্রকেতুনিবোদ্যম্য প্রজহ্রুর্বানরাস্তরূন। ৫৮  

তালান্  দাড়িমগুল্মাংশ্চ নারিকেলবিভীতকান্।
করীরান্ বকুলান্ নিম্বান্ সমাজহ্রুরিতস্ততঃ৷৷ ৫৯ 

সেই বানরেরা শাল, অশ্বকর্ণ, ধ্বব, বাঁশ, কুটজ (কুর্চি) অর্জুন, তাল, তিলক, তিনিশ, বেল, ছাতিম, পুষ্পিত কর্ণিকা (কনক চাঁপা), আম এবং অশোক গাছ তাদের ডালপালাগুলি সমুদ্রতীরে আনতে লাগল। সেই বানরশ্রেষ্ঠগণ সমূলে এবং বিমূলে (মূল ব্যতীত অর্থাৎ মূলের উপরিভাগ থেকে) ইন্দ্রধ্বজতুল্য বড় বড় বৃক্ষ উৎপাটন করে আনতে লাগল। তাল, ডালিমের ঝাড়, নারকেল, বিভীতক, করীর, বকুল, নিম প্রভৃতি বৃক্ষ নানা দিক থেকে সংগ্রহ করে আনল।

বৃক্ষ পাথরগুলোকে বানর সেনা কিভাবে পরিবহন করে আনলো তারও উল্লেখ পাওয়া যায় পরের শ্লোকে। 

 হস্তিমাত্রান্ মহাকায়াঃ পাষাণাংশ্চ মহাবলাঃ

পর্বতাংশ্চ সমুৎপাট্য যন্ত্রেঃ পরিবহন্তি ৷৷ ৬০

বিশালাকার মহাবলশালী বানরেরা হস্তীতুল্য বড় বড় প্রস্তর খণ্ড এবং পর্বতসমূহ সমুৎপাটন করে যন্ত্রের সাহায্যে পরিবহন করছিল। 

এই শ্লোক থেকে বোঝা যায় বানররা যে শুধু গায়ের জোরেই কাজ করতো তা নয়বরং  কাজের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক মাধ্যম  অবলম্বন করার চলও তাদের মধ্যে ছিল। অবশ্য ঠিক কোন কোন যন্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল তার বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা যায় প্রাথমিক অবস্থায় ভারী বস্তু পরিবহনের জন্য যেসব যন্ত্র, যেমন: কাঠ নির্মিত লিভার, ক্রেন, কপিকল, পুলি ব্যবহৃত হতো, এখানেও তারই কথা বলা হচ্ছে। বুঝার সুবিধার্থে ভার বহনকারী কিছু প্রাচীন যন্ত্রের ছবি দেওয়া হলো। 

                                     

                                           সমুদ্রং ক্ষোভয়ামাসুর্নিপতন্তঃ সমন্ততঃ।

                                        সূত্রাণ্যন্যে প্রগৃহ্লন্তি হ্যায়তং শতযোজনম্৷৷ ৬২ 

বানরেরা সব দিক থেকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে সমুদ্রকে ক্ষুব্ধ করে তুলল। অন্য একদল বানর শত যোজন দীর্ঘ সূত্র ধারণ করল। 

এই শ্লোক থেকে যা লক্ষ্যণীয় তা হল, বানরেরা সেতু নির্মাণের জন্য একটি দীর্ঘ সূতা টেনে ধরে। মূলত সেতুর অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখার জন্য অর্থাৎ সেতু যাতে বেঁকে না যায়  এবং সেতুর ওপর পাথরগুলো যাতে ঠিকঠাক মত বসানো যায় সেই কারণেই এমনটি করা হয়।  এটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর খুবই বেসিক একটি টেকনিক। বর্তমানেও রাস্তায় ইট বসানোর সময় এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।


অর্থাৎ, সেতু নির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে বানরসেনা যে ব্যবহারিক প্রকৌশল বিদ্যারই পরিচয় দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবেই প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করে এবার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। 

নলশ্চক্রে মহাসেতুং মধ্যে নদনদীপতেঃ।
তদা ক্রিয়তে সেতুর্বানরৈর্ঘোরকর্মভিঃ৷৷ ৬৩

নদ-নদী সমূহের প্রভু সমুদ্রের মধ্যে নল মহাসেতু নির্মাণ করতে লাগলেন। বানরদের ভয়ানক কর্মের দ্বারা তখন সেতু নির্মাণ কার্য আরম্ভ হল।

 Bridge Construction: 

দণ্ডানন্যে প্রগৃহ্নন্তি বিচিন্বন্তি তথাপরে।
বানরৈঃ শতশস্তত্র রামস্যাজ্ঞাপুরঃসরৈঃ ৷৷ ৬৪

পরিমাপের জন্য কেউ দণ্ড ধারণ করল, কেউবা সামগ্রী সংগ্রহ করতে লাগল। রামচন্দ্রের আদেশানুসারে শত সহস্র বানর এই কার্যে অগ্রসর হল।

এই শ্লোকে যে বিষয়টা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় তা হল পরিমাপের জন্য বানরদের দন্ডধারণ করা। মূলত অগভীর সমুদ্রতলের কোথায় কতটুকু উঁচু বা নিচু তা পরিমাপের জন্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় “Levelling” এবং পরিমাপক দন্ডকে বলা হয় “Graduated Staff”

মূলত অসমতল কোন সারফেসের এলিভেশন পরিমাপের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে অনেক আধুনিকায়নের সাথে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও বহু প্রাচীন কাল থেকেই এর প্রচলন হয়ে আসছে এবং রামসেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

মেঘাভৈঃ পর্বতাভৈশ্চ তৃণৈঃ কাষ্ঠৈর্ববন্ধিরে।
পুষ্পিতাগ্রৈশ্চ তরুভিঃ সেতুং বধ্নন্তি বানরাঃ ৬৫

পর্বততুল্য এবং মেঘতুল্য বানরেরা তৃণ এবং কাষ্ঠ দ্বারা সেতু বন্ধন করছিল। অগ্রভাগে পুষ্পবিশিষ্ট বৃক্ষদ্বারাও বানরেরা সেতু বন্ধন করছিল।

অর্থাৎ এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বানরেরা ঘাস এবং কাঠ দিয়ে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল। তারা কিন্তু প্রথমেই সেতু নির্মাণের জন্য পাথর ব্যবহার করেনি। এর একটি বিশেষ কারণ আছে।  যদি শুরুতেই তারা সরাসরি সী বেডের উপর পাথর স্থাপন করততাহলে পাথরের অনিয়মিত আকার, আকৃতি   ওজনের কারণে সী বেডের উপর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম লোড আসতো। যার কারনে পাথরের নিচের মাটি ভারসাম্যহীন হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল। ফলে মাটি সরে যাওয়া বা পাথর স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারতো এবং ফলশ্রুতিতে  সেতুটি ভেঙে যেতে পারত। এই কারণে সী বেডের উপর প্রথমে কাঠ পেতে একটি বেস তৈরি করে নেওয়া হয়েছে  এবং পরবর্তীতে তার ওপর পাথরগুলো রাখা হয়েছে। 


এবার
আসা যাক তৃণ বা ঘাসের ব্যবহার নিয়ে। ধারণা করা যায় ঘাসের ব্যবহার মূলত হয়েছিল দড়ি হিসেবে, যা কাঠগুলোকে একসাথে বাঁধার জন্য কাজে লাগে। বর্তমানকালেও ঘাস দিয়ে তৈরি দড়ি দেখা যায়। কাঠগুলোকে প্রথমে সমুদ্রতলে মাটির উপর স্থাপন করে এবং তারপর  ঘাসের দড়ি দ্বারা  পরস্পরকে যুক্ত করে একটি শক্ত বেস তৈরি করা হয়।



পাষাণাংশ্চ গিরিপ্রখ্যান্ গিরীণাং শিখরাণি চ।
দৃশ্যন্তে পরিধাবন্তো গৃহ্য দানবসন্নিভাঃ৷৷ ৬৬

শিলানাং ক্ষিপ্যমাণানাং শৈলানাং তত্র পাত্যতাম্।
বভূব তুমুলঃ শব্দস্তদা তস্মিন্ মহোদধৌ৷ ৬৭

পর্বতসদৃশ বিশালাকার প্রস্তর খণ্ড এবং পর্বত শিখর নিয়ে ধাবমান বানরদের দৈত্যের মতো মনে হচ্ছিল। তখন সেই মহাসমুদ্রে নিক্ষিপ্ত শিলা এবং পর্বতচূড়া সমূহের দ্বারা তুমুল শব্দ সৃষ্টি হল।

অর্থাৎ, কাঠের বেস তৈরি করা সম্পন্ন হলে এরপর বানরসেনারা শিলা এবং পাথরখন্ড এনে তার উপর স্থাপন করা শুরু করে। এভাবেই সুচারু পরিকল্পনা ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার সাথে নির্মিত হয় ঐতিহাসিক রামসেতু।



Dimensions of the Bridge:

দশযোজনবিস্তীর্ণং শতযোজনমায়তম্
দদৃশুদেবগন্ধর্বা নলসেতুং সুদুষ্করম্।। ৭৬

নল কর্তৃক নির্মিত দশযোজন প্রস্থ এবং শতযোজন দীর্ঘ এই সুদুষ্কর সেতু (সেতুটির নির্মাণ কার্য অতি দুরূহ) দেবতা গন্ধর্বগণ দর্শন করলেন। 

এছাড়াও বানরসেনা কোনদিন সেতুর কতটুকু দূরত্ব নির্মাণ করেছিল তারও উল্লেখ পাওয়া যায় পূর্ববর্তী শ্লোকে। প্রথম দিন ১৪ যোজনদ্বিতীয় দিন ২০ যোজনতৃতীয় দিন ২১ যোজনচতুর্থ দিন ২২ যোজন এবং পঞ্চম দিন ২৩ যোজন সেতু নির্মিত হয়।  এভাবে বানর সেনা পাঁচ দিনে সম্পূর্ণ  সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করে। 

বাল্মিকী রামায়ণ ছাড়াও স্কন্ধ পুরাণ সহ বিভিন্ন গ্রন্থেও উল্লেখ পাওয়া যায় যেরাম সেতু ১০০ যোজন দীর্ঘ ১০ যোজন প্রশস্থ ছিল। তবে এখানে কারো কারো মনে সংশয় কাজ করে কারণ বর্তমান সেতুর দৈর্ঘ্য প্রস্থ পরিমাপ করলে একটি ভিন্ন মান পাওয়া যায়। 

এর মূল কারণ হলো যোজন এককের পরিবর্তনশীলতা। কিলোমিটার = ১০০০ মিটার যেমন সুনির্ধারিত, সেরকম যোজনের কোনো সুনির্ধারিত মান পাওয়া যায়না। বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন সময়ে যোজনের মানের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যোজনের যেই মান ধরে বানরসেনা সেতু নির্মাণ করেছিলো বা বাল্মিকী রামায়ণে যোজনের যেই মান ধরা হয়েছে, তার সাথে বর্তমান দিনের যোজনের হিসাবে বিশাল তফাৎ থাকতে পারে

এজন্য গবেষকগণ সরাসরি দৈর্ঘ্য প্রস্থের মান হিসেবে চেয়ে এর অনুপাতের দিকে বেশি লক্ষ্য দিয়েছেন। কারণ একক ভেদে দৈর্ঘ্য প্রস্থের মান পরিবর্তিত হলেও সকল এককে এর অনুপাত সবসময় সমান থাকে। 

রাম সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ১০০ যোজন এবং প্রস্থ ছিল ১০ যোজন। অর্থাৎ এর দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত ১০:১। 

আবারবর্তমানে রাম সেতুর দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয়েছে ৩৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ পাওয়া গিয়েছে . কিলোমিটার। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত ১০:১। 

https://factins.com/ram-setu-bridge-mysterious-facts/?fbclid=IwAR3y1fTZ7Jh_BpKblXeoACZ02E-mZ5zxmJsyOwiaXhHboGHAdD5bV641VxE

এভাবেই রাম সেতুর পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট সংশয়ের নিরসন করা হয়।

© SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি।
সনাতনী শাস্ত্র ও দর্শন প্রচারে বদ্ধপরিকর।।

Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ