সুগ্রীব - নামটা অত্যন্ত পরিচিত আমাদের কাছে। তবে
এই ব্যক্তি কিংবা যোদ্ধা সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি আমরা!আজ বলবো সেই
মহান বীরের কথা, যাকে ইতিহাস
সুগ্রীব নামে জানে। চলুন ঘুরে আসি
হাজার বছর পূর্বের আমাদের
প্রাচীন ইতিহাস থেকে।
সুগ্রীব
দুই ভাবে পরিচিত, প্রথমত
বলশালী বালির অনুজ হিসেবে।
দ্বিতীয়ত দশরথ পুত্র রামের
সহচর হিসেবে। অনেকে
বিশ্বাস করেন সুগ্রীব, বালি,
জাম্বুবান, হনুমান এরা সকলে বানর
(monkey) ছিলো। কিন্তু
এটা শুধুমাত্র ভুল ধারণা।
তাদের সমস্ত ক্রিয়া মানুষের ন্যায় ছিলো এবং তারা
কথা বলতো বিভিন্ন ভাষায়। যেমন
সুগ্রীব ও হনুমান ছিলেন
বহুভাষাবিদ। কারণ
তারা বিভিন্ন রাজ্যে এবং তৎকালীন সময়ে
সারাবিশ্বে ভ্রমণ করেছিলেন। তাই
ভাষার ব্যাপারে বেশ পারদর্শী ছিলেন। আরো
প্রমাণ মেলে যখন রাম
ও লক্ষণ কিষ্কিন্ধার বনে প্রবেশ করেছিলেন,
তখন হনুমান তাদের সাথে এসে তাদেরই
ভাষায় কথা বলেন।
যেমনটা আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে
গেলে সেখানের উপজাতীয় গোষ্ঠী আমাদের ভাষায় আমাদের সাথে কথা বলে
আবার নিজেরা নিজেদের ভাষায় কথা বলে, যেটা
আমাদের বোধগম্য নয়। ঠিক
তেমনি হনুমান রাম ও লক্ষ্মণের
সাথে তাদের ভাষায় কথা বলে, সেই
কথা আবার সুগ্রীব কে
নিজেদের প্রচলিত ভাষায় বলে। আরো
বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া
যায় তারা উপজাতি এবং
মানুষ ছিলেন সেটার। এছাড়া
জেনেটিক্স ডেটা অনুসারে বর্তমান
ভারতবর্ষে আধুনিক মানুষের পদার্পণ হয় প্রায় ৬৫হাজার
বছর পূর্বে। যেখানে
সুগ্রীব, বালি কিংবা রামায়ণের
ইতিহাস মাত্র কয়েক হাজার বছর পুরোনো।
তবে
আজকে কথা হবে শুধু মহাবীর
সুগ্রীবের বিশ্ব
পরিভ্রমণ করা নিয়ে।
➡️
সুগ্রীব ছিলেন রাবণের খোঁজে রামকে সাহায্য করা সেই বীর। মিত্র
সুগ্রীবের জন্য রাম বধ
করেন সুগ্রীবের ভ্রাতা বালি কে।
এরপর রাজা হিসেবে অভিষেক
হয় সুগ্রীবের । রাজ্য
সুখ ও স্ত্রী সন্তানদের
উদ্ধারের পর তাদের নিয়ে
মত্ত হয়ে পড়েন সুগ্রীব। এরপর
বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায় রাম
ও লক্ষণ ধৈর্য হারিয়ে সুগ্রিবকে তার প্রতিজ্ঞার কথা
মনে করিয়ে দেন। সুগ্রীব
নিজের পূর্বের কথা মনে করে
লজ্জিত হয়ে ক্ষমা প্রকাশ
করেন। তবে
সুগ্রীব নিজের কাজের প্রতি ছিলেন মনোযোগী। যেহেতু
তিনি বেশ কয়েকবার বিশ্বভ্রমণ
করেছিলেন। তিনি
সকল স্থান সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। সকল
রাজ্যে সুগ্রীব এর পরিচিতি ছিল। তাই
তিনি ডেকে পাঠালেন সকল
রাজ্যের মিত্রদের। তবে
কেউই জানতো না রাবণ সীতাকে
কোথায় নিয়ে বন্ধী করে রেখেছেন।
তাই সুগ্রীব কাউকে পাঠালেন পূর্বে। আবার
কাউকে ভাগীরথী,
সিন্দু দেশ, মলয়, পুণ্ড্র,
মগদ, হেমাগিরি। কাউকে
পাঠালেন পশ্চিমে অস্ত গিরি সহ
বিভিন্ন স্থানে।
💠এবার আসি বর্তমানে,
সুগ্রীব যে সকল স্থানে
তার সৈন্য পাঠিয়েছিলেন, সেগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রমাণ উপস্থাপনে।
রেফারেন্স হিসেবে আমরা
বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধা কাণ্ডের
৪০-৪৩ সর্গ অনুসরন করে
এগোবো।
আমরা দেখি, মাতা সীতার অন্বেষণের সুগ্রীব যে সকল স্থানের
নাম বলেন তার মধ্যে
বর্তমান ভারত থেকে পূর্বে
গেলে দেখা মিলবে andes পর্বতের। পশ্চিমে গেলে
আল্পস পর্বতমালা। যেটাকে
সুগ্রীব উল্লেখ করেছেন অস্তগিরি নামে। অস্ত
অর্থ সূর্যাস্ত এবং গিরি অর্থ
পর্বত, যার পূর্ণ অর্থ
হলো যে পর্বতে সূর্যের
শেষ কিরণ পাওয়া যায়। লক্ষ
করলে দেখাযায় আল্পস পর্বতমালা তে সূর্যের শেষ
কিরণ দেখা যায় এবং
এটি আসলেই ভারত
থেকে পশ্চিমে অবস্থিত। আরো
দেখা যায় সুগ্রীব এর
বর্ণিত ভাগীরথী, সিন্দু সাগর, সরস্বতী নদীর প্রমাণ পাওয়া
যায়। সুগ্রীব
তার কিছু সৈন্যকে বলেন
সর্ব পশ্চিমে যেতে যেখানে রয়েছে
রজতের আকর। অর্থাৎ
রুপার খনি। লক্ষ্য
করলে দেখা যায় আসলেই
ভারতের সর্বপশ্চিমে রয়েছে রূপার খনি খ্যাত বর্তমান
মেক্সিকো।
চিত্র: রৌপ্য খনি(মেক্সিকো)
সুগ্রীব
বিনত ও তার সৈন্যদের
বলেছিলেন সেখানে যেতে যেখানে মানুষের
লম্বা কান আছে,যাদের
মুখে লোহ পরিধান করে,
যারা কাঁচা মাছ খায়, নরমাংস
খায়, যারা দ্বীপবাসী ,যেখানে
সপ্তরাজ্য শোভিত দ্বীপ ও যবদ্বীপ রয়েছে। তারপর
ঘোর ইক্ষু সমুদ্র পার হয়ে তীরে
একটি শালমলি বৃক্ষ ও বিশ্বকর্মা নির্মিত
গরুড় গৃহ। এরপর লোহিত
সাগরের তীর। এরপর
সাগরের অপর পার্শে এক
পাহাড়ের গায়ে বিশাল ত্রিফলা চিন্হ যা বহুদূর হতে
দৃশ্যমান। সেটিকে
ইন্দ্রদেব বেদি হিসেবে রচিত
করেছিলেন। যা
স্বর্ণ ও রৌপ্য ন্যায়
উজ্জ্বল। এরপর
পাশে পর্বতে রয়েছে ঝুলন্ত মন্দাহ রাক্ষস। তারা
সূর্যাদয়ের পর সমুদ্রের পানিতে
ঝাঁপিয়ে পড়ে আবার অস্তাচলে
যাওয়ার পর তারা পাহাড়ে
ঝুলতে থাকে এবং বিভিন্ন
প্রাণীদের রক্ত পান করে। তাদের
থেকে দূরে থাকবে।
💠সুগ্রীব এর
সেই নির্দেশ মিলে যায় বর্তমানের
সাথেও। লক্ষ্য
করলে দেখা যায়, লম্বা
কান আছে এমন মানুষ
হলো দোজাক বা দায়ক নামক
উপজাতিরা। আর
এরা দ্বীপবাসী। এছাড়া
নরমাংস আহারী উপজাতি যাদের কথা বলেছিলেন সুগ্রীব
তাদের বসবাস ও এই দ্বীপে। তারা
বর্তমানে করোয়াই ও কলুফো উপজাতি
নামে পরিচিত।
এরা
সপ্ত রাজ্য শোভিত দ্বীপে বসবাস করে। যার
বর্তমান নাম ইন্দোনেশিয়া।
যেটি দ্বীপরাজ্য হিসেবে পরিচিত। প্রায়
আঠারো হাজার দ্বীপ রয়েছে ইন্দোনেশিয়া তে। এছাড়া
লোহ মানব খ্যাত আফ্রিকার
ইথিওপিয়া তে বসবাসরত মুরসি
উপজাতি। যারা
তাদের ঠোঁটে ও মুখে লোহার
প্লেট ব্যবহার করে মুখের অংশ
চওড়া করে ফেলে।
চিত্র: মুরসি উপজাতি
এছাড়া সুগ্রীব বলেছিলেন সাগর পাড়ি দিয়ে
দেখা মিলবে বিশ্বকর্মা নির্মিত গরুড় গৃহের এবং সেই সাগরের অপরপাশে
বিভাজক লোহিত সাগরের তীর। যার
প্রমাণ এখনো ইন্দোনেশিয়াতে রয়েছে
গরুড় পর্বতে এবং এশিয়ার পশ্চিমে
অবস্থিত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভাজক
হিসেবে বয়ে চলেছে লোহিত
সাগর বা রেড সি।
চিত্র: লোহিত সাগর( দুই মহাদেশের
বিভাজক)
এছাড়া সুগ্রীবের বর্ণিত যবদ্বীপ যেটি বর্তমানেও একই
নামে পরিচিত। গ্লোবাল
ও স্থানীয় নাম অনুসারে যেটিকে
জাভা দ্বীপ বলা হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত সেই জাভা দ্বীপ। সেটির
প্রমাণও পাওয়া যায়।
চিত্র: যবদ্বীপ
বা জাভা আইল্যান্ড
সুগ্রীবের বর্ণনা মতো পেরুর একটি
পর্বতে একটি ত্রিশূল আকৃতির
চিন্হ পাওয়া যায়, যার আকৃতি ৬০০/৮০০ফুট। সেটি Candelabra of the Andes নামেও
বর্তমানে পরিচিত।
চিত্র: Candelabra of Andes (Paracas candelabra Peru)
সুগ্রীব
আরো বলেছিলেন সেখানে রয়েছে মন্দেহ নামক রাক্ষসরুপী জীব। যারা
পর্বতের গায়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যারা
সমুদ্রের জলে নামে এবং
আবারো উপরে উঠে ঝুলতে
থাকে পাহাড়ের গাত্রে। প্রত্নতাত্ত্বিকগণ
সেটিরও প্রমাণ পেয়েছেন। তারা
খুঁজে পেয়েছেন পাহাড়ে ঝুলন্ত কুৎসিত দেখতে বাঁদর। যারা
মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত খায়।
সমুদ্রের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আবার পাহাড়ের
খাঁজে ঝুলতে থাকে। যাদের
ভ্যাম্পায়ার ব্যাট বলা হয়।
এদের পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকার
বিভিন্ন অঞ্চলে এবং মেক্সিকো, ব্রাজিল,
চিলির বিভিন্ন পাহাড়ের গায়ে।
চিত্র: Vampire Bat (রক্ত পান করা
রাক্ষস)
সুগ্রীব আরো বলেছিলেন সৈন্যদের
সেখানে রয়েছে ক্ষীরোদ জলরাশির সাগরের কথা যেটির পানি
মিশেছে হরমুখের সাথে। ক্ষিরোদ
অর্থ দুধের ন্যায় সাদা জল এবং
হরমুখ মানে হলো যেখানে
অগ্নিনির্গত হয়। অর্থাৎ
আগ্নেয়গিরি । সেটিরও
প্রমাণ মেলে, আর্জেন্টিনার পরেই দেখা মিলে
অ্যান্টার্কটিকা মহাসাগরের যেটিকে দক্ষিণ মহাসাগরও বলা
হয়। যার
জল দুধের ন্যায় সচ্ছ এবং সেইজল
গিয়ে মিশেছে সমুদ্রে থাকা আগ্নেয়গিরি মুখে।
চিত্র: সাগরে সাদা জলরাশি মিশেছে আগ্নেয় গিরিতে (Volcano in Ocean)
➡️সুগ্রীব
সুষেনকে অনুরোধ করেন পশ্চিমে যেতে
মহর্ষি মরিচির পুত্র মারিচ কে নিয়ে।
সুগ্রীব বলেন, সৌরাষ্ট্র, চন্দ্রচিত্র দেশ সমুহ অতিক্রম
করে পশ্চিম সাগর পাড়ি দিতে। তারপর
মরুচি পত্তন, জটাপুর, অবন্তী,অঙ্গলেপা দেশসমূহ অতিক্রম করে সিন্দু নদ
ও সাগর মোহনায় যেতে। সেখানে
শতশৃঙ সোম পর্বতে বসবাস
করে সিংহ নামের পাখি। তারা
তুমি ও হস্তী ধরে
নিজ গৃহে নিয়ে আসে
। তারপর পাড়ি
দিতে পারিযাত্রা, বজ্রবান, প্রাগ জ্যাতিশপুরা (বাগাদা) ও বরাহ পর্বত। এরপর
সুমেরু পর্বত এবং অস্তাচলে যেতে।
💠এবার আসি
ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রমাণে, সুগ্রীব
যে স্থান সমূহের বর্ণনা সুষেনকে দিয়েছিলেন, সে মতে উক্ত
স্থান গুলো ভারতের পশ্চিমে
নির্দেশ করে। তার
মধ্যে সিন্দু অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্থান এবং পশ্চিম সাগর
অর্থাৎ আরব সাগরকে নির্দেশ
করে। এরপর
তিনি কিছু পাখির কথা
বলেন যারা হস্তী বা
হাতি ও তিমির মত
বিশালাকার প্রাণী ভক্ষণ করতো। সে
পাখিগুলোর পরিচিতি পাওয়া যায় প্রাচীন ইতিহাসে,
যাদের রক বা রুক
নামে ডাকা হতো।
এই বিশালাকার পাখি কিন্তু হাতি
সমেত খেয়ে ফেলতে পারতো এবং নিজের দশগুণ
শিকারকে বহন করতে পারতো
রক বা রুক্ নামের
সেই পাখি। সেই
বিশাল পাখি দেখতে অনেকটা
ঈগলের মতো এই পক্ষী। ঈগলের
মধ্যেও হার্ফ ঈগল রয়েছে যারা
নিজেদের ওজনের চারগুণ শিকার বহন করে।
তাদের ওজন ২০/২৫
কেজি হলেও তারা ৯০/১০০ কেজি ওজন
বহন সক্ষম। তাই
সুগ্রীব যে পাখির বর্ণনা
দিয়েছিলেন সেটির সত্যতা পাওয়া যায়।
চিত্র: রুক পাখির হাতি শিকার(অঙ্কিত) এবং
ঈগলের হরিণ শিকার
এরপর সুগ্রীব তাদের
যেসমস্ত স্থানে যেতে বলেছিলেন তার
মধ্যে পারিয়াত্রা নামক স্থানটি বর্তমান
পাকিস্তানের পার্শ্ববর্তী স্থান এবং বজ্রবাণ বর্তমান
বুলগেরিয়া থেকে তুর্কি পর্যন্ত
স্থানকে নির্দেশ করে। প্রাগ
জ্যেতিশপুরা বা বাগদা বর্তমানের
বাগদাদ কে নির্দেশ করেছিলেন। এছাড়া
আরো প্রমাণ পাওয়া যায় সুগ্রীব উল্লেখিত
বরাহ পর্বতের যেটি বর্তমানে মাউন্ট
বরাহ বা বরাহ পিক
নামেও পরিচিত। এরপর
তিনি আরো বলেন সুমেরু
ও অস্তাচল সম্পর্কে যেটি আল্পস পর্বতমালা
হিসেবে পরিচিত। অস্তাচল
মানে হলো যেখানে সূর্যের
কিরণ শেষ হয় না
দ্রুত সূর্য অস্ত যায়।
আল্পস পর্বতের জন্য সে অঞ্চলে
তাড়াতাড়ি সূর্যাস্ত হয়। অর্থাৎ
সুগ্রীব যে স্থানের নাম
উল্লেখ করেছিলেন সব স্থানের প্রমাণ
পাওয়া মেলে।
চিত্র: সুগ্রীব এর উল্লেখিত মানচিত্র ও বর্তমান মানচিত্র
➡️সুগ্রীব তার এক অনুচর শতবলকে বলে সৈন্য সমেত উত্তরের দিকে গমন করতে। তিনি তাদের যেতে বলেন কুরু, মদ্রক, হিমালয়ে। এরপর সুদর্শন পর্বত পাড়ি দিয়ে এমন এক স্থানে যেতে যেখানে মেঘ, নদী, বৃক্ষ কিছুই নেই। তারপর শুভ্র কৈলাস পর্বতে, সেখান থেকে মৈনাক পর্বতে। এরপর এমন একস্থানে যেতে, যেখানে চন্দ্র, সূর্য, তারা কিছুরই দেখা মেলে না। সৌম গিরির প্রভায় আলোকিত হয় চারিপাশ।এরপর উত্তর কুরু পার হয়ে উত্তর সমুদ্রে।
💠প্রত্নতাত্ত্বিকদের হিসেব মতে, কুরু মদ্রক ইত্যাদি স্থানের দেখা মেলে ভারতের উত্তরে। এমনকি হিমালয়ের বিশাল সারি ভারতের উত্তরেই অবস্থিত। এরপর সুদর্শন পর্বত আজও বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান ভারতের উত্তরাখণ্ডের হিমালয় রিজিয়নে। যা সুগ্রীবের বর্ণনার সাথে শতভাগ মিলে যায়।
চিত্র: হিমালয় ও ডান পাশে সুদর্শন
পর্বত
এছাড়া সুগ্রীব এমন একটি স্থানের কথা বলে যেখানে পূর্বে বৃষ্টি হতো না, হতো না মেঘ এবং ছিলো না কোনো বৃক্ষ। যেটি বর্তমানে গবি মরুভূমি নামে পরিচিত। এটি মঙ্গোলিয়ার পার্শ্ববর্তী মরু অঞ্চল। এখনো সেখানে খুব কমই বৃষ্টিপাত হয়। যদিও হাজার বছরে জলবায়ুর দীর্ঘ পরিবর্তন হয়েছে।
চিত্র: গবি মরুভূমি(Gobi Desert)
এছাড়া এখনও দেখামেলে সুগ্রীবের
বর্ণনা করা সেই কৈলাশ
পর্বত ও মৈনাক পর্বতের। এরপর
তার বর্ণনা করা উত্তরকুরু পার
হয়ে উত্তর সমুদ্রের। সেটিরও
প্রমাণ মেলে উত্তরে যে
সমুদ্র রয়েছে সেটি আর্কটিক ওশান
নামে পরিচিত। এবার
এমন একটা ইনফরমেশন এবং
ঘটনার চিত্র দেখবো যেখানে আসলে আশ্চর্য্য হওয়ার
মতই। সুগ্রীব
বলেছিলেন এমন এক স্থানের
কথা যেখানে দেখা মেলা দুরূহ
ব্যাপার সূর্যের, তারকা মন্ডলীর এবং চাঁদের।
সেই স্থান হতো আর্কটিক সার্কেল
বা পোলার রিজিয়ন। যার
অন্তর্ভুক্ত দেশ নরওয়ে।
যেখানে আসলেই সূর্যের দেখা পাওয়া যায়না,
দেখা পাওয়া যায়না তারকা মন্ডলীর। কারণ
সেখানে সোলার ফ্ল্যাশ বা গ্রীন ফ্ল্যাশ
নামের আরোরা বিরাজ করে পুরো আকাশ
জুড়ে। যার
আলোয় আলোকিত হয় চারিপাশ।
চিত্র: আর্কটিক সার্কেল/রিজিয়ন এবং আকাশে বিস্তৃত অরোরা।
➡️সুগ্রীব দক্ষিণ দিকে যেতে বলেন,
অঙ্গদ ও তার সহকারী
হিসেবে নীল, হনুমান, জাম্বুবান,
গয় ও গবাক্ষ সহ
বাকি সৈন্যদের। সুগ্রীব
বলেন তাদের বিন্দ্যাগীরি, নর্মদা, গোদাবরী,কৃষ্নবেনি এবং মৎস্য, বিদর্ভ,
মলয়, পুণ্ড্র, কেরল প্রভৃতি রাজ্যে
যেতে। এরপর
সমুদ্র পাড়ি দিয়ে অপরপাশে ১০০যোজন বিস্তৃত একটি দ্বীপ রয়েছে
সেখানে যেতে। সুগ্রীব
উল্লেখ করেন যে সেই দ্বীপেই থাকে
রাবণ।তিনি
আরো বলেন সেখানে শত
যোজন দূরে পুষ্পিতক গিরি,
কুঞ্জর ও ঋষভ পর্বত
আছে। তারপর
পৃথিবীর অন্তে অর্থাৎ শেষ অংশে যমের
রাজধানী আছে। যেখানে
কেউ যেতে পারে না।
💠এবার আসি প্রত্নতাত্ত্বিক
ও বিভিন্ন সংস্থার প্রমাণে, সুগ্রীব যে স্থানগুলোর নাম
বলেন সেগুলো ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত। তার
মধ্যে গোদাবরী দক্ষিণ ভারতের একটি স্থান।
এছাড়া বিন্দ্যাগিরি একটি দ্বীপপর্বত, দক্ষিণে
অবস্থিত একটি পর্বত হলো
মলয়, কেরল ও দক্ষিণে
অবস্থিত একটি স্থান।
সুগ্রীব বলেন সমুদ্র পার
হয়ে একটি দ্বীপের দেখা
পাবে। স্পষ্টতই
তিনি শ্রীলঙ্কার অবস্থানকে নির্দেশ করলেন এখানে।
এরপর সুগ্রীব বলেছিলেন
পৃথিবীর অন্তে বা শেষাংশে আছে
যমের রাজধানী যেখানে যাওয়া এবং ফিরে আসা
প্রায়ই অসম্ভব। কেউ
গেলে ফিরে আসা সম্ভব
নয় এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ঠিক
তেমনি দক্ষিণের শেষাংশে আছে এন্টাকটিকা।
যেখানে তাপমাত্রা -৮৯.৬ ডিগ্রি
সেন্ট্রিগ্রেড যা মানুষের পক্ষে
সহ্য করা সম্ভব নয়। কারণ
শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষ ১০মিনিট বাঁচতে পারে সর্বোচ্চ।
কিন্তু -৮৯.৬ ডিগ্রি
তাপমাত্রায় মানুষ সাথে সাথেই বরফে
পরিণত হবে। সেজন্যই
সুগ্রীব বলেছিলেন সেখানে কেউ যেতে পারে
না কিংবা বেচেঁ ফিরতে পারেনা। তাই
সে স্থানকে যমের রাজধানী বলেছেন। যা
শতভাগ সত্য।
সবশেষে,
রামচন্দ্র প্রশ্ন করেছিলেন সুগ্রীব কে! কিভাবে এতো
স্থানের অবস্থান ও পরিচয় তিনি
জানেন? তখন সুগ্রীব বলেছিলেন
তার জেষ্ঠো ভ্রাতা বালি যখন তাকে
হত্যার জন্য তার পিছু
নিয়েছিলেন। তখন
সমগ্র বিশ্ব তিনি ভ্রমণ করেছিলেন
বাঁচার জন্য। শেষমেষ
তিনি ঋষ্যমূক পর্বতে আশ্রয়
নেন হনুমানের কথায়। যেখানে
বালির যাওয়া নিষেধ ছিল।
তথ্য সহায়তাঃ বাল্মিকী রামায়ণ, নিলেশ ওক।
1 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য না করলে পারছি না।আর তা হল, মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের বাক্যে পৃথিবীর মানচিত্রের রূপ পাওয়া যায়।তিনি বলেছিলেন-
উত্তরমুছুন"পৃথিবীর মানচিত্র হলো কান সহ একটি খরগোশ এবং ২টি পিপ্পল পাতা" সত্যি সত্যি পৃথিবীর মানচিত্রটি নিয়ে উল্টিয়ে দেখলে দেখা যাবে যুধিষ্ঠিরের বর্ণনাটি হুবুহু মিলে যায়।পরবর্তীতে ভারতীয় কোন এক জ্যোতির্বিদ প্রথম এই মানচিত্রের নিয়ে আরও এর উন্নতি সাধন করেন। ধন্যবাদ।