সনাতন শাস্ত্রে ”মাল্টিভার্স” ধারণা।।


”মাল্টিভার্স” এমন একটি বিষয় যার সাথে আমরা মোটামুটি সকলেই পরিচিত। যদিও এটি এখনও  আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি হাইপোথিটিক্যাল বিষয় তথাপি বিজ্ঞান জগতে এই বিষয়টি নিয়ে অলোচনার অন্ত নেই। মাল্টিভার্সের উপর তৈরী হচ্ছে অনেক মুভিও।   বৈজ্ঞানিকভাবে মাল্টিভার্স মানে কী এবং আমাদের সনাতনের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলো ”মাল্টিভার্স” সম্পর্কে কী বলে - এই ব্লগে অমারা সেটাই আলোচনার চেষ্টা করব।

Remember, we will not give any decision but we will discuss relatively.

“Multiverse” কি?

www.britannica.com এ যে সংজ্ঞা পাওয়া যায় সেটা হল,

Multiverse, a hypothetical collection of potentially diverse observable universes, each of which would comprise everything that is experimentally accessible by a connected community of observers.

সুতরাং এই তত্ত্ব অনুসারে, আমাদের মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব নয়, বরং আমাদের পরিচিত মহাবিশ্বের বাইরে অসীম সংখ্যক মহাবিশ্ব রয়েছে।

Multiverse বিষয়ক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব:

মাল্টিভার্সের উপর ৩ টি সুপরিচিত তত্ত্ব রয়েছে। আমরা ব্রায়ান গ্রিনের "The Hidden Reality" বইটির রেফারেন্স ব্যবহার  করব এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। 


তিনটি তত্ত্ব হল,

1.    1. Quilted Multiverse

2.    2. Inflationary Multiverse

3.    3. Brane Multiverse  

আমরা সংক্ষেপে তত্ত্বগুলি নিয়ে আলোচনা করব।

Quilted Multiverse Theory অনুসারে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও অসংখ্য মহাবিশ্বের অস্তিত্ব থাকতে পারে, যা প্রায় আমাদের মহাবিশ্বের মতই। সেটার প্রায় প্রতিটি অংশেই আমাদের মহাবিশ্বের পুনরাবৃত্তি প্রদর্শন করে। তবে ছোট ছোট পর্যায়ে কিছু স্বতন্ত্রতা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই থিওরী অনুসারে অন্য মহাবিশ্বে পৌঁছাতে হলে আমাদের অকল্পনীয় দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।


Inflation Multiverse Theory অন্যতম তত্ত্বগুলির মধ্যে একটি। আমরা এটা নিয়ে এখন বিস্তারিত লিখছি না কারণ এটা আমাদের প্রধান আলোচনা নয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, অনবরত নতুন  নতুন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। সকল মহাবিশ্ব একটি ক্রমাগত বর্ধিষ্ণু স্থানের উপর বিদ্যমান। এই মহাবিশ্বকে বলা হয় "Bubble Universe"। প্রতিটি বাবল ইউনিভার্স  বিগ ব্যাং-এর মতো একটি নতুন ঘটনার মুখোমুখি হয়, যা থেকে সেই মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু সৃষ্টি হয় । এই থিওরী মতে সমস্ত বাবল ইউনিভার্স  প্রতি মুহূর্তে একে অপরের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে কারণ তাদের মধ্যবর্তী স্থান ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে।






Brane Multiverse নিয়ে আমরা ”মাল্টি ডাইমেনশন” সম্পর্কিত একটি পৃথক ব্লগে আলোচনা করব.

বাকি মহাবিশ্ব গুলো কত দূরে অবস্থিত?


সুতরাং, The Hidden Reality বই অনুযায়ী, Quilted Multiverse-এ অন্যান্য মহাবিশ্বগুলো আমাদের তুলনায় অকল্পনীয় দূরত্বে অবস্থিত। Inflation Multiverse-এ অন্যান্য মহাবিশ্বগুলো আমাদের বাবল ইউনিভার্সের বাইরে অবস্থিত এবং Brane Multiverse-এ অন্যান্য মহাবিশ্বগুলো সম্ভবত আমাদের খুব কাছাকাছিই অবস্থিত, কিন্তু ভিন্ন ডাইমেনশনে অবস্থিত। কাছাকাছি অবস্থিত হলেও সেখানে পৌঁছানোর জন্য আমাদের মহাবিশ্বের সাপেক্ষে এক কথায় অসম্ভব দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে।

সনাতন হিন্দুশাস্ত্রে
''Multiverse''


উপরে আমরা আলোচনা করলাম মাল্টিভার্স নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের কিছু হাইপোথিটিক্যাল অবজারবেশন। এখন দেখা যাক, আমাদের সনাতন ধর্মগ্রন্থে এ বিষয়ে কী বলেছে!

গর্গ সংহিতা ১/২/২৮ এ, মাল্টিভার্সের উল্লেখ রয়েছে।

ब्रह्माण्डम् एकं जानन्ति
यत्र जातास् तथा जनाः
मषका च यथान्तः-स्था
औडुम्बर-फलेषु वै

brahmāṇḍam ekaṃ jānanti
yatra jātās tathā janāḥ
maṣakā ca yathāntaḥ-sthā
auḍumbara-phaleṣu vai

brahmāṇḍam—universe; ekam—one; jānanti—know; yatrawhere; jātāḥ—born; tathā—so; janāḥ—people; maṣakāḥ—mosquitoes; ca—also; yathā—as; antaḥinside; sthāḥ—staying; auḍumbara-phaleṣu—in uḍumbara fruits; vai—indeed.

English translation of verse 1.2.28:

You know one universe. Living entities are born in many universes, like mosquitoes in many uḍumbara fruits.




যোগ বশিষ্ঠ রামায়ণে মাল্টিভার্স সম্পর্কে আলোচনা অনেক গভীরে যায়। শ্লোকঃ ৩/৩০/১৬-১৭ এবং ৩/৩০/৩৪-এ নিম্নলিখিত বর্ণনা পাওয়া যায়

16. Every thing that is any where, is produced from and subsists in space. It is always all in all things, which are contained as particles in it.

17. Such is the pure vacuous space of the Divine understanding, that like an ocean of light, contains these innumerable worlds, which like the countless waves of the sea, are revolving for ever in it.

34. There are many other large worlds, rolling through the immense space of vacuum, as the giddy goblins of Yakshas revel about in the dark and dismal deserts and forests, unseen by others.


এমনকি যোগ বশিষ্ঠ রামায়ণ বিভিন্ন মহাবিশ্বের বিভিন্ন অবস্থার বর্ণনাও প্রদান করে। শ্লোকঃ ৩/৩০/১৮-২৪ এ সেই বিষয়ে জানা যায়।

18. Some of these are hollow within, and others as dark as the darkness in the end of a kalpa age: and they are all moving about in the ocean of vacuity, like the waves of the sea.

19. Some of these are whirling about with a jarring noise for ever, which is neither heard by nor known to any body. It is like the motion of men addicted to earthly pursuits by their nature.

20. Some of these are now growing in form, as if they were newly created, and are in the course of their development, like sprouts in the cells of seeds newly sown in the ground.

21. Some of these are melting away as icicles under heat, like the mountains that were melted down by the burning sun and heavenly fire, at the dissolution of the world.

22. Others have been continually falling downward without gaining the ground, till at last they dwindle away, and melt into the divine Intellect.

23.Others are as immovable in the air, as the animalcule in the water, which are moved to and fro by the wind, without any sign of motion or sensation in them.

24. Again nothing is stable in nature, but every thing is as changeful as the acts and usages enjoined in the Vedas and Sastras, are altered and succeeded by others.


ভাগবত পুরাণের /১১/৩৯-৪১ শ্লোকগুলোতে পাওয়া যায়,

 "সবকিছু একত্রে যাঁর মধ্যে পরমাণুর মতো দৃষ্ট হয় এবং যাঁর মধ্যে এমন কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড অবস্থান করছে তিনিই পরমাত্মা পরমপুরুষ শ্রীবিষ্ণু।" 

এই শ্লোকে স্পষ্ট বলছে যে পরমাত্মা সমগ্র মহাবিশ্বে ব্যপ্ত হয়ে আছেন সেখানে অবস্থান করছে কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড তথা ইউনিভার্স। 

ভাগবত পুরাণের /১৬/৩৭ শ্লোকে পাওয়া যায়,

 "এই ব্রহ্মাণ্ডকোষ পূর্ব পূর্ব উত্তরোত্তর দশগুণ অধিক ক্ষিতি প্রভৃতি সপ্ত পদার্থ দ্বারা আবৃত ঘটে, কিন্তু এই রকম কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডসহ এই ব্রহ্মাণ্ড আপনার কাছে পরমাণুর মতো হয়ে পরিভ্রমণ করে, তাতেও আপনার সীমা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ আপনি অনন্ত।"

এই শ্লোকে স্পষ্ট হয়েছে যে এই মহাবিশ্ব অনন্ত, তার কোন সীমা নেই। পরমাত্মাই ব্যপ্ত হয়েছেন এবং তাঁকে কেন্দ্র করে রয়েছে কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড যারা প্রতিনিয়ত বিস্তার লাভ করছে।

ভাগবত পুরাণের //৫৬ শ্লোকে পাওয়া যায়,

 "পরমেশ্বরে ব্রহ্মাদিরূপ জীবসকল এবং তাঁদের উপাধিভূত ব্রহ্মাণ্ডসমূহ এবং তদনুরূপ অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড যথাকালে উদ্ভব হয় এবং পরিশেষে লয়প্রাপ্ত হয়। সেগুলোর চিহ্নমাত্র থাকে না, সেখানে হাজার হাজার ব্রহ্মা আসা-যাওয়া করে।" 

এই শ্লোকে স্পষ্ট হয়েছে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হচ্ছে আবার একসময় সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড ব্যপ্ত হয়ে আছে পরমেশ্বরের মধ্যে। 

ভাগবত পুরাণের ১০/৮৭/৪১ শ্লোকে পাওয়া যায়,

 "হে পরমাত্মা, আকাশে-বাতাসে যেমন অসংখ্য ধুলিকনা উড়ে বেড়ায়, তেমনভাবেই আপনার মধ্যে কালের গতিবেগে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড একসঙ্গে পরিভ্রমণ করে থাকে। অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডকে ধারণ করে রাখা আপনার কোন সীমা নেই, অন্ত নেই"

 ভাগবত পুরাণের ১১/১৬/৩৯ শ্লোকে পাওয়া যায়,

 "যদি আমি গণনা করতে আরম্ভ করি তাহলে হয়তো পরমাণুসমূহের গণনাও সম্ভব হতে পারে কিন্তু আমার বিভূতিসমূহের গণনা সম্ভব নয়। কারণ যখন আমার সৃষ্ট কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের গণনাও সম্ভব নয় তখন আমার বিভূতিসমূহের গণনা করা কেমন করে সম্ভব হবে।" 

এই শ্লোকে স্পষ্ট হচ্ছে এই মহাবিশ্বে পরমাত্মা হতে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত যার সবই পরমাত্মার প্রকাশ (বিভূতি) কিন্তু ব্রহ্মাণ্ডের সংখ্যা অসংখ্য যা গণনা করাও সম্ভব নয়। 

সাত্বত তন্ত্র মতে, ”কারণ সমুদ্রে” শয়নে থাকা মহাবিষ্ণু সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের উৎস। যখন তিনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, তখন অসংখ্য মহাবিশ্ব তার শরীরের ছিদ্র থেকে বুদবুদ আকারে উত্পাদিত হয়। এটাকে বলা হয় 'সৃষ্টি'। এটি কিছু অংশে, Inflation Multiverse তত্ত্বের বাবল ইউনিভার্স – এর সাথে সাদৃশ্য দেখায় এবং যখন তিনি শ্বাস গ্রহণ করেন, তখন সমস্ত মহাবিশ্ব তার দেহে ফিরে এসে মিলিয়ে যায়। একে বলা হয় 'বিলুপ্তি'।   প্রতিটি মহাবিশ্বে মহাবিষ্ণু "গর্ভদকশায়ী বিষ্ণু" হিসাবে বাস করেন এবং তাঁর নাভিকমল থেকে ব্রহ্মা আবির্ভূত হন




এছাড়াও  ব্রহ্মা সংহিতাঃ ৫.৪৭ এ অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।  


রামায়ণে পাওয়া যায় ত্রিশঙ্কুর জন্য এই মহাবিশ্বের মধ্যেই ঋষি বিশ্বামিত্রের নিজস্ব আরেকটি জগত প্রস্তুত করার ঘটনা। বিজ্ঞানের ভাষায় এই ঘটনাকে বলে “পকেট ডাইমেনশন”



যদিও বিজ্ঞানের জগতে এখনো এটি একটি থিওরী মাত্র।পকেট ডাইমেনশনের কোনো গাণিতিক ব্যাখ্যা বা প্রমাণ আজ পর্যন্ত নেই। 

তবে রামায়ণের আদিকাণ্ড, সর্গ –৬০ তে পকেট ডাইমেনশন তৈরির অনুরূপ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। ক্রিটিক্যাল এডিশনেও রয়েছে এই বিষয়ের বর্ণনা।

Valmiki Ramayana, Critical Edition, Chapter- 1 (59)

Thus, addressed by the great Indra, Trishanku started to fall down again. He screamed out to Vishvamitra, the store of austerities, “Save me.” Hearing his loud wails, Koushika became extremely angry and said, “Stay there. Stay there.” He was like another Prajapati. In the midst of the sages, along the southern direction, the energetic one created another group of saptarshis. Senseless with rage, in the midst of the sages, the extremely illustrious one then started to create garlands of nakshatras, located in the southern direction. Tainted by his rage, he created generations of nakshatras.I will create another world with an Indra, or perhaps it doesn’t need an Indra.” In his anger, he started to create another set of gods. The large number of rishis and the bulls among the gods were extremely terrified at this.

একই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় দেবী ভাগবতের ৭ম স্কন্ধের ১৪ তম অধ্যায়ে এবং স্কন্ধ পুরাণের নাগর খণ্ডের অধ্যায় ২-৭ এর মধ্যে। এর মাঝে ৭ম অধ্যায়ে বিশ্বামিত্র সৃষ্ট নতুন মহাবিশ্বের বেশ কিছু বর্ণনাও পাওয়া যায়।

 


সর্বশেষ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও উল্লেখ পাওয়া যায় বহু সংখ্যক প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা এবং শ্রী চৈতন্যচরিতামৃতে পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণ ও বহু মহাবিশ্বের বহু ব্রহ্মার কাহিনী।

© SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি।
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ