সাম্প্রতিক সময়ে একটা পোস্ট খুব ভাইরাল হয়েছে যে ইজরায়েলের ব্যাবহৃত আইরন ডোম প্রযুক্তির সাথে মহাভারতের যুদ্ধে ব্যবহৃত আকাশেই নিস্ক্রিয় করে দেওয়া অস্ত্রের তুলনামূলক উপস্থাপনা।
এই বিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই তুলনামূলক আলোচনার পক্ষে অবস্থান করবো এবং তার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি ও কারণ তুলে ধরবো। সম্পূর্ণ পোস্ট ভালো করে না পড়ে কেউ দয়াকরে কোন উপসংহার টানবেন না।
আইরন ডোম একটি অত্যাধুনিক প্রচলিত প্রযুক্তি যার মাধ্যমে আকাশে ছুড়ে দেওয়া মিসাইল আকাশেই নিস্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। মহাভারতের যুদ্ধেও বিভিন্ন অস্ত্রের ব্যবহার দেখানো হয়েছে যে আকাশে ছুড়ে দেওয়ার পর সেগুলো আকাশেই নিস্ক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অস্ত্রের প্রয়োগে এমন এক প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করা হতো যেখানে প্রতিপক্ষের ছুড়ে দেওয়া গুচ্ছ গুচ্ছ অস্ত্রের সম্ভার সেই ব্যূহ ভেদ করতে পারতো না। আধুনিক যুগের আইরন ডোমও অনুরূপ কাজ করতে সক্ষম।
প্রশ্ন আসতে পারে যে তবে কি মহাভারতের যুদ্ধে আইরন ডোম ব্যাবহৃত হয়েছিল?
না, অনুরূপ যন্ত্রের প্রয়োগ না-ও হতে পারে কিন্তু অনুরূপ প্রযুক্তির প্রয়োগ অবশ্যই প্রাসঙ্গিক৷ আবার প্রযুক্তির প্রক্রিয়াগত ভিন্নতাও থাকতে পারে।। মনে রাখতে হবে যন্ত্র হলো প্রযুক্তির আউটপুট মাত্র। আপনি পাথরে ঘষেও আগুন ধরাতে পারবেন আবার দিয়াশলাই দিয়েও। প্রক্রিয়ার ভিন্নতা থাকলেও ফলাফল কিন্তু অভিন্ন।
★ প্রযুক্তি কি?
প্রযুক্তি হল কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার সমষ্টি যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে অথবা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়। যন্ত্রকৌশল প্রযুক্তির একটা অংশমাত্র। একই প্রযুক্তির ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্র থাকতে পারে আবার ভিন্ন ভিন্ন প্রযুক্তির অভিন্ন ফলাফলও (আউটপুট) হতে পারে।
প্রাচীন ভারত অবশ্যই অন্য যে কোন সভ্যতা থেকেই তুলনামূলক ভাবে উন্নত ছিল তা এখন প্রায় সব বিজ্ঞানীরাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন এবং "আশ্চর্যজনক" বলে বক্তব্য প্রধান করেন।
বর্তমান ভারত কেন পারে না!' বলে তাচ্ছিল্য করার আগে এটাও জেনে রাখুন যে পৃথিবীর প্রথম দুটো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান রাওয়ালপিন্ডি, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী) ও নালন্দা( বর্তমান বিহার, খ্রিস্টিয় ৩য় শতাব্দী) এই ভারতবর্ষেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
[https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/...]
প্রাচীন ভারতের উন্নত সভ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস, চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাঙ'র বিবরণ পড়তে পারেন।
এছাড়া পাণিনির ব্যাকরণ, মহর্ষি সুশ্রুতের শল্যচিকিৎসা (সুশ্রুত সংহিতা), কণাদের পরমাণু, আর্যভট্টের শূণ্য, বরাহমিহিরের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পঞ্চসিন্ধান্তিকা, ব্রহ্মগুপ্তের ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্ত (উপপাদ্য, আধুনিক গণিত, অভিকর্ষ ধারণা, শূণ্য, জ্যোতির্বিদ্যা), ভাস্করাচার্যের 'পাই'র মান বা দ্বিঘাত সমীকরণ, নৃত্য-কলা-ছন্দ-অলংকার, অত্যাশ্চর্যজনক স্থাপনা (স্থাপত্যশৈলী) হিসেবে প্রাচীন মন্দিরগুলো এখনও প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে।
[https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/...]
পরবর্তীতে হুনদের আক্রমণে তক্ষশিলা ও বখতিয়ার খিলজির আক্রমণে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস না হলে এবং সেই সাথে সমস্ত প্রাচীন পুঁথি-গ্রন্থ এবং গবেষণাপত্র ধ্বংস না হলে আধুনিক ভারতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতো।
এখন কেউ যদি বলে আধুনিক প্রযুক্তি অধিক উন্নত এবং প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তি কেবল রূপকথার গল্প তাহলে প্রশ্ন ত আসবেই যে প্রাচীন সকল প্রযুক্তির ব্যাখ্যা কি তথাকথিত আধুনিক প্রযুক্তির স্থুল বিশ্লেষণে দেওয়া সম্ভব?
উত্তর আমেরিকার সামান জনগোষ্ঠী যে এখনও নিজেদের শরীরকে ভাসমান রাখতে পারে (লেভিটেশন) অনেক সময় ধরে (ভারতেও এমন জনগোষ্ঠী আছে) এবং ভারতীয় যোগদর্শনে লঘিমা সিদ্ধির মাধ্যমে লেভিটেশন সম্ভব সেটা ত হাজার হাজার বছর আগেই প্রাচীন ভারতে উপলব্ধ সেটা কি তথাকথিত আধুনিক প্রযুক্তি স্থুল বিশ্লেষণে ব্যাখ্যা করা যায়?
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও আশ্চর্যজনক মনোলিথিক স্ট্রাকচার কৈলাস মন্দিরের ব্লু প্রিন্ট থেকে দেখা যায় এই মন্দির কর্ণাটকের ভিরুপাকশা মন্দিরের হুবুহু নকশা থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে।। কিন্তু কৈলাশ মন্দির ত পাহাড়ের চুড়া থেকে কেটে কেটে লাখ লাখ টন পাথর অপসারণ করে একটিমাত্র মনোলিথিক স্ট্রাকচার বানানো বিশালাকার মন্দির!! কোন প্রযুক্তিতে এই নকশা করা হয়েছিল এবং কিভাবে সেটা এক্সিকিউট করা হয়েছিল অথবা কিভাবে এই মন্দিরের নকশা অন্য একটি মন্দিরের সাথে হুবুহু মিল রাখা গেলো? এই অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছিল কিন্তু ১২০০ বছর আগের প্রাচীন ভারতে।
[https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/...]
সভ্যতার ধ্বংস হলে প্রযুক্তিও কিন্তু হারিয়ে যায়। সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতা থেকে হয়তো অনেককিছুই প্রমাণ করা সম্ভব হয় না।। সপ্তসিন্ধু রিজিয়নের হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, মেহেরগর সভ্যতা কিন্তু অনেক উন্নত ছিল৷ সেসময় পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নাকি খুবই উন্নত ছিল অথচ সেই একই অঞ্চলের মানুষই পরবর্তীতে শত শত বছর মাঠে টয়লেট করেছে।। এখন দুইভাবেই চিন্তা করা যায় যে সিন্ধুসভ্যতার মানুষও মাঠে টয়লেট সারতো আবার এটাও বলা যায় সেসময় চমৎকার টয়লেট ব্যবস্থা ছিল।।
ভারতের বৃহদাশ্বরা মন্দিরের চুড়ায় (ভারতের সবচেয়ে উচু মন্দির) একটা ৮০ টন ওজনের গ্রানাইটের কলস আছে।। এখন প্রশ্ন হতে পারে প্রায় ৬৬ মিটার উপরে ৮০ টনের একটা গ্রানাইটের কলস কিভাবে তোলা হয়েছিল? এর উত্তরে আমরা বলতে পারি এক্যুয়েস্টিক লেভিটেশন প্রযুক্তির ব্যবহার যেটা হাজার বছর আগেই প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তিবিদরা করে গেছেন।।
[https://youtu.be/qde-GgTU0Pk]এক্যুয়েস্টিক লেভিটেশন প্রযুক্তির ব্যবহার যে বৃহদাশ্বরা মন্দিরে হয়েছে সেটার প্রমাণ এই ভিডিওতে স্পষ্ট।।
[https://youtu.be/AD7E0UAQ-Wk]
প্রাচীন ভারতের মন্দিরগুলোতে যে উন্নত সব প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে তার গবেষণালব্ধ প্রমাণ পেতে ইউটিউবে PraveenMohan(https://youtube.com/c/Phenomenalplacetravel) কে অনুসরণ করতে পারেন।।
বলা হয়ে থাকে যে প্রায় ৭০০-৮০০ বছর আগে ইউরোপে সর্বপ্রথম কম্পাস আবিস্কার হয়। তাহলে প্রশ্ন আসবে যে ৯০০ বছরের প্রাচীন অঙ্কোরভাট মন্দিরে ০% ইররে (ত্রুটি) কিভাবে সম্পূর্ণ মন্দিরের (প্রায় ৪০০ একর এলাকাজুড়ে) নিখুঁত এলাইনমেন্ট করা হয়েছিল যেটা আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েও সহজসাধ্য নয়।
প্রায় ৯০০ বছর আগে অঙ্কোরভট মন্দিরের প্রধান চেম্বারে সোলার প্যানেল থাকার সম্ভাবনা কিংবা Crystal Quartz Radio frequency যন্ত্রের ব্যবহার কি উড়িয়ে দেওয়া যায়?
[https://youtu.be/__n2X0pNp5E]
[https://youtu.be/ww87vr4lrjI]
এখন আধুনিক যুগের স্বঘোষিত যুক্তিবাদীদের বক্তব্য এই যে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট লজিক্যাল হতে হবে এবং বিশ্বাস সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আমি একমত তাদের সাথে।। এখন তাহলে এই স্ট্যাটমেন্টের উপর ভিত্তি করে একটু আলোচনা করি।
১৭৯৩ সালের দিকের কথা বলছি, ডাক্তার স্কট নামের একজন চিকিৎসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন আরভাইনের কাছ থেকে এক অদ্ভুত গল্প শুনলেন। তখন চৌর্যবৃত্তিসহ বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসেবে অপরাধীদের নাক কেটে দেওয়া খুব প্রচলিত সাজা ছিলো। ফলে ভুক্তভোগীকে আজীবন এই লজ্জা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হতো।
কিন্তু ক্যাপ্টেন আরভাইন জানালেন, পুনের ‘কুমার’ সম্প্রদায়ের ভেতর এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিখুঁতভাবে কাটা নাক সারিয়ে দিতে পারে। তবে তাদের নিজেদের উদ্ভাবন নয় এই অস্ত্রোপচার। বহু বছর ধরে বংশপরম্পরায় অর্জন করেছে এই জ্ঞান। কবে কে উদ্ভাবন করেছিলো এই পদ্ধতি, তারা নিজেরাও জানে না!
এর সমাধান আছে মহর্ষি সুশ্রুত রচিত সুশ্রুত সংহিতায়।। তিনি ছিলেন শল্যচিকিৎসার জনক এবং তাঁর রচিত গ্রন্থে ৩০০+ অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামের বর্ণনা আছে। এই ঘটনা প্রায় ১৫০০-১৬০০ বছর আগের কিন্তু আপনারা আধুনিক সার্জারির জনক বানিয়ে দিলেন জন হান্টারকে।।
What is the defination of modern surgery? কুমার সম্প্রদায়ের মানুষজন যেটা করতো সেটা কি ঘাস কাটা ছিল?
এখন সুশ্রুত সংহিতার পান্ডুলিপি না পেলে কিংবা কুমার সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব খুজে না পেলে এটাও গালগল্প মনে হতো যে হাজার বছর আগেই ভারতীয়রা কিভাবে নিখুঁত অস্ত্রোপচার করতে পারতো!!
আকাশে উড়ন্ত রথের প্রসঙ্গেও ব্যপক আলোচনা হয় যে, দিব্যশক্তিতে আকাশে রথ উড়ে যাচ্ছে সেটা সনাতনীদের গ্রন্থে উল্লেখিত ঘটনা এবং তাদের বিশ্বাসমাত্র।৷ ঠিক আছে, মেনে নিলাম।।
আমি যদি এখন এটা বিজ্ঞানের সাথে মিলাইতে চাই তাহলে আপনি আপত্তি কেন করবেন? যদি আপত্তি করেন তবে আমি কিছু বিষয়ের উত্তর চাইবো।
মহাভারতের যুদ্ধে একজন গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা ছিলেন গুরু দ্রোণাচার্য।। তিনি আবার ছিলেন কুরুপাণ্ডব সকলের অস্ত্রগুরু।।
তার পিতা কে ছিলেন জানেন?
জগদ্বিখ্যাত বিমানাশাস্ত্রের রচয়িতা মহর্ষি ভরদ্বাজ।
মহর্ষি ভরদ্বাজ তাঁর বিমানাশাস্ত্র গ্রন্থে অনেকগুলো বিমানের গঠন, প্রযুক্তি, জ্বালানি উল্লেখ করে গেছেন। কয়েকটা বিমানের প্রযুক্তি ত এমন যা এখনও আবিস্কারই হয় নি। তাহলে মহর্ষি ভরদ্বাজের সেই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে কোন বিমান নির্মাণ হয় নি কিংবা সেই বিমান আকাশে উড়ে নি তার নিশ্চয়তা কে দিবে? ভারতের একজন নারী বিমান বিজ্ঞানী (Aeronautical Engineer) কাব্য ভালুরি নাসার প্রপোজাল উপেক্ষা করে মহর্ষি ভরদ্বাজ রচিত বিমানাশাস্ত্র থেকে একটু বিমান বানানোর কাজ শুরু করেছে।।
[https://www.organiser.org/.../Looking-to-the-Past-for...]কে জানে আকাশে হয়তো বিমান উড়তো কিন্তু মুসলিম শাসক, ইংরেজ শাসক, কংগ্রেস শাসকরা সেই ইতিহাস ও প্রমাণাদি মুছে দিয়েছে কিনা! তারা ত তালপাত্তের প্রথম বিমান উড্ডয়নের ইতিহাসও মুছে দিয়েছে।।
হাজার বছরের বিবর্তন এবং বহি আক্রমণ ও আগ্রাসনে আমাদের স্বর্ণময় অতীতের অনেককিছুই হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়৷ সেই মহর্ষি ভরদ্বাজ পরিবর্তী ভারতে আইরন ডোম প্রযুক্তির মতো উন্নতি প্রযুক্তির অস্ত্রসস্ত্র থাকবে না সেটাও ত জাস্টিফাইড না।
আধুনিক বিজ্ঞানে জ্যোতির্বিদ্যার হাটাহাটি শুরু হয়েছে ১৭ শতকে। তার আগে কিছু ছিল না? তবে ১৫০০ বছর আগের ঋষি ও মহাবিজ্ঞানী বরাহমিহিরা রচিত পঞ্চসিন্ধাতিকা নিয়ে একটু স্টাডি করে নেওয়া প্রয়োজন। জ্যোতির্বিদ্যা ও আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে উনার যে স্টাডি সেগুলো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও ব্যাখ্যা করা কঠিন অথচ তার সকল পর্যবেক্ষণই ছিল প্রায় নির্ভুল।
তাহলে মানতে হবে যে উনার কাছে হয় বর্তমান প্রযুক্তি থেকেও আধুনিক কোন প্রযুক্তি ছিল নাহলে তিনি কারিশমা করতে জানতেন। যুক্তিবাদীরা নিশ্চয়ই উন্নত প্রযুক্তির পক্ষেই রায় দিবেন।
বরাহমিহিরা, তিনি ছিলেন ৫ম শতাব্দীর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বরাহমিহিরা, তিনি প্রাচীন ভারতের একজন গণিতবিদও ছিলেন। তিনি বর্তমান মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে ৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। গণিতশাস্ত্রে তাঁর অজস্র অবদানের মধ্যে একটি হল ত্রিকোণমিতির ধারণা দেওয়া। তিনি আরিয়াবতের সাইন টেবল নিয়ে কাজ করেন৷ প্যাসকেল টেবলের আদি ধারণাও বরাহমিহিরা প্রদত্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তিনি তাঁর লেখায় মঙ্গল গ্রহে জলের অস্তিত্বের কথাও বলেছিলেন।
বরাহমিহিরার লেখা জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ (Five Treaties)। পঞ্চাঙ্গে বিভক্ত এই গ্রন্থের একটি অংশের নাম‘সূর্যসিদ্ধান্ত'।
বাকিগুলো হচ্ছে বশিষ্ঠ সিদ্ধান্ত, পাউলিসা সিদ্ধান্ত, রোমাকা সিদ্ধান্ত ও পাইতাহামা সিদ্ধান্ত৷
এই গ্রন্থে বিভিন্ন গ্রহের আনুমানিক পরিধি পরিমাপ করেছিলেন বরাহমিহির। সূ্র্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে বরাহমিহিরের গবেষণা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূ্র্ণ। মঙ্গলের পরিধি গণনার ক্ষেত্রে মাত্র ১১ শতাংশ ত্রুটি ছিল বরাহমিহিরের। পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, মঙ্গল গ্রহে জল এবং লোহার অস্তিত্ব রয়েছে (অধ্যায়-১৮)। সাম্প্রতিক কালে নাসার প্রেরিত মঙ্গলযান কিউরিওসিটি মঙ্গল থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করে তা থেকে জানা যায়, বরাহমিহিরের দু'টি সিদ্ধান্তই ছিল নির্ভুল। জানা যায়, মঙ্গলে সত্যিই এক সময় জল ছিল, আর লোহা দিয়ে তৈরি একটি উল্কাপিন্ড মঙ্গলের মাটিতে আবিষ্কার করে নাসা মহাকাশযান কিউরিওসিটি।
বরাহমিহিরার আরেকটা অনবদ্য সৃষ্টি হচ্ছে "বৃহৎ সংহিতা"।
এই বইয়ে তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন বেশি৷
It covers wide ranging subjects of human interest, including astronomy, planetary movements, eclipses, rainfall, clouds, architecture, growth of crops, manufacture of perfume, matrimony, domestic relations, gems, pearls, and rituals.
তাই ১০৬ অধ্যায়ের এই পুস্তককে বলা হয় "মহান সংকলন"।
আধুনিক বিজ্ঞান আবহাওয়ার পূর্বাভাস করতে হিমশিম খায় অথচ আমাদের হিন্দু জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধির হিসেবনিকেশ করে ১০০ বছরের আবহাওয়া পূর্বাভাস দিয়ে দিতে পারে। (এইতো এই বছর মন্দির থেকে ৫০ টাকায় কেনা নবপত্রিকা দিনপঞ্জিতে বৈশাখ মাস নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস হুবুহু মিলে গেছে এমনকি ভূমিকম্পটাও যেটা আধুনিক বিজ্ঞান ভূমিকম্পের এক সেকেন্ড আগেও জানতো না)
এই যে প্রক্রিয়াটা এস্টাব্লিশড করা হলো যে কোনরূপ প্রযুক্তি ছাড়াই কেবল গণনা করেই বছরের পর বছর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে ফেলতেছে কিছু হিন্দু পন্ডিত সেই প্রক্রিয়াটা শুরু করার জন্য হয়তো এমন কোন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল যার নাগাল এখনও আধুনিক বিজ্ঞান পায় নি।
এখন প্রশ্ন আসবে প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান ছিল পর্যবেক্ষণ নির্ভর। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি বলতে কি কেবল আধুনিক ইন্সট্রুমেন্টের কথা বলা হচ্ছে? আধুনিক মোবাইল ছাড়াই প্রাচীন ঋষিরা দূরালাপনি করতে পারতো টেলিপ্যাথি কমিউনিকেশনের মাধ্যমে। তাহলে আমি ত বলতেই পারি যে আমাদের প্রাচীন অধ্যত্মবিদ্যা আরও বেশি এডভান্সড ছিল বর্তমান জড়বিদ্যা থেকে।। বিজ্ঞান বলতে ত আমি কেবল ইন্টস্ট্রুমেন্টকে বোঝায় না তাই না?
এখন এই আশ্চর্যজনক অস্ত্রের ধারণা মহাভারতে যদি কল্পনা থেকেও লিখে রাখা হয় তাহলে ত এটাও মানতে হয় যে হাজার বছর আগেই কত এডভান্সড কল্পনা করতে পারতো!
0 মন্তব্যসমূহ