আমি যেহেতু আইনের ছাত্র নই তাই আমি আইনগত বিশ্লেষণে যাবো না, আমি কেবল আমার অবস্থান থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবো।।
একটা সম্প্রদায়কে বা জাতিকে ধ্বংস করে দিতে হলে প্রথমে তাদের ভূমি দখল করো এবং তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করে দাও তবেই তাদের উপর সম্পূর্ণভাবে ডমিনেট করা সম্ভব এবং সেই জাতির স্বকীয়তা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা সম্ভব।।
একে একে কিছু বিষয় তুলে ধরি।।
দশম শতাব্দীর আগ অব্দি ভারতবর্ষের ভূমি ও সংস্কৃতি ছিলো সমগ্র বিশ্বে মহামূল্যবান।। আমাদের সভ্যতা ছিলো অন্য যেকোনো সভ্যতার তুলনায় বহুগুণ উন্নত এবং আমাদের পূর্বজরা ছিলেন সর্বক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য।। একাদশ শতকের আগে বহু আক্রমণ ও লুটপাটের ঘটনা থাকলেও ভারতবর্ষ ছিলো সভ্য সংস্কৃতির একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু এবং উন্নতির ধারা ছিলো অব্যাহত। একাদশ শতক থেকে ভারতবর্ষ দখলের অর্থাৎ ভারতের ভূমি দখলের বিরামহীন প্রক্রিয়া শুরু হয়।।
সম্পদ লুটপাটই ত যথেষ্ট ছিলো তাহলে ভূমি দখলের প্রয়োজনীয়তা কেন হলো?
আগেই বলেছিলাম কোন সম্প্রদায় বা জাতীকে জয় করতে হলে তার ভূমি ও সংস্কৃতিকে জয় করে নিতে হয়।। ভারতের বিভিন্ন অংশে লুটপাট করার পরও যখন ভারতকে অধিকার করা যাচ্ছিলো না এবং ভারতীয় সভ্যতার অগ্রগতিকে থামানো যাচ্ছিলো না ঠিক তখনই বহিঃশত্রুরা কেবল সম্পদ লুটপাটের কৌশল ত্যাগ করে ভারতের ভূমি দখল করার দিকে মনোনিবেশ করলো।। তারা শুরুতে সফল হচ্ছিলো না তাই তারা ভারতীয় লোভী হিন্দুদের এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে পরিশেষে সফলও হলো। সেই ধারাবাহিকতায় তারা দিল্লি দখল করে নিলো।। ভারতবর্ষের যতটুকু করে ভূমি তাদের দখলে গেলো ভারতের হিন্দুরা তত বেশি দুর্বল হতে লাগলো।
ধীরে ধীরে তারা ভারতের বেশিরভাগ ভূমিই দখলে নিয়ে নিলো এবং ভারতীয় হিন্দু রাজারা কার্যত শক্তিহীন হয়ে পড়লো।। তারা ভূমি দখলের পাশাপাশি হিন্দুদের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ভারতের মন্দিরগুলোকে হয় ধ্বংস করলো না'হয় দখল করে নিলো। পাশাপাশি তার ভারতের গুরুকুল, নালন্দা ও তক্ষশীলার মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও ধ্বংস করে দিলো যাতে ভারতের সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া যায়।।
এখানে খুব স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ এই যে তারা আমাদের ভূমি ও সংস্কৃতিকে দখল করে আমাদের পূর্বজদেরকে কিভাবে শক্তিহীন করে দিয়েছিলো সেটা নিয়ে আজও গবেষণার প্রয়োজন আছে এবং চলমান বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখাও আবশ্যক।।
ভারতের বেশিরভাগ ভূমি ও ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতিকে যখন অধিকার করে নেওয়া গেলো তখন তথাকথিত মহান (স্যাকুলার ইতিহাস পাঠের প্রভাব) সম্রাট আকবর সমন্বয় ভিত্তিক এক নতুন সংস্কৃতির গোড়াপত্তন শুরু করার চেষ্টা চালালো এবং ধীরে ধীরে ভারতীয় সংস্কৃতির স্বকীয়তাকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেলো।।
ভারতীয় হিন্দুরা তাহলে কিভাবে কাম-ব্যাক করলো?
হিন্দুদের ভাগ্যদ্ধোরে ভারতমাতার গর্ভে জন্ম নিলো ভবানী পুত্র (সকল হিন্দুই ভবানী পুত্র) শিবাজি মহারাজের।।
তিনি কি করেছিলেন?
তিনি কিন্তু প্রতিবাদের নামে সময়ের অপচয় করেন নি। তিনি সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ভারতের ভূমি ও সংস্কৃতি পুনঃদ্ধারের।। এর পরবর্তী সকল হিন্দু বীরেরাই কিন্তু একই পথে হেটেছেন কারণ তারা সকলেই ভূমির মূল্য অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।। অর্থাৎ ভারতমাতাকে শক্তিশালী করতে হলে ভারতভূমিকে অধিকার করতে হবে আগে এবং ভারতের সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।।
মারাঠারা ততদিন অব্দি মোঘলদের আতংকের কারণ ছিলো না যতদিন অব্দি তারা তাদের অধিকারকৃত ভূমির পরিমাণ বাড়াতে পেরেছিলো।।
অর্থাৎ শক্তি ও অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে ভূমি ও নিজস্ব সংস্কৃতির গুরুত্ব সর্বাগ্রে।
ইংরেজদের আগমনের আগ অব্দি এই ভূমির লড়াইয়ে যারা যারা জিতেছে তারাই এগিয়ে থেকেছে অস্তিত্ব রক্ষায়। ইংরেজরা এলো এবং তারাও একই কাজ করলো অর্থাৎ তারাও ভারতের ভূমিই দখল করার চেষ্টা চালালো ধীরে ধীরে। ভূমি দখলের পাশাপাশি তারা ভারতের সংস্কৃতিকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা চালালো এবং ব্রিটিশ সংস্কৃতির স্লো পয়জন ঢুকিয়ে দিলো কৌশলে যা এখনও চলমান আমাদের চিন্তাভাবনায় ও অদূরদর্শিতায়।। বৃহত্তর ভারতের বৃহত্তর হিন্দু জনগোষ্ঠী সতীদাহ নামক প্রথার প্র্যাক্টিস না করলেও সেই দায় সমগ্রঃ হিন্দুজাতি ও হিন্দু সংস্কৃতির উপর চাপিয়ে দিয়ে সেটাকে সংস্কারের নামে দেবদূত সাজার মিথ্যা নাটক মঞ্চস্থ করলো এবং ভারতীয় সংস্কৃতির বহু মৌলিক বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে সংস্কারের নামে বহু সনাতন শাস্ত্রের মনগড়া ট্রান্সলেশনও করিয়ে নিলো।।
অনেকে বলার চেষ্টা করে যে ব্রিটিশরা হিন্দুদের ত্রাতা হিসেবে এসে হিন্দুদের উদ্ধার করেছে।৷ আসলে ব্রিটিশ ও তাদের দালালরা ইতিহাসকে ঠিক সেভাবেই সাজিয়েছে এবং আমাদের মাইন্ড সেটও সেভাবেই করা হয়েছে ব্রিটিশদের গেঁথে দেওয়া স্লো পয়জনের কারণে।।
ইংরেজরা চলে যাওয়ার সময় হিন্দুদের কফিনে শেষ পেড়েকটা ঠেসে দিয়ে গেলো ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের নামে। অর্থাৎ ঘুরেফিরে আবার সেই ভূমির হিসেব।৷
হিন্দুস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হলো হিন্দু বিদ্বেষী একটা পক্ষকে যাদের পরবর্তী কার্যক্রমে সেটা স্পষ্ট।। দেশভাগের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ভূমির অধিকারকেই মূলত সংকোচিত করা হয়েছিল এবং পরিস্থিতির মাধ্যমে নিশ্চিত করার হয়েছিল যে বেশিরভাগ হিন্দুই পাকিস্তান ত্যাগ করেছিলো এবং খুব অল্পসংখ্যক মুসলিমই ভারত ছেড়েছিলো। দেশভাগের মাধ্যমে ভারত তার সংস্কৃতি ও সভ্যতার কেন্দ্রভূমি সপ্তসিন্ধু সভ্যতার বেশিরভাগ ভূমিই পাকিস্তানের অধিকারেই তুলে দিলো যেটা সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনারই অংশ যার ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানিরা হরপ্পা, সিন্ধু সভ্যতা এবং তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন নিজেদের বলে দাবী করতে পারে যা হিন্দু সংস্কৃতিকে অধিগ্রহণ করে নেওয়ারই বহিঃপ্রকাশ।।
পরবর্তীতে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।৷ একদিকে হিন্দু বিদ্বেষী রাষ্ট্রনায়করা ভারতে স্যাকুলারিজমের বীজ বপনের নামে হিন্দুর অধিকার ও ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং শিক্ষা ও অর্থনীতিতে হিন্দু সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ করেছে।।
অন্যদিকে পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর নেমে আসে নারকীয় নির্যাতন। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পর থেকে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায় এবং তাতে শুধুমাত্র হিন্দুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।। খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার হিন্দুদের ভূমি দখলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।। জেনে রাখা ভালো শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় না থাকলে পশ্চিমবঙ্গও পাকিস্তানের অধীনেই থাকতো এবং গোপাল পাঠা না থাকলে কলকাতাও হিন্দুশূন্য হতো। তবে তারা ভূমি দখলের পরিকল্পনা থেকে পিছপা হয় নি যার ফলশ্রুতিতে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী প্রায় ২০০+ গ্রাম এখন প্রায় হিন্দুশূন্য।।
১৯৪৭ থেকে ১৯৬৫ সাল অব্দি বিভিন্নভাবে বঙ্গভূমির সম্ভ্রান্ত হিন্দু এবং হিন্দু জামিদারদের ভারতে পুশ করা হলো এবং তাদের ভূমিগুলো দখলে নেওয়া হলো। অন্যদিকে ১৯৫৬ সালের দিকে ভারতের হিন্দু বিদ্বেষী তথাকথিত স্যাকুলার সরকার হিন্দু শাস্ত্রের উত্তরাধিকার আইনের দুইটি প্রায়োগিক ধারাকে ব্ল্যান্ড করে একটা নতুন ধারার সৃষ্টি করা হলো এবং ধর্মান্তরকে গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে প্রমোট করে হিন্দুদের ভূমিগুলোকে আইনিভাবেই বেদখলের সুযোগ করে দেওয়া হলো।। আর এদিকে বঙ্গভূমিতে ১৯৬৫ সালে করা হলো শত্রু সম্পত্তি আইনের মতো একটা কালো ধারা যাতে করে আইনগতভাবেই হিন্দুদের ভূমিগুলোকে অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়। জেনে রাখা ভালো যে, এই আইন করার ঠিক আগে পরিকল্পিত ধাঙ্গার মাধ্যমে বহু সম্ভ্রান্ত হিন্দুকে রিক্ত হস্তে ভারতে পুশ করা হয়েছে এবং তাদের ভূমি দখলকে আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়েছে।। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও কিন্তু হিন্দুদের দেশত্যাগকে বিভিন্নভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বহু সম্ভ্রান্ত হিন্দু জমিদারকে নির্বংশ করা হয়েছে পরবর্তীতে যাদের ভূমি সম্পত্তি দখলের আওতায় চলে গেছে।।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একটি তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর কি এই প্রক্রিয়া থেমে গেছে?
একদম না! ১৯৭৪ সালে শত্রু সম্পত্তি আইনকে নতুন মোড়কে অর্পিত সম্পত্তি আইন নামে আনা হয় এবং হিন্দুদের ভূমিহীন করার প্রক্রিয়ার চলমান রাখা হয়।। ১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ২০২১ সাল অব্দি এই প্রক্রিয়া একদিনের জন্যও বন্ধ হয় নি। ৯১ এর হিন্দু নির্যাতন, নাসিরনগর, রংপুর, মুরাদনগর ও শাল্লার ঘটনা সেই প্রক্রিয়ারই অংশ।। এই যে নতুন হিন্দু পারিবারিক আইন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেটাও হিন্দু ভূমি ও সংস্কৃতিকে অধিগ্রহণ করার আরেকটি নীলনকশা।। এই সত্যটা উপলব্ধি করতে আইন বুঝার প্রয়োজন নেই বরং ইতিহাসটা একটু ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলেই হয়।। আপাতদৃষ্টিতে আইনের খসড়ায় সমতার যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে আইনের মারপ্যাঁচে সেই চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যেতে খুব একটা সময় লাগবে না।। এর প্রমাণ পাওয়া যায় প্রথম আলোর ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটা রিপোর্টে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পনের নামে শুরু হয় আরেক প্রহসন।। রিপোর্টে দেখানো হয় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে আছে "ক" ও "খ" তালিকা মিলে প্রায় ৯ লাখ ৬২ হাজার একর হিন্দু ভূমি যদিও বাস্তবে সেটা ২২ লাখ একরের উপরে ধারণা করা হয়। এই নতুন আইনের পর ভূমি ফিরে পেতে আবেদন করেছে প্রায় ২ লাখের উপর হিন্দু এবং তারা ভূমি ফিরে পেতে ঘোষই দিয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০২০ এর আরেকটি রিপোর্টে দেখানো হয় আদালতে মামলাগুলোর নিস্পত্তির হার খুবই কম।। ভূমি ফিরে পেতে ২ লাখ পরিবার এখন বছরের পর বছর আদালত চত্ত্বর মারিয়েই পার করে দিতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।।
হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার নিয়ে কয়েক লাখ মামলার নিস্পত্তি না করে নতুন করে উত্তরাধিকার আইনের সংস্কার যে দুরভিসন্ধিমূলক সেটা অনুধাবনের সক্ষমতাও কি আমাদের নেই?
মনে রাখতে হবে ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর নিশ্চিহ্ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র যেমনটা পার্বত্য চট্টগ্রামের আধিবাসীরা হচ্ছে।৷ আদিবাসীদের ভূমি ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেই তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে যেমনটা কাশ্মির ও আফগানিস্তানেও হয়েছে।। ব্রিটিশ পূর্ববর্তী সময়ে দখলকৃত ভূমি পুনঃরুদ্ধেরর সুযোগ থাকলেও ব্রিটিশ পরবর্তী ভারতবর্ষে আইনগতভাবেই ভূমির হস্তান্তর নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ যে ভূমি একবার হাতছাড়া হবে সেই ভূমি আর ফেরত আসবে না।।
তাই যেকোনো আইনি সংস্কারের পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দেওয়ার আগে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবতাটাকে আগে অনুধাবন করতে হয়।। এই মূহুর্তে বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য হিন্দু সুরক্ষা আইন বেশি জরুরি অথচ আমরা লড়াই করতেছি হাজার বছরের চলমান প্রক্রিয়া সফল করতে!! এইজন্যই হিন্দুরা সবচেয়ে অপরিনামদর্শী জাতি এবং নিজের ভূমিতেই পরগাছা।।
আইন, আবেগ ও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন, ভিন্ন ও ভিন্ন।।
ভূমি বাঁচাও, অস্তিত্ব বাঁচাও।।
©স্টিমন অনিক
এই আইন সংস্কারের ক্ষতিকর দিকগুলো খুব যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছেন শ্রদ্ধেয় সুব্রত পাল স্যার।
প্রস্তাবিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের মারপ্যাঁচ।
সুপ্রভাত পাল
সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
"আমি একজন আইনের শিক্ষক ও ছাত্র হিসেবে যা বুঝি তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া জরুরি মনে করছি।
শুরুতেই বলে নিই, আমি পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অংশের পক্ষে একমত। প্রস্তাবিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সবথেকে আলোচিত অংশ এটি।
প্রথমেই একটি কথা বলে নেয়া দরকার তা হল এই খসড়াটি অত্যন্ত কাঁচা হাতের। আইন প্রণয়নের সময় প্রতিটি শব্দচয়ন ও ভাষা প্রয়োগে (এমন কি বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও) খুবই যত্নশীল হওয়া উচিত, যার প্রতিফলন এখানে ঘটেনি।
উদাহরণস্বরূপ, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার একটি পরিচ্ছেদ দেখা যাক।
গ. ধর্মান্তরিত ব্যক্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ
কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি গ্রহণ করার পূর্বে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ধর্মান্তরিত না হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশটি তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সমান অংশ পাবেন।
কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজরা (তৃতীয় লিঙ্গ) যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি গ্রহণ করার পর অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা ধর্মান্তরিত না হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন।
এখানে দুইটি বাক্যই যথেষ্ট অগোছালো। যেমন, প্রথমে বলছে কোন হিন্দু নারী, পুরুষ বা হিজড়া ধর্মান্তরিত হলে, সে পাবে না, কিন্তু তার স্ত্রী পুত্র ও কন্যা তার সম্পত্তির অংশ পাবে। এখানে ‘স্ত্রী’র পাশাপাশি ‘স্বামী’ শব্দটা ব্যবহারই করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, নারী ধর্মান্তরিত হলে তার স্বামীর ক্ষেত্রে কী হবে তা এ খসড়ায় বলা হয়নি। অর্থাৎ শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত পুরুষকে টার্গেট করে বাক্যটা লেখা হয়েছে। ধর্মান্তরিত নারীর জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে না কিনা তা ধোঁয়াশা থেকে গেছে। হিন্দু নারীদেরই যে বেশির ভাগ সময় ধর্মান্তরিত হতে দেখা যায়, এ তো সবাই জানে। সুতরাং হিন্দু নারী ধর্মান্তরিত হলে তাদের জন্য প্রচ্ছন্ন আনুকূল্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
হিসেব দাঁড়ায় যে, হিন্দু পুরুষ যদি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার পূর্বে ধর্ম পরিবর্তন করেন তবে তিনি সম্পত্তি পাবেন না, পাবে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা। খুবই ভাল কথা। কিন্তু দ্বিতীয় বাক্য অনুযায়ী, তিনি যদি সম্পত্তি পাওয়ার পর অন্য ধর্মের কোন নারীকে ভালোবেসে বিয়ে করতে কিংবা স্রেফ নিজের ইচ্ছায় হিন্দু স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে ত্যাগ করে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে চলে যান, তখন হিন্দু ধর্মে থেকে যাওয়া নিরপরাধ স্ত্রী, পুত্র-কন্যা পৈত্রিক সম্পত্তি পাবে না। কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়ার পরও পিতার সম্পত্তি হিন্দু পুরুষটিরই থাকবে। অন্যদিকে তার অহিন্দু স্ত্রী এবং তার গর্ভজাত পুত্র-কন্যাও ধর্মান্তরিত পুরুষের পিতার সম্পত্তির অধিকার পাবে। বঞ্চিত থাকবে তার প্রথম পক্ষের হিন্দু স্ত্রী-সন্তানরা। যে হিন্দু নারীদের প্রতি এত দরদ দেখিয়ে আইন করা হচ্ছে, সেই হিন্দু নারীরা কিন্তু বঞ্চিতই থেকে গেল।
মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, হিন্দু নারী বা পুরুষ তাদের স্বামী/স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাকে রেখে অন্যের সাথে ধর্মান্তরিত হয়ে চলে যায়। আবার ভিন্নধর্মে প্রেমের টানে আপনজনকে খুন কিংবা আইনি বা সামাজিকভাবে হয়রানি করার ঘটনাও ঘটে। আপনারা মনে হয় রংপুরের সেই প্রভাবশালী হিন্দু উকিলের কথা ভুলে যান নি, যার স্ত্রী এক মুসলিম সহকর্মীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে নিজের স্বামীকে মেরে মেঝেতে পুতে রেখেছিল। আবার কিছুদিন আগে দেখলাম, পিরোজপুরে এক হিন্দু পুরুষ তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যাকে রেখে ধর্মত্যাগ করে চলে গেছে। মুসলিম নারী বিয়ে করে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এই সকল ক্ষেত্রে এই খসড়া আইনের ভাষ্য অনুযায়ী পরিত্যাক্তা হিন্দু স্ত্রী ও তার সন্তানরা স্বামী ও শ্বশুরের কিছুই পাবে না, পাবে অন্য পক্ষের অহিন্দু স্ত্রী-সন্তানরা। আমার নিজের গ্রামের একটা ঘটনা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
আমাদের গ্রামের এক হিন্দু ডাক্তারের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল এক হিন্দু ছেলের সাথে। কিছু বছর সংসার করার পর এক অহিন্দু ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে মেয়েটা। এই ঘটনার পূর্বে ঐ ডাক্তার মারা যায়। যেহেতু মেয়ে হিন্দু থাকা অবস্থায় বাবা মারা গিয়েছিল, সেহেতু এই আইন যদি থাকত তবে সে সম্পত্তি পেত। আর পরে সে যখন অহিন্দু প্রেমিকের হাত ধরে চলে গেল, তখন তার সাথে সাথে বাবার থেকে পাওয়া সম্পত্তিও চলে যেত ঐ অহিন্দু স্বামী ও তার ঔরসে জন্ম নেওয়া অহিন্দু পুত্র-কন্যার কাছে। আর তার পূর্বের পক্ষের যে হিন্দু স্বামী ও পুত্র-কন্যা আছে তারা কিছুই পেত না।
এরপর আসি আর একটা মারপ্যাঁচে। খসড়াতে বলছে, অন্য ধর্ম গ্রহণ করলে সে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। নাহলে নয়। এক্ষেত্রে হিন্দু-অহিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বিয়ে হবে বেশি। তাহলে যে যার ধর্ম পালন করতে পারবে। যেহেতু সন্তান ধর্মান্তরিত হয়নি, সুতরাং উত্তরাধিকার সূত্রে মা-বাবার সম্পত্তি ঠিকই পেয়ে যাবে অহিন্দু বিয়ে করা সন্তানটি। সম্পত্তি পেয়ে যাওয়ার পর ওই সন্তানের অহিন্দু স্বামী/স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে যদি ধর্মান্তরের চাপ আসে এবং সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য কিংবা সঙ্গীর ধর্মবিশ্বাসে প্রভাবিত হয়ে তাদের ধর্ম গ্রহণ করতে হতেই পারে। সেক্ষেত্রেও হিন্দু পিতা-মাতার সম্পত্তির মালিকানা অহিন্দু পরিবারে চলে যাবে।
সবশেষে আইনের আর একটা প্যাঁচ খুলে দিই। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোন নারী বা পুরুষ সম্পত্তি পাওয়ার আগে অন্য ধর্মে যায়, কিন্তু তার স্বামী/স্ত্রী ও পুত্রকন্যা যদি ধর্মান্তরিত না হয় তবে ঐ ধর্মান্তরিত না হওয়া স্বামী/স্ত্রী ও তার পুত্রকন্যা সম্পত্তি পাবে, কেবল ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যক্তিটি সম্পত্তি পাবে না। ধরে নিন, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে রূপনগরের অহিন্দু রাজকুমারের সাথে বিয়ে করল। জ্যোৎস্না যেহেতু ধর্ম ত্যাগ করেছে তাই সে তার বাবার সম্পত্তি পাবে না। কিন্তু ঐ রাজকুরার তো তার ধর্ম ত্যাগ করেনি, সে তার পূর্বের ধর্মেই আছে (শুরু থেকেই তো সে অহিন্দু) তাই এই আইনের ভাষ্য অনুযায়ী সে জ্যোৎস্নার ভাগের সম্পত্তিটা জ্যোৎস্নার বাবার থেকে পাবে। যার জন্য জ্যোৎস্না নিজে বাবার সম্পত্তি পেল না, সে কিন্তু ঠিকই সম্পত্তি পাচ্ছে। নিজের পুত্রকন্যা ভিন্নধর্মী হলে সম্পত্তি পাবে না, কিন্তু তাদের স্বামী বা স্ত্রী ভিন্ন ধর্মী হলেও ঠিকই শ্বশুরের থেকে সম্পত্তি পাবে। এমনই বিদঘুটে হয়েছে এই আইন।
এইবার আসি মূল প্রসঙ্গে। নারীদের সম্পত্তি ভাগ নিশ্চিত করা এই খসড়ার মূল বক্তব্য। বিশেষ করে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারীদের জন্য। আমি এই যুক্তি এবং পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অংশের পক্ষে একমত। কিন্তু যে স্বামী পরিত্যাক্তা নারীদের জন্য এতকিছু তাদের কি আখেরে কোন লাভ আছে এই আইনে? না নেই। উদাহরণ দিচ্ছি। আবার আসি সেই বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার প্রসঙ্গে। ধরে নিন জ্যোৎস্না ধর্ম ত্যাগ করে অহিন্দু রাজকুমারকে বিয়ে করার কারণে বাবার সম্পত্তি পেল না। আবার রাজকুমারও বিয়ের দুই তিন বছরের মাথায় অন্য মেয়েকে বিয়ে করে জ্যোৎস্নাকে ডিভোর্স দিল। তখন জ্যোৎস্না কোথায় যাবে, কি নিয়ে থাকবে?
আরও আছে। শুধু অহিন্দু নয়, হিন্দু স্বামীও এবার স্ত্রীর সম্পত্তির জন্য লালায়িত হয়ে উঠতে পারে। হিন্দু সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা নিশ্চিতভাবেই বেড়ে যাবে। স্ত্রী তার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে কিংবা স্নেহবশে কিংবা পিতার সামান্য সম্পত্তিটুকু অখণ্ড রাখতে যদি সেই সম্পত্তি নিতে অনাগ্রহী হয়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া স্ত্রীর প্রাপ্ত সম্পত্তি তার স্বামী নানান অজুহাতে ব্যবহার করতে পারে। সম্পর্ক ও সংসার টিকিয়ে রাখতে নারীরাই যুগ যুগ ধরে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে থাকে। এবারও স্বামীকে নিজের সম্পত্তিটুকু দিয়ে সম্পর্ক ও সংসার টিকিয়ে রাখতে কিংবা সংসারের উন্নতি করতে প্রয়াসী হবে স্ত্রীরা। স্ত্রীর সম্পত্তি ভোগ শেষে যদি অধিকতর ধনী পিতার কন্যার প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে ঘরের বউতে ডিভোর্স দেয় সেই স্বামী? তখন তার প্রথমা স্ত্রীর কী গতি হবে? পূর্বের নিয়মে বাবার সম্পত্তিতে ভাগ না নেওয়ায় মানবিক কারণে ভাইয়েরা আশ্রয় ও ভরণ-পোষণ দিয়ে থাকত। কিন্তু এবার তো ভাইয়ের সঙ্গে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে গেছে, সুতরাং ভাই তাকে আশ্রয় না দিতেই পারে। তাহলে কোথায় যাবে সেই নারী? সুতরাং সেই সংকট থেকেই যাচ্ছে।
অতএব, নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদা, সুন্দর জীবন নিশ্চিত ও ধর্মান্তর রোধে আমার কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আছে। এগুলো ভেবে দেখার আহ্বান রইলো।
১) যৌতুক পুরোপুরি বন্ধ হবে - এটা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে প্রথমে বিয়েতে যৌতুক আর পরে বাবার সম্পত্তিতে সমান ভাগ, এই নিয়ে ভাইবোনের সম্পর্কগুলো নরকের যন্ত্রণার সৃষ্টি করবে। যদি বিয়েতে যৌতুক প্রদান হয়ে থাকে তবে তা সম্পত্তি বণ্টনের সময় বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানেই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিপত্তি। আপনি যদি মা-বাবার সম্পত্তি বণ্টনের সময় যৌতুকের বিষয় বিবেচনায় আনেন তবে, প্রকারান্তরে যৌতুককেই বৈধতা দান করা হয়, যা বাঞ্ছনীয় নয়। আর যদি যৌতুকের বিষয় বাদ দেন তবে ভাইয়েরা সম্পত্তিতে ন্যায্যতা পায় না। এমন কি একাধিক বোনের ক্ষেত্রে, বোনেদের মাঝেও ন্যায্যতা নিশ্চিত হয় না। কারণ বিভিন্ন কারণে এক এক মেয়ের বিয়ের জন্য পরিবারকে এক এক পরিমাণ যৌতুক দিতে হয়। কোন মেয়ের বিয়েতে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়, কোন মেয়ের বিয়েতে ১ টাকাও দিতে হয় না। এরপর যখন তাদের মধ্যে সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করে দিবেন তখন ন্যায্যতা কীভাবে হবে?
২) সম্পত্তি পাওয়ার আগে হোক বা পরে, যখনই কোন ব্যক্তি ধর্ম ত্যাগ করবেন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সকল সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন। যদি ইতোমধ্যে গ্রহণ করেও থাকেন তবে তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন, অন্যথায় তার স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি ক্রোক করে সরকারী পাওনা আদায়ের মতো করে উসূল করতে হবে। অহিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্রে এমনটা আদৌ সম্ভব কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে।
সংখ্যালঘুরা অধিকাংশ দেশে কিছু সুরক্ষা পেয়ে থাকে। সংখ্যালঘুদের কল্যাণার্থে রাষ্ট্রীয় কিছু উদ্যোগ থাকে। এটাই স্বাভাবিক। যেমন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে সংখ্যালঘু বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় রয়েছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মতো বিভিন্ন রাজ্যে আরও কিছু মন্ত্রক ও অধিদপ্তর রয়েছে যা সংখ্যালঘুদের কল্যাণার্থে নিবেদিত। তাদের বাজেটও থাকে অনেক। পাকিস্তানের মতো অসভ্য দেশেও রয়েছে সংখ্যালঘুদের জন্য মন্ত্রণালয়। শ্রীলঙ্কায় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্যই পৃথক মন্ত্রণালয় রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন বা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করাসহ বেশকিছু জোরালো দাবি বহুদিন ধরেই করছে হিন্দু সংগঠনগুলো। এই বৃহত্তর দাবিগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে শুধুমাত্র পারিবারিক ও উত্তরাধিকার বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে অনেক হিন্দু সংগঠন এবং সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।
৩) বিবাহের সাথে সাথেই স্বামীর সম্পত্তিতে হিন্দু স্ত্রীর অর্ধেক অধিকার জন্মাবে। মিতাক্ষরা মতবাদে যৌথ পরিবারিক সম্পত্তি আইনে এই বিধি আছে। সেটাকেই আমরা এখানে আনতে পারি। কোন হিন্দু নারী যদি ধর্মান্তরিত না হয়ে (বিশেষ বিবাহ আইনে) অহিন্দু কাউকে বিয়ে করেন, সেখানেও এই নিয়ম কার্যকর করতে হবে। উক্ত স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হলে তার অর্ধেক সম্পত্তি ডিভোর্সের সময়েই প্রদান করতে হবে।
হিন্দু নারীর অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাই প্রস্তাবিত আইনের লক্ষ্য। আমি মনে করি, আমার এই তিনটি প্রস্তাব যুক্ত হলেই হিন্দু নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, হিন্দু পরিবারের সুরক্ষা এবং নারীর অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। অন্যথায় প্রস্তাবিত খসড়ার ফাঁক-ফোকর দিয়ে হিন্দু নারী ও সুরক্ষিত পরিবার ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।"
0 মন্তব্যসমূহ