রামমন্দির মামলায় "বিষ্ণুহরি" শিলালিপি ও স্কন্দপুরাণ।।

 

রামমন্দির মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি। 

রামমন্দির মামলায় ইলাহবাদ হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের চুড়ান্ত রায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ভূমিকা রেখেছিলো সেটা হলো "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি। 

শিলালিপি কি? 

মন্দিরে শিলালিপির যে কন্সেপ্ট তা মূলত মন্দিরের স্থাপনকাল, মন্দিরের স্থপতির নাম ও মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস একটি শিলাখণ্ডে খোদাই করে মন্দিরের দেয়ালে লাগিয়ে রাখা হয়। এই ধারা এখনও চলমান যা বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরে এখনও দেখা যায়। 

"বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি কি? 

১৯৯২ সালে হিন্দুরা যখন বাবরি মসজিদের দেয়াল ভাঙতে যায় তখন মসজিদের দেয়াল থেকে ৫*২ ফুটের একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। সেই শিলালিপিটির নামই "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি। রামজন্মভূমি মামলা যখন ইলাহবাদ হাইকোর্টে উঠে তখন হিন্দু পক্ষ এই শিলালিপিটি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে। তখন বিচারক এই শিলালিপিটি বিচারের জন্য ASI এর এপিগ্রাফী ডিপার্টমেন্টের প্রধান কে. ভি. রমেশকে ডাকেন। কে.ভি. রমেশ শিলালিপিটির সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতে রিপোর্ট জমা দেন। শিলালিপিটিতে ২০ টি লাইন খোদাই করা ছিলো যার ১৯তম লাইনে লেখা ছিলো, "মন্দিরটি সেই রাজার উদ্দেশ্যে নির্মিত যিনি দশমাথাযুক্ত রাজাকে বধ করেছিলেন।" 

অর্থাৎ এই "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি থেকেই প্রমাণিত হয় যে উক্ত মন্দিরটি দশমাথাযুক্ত রাজাকে (দশানন) বধকারী রাজার (শ্রীরামচন্দ্র) উদ্দেশ্য নির্মিত এবং মসজিদের স্থানে যে পূর্বে রামমন্দির ছিলো সেটাও প্রমাণিত হয়ে যায়। 

"বিষ্ণু-হরি" শিলালিপির কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে কি? 

আমরা জানি রামমন্দির মামলায় ওরাল এভিডেন্সে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিলো স্কন্দপুরাণের। এই শিলালিপির (বিষ্ণু-হরি) ঐতিহাসিক ভিত্তিও প্রতিষ্ঠিত আছে স্কন্দপুরাণেই। মহামুনি ব্যাসদেব রচিত স্কন্দপুরাণের অযোধ্যা মাহাত্ম্যের ১/৯৯-১০১ শ্লোকগুলোতে স্পষ্টই বলা আছে,

"ভগবান হরি রাজা বিষ্ণুশর্মাকে বলতে লাগলেন, হে বিপ্র! আমার নামের পূর্বে তোমার নাম যুক্ত করিয়া আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হউক এবং সেই মূর্তি 'বিষ্ণুহরি' নামে বিখ্যাত হইয়া ভক্তগণের মুক্তি বিধান করুক। অতঃপর ধীমান বিষ্ণুশর্মা বাসুদেবের বিধিবাক্য শ্রবণ করিয়া নিজ নাম পূর্বে রাখিয়া চক্রধারী হরিমূর্তি স্থাপন করিয়া 'বিষ্ণুহরি' মন্দির স্থাপন করিলেন।" 


আমরা জানি চক্রধারী হরিই ত্রেতাযুগে রাম রূপে অবতীর্ণ হন। প্রত্নতত্ত্ব ও ওরাল এভিডেন্সের ভিত্তিতে "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপির মাধ্যমে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়ে যায় বাবরি মসজিদের স্থলে পূর্বে রামমন্দির ছিলো। 

ইলাহবাদ হাইকোর্টে "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপিতে রামমন্দির প্রমাণিত হওয়ার পরও মামলা সুপ্রীম কোর্টে কেন গেলো?

ইলাহবাদ হাইকোর্টে যখন "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপির মাধ্যমে রামমন্দির প্রমাণিত হলো তখন ভারতের লেফটিস্ট মিডিয়া ও বামপন্থী ইতিহাসবিদরা নানারকম অপপ্রচারে লিপ্ত হলো। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বামপন্থী ইতিহাসবিদ ইরফান হাবীব। সে দাবী করলো এই শিলালিপিটি বাবরি মসজিদ থেকে নয় বরং লক্ষ্ণৌ মিউজিয়াম থেকে চুরি করে এনে বাবরি মসজিদে রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তী ইনভেস্টিগেশনে দেখা যায় যে লক্ষ্ণৌ মিউজিয়ামে রাখা শিলালিপিটির নাম ছিলো "ত্রেতা কা ঠাকুর" যেটি অযোধ্যার অন্য একটি রামমন্দির "ত্রেতা কা ঠাকুর" থেকে পাওয়া যায়, যেই মন্দিরটি অওরঙ্গজেব ধ্বংস করেছিলো। ব্রিটিশ সরকার সেটি (শিলালিপি) পরবর্তীতে উদ্ধার করে প্রথমে ফাজিয়াবাদ মিউজিয়াম ও পরে লক্ষ্ণৌ মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করেন। কিশোর কোনাল নামে স্পেশাল ফোর্সের একজন অফিসার লক্ষ্ণৌ মিউজিয়াম থেকে একবার একটি ফটোগ্রাফ নিয়েছিলেন "ত্রেতা কা ঠাকুর" শিলালিপিটির। সেই ফটোগ্রাফের সাথে মিলিয়ে দেখা হয় "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি ও "ত্রেতা কা ঠাকুর" শিলালিপিটি সম্পূর্ণ আলাদা। আবারও বামপন্থী প্রোপাগাণ্ডা সত্যের সামনে ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় এবং ইরফান হাবীবের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

এভাবেই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে রামমন্দির মামলায় প্রত্নতত্ত্ব ও ওরাল এভিডেন্সে "বিষ্ণু-হরি" শিলালিপি ও স্কন্দপুরাণ বড় ভূমিকা পালন করে চুড়ান্ত রায় হিন্দুপক্ষের দিকে নিয়ে আসলো। 

তথ্যসূত্রঃ স্কন্দপুরাণ ও "THE BATTLE FOR RAMA: Case of the Temple at Ayodhya" by Meenakshi Jain. 

© SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি 

Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)

সনাতনী ঐক্য, প্রচার ও কল্যাণে অবিচল।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ