চাঁদে জল আছে? সে জলের উৎস পৃথিবী? সনাতন শাস্ত্রের এই দাবী কি বৈজ্ঞানিক?

 

চাঁদে জল আছে? পৃথিবী থেকে চাঁদে জল যায়! পৃথিবীতে হওয়া বৃষ্টিপাতে আবার চাঁদের প্রভাব কি! পুরাণে এ কেমন অবৈজ্ঞানিক কথা নাকি আছে বৈজ্ঞানিক তথ্য !

পুরাণ নিয়ে সংস্কারহীন ও স্বাধ্যায়হীন অনার্যদের অপপ্রচার যেন থামছেই না, পুরাণের জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভ্রূণতত্ত্ব নিয়ে তাদের হাফ-ডজনের বেশি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের যৌক্তিক খণ্ডনের কোন সদুত্তর দিতে না পেরে তারা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন অপপ্রচার প্রস্তুত করেই চলেছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে নাম ও মুখ লুকিয়ে লাইভ করে আমাদের পিতামাতা ও স্ত্রী-বোনদের গালাগাল করা যা তাদের অবৈদিক সংস্কারের প্রতিফলন। শুরুর দিকে এরা আপত্তিগুলো তাদের অফিশিয়াল ব্লগে তুলতো কিন্তু যখনই আমরা এদেরকে বৈজ্ঞানিক ধোলাই দেওয়া শুরু করলাম তখন নিজেদের ব্লগ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে কিছুদিন পিঠ বাঁচানোর প্রয়াস করেছে। পরে আমাদের ধারাবাহিক আক্রমণে এরা অনুধাবন করলো যে বিজ্ঞান বিষয়ে এদের জ্ঞানের লেবেল SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটির হাটু তুল্য। তাই এবার তারা স্ট্রেটেজি পালটে বেনামি পেজ থেকে ব্রাদার রাহুল স্টাইলে অপপ্রচারে নেমেছে। এই ধারাবাহিকতায় এরা নতুন করে আপত্তি তুলেছে লিঙ্গ পুরাণের একটি শ্লোক নিয়ে এবং আমাদের কাছে বৈজ্ঞানিক জবাব চেয়েছে। আসলে বিজ্ঞান বিষয়ে এদের ন্যুনতম জ্ঞানটুকু থাকলেও এই আপত্তি এদের মাথায় আসতো না বরং পুরাণের এই চমৎকার বৈজ্ঞানিক সূত্র নিয়ে গর্ববোধ করতো। যা সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে তা হাজার হাজার বছর আগেই আমাদের পুরাণাদি ও বেদাদি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। 

লিঙ্গ পুরাণের পূর্ব ভাগের ৫৪ নম্বর অধ্যায়ে (বিষ্ণুপুরাণের দ্বিতীয় অংশের অষ্টম অধ্যায়েও একই বর্ণনা পাওয়া যায়) বৃষ্টিচক্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, 

"সূর্যদেব সলিল রাশি পান করেন, ক্রমে তা চন্দ্রে সংক্রান্ত হয়, চন্দ্র হইতে তা ক্রমে মেঘে সংক্রান্ত হয়, সেই মেঘনিচয় বায়ু বেগে তাড়িত হইয়া পৃথিবীতলে বর্ষণ করে।"

ব্যাখ্যাঃ সূর্যতাপে জল বাষ্পিভূত হয়ে উর্ধগামী পথে চন্দ্রে গমন করে এবং চন্দ্র হতে তা মেঘরূপে বায়ুবেগে তাড়িত হয়ে বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীর ভূতলে বর্ষিত হয়। 

এই শ্লোক পড়ার পর অনার্যের দল তাদের স্বভাবসুলভ অজ্ঞতা দিয়ে ঘোষণা করে যে, এখানে অবৈজ্ঞানিক কথা রয়েছে। 

অনার্য দাবীঃ সূর্যদেব সলিল রাশি পান করেন তা না হয় বাষ্পীভবন ধরা গেল কিন্তু সেখান থেকে সলিল রাশি কীভাবে চন্দ্রে পৌঁছাবে? পৌরানিকরা যেন পৃথিবীর থেকে চাঁদে জল পাঠিয়ে দিয়ে আসে। 

SPS এর প্রত্যুত্তরঃ SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি এখানে যথাযথ প্রত্যুত্তরই দিবে৷ এর আগেও আমরা দেখিয়েছি অনার্যরা যেখানে অবিজ্ঞান খুঁজে আনে সেখানেই আমরা বিজ্ঞান খুঁজে দেই। এটাই হলো স্বাধ্যায়হীন অনাচারীদের সাথে SPS এর মোটাদাগে পার্থক্য। কেউ যদি আমাদের বিশ্লেষণ নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলার সৎসাহস দেখায় তবে আমরা তাদের সাথে সরাসরি শাস্ত্রার্থ করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছি আগেই।

আমাদের বিচার বিশ্লেষণের পর পাঠকগণও নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারবেন, এই অনার্যের দল সারাক্ষণ "বিজ্ঞান-বিজ্ঞান" বলে চিল্লাচিল্লি করলেও এরা বিজ্ঞানের গবেষণা জগতের সামান্য খবরটুকুও রাখে না। যেখানে বিজ্ঞানের প্রাথমিক স্তরের জ্ঞানটুকুও এদের কাছে ঠিক মতো বোধগম্য হয় না সেখানে এত উচ্চ স্তরের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে তো এরা অবৈজ্ঞানিক বলবেই। অবশ্য এদের মান্যতায় যেখানে ১৪০ বছরের ইতিহাসে একমাত্র বিজ্ঞানী হলো Pseudoscientist ইউটিউবার অগ্নিব্রত নৈষ্টিক সেখানে এর বিজ্ঞানের কি বুঝবে! 

কিন্তু আমরা সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হচ্ছি, ওরা পুরাণের যেসব বিষয়ে নিয়ে আপত্তি তুলছে এবং অবৈজ্ঞানিক ঘোষণা করে উপহাস করে যাচ্ছে, সেগুলোর সিংহভাগই বেদাদি শাস্ত্রে পাওয়া যায়। যেমন পুরাণের এই বিষয়টিও উপনিষদে রয়েছে। এরা কি তবে বেদাদি শাস্ত্রও ঠিকঠাক অধ্যয়ন করে না? 

বৃহদারণ্যক উপনিষদের (৬/২/১৬) একটি মন্ত্রে আছে, 

"যাঁহারা যজ্ঞ, দান, তপস্যার ফলে ঊর্ধ্বলোকে গতি লাভ করেন তাঁহারা ধুম্র দেবতাকে প্রাপ্ত করেন, ক্রমে ধুম হইতে রাত্রি দেবতাকে, তাহা হইতে কৃষ্ণপক্ষ দেবতাকে, তাহা হইতে যে ছয়মাস সূর্য দক্ষিণে গমন করে সেই দেবতাকে অর্থাৎ দক্ষিণায়ণ দেবতাকে, দক্ষিণায়ণ হইতে পিতৃলোক দেবতাকে, তাহা হইতে চন্দ্রকে প্রাপ্ত হন, চন্দ্রকে প্রাপ্ত হইয়া তাঁহারা অন্ন হন। (ঋত্বিক গণ) 'যেরুপ বর্ধিত হও, হ্রাসপ্রাপ্ত হও' এই বলিয়া উজ্জ্বল সোমরস পান করেন সেইরূপ চন্দ্রলোকে দেবগণ তাঁহাদের ভক্ষণ করেন, পরে তাঁহাদের উক্ত কর্ম ক্ষীণ হইলে আকাশে প্রাপ্ত করেন, পরে আকাশ হইতে বায়ু, বায়ু হইতে বৃষ্টিকে প্রাপ্ত করেন এবং বৃষ্টি হইতে পৃথিবীকে প্রাপ্ত করেন। পৃথিবীতে আসিয়া অন্ন হন, এইরূপে পুরুষাগ্নিতে (পিতৃদেবের) প্রবেশ করেন।..... "

[দেবগণ জীবকে ভক্ষণ করেন? দেবগণ মুখে আহার করেন না, দর্শনে তৃপ্তিই আহার (ছান্দোগ্য ৩/৬/১)। কর্মিদিগকে দেখিয়া তাঁহারা তৃপ্ত হন এবং কর্মফল অনুযায়ী তাহাদের বিভিন্নলোকে বিশ্রাম দেন। ইহাই দেবতাদের ভোগ।]

এই মন্ত্রেও স্পষ্ট ইংগিত আছে পৃথিবী হতে পঞ্চভূতে সৃষ্ট জীবের মৃত্যুর পর  চন্দ্রে গমন ও বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে আগমন। এছাড়াও এই মন্ত্রে পুনঃজন্ম, জীবের বিভিন্ন লোকে গমন ও জৈবিক পরিবর্তনের চক্র নিয়ে চমৎকার বর্ণনা রয়েছে যা আমরা বেদাদি শাস্ত্র ও বিজ্ঞানের আলোকে আলাদা ব্লগে তুলে ধরবো। এখানে একটা চমৎকার বিষয় পরিলক্ষিত হয় সেটা হলো জলই জীবন, যেখানেই জল সেখানেই জীবের জন্ম সম্ভব। জল হতেই অন্ন, অন্ন হতেই জীব এটাই জীবনচক্রের মূল যা বেদাদি শাস্ত্র ও পুরাণাদি শাস্ত্রে চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে। জলের মাধ্যমে জলরূপে জীব বিভিন্ন লোকে গমন শেষে চাঁদ হতেই জলরূপে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এখানে একটা মজার বিষয় হলো জীব কোন অদৃশ্য বা অকল্পনীয় মাধ্যমে চন্দ্রলোকে যায় না, যায় স্পষ্ট মাধ্যমে এবং সেটা হলো জল। আর চাঁদ হলো পৃথিবীর ও দেবলোকের মধ্যবর্তী পথের একটি স্টেশন। 

আধুনিক বিজ্ঞান ত এমনিতেই চাঁদে জীবনচক্র প্রতিষ্ঠা করতে উঠেপড়ে লাগে নি! আমরা কেবল শাস্ত্রীয় রেফারেন্স নয় বরং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিচ্ছি নিচে, ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণটা পড়বেন।  

এছাড়াও ছান্দোগ্য উপনিষদ (৫/১০/৫-৬) এবং কৌশিতকী ব্রাহ্মণেও (১/২) জলের চাঁদে গমন ও পৃথিবীতে আগমন বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানেও জীবের জলরূপে বিভিন্ন লোকে গমন ও জীবনচক্রের স্পষ্ট ইংগিত দেওয়া আছে।

অনার্যরা এখানে আরেকটি আপত্তি তুলতে পারে যে, চন্দ্রলোকে এত কিছু হয় কিন্তু বিজ্ঞান সেটা দেখেনা কেন! 

এর সাথে জড়িয়ে আছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের এক রহস্যময় অধ্যায়, ডাইমেনশন। আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে, বর্তমানে স্ট্রিং থিওরী যেমন তাত্ত্বিক ভাবে মাল্টি ডাইমেনশনের ধারণা দিচ্ছে, আমাদের হাজার বছরের পুরানো শাস্ত্রেও খুব সুন্দর ভাবে মাল্টিডাইমেনশনের উল্লেখ ও বর্ণনা করা আছে! এমনকি ওয়েস্টার্ন দেশ গুলো গবেষণা করছে ও গবেষণা মূলক গ্রন্থও প্রকাশ করছে পুরাণাদি শাস্ত্রের এই বিষয় গুলো নিয়ে। লজ্জার বিষয় তো এটাই যে, আমরা নিজেরাই নিজেদের গ্রন্থের মর্ম বুঝতে না পেরে অন্ধ ও মূর্খের ন্যায় শুধু প্রক্ষিপ্ত, ভুয়া বলতে ব্যস্ত, গ্রন্থের ভুল-দোষ ধরতে ব্যস্ত।

সনাতন শাস্ত্র মতে সেসব ডাইমেনশন কেমন ও কাদের জন্য, ম্যাটেরিয়াল - কসমিক - ডিভাইন ডাইমেনশন কি, এই সব নিয়ে ব্যাখ্যা থাকছে আমাদের আলাদা ব্লগে।

পুরাণ নিজেই নিজেকে বেদ অনুগামী বলেছে। মহাভারতের আদিপর্বেও এই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়, মহাভারতের ক্রিটিকাল এডিশনেও আছে এই শ্লোক। আমরাও শাস্ত্র চর্চা করতে গিয়ে তার প্রমাণ পাচ্ছি যেমন উপনিষদের মন্ত্রের প্রতিধ্বনিই আমরা পেলাম লিঙ্গ পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণের শ্লোকে। কিন্তু অনার্যগণ কেন তা উপলব্ধি করতে পারে না? কারণ এরা স্বাধ্যায়হীন, আচারহীন ও সংস্কারহীন। 

এটা কি এদের অজ্ঞতা না মিথ্যাচার? বিজ্ঞানের ব্যাপারে তো অজ্ঞতা দেখিয়েই যাচ্ছে, এখন তাদের মান্য শাস্ত্র সম্পর্কেও যে তারা অজ্ঞ সেটাও ক্রমশ প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। তবে SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি সবসময়ই পুরাণের বেদানুকুল ব্যাখ্যায় বিশ্বাসী আগামীতেও পুরাণের বেদানুকুল ব্যাখ্যা করে যাবে এবং প্রকৃত সত্য ও তত্ত্ব তুলে ধরবে৷ বেদই আমাদের মূল।

বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ ও প্রামাণিকতাঃ

লিঙ্গ পুরাণে বলা হয়েছে, পৃথিবীর জল সৌরকিরণে বাষ্পীভূত হয়, সেই জল থেকে মেঘ জন্মায়, আবার কিছু জল চন্দ্রে গমন করে, সেখান থেকে বাষ্পীভূত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ভাসমান মেঘে পতিত হয়। এরপর বায়ুর তাড়নায় বারিধারা ভূতলে পতিত হয়। 

এখন দেখা যাক বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কী বলে? চাঁদে কি জল আছে? সেই জল কি পৃথিবীর থেকে যায়? চাঁদের থেকে জল কি বাষ্পীভূত হয়ে মহাশূন্যে মিলিত হয়ে পৃথিবীতে বৃষ্টিরূপে ফিরে আসতে পারে? 

প্রথমে ধারণা করা হতো যে চাঁদ হলো শুষ্ক মরুভূমি বা মালভূমির মতো, সেখানে জলের কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ২০০৯ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO কর্তৃক পরিচালিত চন্দ্রযান-১ সর্বপ্রথম খোঁজ দেয় যে চাঁদে জল রয়েছে এবং সেই জলের অস্তিত্ব রয়েছে পৃথিবীর দিকে মুখ করা চন্দ্রপৃষ্ঠের (পৃথিবী থেকে চাঁদের কেবল একটা পিঠই দেখা যায়।) দক্ষিণ মেরুতে। তারপর বিষয়টি খুব সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে নাসাও (NASA) এই ব্যাপারে গবেষণা করে এবং স্বীকার করে যে, চাঁদে আসলেই জলের অস্তিত্ব রয়েছে। 





অনার্য দাবীঃ অনার্যরা হয়তো এখন বলবে যে চাঁদে জল আছে বুঝলাম কিন্তু সেটার সাথে অবৈজ্ঞানিক (!) পুরাণের সম্পর্ক কি? 

SPS এর প্রত্যুত্তরঃ আমরা জানি পুরাণকে অবৈজ্ঞানিক বলা অর্বাচীন অনার্যের দল নিজেরাই বিজ্ঞানের জগতে বিচরণ করে না। তারা জানে না সাম্প্রতিক গবেষণায় যেটার সন্ধান পাওয়া গেলো আমাদের পুরাণাদি শাস্ত্রে তা হাজার হাজার বছর আগেই বলা আছে যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে এবং এটা নিয়েই অনার্যরাও অজ্ঞর ন্যায় আপত্তি তুলেছিলো।  

বলে রাখা ভালো চন্দ্রযান-১ পরিচালনার সময় ISRO এর চেয়ারম্যান ছিলেন মাধবন নায়ার। তিনি ২০১৫ সালে একটি জাতীয় কনফারেন্সে বলেন,

"Some sholkas in one of the Vedas say that there is water on the moon but no one believed it. Through our Chandrayaan mission, we could establish that and we were the first ones to find that out," Mr Nair said, adding that everything in the Vedas could not be understood as they were in chaste Sanskrit."

এখন উনাকেও গালাগাল করবে অনার্যের দল? তিনি ত বেদাদি শাস্ত্রের শ্লোকের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছেন যে চাঁদেও জল আছে। অবশ্য অনার্যরা যে কারণে সাধারণ হিন্দুদের পৌরাণিক বলে গালাগালি করে মাধবন নায়ার তেমন হিন্দুই এবং তেমন হিন্দু হয়েই তিনি ISRO এর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, অনার্যদের Pseudoscientist ইউটিউবার অগ্নিব্রত কিন্তু ISRO এর চৌকাঠও পাড় হতে পারবে না।

পুরাণাদি শাস্ত্র বলছে চাঁদে জল যাচ্ছে পৃথিবী থেকে এখন সেটা নিয়ে উপহাস করছে কিছু অনাচারী অনার্য! এখন ত বিজ্ঞানও এই একই কথা বলছে তাহলে এরা এখন বিজ্ঞান নিয়েও উপহাস করুক কারণ এরা বিজ্ঞান বুঝে না, বুঝে কেবল Pseudoscience.  চাঁদের এই জলের উৎস কী এ নিয়েও হয়েছে প্রচুর বিচার বিশ্লেষণ। বিজ্ঞানীরা বলছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকেই অক্সিজেন আয়ন, হাইড্রোজেন আয়ন সৌরবায়ুর মাধ্যমে চাঁদে পৌঁছায়, এই আয়ন গুলো চাঁদে জল সৃষ্টি করে এবং চাঁদ থেকে পুনরায় মহাশূন্যে মিলিয়ে যায়।

আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক গুন্থার কোচস্কার মতে, চাঁদ থেকে এই আয়ন পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। আমরা এক এক করে নিচে কিছু পত্রিকার সংবাদ সংযুক্ত করে দিচ্ছি। পাঠকগণ ভেবে দেখুন, এই অনার্যরা কীভাবে পুরাণ বিরোধী, বেদ বিরোধী হওয়ার সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণারও বিরোধী!



তাহলে দেখা গেল, বিজ্ঞানীরা মেনেছেন যে চাঁদে জল রয়েছে এবং এই জলের মধ্যে কিছু জল যে পৃথিবী থেকে চাঁদে সৌরবায়ুর মাধ্যমে আয়ন রূপে যাচ্ছে এই বিষয়টি নিয়ে তারা গবেষণাও করে চলেছেন। 

তবে এখানে একটি বিষয় এই যে পৃথিবীতে বাষ্পীভূত হওয়া সব জলই চাঁদে চলে যায় এমন নয়, সামান্য কিছু যায়, তা থেকে আবার সামান্য কিছু ফিরে আসে। মেঘ তো পৃথিবীতে তৈরি থাকেই, চান্দ্রজল মেঘে মিশ্রিত হয়ে ভূতলে বৃষ্টিরূপে পতিত হয়। 

ওরা বিজ্ঞান বা শাস্ত্র কোনটি সঠিক ভাবে বুঝতে না পেরে আমাদের  "পৌরাণিক" বলে ব্যঙ্গ করে। তাহলে কি নাসাও পৌরাণিক?  ইসরোও পৌরাণিক? আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও পৌরাণিক?  যত সংবাদ মাধ্যম, পত্রিকায় এটা নিয়ে প্রচার করা হয়েছে তারা সবাই কি পৌরাণিক? উপনিষদের বাক্যও ভ্রান্ত? একমাত্র এই অনার্যরা বৈদিক এবং তারাই কেবল বিজ্ঞান বুঝে? 


বৈজ্ঞানিক জগতে এই অনার্যদের অবদানটা মূলত কি? বিজ্ঞান না বুঝেই বৈজ্ঞানিক বিষয়েরও বিরোধিতা করাই কেবল এই অনার্যদের বিজ্ঞানচর্চার দৌড়? এখন কি SPS এর হাত থেকে রক্ষা পেতে "এটা রুপক", "এর অনুবাদ সহী না" এইসব ফালতু অজুহাত প্রয়োগ করে নাসা ও ইসরোকেও গালাগাল করবে?

অনার্য সমাজীরা তাদের ফেইক প্রোফাইল থেকে আরেকটা দাবী তুলেছে যে আমরা নাকি চাঁদের প্রভাবে জোয়ার-ভাটা দিয়ে একটা ভুজুংভাজুং যুক্তি দাঁড় করে চাঁদে জল যাওয়াকে জাস্টিফাই করবো কিন্তু আপনারা উপরের আলোচনায় দেখেছেন আমরা এমন কোন ভুজুংভাজুং কুযুক্তি ছাড়াই আধুনিক বিজ্ঞানের অবজারভেশন থেকেই পুরাণের এই শ্লোকের সত্যতার প্রমাণ দিয়েছি, সাথে বেদাদি শাস্ত্রের প্রমাণও দিয়েছি। আসলে অনার্যদের স্বভাব আছে বেদমন্ত্রের যথেচ্ছা অর্থ করে মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়ার যা SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি কদাপি করে না। আমরা না অর্থ পরিবর্তন করি, না প্রক্ষিপ্তবাদের সস্তা অস্ত্র ব্যবহার করি। এরা ত এটাও জানে না যে চাঁদ পৃথিবীর দিনরাত্রি, জলবায়ু, ঋতু পরিবর্তন সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্য, চাঁদ মিলেই পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পৃথিবী এই দুয়ের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তাই যারা চাঁদের প্রভাব বলতে কেবল জোয়ার-ভাটায় আটকে আছে তাদেরকে বিজ্ঞানের প্রাথমিক শিক্ষা আগে শেষ করার অনুরোধ রইলো। আমরা এই বিষয়গুলো পুরাণ ও আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে ধীরে ধীরে সব ব্যাখ্যা করবো। তাহলেই পরিস্কার হয়ে যাবে কেন ISRO এর সাবেক প্রধান ড কিরন কুমার জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার জন্য ভাগবত পুরাণ পড়তে বলেছিলেন। এরা কি জানে জোয়ারভাটার উপর চাঁদের প্রভাব নিয়ে ব্রহ্ম পুরাণে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে? 

কেবল চান্দ্রজল নয়, পৃথিবীর বৃষ্টিপাতের উপরও চাঁদের প্রভাব রয়েছে, এ নিয়েও গবেষণা হয়েছে। 

পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের ওপরে চাঁদের কিছুটা প্রভাব রয়েছে!

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দাবি করেছেন, চাঁদ যখন সরাসরি মাথার ওপর আসে, তখন পরিবেশের ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলে, পৃথিবীতে বৃষ্টি কম হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট মাদারবোর্ডের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তুবাসা কোহামা বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, বৃষ্টিপাতের সঙ্গে চাঁদের সম্পর্কের প্রথম গবেষণা এটি।’কোহামা ও তাঁর গবেষক দল বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গ বা চাপ ও তাপমাত্রার মতো বায়ুমণ্ডলীয় ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০১৪ সালে তাঁরা একটি গবেষণার ফল প্রকাশ করেন যাতে বলা হয়, পৃথিবী পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ চাঁদের দশার ওপরও নির্ভর করে। এটি ১৮৪৭ সালেবিজ্ঞানীরা প্রথম পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের তারতম্য দেখা যায়। ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ।

গবেষকেরা জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি ও নাসার ১৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকেরা দাবি করেছেন, চাঁদের কারণে মোট বৃষ্টিপাতের ১ শতাংশ তারতম্য দেখা দিতে পারে। গবেষকেরা মুষলধারে বৃষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের বৃষ্টিপাতের ওপর চাঁদের দশার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করছেন।

আজ এই অব্দিই। এই বিষয়ে আমরা শাস্ত্র ও বিজ্ঞান থেকে কেবল ৭০% তথ্য উপাত্ত তুলে ধরলাম আর বাকি ৩০% তথ্য উপাত্ত রেখে দিলাম যদি কেউ আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে ডিবেটে আসে তাদের জন্য। আগামীতে ধীরে ধীরে পুরাণাদি শাস্ত্র নিয়ে সকল মিথ্যাচারের জবাব অব্যাহত থাকবে ও অনার্যদেরকে প্রকৃত বিজ্ঞানের শিক্ষা দেওয়া হবে। 

© SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি।
🖋️ শ্রী অনিক কুমার সাহা, গৌতম দন্ডপাট
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ