★মহাবলী হনুমান কি সাতরে লঙ্কা গিয়েছিলেন নাকি বায়ুর বেগে গিয়েছিলেন?


🟤 প্রথমে একটা ভিন্ন বিষয়ের সুত্রপাত করি। কয়েকজন ছোটভাই একটা লিংক দিয়ে বলল দাদা মহাবলী হনুমান কি সাতার কেটে সাগর পারি দিয়ে লঙ্কা গিয়েছিল?
⏹️ লিংকে দেখলাম স্বঘোষিত বিশুদ্ধবাদী একদল প্রচার করতেছে যে মহাবলী হনুমান সাতার কেটে সাগর পারি দিয়েছিলেন। ওদের সম্পূর্ণ লিখার মধ্যে নিজেদের স্থুল বিচারে চালিয়ে দেওয়া কতগুলো অসংলগ্ন যুক্তি তথ্য পাওয়া গেলো।। প্রথমে যেটা নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হলো তাদের প্রচারিত ব্রজেন দাসের ৫০০ কিমি সাতার কাটা ও মহাবলী হনুমানের ২৩ কিমি পক প্রণালী সাতরে অতিক্রম করা। এরা যে লেখালেখি করার আগে ঠিকমতো পড়াশোনা করে না সেটা আগে বিচার করা প্রয়োজন।। প্রথমে এদেরকে ডোবার প্রণালী ও পক প্রনালী নিয়ে সঠিক লেসন দেওয়া আবশ্যক যেহেতু এরা আদতে পড়াশোনা তেমন করে না।
🚩 ইংলিশ চ্যানেল ও ব্রজেন দাসঃ ইংলিশ চ্যানেল হলো পশ্চিম ইউরোপের একটি সংকীর্ণ সাগর যা দক্ষিণে ইউরোপ মহাদেশের মূল ভূখণ্ডস্থিত রাষ্ট্র ফ্রান্স এবং উত্তরে গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপকে পৃথক করেছে এবং উত্তর সাগরকে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফরাসি ভাষায় এটি "লা মঁশ" (La Manche অর্থাৎ "কোটের হাতা") নামে পরিচিত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬২ কিলোমিটার এবং এর প্রস্থ অবস্থানভেদে সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার থেকে সর্বনিম্ন ৩৪ কিলোমিটার (ডোভারের প্রণালীতে) হতে পারে।
ডোবার প্রণালী সম্পর্কে জানতে একটু পড়ে নিবেন।।
*https://www.britannica.com/place/Strait-of-Dover
এই যে ৩৪ কিমি ডোবার প্রণালী সেটাই মূলত পারি দিয়েছিলেন ব্রজেন দাস এবং সময় নিয়েছিলেন ১০ ঘন্টা ৩৫ মিনিট। এখন এরা কোন যুক্তির বিচারে প্রমাণ করে যে ১০ ঘন্টায় সাতরে কেউ ৫০০ কিমি পারি দেয়? এরা কি লেখালেখি করার সময় অন্য জগতে বিচরণ করে নাকি ডোবার প্রণালী ও ইংলিশ চ্যানেল নিয়ে এদের ন্যুনতম পড়াশোনা নেই?
ব্রজেন দাস যে ৩৩ কিমি পারি দিয়েছিলেন সেটার প্রমাণ উনার নামে পরিচালিত ওয়েবসাইটেই আছে।
*http://www.brojendas.com/world%20record.html

🚩 পক প্রনালী ও ২৩ কিমিঃ ভারতের তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কার মধ্যেকের সংকীর্ণ সাগরপথকে বলা হয় পক প্রণালী যেটা রবার্ট পকের নামানুসারে। এই পক প্রণালীর প্রস্থ জায়গা বিশেষে ৪০-৮৫ মাইল তথা ৬৪-১২৭ কিমি অর্থাৎ মিনিমাম ৪০ মাইল। অন্যদিকে সেই স্থানে নির্মিত রামসেতুর দৈর্ঘও ৪৮ কিমি। ২৩ কিমির তথ্য এরা সংগ্রহ করেছে ভারতের এক মন্ত্রীর ২০১৫ সালে দেওয়া এক বক্তব্য থেকে যেটার কোন জিওগ্রাফিকাল ভিত্তি ছিল না।।
নাসার ২০১৮ সালের রিপোর্টেও দেখানো হয়েছে মিনিমাম ৫৩ কিমি।
(https://modis.gsfc.nasa.gov/gallery/individual.php...)
অর্থাৎ এরা যখন যা মন চায় বিচারবিবেচনা না করেই লেখে দেয় কারণ এদের প্রধান কাজই সনাতনী তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।।
▶️ এখন আসি মূল প্রসঙ্গে যে মহাবলী হনুমান এই রাস্তা পারি দিয়েছিলেন কিভাবে? রামায়ণের বিশ্লেষণ করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই মূল বাল্মিকী রামায়ণ থেকেই করতে হবে, মনগড়া নিজেদের স্থুল বিশ্লেষণ দিয়ে বিচার করলে মহাবলী হনুমান হয়ে যাবে কমিক চরিত্র হাল্কের ছেলে স্কারের মতো। এরা অবশ্য মিথ্যাচারে এক্সপার্ট এজন্য মুম্বাইয়ের হাসপাতালকেও এরা নিজেদের মন্দির বলে চালিয়ে দিতে পারে। মূল বাল্মিকী রামায়ণেই (সুন্দরকান্ড/প্রথম সর্গ/শ্লোক ৪০-৪৫) আছে মহাবলী হনুমান বায়ুর বেগে আকাশমার্গে সমুদ্র পারি দিয়েছিলেন এবং সেটা মূল শ্লোকসহই নিচের লিংকে দেওয়া হলো।
রামায়ণের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে হবে রামায়ণ থেকেই, সেটা আমাদের স্থুল বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করলে জগাখিচুরি তত্ত্বই বের হবে।
✴️ বায়ুবেগে যাওয়া কি সম্ভব? 
মহাবলী হনুমানের আকাশমার্গে সমুদ্র পারি দেওয়া আমাদের মত ফেবুবাদী বস্তুবাদী ভোগবাদীদের পক্ষে অবাস্তব মনে হতে পারে। অথচ পতঞ্জলি যোগদর্শন পড়লে অন্ততঃ জানতো যে যোগী পুরুষ অষ্ট সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়। অষ্ট সিদ্ধির একটা হলো লগিমা সিদ্ধি যেটা হলো নিজের শরীরকে বাতাসের চেয়ে হালকা করে ফেলা এবং বাতাসের চেয়ে হালকা বস্তু বায়ুর বেগে চলমান হলে সেটা আধুনিক জড়বিজ্ঞানেও সিদ্ধ। আমরা জানি মহাবলী হনুমান মহাযোগী ছিলেন এবং অষ্টসিদ্ধিপ্রাপ্তও হয়েছিলেন। তাঁর ধ্যান, সাধন ও তপস্যা ছিল আমাদের মতো ভোগবাদীদের স্থুল বিবেচনার অনেক উপরে। তাই তিনি নিজেকে হালকা করে বায়ুর বেগে লঙ্কা পারি দিবেন সেটা অসম্ভব কেন হবে? এই বিষয়ে দুইজনের বক্তব্য শুনতে পারেন।
এই আর্টিক্যালটাও পড়তে পারেন।
*https://yogamoha.com/can-yogis-fly-levitation/....

আরেকটি সিদ্ধি আছে গরিমা সিদ্ধি যার প্রভাবে নিজের দেহ ভারী করে ফেলতে পারা যায়। তবে এদের স্থুল মস্তিষ্ক কোন সিদ্ধি ছাড়াই এতো ভারী হয়ে আছে যে এদের মস্তিষ্কে কেবল কুযুক্তিই স্থান পায় এবং স্থুল মস্তিষ্ক দিয়েই এরা সনাতন শাস্ত্রকে বিচার করে।
আজও পশ্চিমা দেশগুলোতে যোগের মাধ্যমে লেভিটেশনের প্র্যাক্টিস করা হয়। ২০১৬ সালে হল্যান্ডের মেরুতে এমন একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।
এই লিংকে দেখতে পারেন।
*https://youtu.be/UUnxnuUVEOs 
🟠 এবার একটু স্থুলবাদীদের যুক্তির আলোকে বিচার করি।
আমরা সকলেই হ্যাংগ্লাইডিং সম্পর্কে জানি। এই পদ্ধতিতে বড় পাহাড়ের চুড়া থেকে বিশেষ কৌশলে ও বিশেষ কাঠামোর (কাঠামো ব্যবহার করা হয় শরীরকে বাতাসে ভাসিয়ে রাখার জন্য) সাহায্যে সমুদ্রের উপরে উড়ে বেড়ানো যায়। রামায়ণেও আমরা দেখি যে মহাবলী হনুমান উড়ান শুরু করেছিলেন মহেন্দ্র পর্বতের চুড়া থেকে যার উচ্চতা প্রায় এক কিমির উপর। এখন মহাযোগী হনুমান যদি লগিমা সিদ্ধির সাহায্যে শরীরকে বায়ুর চেয়ে হালকা করতে পারেন তাহলে ১ কিমি উচ্চতা থেকে শরীরকে বাতাসে বিশেষ কৌশলে ভাসিয়ে দিয়ে ৫৩-৬৮ কিমি পথ পারি দিয়ে লঙ্কা পৌছতে পারতেন না? জড়বাদীদের মাথায় এই যুক্তিটাও ত আসতে পারতো যেটা যথেষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক ও তথাকথিত বাস্তবিকও।
🟡 পরিশেষে বলবো নিজেদের স্থুল বিচারবুদ্ধি দিয়ে আমরা যেন সবকিছু বিচার না করি। নিজেদের যেহেতু ধ্যান, সাধন ও তপস্যা নেই তাই নিজেদের সীমাবদ্ধতা দিয়ে মহাবলী হনুমানের মতো মহাযোগীকে বিশ্লেষণ না করি।
*ঈশ্বর সকলকে চৈতন্য দান করুক।।
©স্টিমন অনিক

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ