বরাহ উপনিষদে "উপবাস" প্রসঙ্গে ব্রহ্মতত্ত্ব।। অপপ্রচার খণ্ডন।।

 


সম্প্রতি আচারহীন কিছু যুবক ‘উপবাস’ শব্দ ও উপবাস ব্রতাদির (যদিও বেদাদি শাস্ত্রে বিশেষ দিবসের ব্রত ও উপবাসের উল্লেখ আছে) পেছনে লেগেছে। এরা যেন-তেনভাবে সনাতনের বিভিন্ন আচার, সংযম ও সংস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজেদের আচারহীনতাকে জাস্টিফাই করতে চাচ্ছে। প্রথমে তারা একটা ন্যারেটিভ ক্রিয়েট করে যে ’উপবাস’ অর্থ সমীপে বাস অর্থাৎ ঈশ্বরের সমীপে অবস্থান করা বুঝানো হয়েছে। কিন্তু উপবাস অর্থ কদাপি আহার সংযম (নিয়ন্ত্রিত খাবার) হতে পারে না৷ তবে আমরা বিভিন্ন প্রমাণ্য শাস্ত্র হতে প্রমাণ করি যে উপবাস অর্থ আহার সংযম এটা বিকল্প অর্থ হিসেবে অবশ্য মান্য এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এটাই মুখ্য অর্থ।
কিন্তু সে-ই অনাচারীরা থেমে নেই তাই তারা তাদের স্বভাবসিদ্ধ অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। এরা সম্প্রতি ১০৮ উপনিষদের অন্তর্গত বরাহ উপনিষদের একটি রেফারেন্স (২/৩৯-৪০ মন্ত্র) দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে যে উপবাস অর্থ আহার সংযম হতেই পারে না, এর অর্থ কেবল ঈশ্বরের সান্নিধ্যে বাস। এরা যদিও এই বরাহ উপনিষদ মানে না কিন্তু অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে এখন বরাহ উপনিষদের পদতলেই আশ্রয় নিতে হলো। এরা অবশ্য জাবাল উপনিষদও মানে না কিন্তু এই জাবল উপনিষদেই এদের ১২০ বছরের নবীন পরম্পরার মুখ রক্ষা হয়। আচ্ছা অপপ্রচার করার জন্য এরা বরাহ উপনিষদের যে অধ্যায় থেকে মন্ত্র টেনেছে তারা কি জানে যে সেই অধ্যায়ের প্রতিটি মন্ত্রে অদ্বৈতবাদ সিদ্ধ হয়! যাইহোক এদের শাস্ত্রচর্চা মূলত শাস্ত্রের খণ্ডিতাংশ নিয়ে, শাস্ত্রের যথাযথ পঠন ও মনন ("মন্ত্রা মননাৎ..", নিরুক্তঃ ৭/১২/১) এদের অভ্যাসে নেই।
চলুন দেখে নেই কি আছে বরাহ উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ে? সেখান থেকে আমরা জেনে নিব বরাহ উপনিষদকৃত উপবাস’ শব্দের তাৎপর্য্য।
বরাহ উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম মন্ত্রে মহযোগী মহর্ষি ঋভু বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণুুকে বলছেন,
"বরিষ্ঠাং ব্রহ্মবিদ্যাং ত্বমধীহি ভগবন্মম"
অর্থাৎ, হে ভগবান! আপনি আমাকে শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ্যা বিষয়ে উপদেশ করুন৷
এখানে স্পষ্ট যে এই অধ্যায়টি ব্রহ্মজিজ্ঞাসমূলক এবং শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ্যা বিষয়ক তথা ব্রহ্মলাভের সর্বোচ্চ পথের উপদেশ। তাই এই অধ্যায়ের প্রতিটি মন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্ব ও মননশীলতার সহিত সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে অনুধাবন করতে হবে অন্যথায় স্থুল বিশ্লেষণে কেবল অনর্থই হবে।
এই অধ্যায়ে স্বয়ং পরমব্রহ্ম সম্পর্কে জ্ঞান। এই সম্পূর্ণ অধ্যায়ে "শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ্যা" বিষয়ক উপদেশ থাকবে কেবল। এখানে সকল লৌকিক আচার, এমনকি যজ্ঞাদি ক্রিয়ারও উর্ধে কেবল সাক্ষাৎ ব্রহ্মবিদ্যা বিষয়ক আলোচনা থাকবে।
মন্ত্র ২-৬নং এর সারমর্ম করলে হয়,
ভগবান বিষ্ণু বলছেন,
"যিনি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে বাসনা করেন তিনি ইন্দ্রিয়সমূহকে বশীভূত করে সকল পদার্থে অহং-মমভাব পরিত্যাগ পূর্বক সকল পদার্থের দ্রষ্টা এবং চৈতন্যস্বরূপ আমাতে আত্মবুদ্ধি স্থাপন করবে অর্থাৎ আত্মা ও পরমাত্মা যে অভিন্ন তা যথার্থভাবে অনুধাবন করবেন তিনিই ব্রহ্মলাভ করবেন।"
মন্ত্র ১২-১৩নং এ বলা হচ্ছে,
"কর্ম ধর্ম এগুলো অজ্ঞানান্ধকার যা স্বপ্রকাশ আত্মকে স্পর্শ করতে পারে না। যিনি সর্ব পদার্থের দ্রষ্টা, যাতে বর্ণ ও আশ্রমধর্ম নেই, সেই আত্মাকে যিনি ব্রহ্ম স্বরূপে দর্শন করেন তিনি স্বয়ং ব্রহ্মই (...স্বয়ম্ ব্রহ্ম এব ভবতি...) হয়ে যান।"
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে কর্মকাণ্ডের ব্যাবহারিক ক্রিয়াকর্ম জ্ঞানকাণ্ডের আধ্যাত্মিক উপলব্ধিতে লীন হয়ে যাচ্ছে।
মন্ত্র ১৭-১৮ নংতৎ-ত্বম-অসি = তত্ত্বমসি অর্থাৎ সেই ব্রহ্ম তুমিই এর প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে যা ছান্দোগ্যোপনিষৎ ৬/৮/৭ মন্ত্রেরই প্রতিরূপ।
মন্ত্রগুলো এবার "অহম্ ব্রহ্মস্মি...." এর দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে অদ্বৈতবাদ স্পষ্ট হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ২০-২১নং মন্ত্রে বলা হচ্ছে, "আত্মা হইতে ব্রহ্ম ভিন্ন নহে"
শ্রীমদভগবদগীতার ৫/২৪ নং শ্লোকেও একই বক্তব্য,
"যিনি আত্মাতেই সুখ অনুভব করেন, যিনি আত্মাতেই ক্রীড়াযুক্ত এবং আত্মাই যাঁর লক্ষ্য, তিনিই যোগী। তিনি ব্রহ্মে অবস্থিত হয়ে ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করেন।"
২৫নং মন্ত্রে এবার দেহকে আত্মা থেকে আলাদা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে দেহ, ইন্দ্রিয় প্রভৃতি আত্মা নহে। যাহা কিছু আত্মগোচর তাহা আত্মা হইতে পারে না। কিন্তু আত্মা ভিন্ন ত কোন সত্ত্বা নেই কারণ সবই ত ব্রহ্ম।
তাহলে এই ভিন্নতা আমাদের উপলব্ধিতে। আমরা কর্মকাণ্ডে আছি বলেই জ্ঞানের গভীরে গিয়ে ব্রহ্মে এক হতে পারছিনা।
সবই যদি এক হয় তাহলে ভোগ্য ও ভোক্তা কে?
২৬নং মন্ত্রে বলছে,
"আত্মা নিজের স্বরূপ নিজে ভোগ করেন, স্বভাবতঃ ভোগ্য বলিয়া পৃথক কোন পদার্থ থাকে না কারণ সবেতেই আত্মা। ভোগ্যও আত্মা, ভোক্তাও আত্মা। অন্যদিকে আত্মা ভোক্তা নহে কিংবা তাহার ভোগ্য কিছুই নাই।"
এই যে এই মন্ত্রে ভোগ্য ও ভোক্তার অভেদতত্ত্ব এখানেই লুকিয়ে আছে বরাহ উপনিষদের ’উপবাস’ শব্দের তাৎপর্য।
২৯-৩০নং মন্ত্রে বলছে যিনি পাণ্ডিত তিনি তার উপলব্ধির বা অনুভবের দ্বারা সমস্ত বস্তুকে আত্মস্বরূপ বলিয়া অবগত আছেন। অর্থাৎ ২৫ নং মন্ত্রে যে উপলব্ধির ঘাটতি ছিলো বলে দেহ ও আত্মাকে পৃথক বলে মনে হচ্ছিলো তা এই মন্ত্রে এসে ঘুচে গেলো৷
৩৩নং মন্ত্র ত যেন অমৃতবানী। ভগবান বিষ্ণু বলছেন,
"আমি সমস্ত প্রাণীর মধ্যে অবস্থিত নিত্যমুক্ত ও জ্ঞানস্বরূপ সেই আমি আমার উদ্দেশ্যে নমস্কার করি।"
অর্থাৎ সবকিছুই ব্রহ্মময় তাই ব্রহ্ম এখানে আত্মরূপ ব্রহ্মকেই (প্রাণী) নমস্কার করছে।
তারপর ভগবান বিষ্ণু মহর্ষি ঋভুকে ৩৪নং মন্ত্রে বলছেন,
"ভগবান! তুমিই আমার স্বরূপ এবং আমি তোমার স্বরূপ। তুমি অনন্ত, তোমায় ও আমায় ভেদশূন্য। তুমি ও আমি চিদাত্মার স্বরূপ। তোমার ও আমার উদ্দেশ্যে নমস্কার করি।”
এখানে ভগবান স্বয়ং মহর্ষিকে নমস্কার করতেছেন। অর্থাৎ ধীরে ধীরে সব যেন ব্রহ্মময় হয়ে যাচ্ছে।
৩৭ নং মন্ত্রে কি বলছে!
"যিনি সংসার, স্ত্রী, কামনাবাসনা ও সংসারের বিষয়রাশিকে বিষের ন্যায় মনে করে ত্যাগ করেছেন অর্থাৎ যিনি বৈরাগ্য লাভ করিয়া পরমহংস হইয়াছেন তিনিই বসুদেব। তাহার সাথে ব্রহ্মের আর কোন ভেদ রইলো না। উভয়ই এক হইয়া গেলো।"
৩৮নং মন্ত্রে আরও স্পষ্ট হলো। ভগবান বিষ্ণু বলছেন,
"এই সংসারে প্রত্যক্ষ দৃশ্যমান বস্তু অজ্ঞ লোকের নিকট সত্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়, কিন্তু প্রকৃতিপক্ষে আমিই সত্য, আমি পরমব্রহ্ম, আমা ভিন্ন সত্য বস্তু আর কিছুই নেই।"
অর্থাৎ যা কিছু দৃশ্যমান তা আসলে আপাত দৃশ্যমান। অজ্ঞ ব্যাক্তির নিকট সেই দৃশ্যমান বস্তুগুলো ভিন্ন মনে হলেও আত্মদর্শী ব্যক্তির নিকট সবই ব্রহ্ম।
ধীরে ধীরে সব যেন ব্রহ্মময় হয়ে যাচ্ছে। ভোক্তা ও ভোগ্য উভয়ই এক হয়ে যাচ্ছে। তাই বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণু ৩৯নং মন্ত্রে বলছেন,
"উপবাস অর্থ পরমাত্মা সমীপে জীবাত্মার অবস্থান। শরীর শোষণ উপবাস নয়।"
অর্থাৎ যখন সবকিছু ব্রহ্মময় হয়ে যায় জীবাত্মা ধীরে ধীরে পরমাত্মায় লীন হয়ে যায় তখন উপবাস অর্থ আর শরীর শোষণ থাকে না৷ এখানে আহার সংযম আর কোন অর্থ বহন করে না কারণ ভোগ্য ও ভোক্তা উভয়ই যখন আত্মা (বঃউঃ ২/২৬) তখন আত্মার জন্য আহার নিস্প্রয়োজন।
পরের মন্ত্রেই (৪০নং) তাই বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণু বলছেন,
"শরীর শোষণরূপ উপবাসে কি ফল হইবে? তাহা দ্বারা কি ব্রহ্মলাভ হইবে?"
অর্থাৎ এখানে স্পষ্টই বলছেন তিনি যে শরীর শোষণরূপ উপবাসও উপবাস কিন্তু সেটা দিয়ে যেহেতু ব্রহ্মলাভ হচ্ছে না তাই আগের মন্ত্রে তিনি কেবল ব্রহ্মরূপ উপবাসকেই মানতে বলেছেন। যেহেতু এই অধ্যায় শুরু হয়েছে ব্রহ্মজিজ্ঞাসা দিয়ে তাই এখানে ব্যবহারিক জগতের সকলকিছু গৌণ, একমাত্র ব্রহ্মবিদ্যা তথা অদ্বৈত ভাবই মুখ্য।
তবুও যারা কেবল মাঝখান থেকে জাকির নায়েকদের মতো করে একটি মন্ত্র তুলে এনে ’উপবাস’ শব্দের অর্থ নিয়ে অপপ্রচার করছে তারা কিন্তু মীমাংসার অর্থবাদ সম্পর্কেও জানেন। কিন্তু কেবলমাত্র স্বভাবগত বিরোধিতার আফিম নেশায় এরা কেবল বিরোধিতাই করে যাবেন। তাদের জীবনে না আসবে আহার সংযম, না আসবে পরমাত্মার সমীপে গমন।
অর্থবাদ নিয়ে স্বল্প আলোচনা করে দেই৷ পূর্বপক্ষরূপে মহর্ষি জৈমিনি প্রথমত এই প্রশ্ন করেন,
"আম্নায়স্য ক্রিয়ার্থত্বাদানর্থক্যমতদর্থানাং তস্মাদনিত্যমুচ্যতে।" (১/২/১)
অর্থাৎ শ্রুতি ক্রিয়াপ্রতিপাদক। এই হেতু যা সেরূপ নয়, সেই সকল শ্রুতি নিরর্থক। অতএব সেসকল শ্রুতি পৌরুষেয় বাক্যের ন্যায় অপ্রমাণ।
অর্থবাদবাক্য এমন কথাও আছে, যা সম্ভবপরই না। "শোভতেঽস্য মুখং য এবং বেদ" অর্থাৎ যিনি এই প্রকার জানেন, তাঁর মুখ শোভিত হয়৷ তাহলে প্রশ্ন যে কিছু জানলেই কি মুখের শোভা বর্ধন হয়?
"আস্য প্রজায়াং বাজী জায়তে য এবং বেদ" অর্থাৎ যিনি এটা এইভাবে জানেন, তাঁর সন্তান অন্নবান্ হয়। তাহলে প্রশ্ন যে পিতার কিছু জানার ফলে কি সন্তানের অন্ন বৃদ্ধি পায়?
আশাকরি অর্থবাদ স্পষ্ট। তবুও যদি তারা আপত্তি তুলে তবে অর্থবাদ নিয়ে আলাদা ব্লগ হবে এবং ডিবেটের চ্যালেঞ্জ জানানো হবে।

এবার বরাহ উপনিষদের ৪০নং মন্ত্র দেখিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে যে ব্রহ্মপ্রাপ্তিই যেহেতু লক্ষ্য তাহলে আহার সংযমের উপবাস ত লাগবে না।

দেখুন ভ্রাতাগণ, সবাই ত হুট করে ব্রহ্মবিদ্যা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না বা করলেও নিজের মধ্যে সত্যিকারের অভেদভাব নিয়ে আসতে পারে না তাই গৌণকে অবলম্বন করেই মূখ্যকে প্রাপ্ত হয়। ব্রহ্ম উপলব্ধি ত আর চাপাবাজী করে হয় না।
শ্রীমদভগবদগীতার ৪/৩৩নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,
"হে পরন্তপ! দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়। হে পার্থ! সমস্ত কর্মই পূর্ণরূপে চিন্ময় জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ করে।"
এখন জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয় বলে কি দ্রব্যময় যজ্ঞ বাদ দিতে হবে? দ্রব্যময় যজ্ঞই ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে জ্ঞানের সোপান বেয়ে জ্ঞানময় যজ্ঞের দিকে নিয়ে যাবে।
কেউ কেউ (শুদ্ধ ব্রহ্মচারীরা) মনঃসংযমরূপ অগ্নিতে শ্রবণ আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি দিয়ে যজ্ঞ করেন।
"শ্রোত্রাদীনীন্দ্রিয়াণ্যন্যে সংযমাগ্নিষু জুহুতি.."
আবার ছান্দোগ্য উপনিষদের ৮/৫/১ মন্ত্রে যজ্ঞ বলতে বলা হয়েছে,
"যাহাকে 'যজ্ঞ' বলা হয়, তাহা ব্রহ্মচর্য্যই, কারন যিনি জ্ঞাতা অর্থাৎ শাস্ত্রের মর্মাভিজ্ঞ, তিনি ব্রহ্মচর্য্যের দ্বারাই তাহা অর্থাৎ ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত হন। আর যাহাকে ইষ্ট বা উপাসনা বলা হয়, তাহাও ব্রহ্মচর্য্যই, যেহেতু লোকসমূহ ব্রহ্মচর্যের অনুষ্ঠান দ্বারাই উপাসনা করিয়া আমাকে অর্থাৎ ব্রহ্মলোক কে লাভ করে।"
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ১/৫/১৩ মন্ত্রে উদাহরণস্বরূপ, নিজের আত্মা ও ঈশ্বরকে দেখার উপায় বোঝানোর জন্য যজ্ঞ উপকরণের উপমা ব্যবহার করা হয় অভ্যন্তরীণ আচার-অনুষ্ঠান ও বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াই।
মহানির্বাণতন্ত্রে ও বিভিন্ন পুরাণাদি শাস্ত্রে মানসপূজার বিধিও আছে যেখানে কোন বাহ্যিক উপাচার লাগে না। সেখানে নিজের হৃদপদ্মকে দেবীরে আসন বানিয়ে, আকাশকে দেবীর বসন বানিয়ে, অহিংসা-ইন্দ্রিয় নিগ্রহ-দয়া-ক্ষমা-জ্ঞান এই পঞ্চ পুষ্পকে অঞ্জলি দিয়ে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মানসপূজা সম্পন্ন করা যায়।

তাই যার যে ভাব ও দর্শন সে অনুযায়ী একমাত্র সনাতন শাস্ত্রেই উপাসনার নানারকম বিধান দিয়েছেন। সেটাকে আব্রাহামিকদের একমুখী করার কোন যৌক্তিকতা নেই।

শ্রী অনিক কুমার সাহা SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ