ব্লগটির শিরোনাম ছিলো "ভাগবতের অবৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্ব ও গ্রহবিজ্ঞান"। ব্লগের শিরোনাম দেখেই আমাদের আগ্রহ জন্মালো সবগুলো পয়েন্ট পড়ে দেখার। তারা কিছু শ্লোকের উপর আপত্তি উপস্থাপন করেছে আর কিছু শ্লোকের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চেয়েছে। সম্পূর্ণ ব্লগে তারা অনেকগুলো শ্লোকের উপর আপত্তি তুলেছে। আপত্তিগুলো তুলেছে তারা বিজ্ঞানের আলোকে অথচ বিজ্ঞান নিয়ে নুন্যতম জ্ঞান থাকলে তারা এই ব্লগটিই বানাতো না। এতো নিম্মমানের উপস্থাপনা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব যাদের জ্যোতিষ শাস্ত্র তথা জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূগোল ও দর্শন শাস্ত্রে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। অথচ জ্যোতিষ আমাদের শাস্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে আছে। কিন্তু সনাতন শাস্ত্রের বিভিন্ন অবতার ও দেবদেবীকে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রকাশ প্রমাণ করার জন্য এরাই আবার যোগেশ চন্দ্র বিদ্যানিধির জ্যোতিষ ব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়। এরা মূলত নিজেরাও বুঝে না জ্যোতিষ, তাই কেবল কপি-পেস্ট দিয়ে কাজ চালায়। এই যে এরা জ্যোতিষ না বুঝেই বেদের গল্প করে অথচ পাণিনিয় শিক্ষা গ্রন্থে ৪১নং শ্লোকে বলা হয়েছে, "জ্যোতিষাময়নং চক্ষু.." অর্থাৎ, জ্যোতিষশাস্ত্রের অয়ন তত্ত্ব বেদের চক্ষু। তাহলে বলতে হয় এদের তথাকথিত বেদ প্রচার অন্ধের হাতিদর্শনের শামিল।
যাইহোক যেহেতু এরা মূলত অনার্য তাই রাহুল ব্রাদারদের মতো এরাও আমাদের শাস্ত্রের স্থুল বিশ্লেষণ করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমরা বরং সরাসরি এদের আপত্তি খণ্ডনে চলে যাই। আজকে আপাতত দুইটি শ্লোক নিয়ে অনার্যদের আপত্তির জবাব দিবো, পরবর্তীতে একে একে বাকিগুলোরও খণ্ডন দেওয়া হবে।
ভাগবত পুরাণে (৫/২১/৪) বলা হয়েছে সূর্য রাশিচক্রের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন ও দিনরাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি করে।
তারা এখানে আপত্তি তুলেছে এবং বলতে চাইছে এইগুলো বিজ্ঞান বিরোধী কথা। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হয়তো এমন যে পৃথিবীই তো সূর্যের চারদিকে ঘোরে ও সেইজন্যই পৃথিবীর আর সূর্যের দূরত্ব ও অবস্থান অনুসারে ঋতু পরিবর্তন ও দিনরাত্রি হয়। সূর্যের রাশি ভ্রমণ আবার কী? সূর্য কি পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে নাকি?
তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস করছি। আর হ্যাঁ, ভাগবতে উল্লেখিত জ্যোতির্বিজ্ঞানের এই শ্লোকগুলি লিঙ্গ পুরাণ, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ইত্যাদিতেও রয়েছে। উৎসাহী পাঠকগণ পুরাণের সুচীপত্র ধরে যেখানে সূর্য, চন্দ্র আদি গ্রহের কথা বলা হয়েছে ওটা খুলে দেখে নিতে পারেন। তাই এই জবাব শুধু ভাগবত থেকে নয়, অনান্য পুরাণগুলোর পক্ষ থেকেও দেওয়া হলো।
পুরাণে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপেই আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত। কিন্তু পুরাণের জ্যোতির্বিজ্ঞান রাশিচক্র ও নক্ষত্রমণ্ডল দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাই হয়তো আপাতভাবে কেউ পড়লে তার মর্মার্থ উদ্ধার বেশ কঠিন। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে ত জ্যোতিষ গ্রন্থ প্রামাণিক শাস্ত্র তাহলে সেগুলো অনার্যরা মন দিয়ে পড়ছে না কেন? পড়াশোনা করবে না কিন্তু পাখির মতো কিচিরমিচির করে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে পুরাণকে গালমন্দ করতে ঠিকই নেমে যাবে।
পুরাণের জ্যোতির্বিজ্ঞান বুঝতে গেলে আপনার আগে রাশিচক্র সম্পর্কে ধারণা থাকা লাগবে। তা না হলে আপনি পুরাণের জ্যোতির্বিজ্ঞানের কিছুই বুঝতে পারবেন না।
এবার আসি রাশিচক্রটা আসলেই কী? আমাদের পৃথিবী সৌরজগতের সদস্য, সে তার নিজস্ব গতিবেগে সৌরজগতে সঞ্চরণশীল রয়েছে আবার তার প্রতিবেশী চাঁদ, সূর্য, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি এরাও নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান। এই সমস্ত গতিশীল জ্যোতিষ্কগুলোর অবস্থান গতিশীল পৃথিবীর সাপেক্ষে সময়বিশেষে কেমন থাকে তা নির্ধারণ করার জন্যই রাশিচক্রের কল্পনা বা গণনা।
সৌরজগতের চারদিকে বারোটি নক্ষত্রমণ্ডল উপস্থিত রয়েছে। এইসব নক্ষত্রমণ্ডলে একাধিক নক্ষত্র রয়েছে, এদের কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করলে বিভিন্ন আকৃতি তৈরি হবে, কোনটার আকৃতি হবে মেষের মতো, কোনটার বৃষের মতো, কোনটার ধনুকের মতো ইত্যাদি ইত্যাদি। এই যে দ্বাদশ নক্ষত্র মণ্ডলের কল্পিত দ্বাদশ রূপ পাওয়া যায়, ওগুলোই হলো দ্বাদশ রাশি। এদের উপর ভিত্তি করেই প্রত্যেক জ্যোতিষ্কের পরিক্রমণ পথকে দ্বাদশ তথা বারোটি সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যে ভাগে মেষ আকৃতির নক্ষত্র মণ্ডল উপস্থিত রয়েছে সেটা মেষ রাশির অধিকৃত এলাকা, যে রাশিতে ধনুকের আকৃতি নক্ষত্র মণ্ডল উপস্থিত রয়েছে সেটা ধনুরাশির অধিকৃত এলাকা, এইভাবেই অন্য সব রাশির হিসাবও করা হয়।
এবার যেহেতু পৃথিবীও সূর্যের চারদিকে গতিশীল, তাই তারও পরিক্রমণ পথ রয়েছে, পৃথিবী বারোমাসে একবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে আসে। পৃথিবীর এই পরিক্রমণ পথকে বারো ভাগ করলে হিসাবটা এমন দাঁড়াবে যে, পৃথিবী প্রায় এক এক মাস সময় নিয়ে এক একটি রাশির অধিকৃত অঞ্চল অতিক্রম করবে। কিন্তু পৃথিবীর এই গতির কারণে আমরা পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যকেই তার আপাতগতি বা আপেক্ষিক গতি (যেমনটা চলন্ত বাস বা ট্রেনে আমরা দেখতে পাই পাশের দুপাশের গাছগুলো যেন বিপরীত দিকে ছুটে যাচ্ছে) নিয়ে এক মাস অন্তর অন্তর অর্থাৎ প্রায় ত্রিশ দিনের মতো সময় নিয়ে একটি রাশিকে অতিক্রম করতে দেখবো। পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের আপাত গতির কারণেই পৃথিবী যখন যে রাশিকে অতিক্রম করবে, সূর্যকে ঠিক তার বিপরীত রাশিকে অতিক্রম করতে দেখা যাবে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য নীচের চিত্রটি দেখুন।
চিত্রের ১ নম্বর স্থানে দেখুন পৃথিবী যখন Aquarius রাশিকে (কুম্ভরাশি)-কে অতিক্রম করছে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যকে তখন তার বিপরীত leo রাশিকে (সিংহ রাশি) -কে অতিক্রম করতে দেখা যাচ্ছে (তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে), তেমনি ২ নম্বরে পৃথিবী যখন Gemini (মিথুনরাশিকে) অতিক্রম করেছে তখন সূর্যকে তার বিপরীত Sagittarius রাশি (ধনুরাশি)-কে অতিক্রম করতে দেখা যাচ্ছে, আবার ৩ নম্বরে পৃথিবী যখন Libra (তুলারাশি) কে অতিক্রম করছে তখন সূর্যকে Aries (মেষরাশি) কে অতিক্রম করতে দেখা যাচ্ছে। এমনিভাবেই পৃথিবী যখন যে রাশিকে অতিক্রম করে সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে তার বিপরীত রাশিকে অতিক্রম করতে থাকে।
আরও পরিষ্কার বোঝার জন্য ভিডিওটি দেখুনঃ
তো দেখা যাচ্ছে, পৃথিবী এক এক মাস সময় নিয়ে এক একটি রাশি অতিক্রম করলে সূর্যকে পৃথিবীর সাপেক্ষে বিপরীত এক একটি রাশি অতিক্রম করতে দেখা যাবে। যেহেতু পৃথিবী আর সূর্যের অবস্থান ও দুরুত্বের উপর ঋতুচক্র, দিনরাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি নির্ভরশীল সেহেতু তাদের অবস্থান নির্ধারক রাশিগুলোও ঋতু পরিবর্তন, দিনরাত্রির হ্রাস বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। রাশিগুলো স্থির, তাই তারা constant.
(প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই মহাবিশ্বের কোন কিছুই স্থির নয়, তাই রাশিচক্রের নক্ষত্রগুলোও গতিশীল, কিন্তু তারা পৃথিবী থেকে এতটাই দূরে রয়েছে যে, তাদের স্থান পরিবর্তন এক দুই দিনে বা এক দুই বছরে পৃথিবী থেকে উপলব্ধি সম্ভব না। বহু বহু বছর অতিবাহিত হলেই তাদের স্থান পরিবর্তন পৃথিবী থেকে উপলব্ধি করা যাবে, তাই তাদেরকে রাশিচক্রের হিসেব নিকেশে আপাতত স্থির ধরে নেওয়া হয়েছে।)
আপত্তি-১ (ভাগবত ৫/২১/৩): ভাগবতের পঞ্চম স্কন্দের একুশতম অধ্যায়ের তিন নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে,
"সেই আকাশের মধ্যস্থলে থাকিয়া চন্দ্র প্রভৃতি গ্রহগণকে তাপ প্রদান করা ঐশ্বর্যশালী অংশুমালী স্বীয় তেজঃপ্রভাবে ত্রিলোকে তাপ প্রদান করেন ও অঙ্গকান্তি দ্বারা ত্রিভুবন উদ্দীপিত করেন, তার উত্তরায়ণ, দক্ষিণায়ন, বিষুব এই তিন নাম অনুসারে মন্দ, ক্ষিপ্ত, সমান এই ত্রিবিধ গতি আছে। এই ত্রিবিধ গতি অনুসারে তিনি আরোহণ, অবরোহণ ও সমস্থানে মকরাদি রাশিতে দিবারাত্রি হ্রস্ব, দীর্ঘ, সমান করিয়া থাকেন।"
তাদের প্রশ্ন সূর্য রাশিচক্রের ভেতর দিয়ে চলাচল করলে এমনটা হয়?
আপত্তি-২ (ভাগবত ৫/২১/৪): ভাগবতের পঞ্চম স্কন্দের চার নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে,
"সূর্য যখন মেষ আর তুলা রাশিতে অবস্থান করেন, তখন দিবারাত্রি সমান হয়ে থাকে, যখন বৃশ্চিকাদি রাশিতে বিচরণ করেন তখন মাসে মাসে এক ঘটিকা করে রাত্রিমান হ্রাস পাইয়া থাকে।"
এখানে একই প্রশ্ন সূর্য রাশির ভেতর দিয়ে চলাচল করলে এমনটা হয়?
ব্যাখ্যাঃ সূর্য কীভাবে রাশিচক্রের ভেতর দিয়ে চলাচল করলে দিন রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি হয় তা তো উপরে রাশিচক্র বোঝানোর সময় দেখিয়েছি। সকলের যেন সহজে বোধগম্য হয় সেজন্য স্থির চিত্র (ইমেজ) ও চলমান চিত্র (ভিডিও) উপস্থাপন করা হয়েছে।
পৃথিবী যখন যেই রাশির সামনে দিয়ে যায়, সূর্য তখন তার আপেক্ষিক গতি নিয়ে তার বিপরীত রাশির সামনে দিয়ে যায়। মহাজাগতিকভাবে এপ্রিল মাসের সময় পৃথিবী তুলা রাশির সামনে দিয়ে যায় সূর্য তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে আপেক্ষিক গতি নিয়ে মেষ রাশির সামনে দিয়ে যায়, আবার অক্টোবর মাসে পৃথিবী যখন মেষরাশির সামনে দিয়ে যায় সূর্য তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে আপেক্ষিক গতি নিয়ে তুলারাশির সামনে দিয়ে গমন করে। এইসময় অর্থাৎ এপ্রিল আর অক্টোবর মাসে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় কাছাকাছি থাকে।
এরপর সূর্য হেমন্তকালে বৃশ্চিকরাশিতে গমন করে। সেই সময় আমাদের উত্তর গোলার্ধে দিন ছোট ও রাত্রী বড় হতে থাকে। (পুরাণের এই হিসাব যে উত্তর গোলার্ধের সাপেক্ষে করা হয়েছে সেটা বোঝা যায় সূর্যের গতিপথ মেরুপর্বত, মন্দার পর্বত এইগুলো দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে, যেই পর্বতগুলি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।)
তো উপসংহার হিসাবে দেখতে পাচ্ছি, বাস্তবিকভাবেই গতিশীল পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য রাশিচক্র ভ্রমণের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে দিবারাত্রির দীর্ঘ-হ্রস্ব ও সমান এইগুলো করে থাকে।
প্রশ্ন আসতে পারে যে মাসের হ্রাসবৃদ্ধি নির্ভর করছে কিসের উপর?
পৃথিবী তার নিজের কক্ষপথে ৬৬.৫ ডিগ্রি হেলে রয়েছে। এইজন্যই সূর্যকে পরিক্রমণ করার সময় পৃথিবীর প্রধানত চার রকম পজিশন বা অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। একটা পজিশনে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ বেশি সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে ওই সময় সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়, এইসময় উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকায় উত্তর গোলার্ধে দিবাভাগ রাত্রিভাগ অপেক্ষা বড়ো হয়, আর এইরকম পজিশন যখন আসে তখন দেখা যায় সূর্য কর্কট রাশির নক্ষত্রমণ্ডলের সামনে অবস্থান করছে, তখন উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। এরপর কর্কট সংক্রান্তির পর থেকে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের থেকে দুরে সরতে থাকে ও উত্তর গোলার্ধের দিবাভাগ কমে রাত্রিভাগ বাড়তে থাকে। তাই পুরাণ বলছে সূর্যদেব যখন কর্কট রাশিতে গমন করেন তখন দিবাভাগ কমতে থাকে আর রাত্রিভাগ বাড়তে থাকে (উত্তর গোলার্ধের সাপেক্ষে)। এরপর পৃথিবীর দুই গোলার্ধ সূর্য থেকে মোটামুটি সমান দুরত্বে অবস্থান করে তখন সূর্য বিষুব রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। তখন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল চলে। তখন দুই গোলার্ধে দিন রাত্রি সমান সমান হয়, তখন সূর্যের ওপাশে তুলারাশির নক্ষত্রমন্ডলের সামনে অবস্থান করে তাই পুরাণ বলছে সূর্যদেব তুলা রাশিতে গেলে দিনরাত্রি সমান সমান করে। এরপর বৃশ্চিক রাশি শুরু। এইসময় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ আরও সূর্যের থেকে দূরে সরতে থাকে আর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে আসতে থাকে। তাই উত্তর গোলার্ধে দিবাভাগ রাত্রিভাগের তুলনায় আরও ছোট হতে থাকে। এইসময় উত্তর গোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে। তখন সূর্যের ওপাশে মকর রাশির নক্ষত্রমণ্ডল অবস্থান করে। মকর সংক্রান্তির পর থেকে উত্তর গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের কাছে আসতে থাকে আর দক্ষিণ গোলার্ধ দুরে সরে যেতে থাকে।তাই উত্তর গোলার্ধে ছোট দিবাভাগ ক্রমশ বাড়তে থাকে আর রাত্রিভাগ কমতে থাকে। তাই পুরাণ বলছে সূর্য নারায়ণ মকররাশিতে গেলে দিবাভাগ বৃদ্ধি করে। এরপর চতুর্থ পজিশনে দুই গোলার্ধ মোটামুটি সূর্য থেকে সমান দুরত্বে অবস্থান করে। তখন দুই গোলার্ধে দিবাভাগ ও রাত্রিভাগ সমান সমান হয়। ওই সময় সূর্যের ওপাশে মেষরাশির নক্ষত্রমণ্ডল দৃশ্যমান হয়, তখন উত্তর গোলার্ধে বসন্ত কাল চলে। তাই পুরাণ বলছে সূর্য মেষ রাশিতে গেলে দিনরাত্রি সমান সমান করেন।
এখানে রাশিচক্রের গুরুত্ব কি?
পৃথিবীর উপর প্রভাব বিস্তারকারী সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদি জ্যোতিষ্কের অবস্থান জানার জন্য রাশিচক্রের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া শুধু রাশিচক্র নয় চিত্রা, বিশাখা ইত্যাদি সাতাশ নক্ষত্র দিয়েও পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদির অবস্থান বিচার করা হয়। এখানে কারও মনে যদি প্রশ্ন জাগে, চন্দ্র-সূর্য দিন-রাত্রি, জোয়ার ভাটা, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদির ব্যাপারে পৃথিবীর ওপর প্রভাব ফেলে এটা তো প্রত্যক্ষ কিন্তু বুধ, শুক্র, মঙ্গল ইত্যাদি গ্রহগুলো আবার কীভাবে পৃথিবীর উপর প্রভাব ফেলে? এগুলোরও যৌক্তিক উত্তর রয়েছে যা পরে পরে বিশ্লেষণ করা হবে।
মন্তব্যঃ সনাতন শাস্ত্রের দর্শন ও ব্যপ্তি অত্যন্ত গভীর তাই স্থুল ভাবনায় এই সমুদ্র থেকে অমৃত সন্ধান সম্ভব নয়। শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা, নিজের মধ্যে মননশীলতা ও প্রকৃত তত্ত্বকে জানার আগ্রহ বাদ দিয়ে মন ও মস্তিষ্ক যদি কেবল অশ্লীলতা ও খুঁত ধরতে ব্যস্ত থাকে তবে সেটাকে কোনভাবেই প্রকৃত জ্ঞানচর্চা বলা যায় না। শাস্ত্রের কোন বিষয় যদি আমাদের বোধগম্য না হয় অথবা কোনকিছুর ব্যাখ্যা করা যদি সম্ভব না হয় তবে কেবল নিজের বোধবুদ্ধির উপর ভিত্তি করে সেগুলোকে অবান্তর ও প্রক্ষিপ্ত বলে দেওয়ার মধ্যে কোন পাণ্ডিত্য নেই।
0 মন্তব্যসমূহ