আজ পবিত্র রামনবমী, মর্যদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের আবির্ভাব তিথি। এই পূন্য তিথিতে জগতের কল্যাণ সাধনে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এই ধারাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
"পুরুষোত্তম" শব্দটির সন্ধি-বিচ্ছেদ করলে যে দু'টি শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলো হল 'পুরুষ' এবং 'উত্তম'।
অর্থাৎ যিনি পুরুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
এর বাইরে এই শব্দটির আর একটি অর্থও রয়েছে। সেটা এই যে ব্যক্তি যাবতীয় দোষের উর্ধ্বে, যিনি চিরন্তন এবং যাবতীয় জীবের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য।
যেভাবেই চিন্তা করি শ্রীরামচন্দ্রের নামের আগে "পুরুষোত্তম" বিশেষণটি একদমই যথাযথ।
শ্রীরামচন্দ্রের ব্যবহার এবং জীবন সর্বক্ষেত্রেই সর্বোত্তম আদর্শের বহিঃপ্রকাশ। তাই পুরুষোত্তমের সাথে‘মর্যাদা’ শব্দটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। 'মর্যাদা’ মানে কিন্তু এখানে dignity বা respect নয়, মর্যাদা মানে হলো‘সীমা’। সীমা অতিক্রম না করাটাই মর্যাদা অতিক্রম না করা। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ধর্মের বিভিন্ন রূপ যেমন পিতার প্রতি ধর্ম, মাতার প্রতি ধর্ম, ভাইয়ের প্রতি ধর্ম, স্ত্রীর প্রতি ধর্ম এবং সর্বাপেক্ষা প্রজার প্রতি রাজধর্ম। মূল বাল্মিকী রামায়ণের বিশ্লেষণে দেখা যায় শ্রীরামচন্দ্র এই সকল ধর্মের সীমা অতিক্রম করে নিজের স্বার্থ সুখ নিশ্চিত করতে পারতেন কিন্তু তিনি সীমা তথা মর্যাদা অতিক্রম না করে প্রতিটি ধর্ম যথাযথ নির্বাহ করেছেন এবং সনাতন শাস্ত্রসমূহের এটাই শিক্ষা।।
অর্থাৎ শ্রীরামচন্দ্র তাঁর আদর্শিক ভিত্তির উপর দাড়িয়েই তিনি মর্যাদা পুরুষোত্তম।।
শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে দুকলম লিখা আমার মত অতি সাধারণের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব তবুও আমার পরম পূজ্য শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে কিছু লাইন লিখতে চাই আজ রাম নবমীর এই পূণ্য তিথিতে৷
শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন অস্ত্র (তিনি কখনও আগ্রাসনের পক্ষে অস্ত্র তুলেন নি, তুলেছেন বিপক্ষে) ও শাস্ত্রে সমান পারদর্শী। তিনি ছিলেন ছোট বড় ধনী গরীব সকলের প্রতি সমদর্শী। তিনি ছিলেন প্রচন্ড বিনয়ী ও মিষ্টভাষী, এমনকি রাবণের প্রতিও তিনি কোন কটুবাক্য প্রয়োগ করেন নি৷ তিনি মহা শাস্ত্রজ্ঞ হয়েও ছিলেন উদার ও নিরহংকারী। অর্থাৎ একজন প্রকৃত "আর্য"-এর সকল গুণাবলি ছিল শ্রীরামচন্দ্রের চরিত্রে।
আর্যাবর্তের সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ হয়েও না ছিল রাজ্যের লোভ, না ছিল নারীর লোভ। নিজের একমাত্র স্ত্রীকে ভালোবাসতেন নিজের চেয়েও বেশি আর স্বর্ণলঙ্কা জয় করেও সেই রাজ্য শাসন না করে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরেছিলেন শূন্য হাতে৷
শ্রীরামচন্দ্রের চারিত্রিক গুণাবলী এত ছোট লিখায় শেষ করা যাবে না তাই আমি কেবল কিছু অংশ তুলে ধরছি।
★ শ্রীরাম ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ভ্রাতৃপ্রেমী। সবসময় নিজে ছাড় দিয়েও ভাইদেরকে সবটুকু দিয়ে দিতেন। ভরতকে ত রাজ্যই দিয়ে দিয়েছিলেন। পিতার প্রতিজ্ঞা রক্ষায় শ্রীরামচন্দ্র যখন অযোধ্যা ছেড়ে বনবাসের সিদ্ধান্তঃ নিলেন তখন ভরত ছিলেন অযোধ্যার বাইরে। শ্রীরামচন্দ্র জানতেন ভরত ফিরে এলে তিনি কোনভাবেই শ্রীরামচন্দ্রকে বনবাসে যেতে দিবেন না তাই শ্রীরামচন্দ্র খুব দ্রুতই বনবাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন।।
★ শ্রীরামচন্দ্র প্রজাদের জন্য ছোটবেলা থেকেই ছিলেন উদারহস্ত। এর সত্যতা পাওয়া যায় মূল বাল্মিকী রামায়ণে।
শ্রীরামচন্দ্রের বনবাসবার্তা প্রচারিত হলো। তখন রাজমহিষীরা আর্তস্বরে এই বলে চিৎকার করতে লাগলেন,
"হা! যে রাম পিতার নিয়োগ ব্যাতিরেকেও আমাদিগের তত্ত্বাবধান করিতেন, আজ তিনিই চলিলেন। যিনি জননীনির্বিশেষে জন্মাবধি আমাদিগকে শ্রদ্ধাভক্তি করিয়ে থাকেন, যাঁহাকে কেহ কঠোর কথায় কিছু কহিলে কদাচ ক্রোধ করেন না, যিনি অন্যের ক্রোধজনক বাক্য মুখেও আনেন না, প্রত্যুত কেহ ক্রোধাবিষ্ট হইলে প্রসন্ন করিয়া থাকেন, আজ তিনিই বনে চলিলেন।"
(বাল্মিকী রামায়ণ, অযোধ্যাকান্ড, সর্গ- ২০)
★ বালকবয়সেই রাজ্যসুখ ত্যাগ করে তিনি গুরুগৃহে শিক্ষাগ্রহণের জন্য চলে যান এবং গুরুর তত্ত্বাবধানে যথাযথ শ্রদ্ধার সহিত অস্ত্র ও শাস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করেন।
★ পিতার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার জন্য সকল রাজ্যমোহ ও রাজ্য বিলাস মূহুর্তে ত্যাগ করে নিজ রাজ্যাভিষেকের দিনই হাসিমুখে এক কাপড়ে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে চলে গিয়েছিলেন।
শ্রীরমাচন্দ্রকে বনবাসের জন্য প্রস্তুত দেখে রাজা দশরথ শোকে কাতর হয়ে কাঁদতে শুরু করলেন।
শ্রীরামচন্দ্র পিতাকে এমন বিমর্ষ দেখে পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
"পিতা, আমি আজ এই ধনধান্যপূর্ণ লোকসঙ্কুল রাজাবহুল বসুমতীকে ত্যাগ করিতেছি, আপনি ভরতকেই রাজ্য প্রধান করুন৷ আপনি মাতা কৈকেয়ীর নিকট যাহা অঙ্গীকার করিয়াছিলেন তাহা রক্ষা করিয়া সত্যবাদী হউন৷ আর আমি আপনার আজ্ঞা পালনপূর্বক চতুর্দশ বৎসর অরণ্যে থাকিয়া তাপসগনের সহিত কালযাপন করি৷ আমি নিজের বা আত্মীয়স্বজনের সুখবিলাষে রাজ্যলাভে লোলুপ নহি৷ আপনার আজ্ঞা পালন করাই আমার উদ্দেশ্য।
পিতা! আমি এই সমস্ত ভোগ্য বস্তু, স্বর্গ ও জীবনকে নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর জ্ঞান করি৷ মাতা কৈকিয়ে আমার অরণ্যবাস প্রার্থনা করাতে আমি কহিয়াছিলাম 'চলিলাম'। এখন সেই সত্য পালন করা আমার আবশ্যক, বিপরীত আচরণ কোনমতেই হইবে না৷ শাস্ত্রে কহে যে, পিতা দেবগণেরও দেবতা, দেবতা বলিয়াই আমি পিতৃবাক্য পালনে তৎপর হইতেছি।
আপনি মাতা কৈকিয়ের নিকট যাহা অঙ্গীকার করিয়াছেন তাহা সফল হউক। উদার রাজভোগে আমার অভিলাষ নাই, প্রীতিকর কোন পদার্থেরই স্পৃহা করি না। আপনকার আদেশই আমার শিরোধার্য।
আপনি আমার জন্য আর পরিতাপ করিবেন না। আমি আপনাকে মিথ্যাবাদী দোষে লিপ্ত করিয়া আজ বিপুল রাজ্য অতুল ভোগ ও প্রিয়তমা মৈথিলীকেও চাহি না।"
(বাল্মিকী রামায়ণ, অযোধ্যাকান্ড, সর্গ-৩৪)
★ শ্রীরামচন্দ্র সর্বদাই পরম দয়াবান, ক্রোধজয়ী, ব্রাহ্মণদের প্রতি শ্রদ্ধাবান, দরিদ্রদের প্রতি অনুকম্পাপরায়ন, ধর্মরহস্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞ, ইন্দ্রিয় জয়ী ও পবিত্র ছিলেন।
★ শ্রীরামচন্দ্র অকল্যাণকর কর্মে রত হতেন না, শাস্ত্রবিরুদ্ধ কথায় তাঁর প্রবৃত্তি হত না। বৃহস্পতির মতো তিনি পরপর যুক্তি সাজিয়ে কথা বলতেন।
★ তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান ও মিষ্টি ভাষী। আগত সকলের সঙ্গে পূর্বেই মধুর বাক্যে আলাপ করতেন। মহা বীর্যবান হয়েও তিনি নিজের বীরত্বের জন্য কখনও গর্বিত ছিলেন না।
★ শ্রীরামচন্দ্র তাঁর পত্নীকে এতটাই ভালোবাসতেন যে কয়েক হাজার মাইল পথ পায়ে হেটে পারি দিয়ে, সমুদ্রের উপর পাথরের সেতু বানিয়ে তিনি লঙ্কা গিয়েছিলেন কেবল স্ত্রীকে উদ্ধার করতে।
সেই শ্রীরামচন্দ্রকে অনেকে প্রচার করেন তিনি নাকি পত্নীবিদ্বেষী ছিলেন।। অথচ মূল বাল্মিকী রামায়ণে মাতা সীতাকে পুনরায় বনবাসে পাঠানোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। প্রজাদের ক্রমাগত তিরস্কার থেকে মাতা সীতাকে মুক্ত রাখতে, রাজ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সর্বোপরি প্রজাসুখকে গুরুত্ব দিয়ে রাজধর্ম পালনের ব্রত রক্ষা করতেই মাতা সীতাকে নিরাপদে মহর্ষি বাল্মিকীর আশ্রমে রেখে আসার বন্দোবস্ত করেছিলেন। মাতা সীতাকে বনবাসে রেখে তিনি বিভিন্ন জনের প্রবঞ্চনায় প্রভাবিত না হয়ে পুনরায় বিবাহ না করে একাকী জীবনযাপন করে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন।। এমনকি অশ্বমেধ যজ্ঞে নিজ পত্নী হিসেবে সীতার স্বর্ণ মূর্তি পাশে বসিয়ে সমস্ত জগতের সামনে এই বার্তা দিয়েছিলেন যে তাঁর স্ত্রী সীতা পতিব্রতা ও সতী।।
★ শ্রীরাম এতটাই নির্লোভ ছিলেন যে তিনি স্বর্ণলঙ্কা জয় করার পরও সেই রাজ্য শাসন ত দূরের কথা অযোধ্যায় ফিরেছিলেন শূন্য হাতে৷ তিনি বহুবার বহুভাবে রাবণকে সন্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলেন কেবল প্রাণনাশ এড়ানোর জন্য। তিনি কেবল তাঁর স্ত্রী সীতাকেই ফেরত চেয়েছিলেন, রাবণের বিশাল রাজ্যভূমিতে তাঁর বিন্দুমাত্র মোহ ছিল না।
★ শ্রীরামচন্দ্র ছোট বড়, ধনী গরিব সকলের প্রতি সমদর্শী।
কেউ কেউ নিচু তথাকথিত নিচু জাত বলে শম্ভুক হত্যার মিথ্যা দায় দেন ন্যায়বান শ্রীরামচন্দ্রের উপর। যে শ্রীরামচন্দ্র পথের ভিখারি শর্বরীর দেওয়া এটো ফল নিঃসংকোচে গ্রহণ করেছিলেন তিনি কিনা তথাকথিত নিচু জাতের জন্য কাউকে হত্যা করবেন?
মূল বাল্মিকী রামায়ণে স্পষ্ট বলা আছে শম্ভুক তপস্যা শুরু করেছিলেন স্বর্গ রাজ্য দখল করে পৃথিবীকে শাসন করার উদ্দেশ্যে সেখানে শম্ভুককে নিবৃত্ত করতেই শ্রীরামচন্দ্র শম্ভুককে হত্যা করে তার অহংকারের বিনাশ করেছিলেন।।
★ শ্রীরাম ছিলেন সত্যিকার দেশপ্রেমিক। দীর্ঘকাল বনবাস শেষ করে শ্রীরামচন্দ্র যখন পুস্পক বিমানে করে অযোধ্যায় ফিরছিলেন তখন উপর থেকে ভারতভূমির সৌন্দর্য দেখে তিনি বলেছিলেন,
"জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী"
শ্রীরামচন্দ্রের দুইটা বিষয় আমাকে খুব আলোড়িত করেছে।
১) একদিন শ্রীলঙ্কার মাটিতে আর্য যোদ্ধা শ্রীরামের যুদ্ধ শিবিরে রাবনের গুপ্তচর, রাম সেনা দ্বারা ধৃত হলে রণনীতি অনুযায়ী তাদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বিহীত হলেও তাদের মুক্তি প্রদান করে শ্রীরাম সেই গুপ্তচরদের বললেনঃ
"যাও, রাবণকে গিয়ে আমাদের সামর্থ্যের পরিচয় দাও, আর তাকে বলো, শ্রীরাম শুধু তার পত্নী 'সীতার' জন্য এ যুদ্ধ করছেন না, বিশ্বের সমগ্র নারীসমাজের সম্মান প্রতিষ্ঠার আদর্শ স্থাপনের জন্য রাবনের সাথে এক ধর্মযুদ্ধ(ন্যায়যুদ্ধ) করতে যাচ্ছেন।"
২) শ্রীরাম যখন রাবণকে হত্যা করল তখন তিনি ভ্রাতা লক্ষ্মণের কাছে জানালেন তিনি হিমালয়ের পাদদেশে গিয়ে এক বছরের স্বেচ্ছা প্রায়শ্চিত্ত করবেন। লক্ষ্মন কারন জানতে চাইলে শ্রীরাম বলেন।
"রাবণের ১০ টা গুণের (মস্তক) মধ্যে ৯ টা গুণকে হত্যা করার জন্য আমার মনে কোন অনুশোচনা নেই, কিন্তু রাবণ একজন পরম শিব ভক্ত ছিল এবং আমি একজন ভক্তকেও ত হত্যা করেছি তাই এক বছরের প্রায়শ্চিত্ত ত আমার করাই উচিত"।
রাবণের ১০ টা মাথা ছিল। এটার রূপক অর্থে রাবণের ভালো মন্দ মিলিয়ে ১০ টা গুণ (৯ টা গুণই ছিল পাপ) ছিল যেগুলোকে শ্রীরাম হত্যা করেছিলেন। এজন্যই সম্ভবত রাবণকে "দশানন" বলা হত।
রামরাজ্যঃ রামরাজ্য বলতে একটা শব্দের প্রচলন আছে। অযোধ্যায় শ্রীরামের প্রতি প্রজাগণের মনোভাব দিয়েই এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তিনি তাঁর রাজ্যে প্রজা সুখকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রজাদের অসন্তোষ যে তাঁকে প্রচন্ড পীড়া দিতো সেই সত্যতা মূল বাল্মিকী রামায়ণেই লিপিবদ্ধ আছে।
তাই বলা হতো,
"যেখানে রাম রাজা নয়, সেই স্থান রাষ্ট্রই নয়। কিন্তু রাম যেখানে বাস করেন তা অরণ্য হলেও রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যায়।" (অযোধ্যাকাণ্ড ৩৭/২৯)
যুগে যুগে বহু লোকে শ্রীরামের চরিত্র কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস করেছে, মধ্যযুগের কবি সাহিত্যিকরাও কল্পকাহিনী মিশিয়ে শ্রীরামকে নিয়ে কবিগান রচনা করে পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের চরিত্র কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস চালিয়েছে। কিন্তু এত মিথ্যাচার ও অপপ্রয়াসের পরও শ্রীরামচন্দ্র হাজার হাজার বছর ধরে স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
প্রণাম জানাই পরম পূজ্য মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রকে।
জয় শ্রীরামচন্দ্র
©স্টিমন অনিক।
0 মন্তব্যসমূহ