🔱 মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ জবস, জুলিয়া রবার্টস ও ল্যারি ব্রিলিয়ান্ট ছুটে এসেছিলেন কাঞ্চিদামে।

 

ভারতভূমি তথা সনাতন সভ্যতা ও দর্শনকে বলা হয় সমগ্র পৃথিবীর হৃদস্পন্দন।। এখান থেকেই সমগ্র জগতে জ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিস্তার হয়েছে এবং সব শেষে এই ভূমিতেই বারবার ফিরে এসেছে পশ্চিমা দার্শনিক থেকে শুরু করে সকল গবেষকরা।

আজ আপনাদেরকে জানাব ভারতের উত্তর খন্ডের কাঞ্চিদাম ও এই দামে পশ্চিমা মহারথীদের ছুটে আসা।

আলোচনা হবে স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ, জোলিয়া রবার্টস, ল্যারী ব্রিলিয়ান্ট, জ্যাফরি স্কল, রিচার্ড আলপের্টসহ (রাম দাস) আরও অনেকের কথা। এরা সকলেই যখন এক বিন্দুতে মিলিতে হয়েছেন উত্তরখান্ডের কাঞ্চিদামে সনাতন দর্শন ও সংস্কৃতির টানে।

তবে কাঞ্চিদামের মূল আকর্ষণ হচ্ছে বজরংবলীর পরম ভক্ত এবং অনেকের মতে স্বয়ং বজরংবলীর অংশ নীম করোলি বাবা।

নিঃসন্দেহে ফেইসবুক এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। সব ব্যবসায় সুদিন এবং দুর্দিন থাকে ফেইসবুক তার বাইরে নয়। ফেসবুকের যখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছিলো তখন ফেইসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ ফেইসবুক বিক্রি করে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করে ফেলেছিলেন। ঠিক সেই সময়ই তিনি তার মেন্টর আপেলের সিইও স্টিভ জবস এর শরণাপন্ন হন। জবস তাকে ভারত ও কাঞ্চি দাম মন্দির পরিভ্রমণের পরামর্শ দেন।

স্টিভ তাকে বলেন ভারতে একটি মন্দির আছে যা জীবনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। সে নিজেও তার চরম দুঃসময়ে সেখানে অনেক সময় কাটিয়েছিলেন। আমরা সকলেই জানি স্টিভসের শৈশব থেকে শুরু করে কতটা স্ট্রাগল করে কাটিয়েছিলেন। এক বেলা আহারের জন্য লম্বা পথে পায়ে হেটে তিনি ইস্কনের "হরে কৃষ্ণ" টেম্পলে যেতেন।

স্টিভসের পরামর্শে জাকারবার্গ তার ফেইসবুক ব্যবসার দুর্দিন কাটিয়ে উঠতে এক মাস ভারতে অতিবাহিত করেন। ২০১৫ সালে জাকারবার্গ যখন তার নিজের ফেসবুক কার্যালয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেন তখন তিনি তার কাছে সেই গল্পটা-ই শেয়ার করেন।

মার্ক বলেন, "জবস আমাকে বলেছিলেন আমি বিশ্বাস করি তোমার ব্যবসায় সফলতা আনতে তোমাকে ভারতের একটি মন্দির ভ্রমণ করতে হবে যা আমি আপেলের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য করেছিলাম।"

জাকারবার্গ বলেন, "সুতরাং আমি এক মাস ভারতে অতিবাহিত করি। ভারতের মানুষ দেখি, তাদের আচরণ দেখি, তাদের যোগাযোগ মাধ্যম দেখি তাদেরকে বুঝতে চেষ্টা করি।আমি ভাবলাম আমি যদি তাদের আত্মার সাথে সম্পর্কিত হতে পারি তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর হবে।"

অবশ্যই শেষ পর্যন্ত মার্ক জুকারবার্গ ফেইসবুক বিক্রি করেন নি। তার কোম্পানি এখন বিশ্বের প্রথম ৫ টি কোম্পানির একটি। তার কোম্পানির মূল্য এখন ৪৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশী। ডেইলি প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুকে লগইন করে।

কারোলি বাবার আশ্রমের সেক্রেটারী বিনোদ যোশী বলেন মার্ক যখন আশ্রমে আসেন তখন তার পরনে ছিল একটি ট্রাউজার যার হাঁটুতে কাছে ছেড়া ছিল। জুকারবার্গ এই আশ্রমে দুই দিন কাটাবেন বলে আসছিলেন। কিন্তু ঝড়ের কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তিনি আরো একদিন বেশি ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে জাকারবার্গ ফেইসবুককে একটা নতুন যুগের সুচনা দেন।

ভারত ভ্রমণের সময় জাকারবার্গ যে মন্দিরটি ভ্রমণ করেন তা হলো নিম কারোলি বাবার (Neem Karoli Baba) আশ্রম। এটা কাইঞ্চি ধাম (Kainchi Dham) নামেও পরিচিত। এটা ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যে অবস্থিত। নিম কারোলি বাবা অবশ্য মারা যান ১৯৭৩ সালে। স্টিব জবসও নিম করোলি বাবার দেখা পান নি কারন স্টিভ ভারতে পৌছেছিলেন ১৯৭৪ সালে৷ করোলি বাবার দেখা না পেলেও তার দর্শন ও আদর্শ ঠিকই ধারণ করতে পেরেছিলেন। প্রায় মাস খানেক কাঞ্চিদামে কাটিয়ে যাওয়ার পরই তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্ববিখ্যাত "এপল" ব্রান্ড।

তার সহকর্মী জিউম উডসের মতে এপলের লগো নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে কয়টা ধারণা তাদের নিজেদের মধ্যে প্রচলিত আছে তার একটা হচ্ছে করোলি বাবা আপেল খুব পছন্দ করতেন। যদিও স্টিভ জবস নিজে কখনও এই বিষয়টা রিভিল করেন নি। করোলি বাবা ১৯৭৩ সালে চলে গেলেও তিনি রেখে গেছেন তার আশ্রম তাঁর দর্শন।

স্টিভ জবসকে আবার অনুপ্রাণিত করেছিলেন বিশিষ্ট মহামারী বিশেষজ্ঞ ও গুগলের প্রাক্তন ডিরেক্টর ল্যারি ব্রিলিয়ান্ট। ল্যারি তার জীবনে খুবই হতাশ ছিলেন, কোনকিছুতেই তিনি সফলতা পাচ্ছিলেন না। তারপর তিনি ১৯৭৩ আলে কাঞ্চিদাম করোলি বাবার আশ্রয়ে যান এবং করোলি বাবার পরামর্শে তিনি গুটিবসন্ত দূরিকরনে কাজ শুরু করেন। তিনি WHO এর মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৮০ সালের মধ্যে তিনি ভার‍ত থেকে এই গুটিবসন্ত নির্মুলে বিশাল অবদান রাখেন। ল্যারি ব্রিলিয়ান্টকে করোলি বাবা সুভ্রমানিয়াম নামে ডাকতেন এবং তার স্ত্রী এলাইনকে ডাকতেন গিরিজা নামে৷ পরিবর্তীতে ল্যারি (সুভ্রমানিয়াম) ও গিরিজা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন বিশাল মানবিক সংগঠন "সেভা ফাউন্ডেশন" ও "ধর্ম ফাউন্ডেশন"।

পাহাড়ে ঘেরা এই আশ্রমটি দেখতে অনেক সুন্দর। এই আশ্রম অনেক পশ্চিমা, বিশেষ করে আমেরিকানদের আকর্ষণ করেছে। স্টিভ জবস বা মার্ক জুকারবার্গ একমাত্র ব্যক্তি নয় যারা এই আশ্রমে এসেছেন। আরো উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন অস্কার বিজয়ী হলিউড অভিনেত্রী জুলিয়া রোবর্টস। জুলিয়া রবার্ট এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন করোলি বাবার দর্শনে যে তিনি এই আশ্রমে একেবারেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সনাতন ধর্ম ও দর্শনকে চিরতরে গ্রহণ করেন।

আরেকজন ছিলেন রিচার্ড আলপের্ট। যিনি করোলি বাবার সরাসরি সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৬০ সালের দিকে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সেখানে সাইকিডেলিক ড্রাগসের উপর গবেষণা করেন। পরবর্তীতে তাকে হার্ভার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। হতাশায় বিপর্যস্ত আলপের্ট চলে আসেন ভারতের কাঞ্চিদামে। তিনি এখানে এসে করোলি বাবার উপরই সাইকিডেলিক ড্রাগের এক্সপেরিমেন্ট করতে চান এবং করোলি বাবার সান্নিধ্যে কি এক অজানা কারণে তিনি পুরপুরি বদলে যান। অতপর তিনি এই আশ্রমেই থেকে যান এবং করোলি বাবা তাকে রাম দাস নাম দেন। অতঃপর ১৯৭১ সালের দিকে তিনি আমেরিকা ফিরে গিয়ে লিখেন বিখ্যাত বই "বি হেয়ার নাউ"। এই বইটি রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হয় এবং এই অর্থে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন "হনুমান ফাউন্ডেশন"। পরবর্তীতে রাম দাস নামেই রিচার্ড আলপের্ট আমেরিকায় খ্যাতির শিখরে পৌছান।

২০১৩ সালের গ্রামি এওয়ার্ড নমিনেটেড জাফ্রে কাগেলও (কৃষ্ণ দাস) আছেন এই লিস্টে। কৃষ্ণ দাস পরবর্তীতে সকল গান ছেড়ে দিয়ে কেবল সনাতন ভক্তি সঙ্গীতেই মনোনিবেশ করেন। আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে তার ভক্তিগীতিতে মুগ্ধ হয়ে বহু পশ্চিমা সনাতন দর্শনে আকৃষ্ট হোন।

এছাড়াও এই তালিকায় আছেন ebay কো- ফাউন্ডার জেফরী স্কল (Jeffrey Skoll), ফিল্মমেকার জন বুশ, লেখিকা ইভেট রোসি (Yvette Rosse)।

এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে আমার নিজের কাছেই কাল্পনিক লাগছিল কিন্তু মার্ভেল সিরিজের মুভি ডাঃ স্ট্রেইঞ্জ এ দেখানো অস্ট্রাল ডাইমেনশন ও বেদান্ত কন্সেপ্টটা দেখার পর মনে হলো অনেককিছু জানার আছে, বুঝার আছে। সনাতন দর্শন আমাদের কাছে প্রাচীন মনে হলেও এর গভীরতা আধুনিক যুগের বিজ্ঞান দর্শনকেও হার মানায়।

★আচ্ছা ভারতে ত ঢঙ্গি বাবাদের, স্বঘোষিত ভগবানের কারখানা তাহলে এই করোলি বাবাও কি একই টাইপের? অনেকে আবার আরূপ করে পৌরাণিক অবতারবাদের কাল্পনিক ভগবান।

আমার মনে হয় না করোলি বাবা সেই রকম কেউ ছিলেন বরং তার জীবনধারণ ছিল খুবই সাদামাটা। তিনি ভন্ড হলে নিশ্চয়ই এত বড় বড় ব্যক্তিরা উনার দ্বারা প্রভাবিত হতেন না। এরা সবাই অন্ধবিশ্বাসী হয়ে "মানত" করতে সেই আশ্রমে গিয়েছিল বলেও আমার মনে হয় না। নিশ্চয়ই বিশেষ কিছুর সন্ধানেই এই বিশেষ মানুষগুলো ওখানে গিয়েছিলেন ও প্রভাবিত হয়েছিলেন৷ আর এমনিতেও ভারতভূমিতে আধ্যাত্মিক সাধক ত কম আসে নি মানুষের কল্যাণ সাধনে!

করোলি বাবার প্রধান তিনটা প্রিন্সিপাল আমাকেও আলোড়িত করেছে,

"সবাইকে ভালোবাসো, সবাইকে খেতে দাও, সকলের সেবা করো।"

প্রতিটি বক্তব্যের তথ্যসূত্র নিচে দেওয়া হলো।

Reference:

★ https://youtu.be/5H1FCQ5Sm18

★ https://youtu.be/rYrzMzn4N6I

★ https://youtu.be/hRf6G9uKYcQ

★ https://youtu.be/QSbkyfaVrxU

★ https://youtu.be/s0oVLguD4Oc

★ https://youtu.be/5NPALAA70EA

1/ https://www.livemint.com/.../Mark-Zuckerbergs-temple-run...

2/  https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ram_Dass

3/ https://en.m.wikipedia.org/wiki/Larry_Brilliant

4/ https://youtu.be/5H1FCQ5Sm18

5/ https://vdocuments.net/steve-jobs-neem-karoli-baba-apple...

6/ https://www.oneindia.com/.../pictureof-guru-neem-karoli...

7/ https://youtu.be/_-FRZYAVZac

©শ্রী অনিক কুমার সাহা