বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপ প্রসঙ্গে


 


ইদানিং একটা দাবি খুব প্রকট হয়েছে, যে বেদের কোথাও নাকি ঈশ্বরকে সাকার বলা হয় নাই। বেদে ঈশ্বর নাকি সর্বত্রই নিরাকার। ঈশ্বরের রূপদান বেদ বিরোধী। 


এমনকি এই কথাগুলোর পিছনে বেদ উপনিষদ থেকে রেফারেন্সও দেন দাবীকারিরা। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে উক্ত দাবী কতোটা যৌক্তিক?  আসলেই কি 

বেদের সর্বত্রই ঈশ্বর নিরাকার? বেদে কি ঈশ্বরের সাকার রূপের বর্ণনা নাই? তাহলে সকার ঈশ্বরের উপাসনা কি বেদ বিরোধী? 


এই প্রশ্নের উত্তর গুলি খোঁজর চেষ্টা করব বেদ থেকে।


তাহলে শুরু করা যাক..............


বেদের অংশ চারটি; সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। 

আমরা এখানে রেফারেন্স হিসেবে বেদের সংহিতা, আরণ্যক ও উপনিষদের সাহায্য নিব। বেদ সকল প্রকার উপাসনার পন্থা নির্দেশ করা আছে। সেখানে সাকার নিরাকার উভয় পন্থাই বলা আছে।


এবার দেখি বেদে ঈশ্বরের বা দেবদেবীদের রূপ সম্পর্কে আদৌ কিছু বলা আছে কিনা। আর বলা থাকলে কি বলা আছে....


#সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।

স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্।। (ঋগ্বেদ-১০/৯০/১)

>> পরম-পুরুষের সহস্র মস্তক, সহস্র নয়ন ও সহস্র চরণ। তিনি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে পরিব্যপ্ত হয়ে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অতীত ও সকল জাগতিক হিসাব নিকাশ পরিমাপের অতীত হয়েও জীব হৃদয়ে অবস্থান করেন।


** এখনে দেখা যাচ্ছে ঋগ্বেদে বলা হচ্ছে পরম পুরুষের অর্থাৎ ভগবানের বা ঈশ্বরের সহস্র বা অনন্ত মস্তক, চক্ষু ও চরণ রয়েছে। অর্থাৎ তার একটা সাকার সরূপ রয়েছে। এই ব্যপক বিশাল রূপ দ্বারা তিনি বিশ্বজগতকে ব্যপ্ত করেন। আবার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অতীত হয়েও অবস্থান করেন। আবার তিনি যুগপৎ ভাবে জীবহৃদয়েও অবস্থান করছেন। ঈশ্বরের এই রূপ মানুষের কল্পনার অতীত বক্তব্যের অতীত এজন্য এ রূপকে বলা অব্যক্ত অর্থাৎ যা ব্যক্ত করা যায় না। গীতায় ১১ অধ্যায়ে পাওয়া যায়, শ্রীকৃষ্ণ  অর্জুনকে দিব্য চক্ষু দান করায় তিনি সেই রূপ দর্শনে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু সেই রূপের আদি অন্ত মধ্য কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না অর্জুন।


এই একই স্লোক আছে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে -৩/১৪ তে।


#বৃহদারণ্যক উপনিষদের  ২/৪/৬ স্লোকে বলা হয়েছেঃ-

এই পুরুষের রূপ হরিদ্রারঞ্জিত বরসনের মতো পীতবর্ণ,  ইন্দ্রগোপ কীটের মত রক্তবর্ণ; অগ্নিশিখার মত, শ্বেত-পান্ডুর মতো শ্বেত পদ্মের মতো এবং চমকিত বিদ্যুতের মত।


#সহস্রশীর্ষং দেবং বিশ্বাক্ষং বিশ্বশম্ভুবম্।

বিশ্বং নারায়ণং দেবমক্ষরং পরমং পদম্।। (৪/১০/১৩- তৈত্তিরীয় অারণ্যক্ - কৃষ্ণযজুর্বেদ)

>> যাঁর অনন্তমস্তক,  অনন্তচক্ষু, যাঁর হতে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জাত হয়, যিনি বিকারহীন, পরমপ্রভু, স্বয়ংপ্রকাশ ; তিনি নারায়ণ। 


**এখানে সেই পরম - পুরুষকে নারায়ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রূপও সাকার।


#ইদং বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নি পদম্। 

স মূঢ়মস্য পাংসুরে।।(১/২২/১৭-ঋগ্বেদ)

>> বিষ্ণু এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমা কালে ত্রিলোক পা দিয়ে ধারণ করেন। তাঁর ধূলিযুক্ত পায়ে এই সমগ্র জগদব্রহ্মান্ডসংলগ্ন।

**অর্থাৎ  এই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিষ্ণুর পদধূলির ন্যায়। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আশ্রয় ভগবান বিষ্ণুর চরণ। এখানেও ঈশ্বরের সাকারত্ত্বের কথা পাই যেহেতু পায়ের কথা  বলা হয়েছ। তিনি সাকার না হলে পা আসলো কোথা হতে!?


#দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ।

উভো হি হস্তা বসুনা পৃনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে ত্বা।।(শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৯)

অন্বয়ঃ

হে (বিষ্ণু)-বিশ্বজগতের মহাপ্রভু (দিব)-দ্যুলোক হইতে (উত বা মহো)-অনেক মহৎ (পৃথিব্যা)-ভুলোক হইতে হে (বিষ্ণু)-বিশ্বজগতের মহাপ্রভু (উরো)- অনন্ত প্রসারী (অন্তঃরিক্ষাত্)- অন্তরিক্ষ হইতে (উভা হস্ত+আ)-উভয় অপ্রাকৃত হস্তকে (বসু+ না)-পরমধন দ্বারা (আ +পৃণস্ব)-আপনি পূর্ণ করুন আর (দক্ষিণাত)-ডানে (উত)এবং (সব্যদ)-বামে (আ +প্রযচ্ছ)-আপনি প্রদান করুন (বিষ্ণবে)-প্রাপ্তি নিমিত্তে উপাসনা করি (ত্বা)-আপনাকে।।

অনুবাদঃ হে বিশ্বজগতের মহাপ্রভু আপনি দ্যুলোক হইতে কি ভূলোক হইতে কিংবা অনন্ত প্রসারী অন্তরিক্ষলোক হইতে পরমধন লইয়া আপনি উভয় হস্তকে পূর্ণ করুন আর দক্ষিণ ও বাম হস্ত (উভয় হস্ত) দ্বারা অবাধে অবিচারে আপনি সেই পরমধন প্রদান করুন,আপনাকে প্রাপ্তি নিমিত্ত উপাসনা করি।।


** এখানে ভগবান বিষ্ণুর দ্বিভুজ (রঙ্গনাথ) রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় যা সাকার প্রতিপাদক। 


#হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্।

তৎ ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।। (১৫ - ঈশোপনিষদ)

>> হে ভগবান! হে সর্বজীব পালক! আপনার জ্যোতির্ময় আলোক আপনার মুখারবিন্দকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। কৃপা করে এই আচ্ছাদন দূর করুন এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তকে আপনার সত্য স্বরূপ প্রদর্শন করুন।


** এখানেও সাকাররূপের বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। বলা হচ্ছে এক উজ্জ্বল জ্যোতি ভগবানের মুখমন্ডলকে ঢেকে রেখেছে(তাঁর নিজস্ব জ্যোতি)। ঈশ্বর সাকার হলেই তার মুখমণ্ডল থাকা সম্ভব।


#পূষন্নেকর্ষে যম সূর্য  প্রাজাপত্য

ব্যূহ রশ্মীন্ সমূহ তেজো।

যৎ তে রূপং কল্যাণতমং তৎ তে পশ্যামি

যোহসাবসৌ পুরুষঃ সোহহমস্মি।। (১৬-ঈশোপনিষদ)

>>হে প্রভু, আপনি আদি কবি; আপনি বিশ্বপালক, আপনি যম এবং আপনি ভক্তদের পরম গতি ও প্রজাপতিদের সুহৃদ। কৃপা করে আপনার তেজোময় দিব্যজ্যোতি সংহরণ করুন যাতে আমি আপনার আনন্দময় রূপ দর্শন করতে পারি। আপনি সনাতন পুরুষোত্তম ভগবান। সূর্য ও সূর্যকিরণের সম্বন্ধের মতো আপনার সাথে আমি সম্বন্ধযুক্ত।


** এখানেও সেই পরম পুরষ ঈশ্বরের রূপের কথা বলা হয়েছে এবং সে রূপ দর্শনের বাসনা করা হয়েছে। 


#ক্বস্য  রুদ্র মৃলয়াকুর্হস্তো যো আস্তি ভেসাজো জলাষঃ।

অপভর্তা রাপসো দৈব্যস্যাভী নু মা বৃষভা চক্ষমীথাঃ।। (২/৩৩/৭- ঋগ্বেদ) 

>> হে রুদ্র! তোমার সে সুখপ্রদ হস্ত কোথায়, যে হস্তে তুমি ভেষজ প্রস্তুত করে সকলকে সুখী কর। হে অভীষ্টবর্ষী রুদ্র! তুমি দৈব পাপের বিনাশক হয়ে শীঘ্রই আমাকে ক্ষমা কর।


** এখানে শ্রী রুদ্র বা শিবের রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর হাতের কথা বলা হয়েছে এখানে। বেদের শতরুদ্রীয়তে ভগবান শিবের রূপর বিভিন্ন বর্ণনা আছে। অতগুলি স্লোক উল্লেখ করা সম্ভব নয় এই ছোট পোস্টে তাই কেয়কটা স্লোকের উল্লেখ করবো এখানে।


#প্র বভ্রবে শ্বিতীচে মনো মহীং সুষ্টুতিমীরয়ামি।

নমস্যা কল্মলীকিনং নমোভি  গৃর্ণীমসি ত্বেষং রুদ্রস্য নাম।। (২/৩৩/৮-ঋগ্বেদ)

>> বভ্রুবর্ণ, অভীষ্টবর্ষী শ্বেত আভাযুক্ত রুদ্রের উদ্দেশ্যে  অতি মহৎস্তুতি উচ্চারণ করি। হে স্তাতা! তেজবিশিষ্ট  রুদ্রকে নমস্কার দ্বারা পূজা কর, আমরা তাঁর উজ্জ্বল নাম সংকীর্তন করি। 


** এখানে ভগবান শিব বা রুদ্রকে বভ্রুবর্ক্ত বলা হয়েছে। তার রূপ থাকলেই বর্ণ থাকা সম্ভব। পরবর্তী ঋক্ গুলোতে রূপপর আরো ভালো বর্ণনা পাওয়া যায়। চলুন দেখা যাক....


#স্থিরেভিরঙ্গৈঃ পুরুরূপ উগ্রো বভ্রুঃ শুক্রেভিঃ পিপিশে হিরণ্যৈঃ।

ইশানাদস্য ভুবনস্য ভুরে র্ন বা উ যোষদ্রুদ্রাদাসূর্যম্।।(২/৩৩/৯- ঋগ্বেদ)

>> দৃঢ়াঙ্গ,  বহুরূপ, উগ্র ও বভ্রুবর্ণ রুদ্র দীপ্ত হিরণ্ময় অলঙ্কারে শোভিত হচ্ছেন। রুদ্র সমস্ত ভূবনের অধিপতি এবং ভর্তা, তাঁর বল পৃথককৃত হয় না।


** এখানে খুব স্পষ্ট ভাবে তার রূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার এও বলা হয়েছে তিনি স্বর্ণালংকারে শোভিত হচ্ছেন। 


#অর্হন্ বিভর্ষি সায়কানি  ধন্বার্হন্নিষ্কং  বিশ্বরূপম্

অর্হন্নিদং দয়সে বিশ্বমভ্বং ন বা ওজীয়ো রুদ্রত্বদস্তি।।(২/৩৩/১০-ঋগ্বেদ)

>>হে অর্চনাহ! তুমি ধনুর্ধারী; হে অর্চনাহ! তুমি নানা রূপ বিশিষ্ট ও পূজনীয় নিষ্ক ধারণ করেছ; হে অর্চনাহ! তুমি সমস্ত বিস্তীর্ণ  জগৎকে রক্ষা করছ, তোমা অপেক্ষা অধিক বলবান আর কেউ নাই।


** এখানে রুদ্রদেব ধনুর্ধারী এও বলা হচ্ছে। অর্থাৎ রুদ্র দেবের রূপ প্রতিপাদনে  উক্ত এই ৭-১০  ঋকই যথেষ্ট। 


#বিভ্রদ্দ্রাপিং হিরণ্যয়ং বরুণো বন্ত নির্ণিজং। 

পরি স্পশো নি ষেদিরে।। (১/২৫/১৩-ঋগ্বেদ)

>> বরুণ সুবর্ণের  পরিচ্ছদ ধারণ করে আপন পুষ্ট শরীর আচ্ছাদন করেন, হিরণ্যস্পর্শী রশ্মি চারদিকে বিস্তৃত  হয়।


** এই ঋকে স্পষ্ট দেখা  যাচ্ছে বরুণ দেবের রূপের বর্ণনা। তার শরীরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 


#দর্শং নু বিশ্বদর্শতং দর্শং রথমধি ক্ষমি।

এতা জুষত মে গিরঃ।। (১/২৫/১৮- ঋগ্বেদ)

>> সকলের দর্শনীয় বরুণকে আমি দেখেছি, ভূমিতে তাঁর রথ বিশেষ করে দেখেছি, আমার স্তুতি তিনি গ্রহন করেছেন। 


**  এখানে উক্ত সূক্তের দ্রষ্টা ঋষি শুনঃশেপ নিজে স্বীকার করছেন তিনি বরুণ দেবকে নিজ চোখে দেখেছেন। বরুণদেবের রথও তিনি দর্শন করেছেন। আর বরুণ দেবের সামনে তিনি এই সূক্তে উক্তে স্তুতি গুলি করায় বরুণ দেব সেই সকল স্তুতি গ্রহন করেন।


 #কেনোপনিষদের ৩য় খন্ডে বলা হয়েছে যে দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে স্বয়ং পরমেশ্বর পরমব্রহ্ম দেবতাদের সামনে আবির্ভূত হন। সেখানে দেবতাগণ ও ব্রহ্ম সকলেই সাকার রূপে দৃষ্ট।  কেনোপনিষদ অনুসারে যখন দেবতাগণ অসুরদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে অহংকারী হয়ে উঠলেন তখন পরমাত্মা তাদের মিথ্যা অভিমান দূর করার জন্য স্বয়ং তাদের সামনে সাকাররূপে প্রকট হন "তেভ্যো হ প্রদুর্বভুব" (কেনপনিষদ- ৩/২) এর বিবরণ শঙ্কর ভাষ্যে এমনঃ-

"স্বযোগমাহাত্ম্যনির্মিতেন অন্যদ্ভূতেন বিস্মাপনীযেন রূপেণ দেবতা মিন্দ্রিয়গোচরে প্রাদুর্বভূব" অর্থাৎ  পরমাত্মা এমন রূপ ধারণ করে দেবতাদের ইন্দ্রিয়ের সামনে প্রত্যক্ষ হন যে রূপ যোগমাহাত্ম্য দিয়ে রচিত হয়েছিলো এবং এজন্যই প্রকৃতপক্ষে তা আশ্চর্যজনক ছিল।



বেদে সকার নিরাকার দুই  উপাসনার কথাই বলা আছে। এখানে তো মাত্র কয়েকটা মন্ত্রের রেফারেন্স দেওয়া হলো আরো শত শত মন্ত্র পাওয়া যাবে বেদে যা ঈশ্বেরের সাকারিত্ব প্রতিপাদন করে। আর ঈশ্বর যদি সাকার না হতে পারেন সেটা তার ক্ষমতার ব্যর্থতা। এরূপ ব্যর্থ সত্ত্বাকে ঈশ্বর বলা চলে না। আবার দেখুন এই জগৎ যকে আমরা অনিত্য বলি সেই জগৎ সাকার। 

এই জগৎ ঈশ্বরের সৃষ্টি। তাহলে একবার ভাবুন ঈশ্বরের সৃষ্টি সাকার হতে পারে অথচ ঈশ্বরের সাকার হওয়ার ক্ষমতা নাই। তাহলে তো ঈশ্বর জগৎ অপেক্ষ ন্যূন হয়ে গেল। জগতের এমন একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে যা ঈশ্বরের নাই। তাহলে তাকে কিভাবে জগতপতি বলা যায়!!? তাই ঈশ্বরকে শুধু নিরাকার বললে ঈশ্বর এমন উপহাস পদ একটা জিনিসে পরিণত হয়, যেটা ঈশ্বর হওয়ার সামর্থ্য রাখে না।


#এর পরও যদি কেউ দবি করে সকার উপাসনা বেদ বিরোধী  তবে ঐ দাবিকারীকেই বেদ বিরোধী বলতে হবে। কারণ বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপের বর্ণনা আছে। এবং সেই সাকার রূপর  উপাসনা ও স্তুতিও আছে।


#এবার আসি ঐ দবি কারীরা কিসের ভিত্তিতে ঈশ্বর শুধু নিরাকার, তার কোনো সাকার রূপ থাকতে পারে না এরূপ বলে!?


এ দাবির সাপেক্ষে তারা ২/৩ টি মন্ত্র উল্লেখ করে থাকে। এবার সেই সকল মন্ত্র আমরা আলোচনা করবো। চলুন শুরু করি......


।। নতস্য প্রতিমা অস্তি।। এই বাক্যটুকু সকল সাকার বিরোধীদের মুখে শোনা যায়। আর এটা বলেই তারা এর অর্থ দার করায় যে ঈশ্বরের কোনো রূপ বা প্রতিমা নেই। চলুন দেখি এই মন্ত্রটা তারা পেল কোথায়....


#নৈনমূর্ধবং ন তির্যঞ্চং ন মধ্যে পরিজগ্রভৎ। 

'ন তস্য প্রতিমা অস্তি'অস্য নাম মহৎযশঃ।। (৪/৯- শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ)

>> কেউ তাঁর আদি, মধ্য, অন্ত উপলব্ধি  করতে পারে না। তিনি গ্রাহ্যাতীত বস্তু, 'তার সমতুল্য কেউ নেই, তার নাম অনন্ত মহিমাপূর্ণ। 


#ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহৎযশঃ।

হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা সস্মান্ন ইত্যেষ।।

(৩২/৩- শুক্ল যজুর্বেদ) 

>> তাঁর কোনো তুলনা নেই, তাঁর মহৎ যশ আছে। তিনি হিরণ্যগর্ভ,  তাঁর থেকে ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতাগণ জাত, তিনি স্বরাট।


** এখানে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখবেন এক্ষেত্রে প্রতিমা দিয়ে সমতুল্য বোঝানো হচ্ছে। প্রতিমা শব্দের উৎপত্তি প্রতিম্ থেকে যার অর্থ তুল্য বা মত। যেমনঃ- মাতৃপ্রতিম - মতৃতুল্য বা মায়ের ন্যায়, ভাতৃপ্রতিম- ভাইয়ের তুল্য বা ভাইয়ের মত বা ভাইয়ের ন্যায়। এখানে প্রতিমা ব্যবহৃত হয়েছে তুল্য সমতুল্য অর্থে। "তার সমতুল্য কেউ নেই" এই সুন্দর মন্ত্রের অর্থ বিকৃত করে ঐরূপ, "ঈশ্বরের প্রতিমা নেই" অর্থ করা হয়েছে।


#সকার বিরোধীরা আরেকটি রেফারেন্স দেয় যজুর্বেদের ৪০/৮ নং মন্ত্রে ঈশ্বরেকে বলা হয়েছে 'অকায়ম্'। অকায়ম্ অর্থ কি? যার কায়া নেই। কায়া অর্থ কি? শরীর। কায়া আত্ম হতে ভিন্ন ও জড়। জীবের মত পরমেশ্বরের এরূপ জড়শরীর নেই ।

শরীর জড় বস্তু, আমরা স্বরূপত আত্মা। আত্মা এক জড় শরীর থেকে আরেক জড়শরীরে ভ্রমণ করে বেড়ায় মুক্তি না  পাওয়া পর্যন্ত। এখানে অকায়ম্ বলে বোঝানো হয়েছে ঈশ্বরের জীবের ন্যায় এরূপ জড় শরীর নেই। তিনি এমন জীবের মত কায়া ধারী নয়। তিনি তার নিজ স্বরূপেই ঈশ্বর। তার রূপ চিন্ময়। শ্রীপাদ রামানুজাচার্যের মতে ব্রহ্ম সগুণ সাকার। সেহিসেবে তার কোনো অতিরিক্ত জড় দেহ নাই জীবের মত। তবে তার অচীন্তনীয় চিন্ময় রূপ অবশ্যই আছে এবং তিনি ঐরূপই। তা উপরে প্রতিপাদন করা হয়েছে বেদ থেকেই। 


তাই এখানে অকায়ম্ দিয়ে বোঝানো হয়েছে, জীবের ন্যায় ঈশ্বরের ঐরূপ জড় শরীর বা কায়া নেই।


সুতরাং, বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপের কথা নাই এটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা। আর এরূপ কথা বেদ বিরোধীও বটে।


শ্রী প্রান্ত সাহা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ