কিছু প্রশ্ন নিজেকে করুন

 

💠কিছু প্রশ্ন নিজেকে করুন।


পরমত অসহিষ্ণুতা, শাস্ত্রীয় বাগাড়ম্বর, অন্যের উপাস্যকে গালাগালি, উপাসনা পদ্ধতি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য কতটুকু শাস্ত্রসিদ্ধ ও ধার্মিকের বৈশিষ্ট্য?

ফেসবুকে শাস্ত্রীয় ও সনাতনী গ্রুপের ছড়াছড়ি অর্থাৎ মানুষ শাস্ত্রমুখী হচ্ছে যেটা খুবই আশাব্যঞ্জক হতে পারত। তবে বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন৷ ফেসবুকীয় এই শাস্ত্রবিদদের মধ্যে লক্ষ্যনীয় যেটা সেটা হলো সংগঠন ও ইজমভিত্তিক চিন্তাভাবনা। কেউ শিবকে ধুইয়ে দিচ্ছে ত কেউ কৃষ্ণকে, কেউ কালীকে ধুইয়ে দিচ্ছে ত কেউ ব্রহ্মাকে। নিরাকারবাদীরা সাকারবাদীদের মিথ্যা বলছে ত সাকারবাদীরা নিরাকারবাদীদের উগ্র বলছে।৷ প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতবাদকে উপরে রাখতে গিয়ে নিজের সনাতন ভাইটিকেই অথবা বোনটিকেই শত্রু বানিয়ে ফেলছে। এমন কিছু মানুষকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তারা যে ডেডিকেশনের সাথে শাস্ত্র নিয়ে তর্ক করছে তার সিকিভাগ ডেডিকেশনও স্বপ্রচারিত ধর্মীয় আচারে নেই। তাহলে মোদ্দা কথা সবই হলো তর্কে জয়ের লম্ফঝম্প।

🔷 তাহলে সনাতন শাস্ত্র কি এগুলোই শেখাচ্ছে এহেন শাস্ত্রমুখী শাস্ত্রজ্ঞদেরকে?

🔶 বৈদিক আত্মজ্ঞান মানবকে ভ্রাতৃত্ববোধের চেয়েও আপন করে, সবচেয়ে বেশি আপনতার বন্ধনে আবদ্ধ করে। ভাতৃত্ব তো জাগতিক অস্থায়ী বন্ধন। কিন্তু আমরা সবাই আত্মা, আমরা সকলেই এক ও অভিন্ন, সকলেই একই পরমাত্মার অংশ, এই জ্ঞান ভাতৃত্ববোধের বহু বহু ঊর্ধ্বে। সেজন্যই আমি মানে তুমিই, তুমি মানে আমিই; আমি, তুমি, সে আলাদা কেউ নয়, আমরা একটাই সত্ত্বা, আত্মা। সেজন্য অপরকে ভালোবাসা মানে নিজেকেই ভালোবাসা, অপরকে দুঃখ দেয়া নিজেকেই দুঃখ দেয়া। জগতে শুধু বোকারাই অপরকে দুঃখ, আঘাত দেয়ার মাধ্যমে নিজেকেই দুঃখ দেয়, নিজেকেই আঘাত করে। কিন্তু তারা এতটাই বোকা, আত্মজ্ঞান থেকে এতটাই দুরে যে, সেটা তারা বুঝতেই পারেনা।

🔶 মায়া নামে ভগবানের শক্তি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রকৃতির ত্রিগুণের বহিঃপ্রকাশ দ্বারা আবদ্ধ হয়ে বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য ইত্যাদির অনেকেই সাধনপদ্ধতি নিয়ে ভেদ ভাবনা ত্যাগ করতে পারছে না। আর সাকার-নিরাকার দ্বন্দ্বের কথা নাই-ই বললাম। একমাত্র ভগবানের অনন্য শরণাগত হলেই এই মায়া কাটানো সম্ভব। যখনই দেখা যায়, কেউ উপাসনাপদ্ধতি নিয়ে ভেদ করছে, বুঝতে হবে, সে প্রকৃতির ত্রিগুণ, মায়ার দাসত্বই করছে। যত বেশি ভেদভাবনা, তত বেশি মায়ার দাসত্ব, তত বেশি প্রকৃতির ত্রিগুণাধীন।

🔶 ভিন্ন ভিন্ন মানব যে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে উপাসনা করে সেটাও এক এবং অদ্বিতীয় স্রষ্টাকে উদ্দেশ্য করেই। উপাসনা মানে উপাস্যের প্রতি উপাসকের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।আর ভালোবাসার প্রকাশ অনন্ত।ভালোবাসার প্রকাশকে সান্ত করার চেষ্টা করাটা শুধু ভালোবাসাকেই নয়, ভালোবাসার সত্ত্বাকেও অপমানের নামান্তর। একই পিতার পাঁচ সন্তানও পিতার প্রতি একইরকমভাবে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায় না। প্রবাসী পুত্র অর্থ দিয়ে, গৃহী পুত্র সেবা-যত্নাদি দ্বারা ইত্যাদি উপায়ে পিতার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। তেমনই বিশ্বপিতার প্রতি তাঁর ভিন্ন ভিন্ন সন্তান ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে তার মন-বুদ্ধি-চেতনার অনুকূলে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবে, এটাই স্বাভাবিক। ঠিক এজন্যই উপাসনাজগতে দেখা যায়, কেউ জীবসেবাকে উপাসনার অঙ্গ করে, কেউ জীবহত্যাকে উপাসনার অঙ্গ করে। প্রবাসী সন্তান যদি পিতার সেবা-যত্নাদির জন্য তাকে প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ পাঠিয়ে মনে করে, পিতার প্রতি তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটাই সত্য আর পিতার প্রতি বাকি ভাইদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মিথ্যা, তাহলে সে বোকার রাজ্যেই আছে।

🔶 তাছাড়া প্রত্যেকের আচারব্যবহারাদি শুধু নিজেকেই নয়, তার শাস্ত্র, স্বজাতিকেও প্রতিনিধিত্ব করে। তাই কেউ যদি অপরের প্রতি হীন আচরণ, দুর্ব্যবহারাদি প্রকাশ করে, তাতে সে তার নিজের শাস্ত্র এবং উপাস্যকেও অপমান করে।

বিঃ দ্রঃ মূল অংশ ডাঃ শৈবাল দার বিভিন্ন মন্তব্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
©স্টিমন অনিক।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ