মূর্তি পুজা বিরোধী এক মহাজ্ঞানী আত্মজ্ঞানীর সহিত আমি অধমের কথোপকথন

 🔶 মূর্তি পুজা বিরোধী এক মহাজ্ঞানী আত্মজ্ঞানীর সহিত আমি অধমের কথোপকথন।

🔳 গত কিছুদিন আগে মা দুর্গা সাত্ত্বিক পূজাপদ্ধতি নিয়ে একটা পোস্ট করেছিলাম বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে। সেই সকল পোস্টে কিছু আত্মজ্ঞানীর সহিত কথোপকথনের সৌভাগ্য হয়েছিল আমি অধমের। বিস্তারিত ভূমিকায় না গিয়ে সরাসরি কথোপকথন পর্ব শুরু করছি।।

🔻🔺 কথোপকথনঃ


🔁 আত্মজ্ঞানীঃ
মূর্তির সামনে শাস্ত্র বহির্ভূত আরাধনা বিশেষ এই সাকার উপাসনা তাইনা ? এই সকল ফালতু যুক্তি দিয়ে তামাশা বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।

🔁 আমিঃ সাত্ত্বিক পুজাপদ্ধতি মনে হয় দাতে সয় না৷ ডিজে গান ও মদের ছড়াছড়ি হলে সেটা বেশী গ্রহণযোগ্য লাগে কি!! আধুনিকতার দম্ভে নিজের পরম্পরা ভুলে গেলে সেটাকে বুঝি স্মার্টনেস বলে?

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ মূর্তি পূজা মানেই তামসীকতা সেখানে সাত্ত্বিক, রাজসিক কি?? পূজা তো সেটাই পূর্ণরূপে আত্ম ভাব আত্মোবোধ জাগরণের জন্য অনুশীলন। সে আত্মবোধের জাগরন যাকে আত্মজ্ঞান বলে সেই আত্মজ্ঞানই মোক্ষদায়ক।

🔁 আমিঃ আপনি আমি আত্মতত্ত্বের বড়াই করে লাভ আছে? সেই যোগ্যতা অর্জন করেছি? আমরা বরং নিচতলায় বসে লেকচার দিচ্ছি ১০০ তলার উপর থেকে মেঘ স্পর্শ করা যায়। ১০০ তলা বেয়ে উঠতে হবে যে, মশায়। লিফট ত দেওয়া হবে না।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ এসব বাল্য যুক্তি দিয়ে মূর্তি পূজাকে জাস্টিফাই করবেন? ঈশ্বরের সাকাররূপ দেখেছেন? এসব মূর্তি কারা বানায়? এসব মূর্তি পুজা করে ঈশ্বরতত্ত্ব বুঝা যাবে?

🔁 আমিঃ এটা একটা এটমিক স্ট্রাকচার (এটমিক স্ট্রাকচারের ছবি দেখিয়ে)। এটা কিন্তু পুরোপুরি হাইপোথেটিকাল না, এটা কিন্তু একটা সক্রিয় পরমাণুর পরিপূর্ণ গঠন। এখন এই চিত্র কে দেখেছে? আপনি, আমি কিংবা লক্ষ কোটি বিজ্ঞানের ছাত্ররাও এই চিত্র স্বচক্ষে দেখে নি। এমনকি কাউকে যদি মাইক্রোস্কোপে পরমাণুকে দেখানোও হয় কতজন সক্রিয় অবস্থায় পরমাণুর এই গঠনকে চিহ্নিত করতে পারবে? অথচ এই গঠন দেখিয়েই ছোট থেকে ছাত্রদের পরমাণুর গঠন শেখানো হয়, বুঝানো হয়।।
যখন একজন ছাত্র মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় পারি দিয়ে পিএইচডি শেষ করে নিজস্ব রিসার্চ শুরু করে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে সম্যকরূপে ধারণা পেয়ে যায় তবে তার আর কোনদিনই এই মডেলের প্রয়োজন হয় না৷ এখন সেই মহাবিজ্ঞানীও কিন্তু কোনদিনও এই মডেল অনুসারী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তাচ্ছিল্য করে না কারণ তারা নিজেরাও জীবনের বিভিন্ন সময় কোন না কোন মডেল অনুসরণ করেই উপরে উঠেছেন এবং নিত্যনতুন মডেল প্রধানও করছেন বিজ্ঞানের পরমতত্ত্ব প্রসারের ও সহজবোধ্যতার জন্য।

তবে আজকাল কিছু তথাকথিত আত্মজ্ঞানী ও ব্রহ্মজ্ঞানী সেজেছে যারা নিজেরাই ব্রহ্মকে জানে না কিংবা বুঝে না অথচ নিরাকার ব্রহ্মের ছবক দিয়ে নিজেদেরকে খুব বড় আত্মজ্ঞানী ভাবে।। উহা সামান্য প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে উঠেই পিএইচডি ক্লাসের প্রফেসরের টোনে লেকচার দেওয়ার অপপ্রয়াস মাত্র।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ শাস্ত্র হতে বিজ্ঞানে গেলেন যে?

🔁 আমিঃ আলোচনাকে সহজবোধ্য করতে প্রচলিত উদাহরণ টানাই যৌক্তিক। যেমন ধরুন, রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সমালোচনা করা যায় কিংবা আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে বড় বড় লেকচার দেওয়া যায় কিন্তু নিজে রাদারফোর্ড কিংবা আইনস্টাইন হওয়া সহজ কার্য নয়।।
আমরা পরমাণুর গঠন চোখে দেখি নি তাই মডেল দেখেই শিখব, বুঝব। একদিন জানতে জানতে শিখতে শিখতেই কেউ একজন বড় বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ আপনাদের লক্ষ্য কি সারাজীবনই নার্সারীতে পরে থাকা?

🔁 আমিঃ প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া সকলেই মাধ্যমিক পাশ করে না আবার মাধ্যমিকের সকলেই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়া সকলেই পিএইচডি কোর্স সমাপ্ত করতে পারে না। শিক্ষিত হওয়ার প্রয়াস করা লাখ লাখ ছাত্রদের মধ্যে কেবল অল্প সংখ্যকই উচ্চশিক্ষিত হতে পারে। উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তিগণের মধ্যে কেউ কিন্তু অন্যদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না৷
সাধন পথেও সকলেই মোক্ষলাভ করে না তাই ত গীতার সপ্তম অধ্যায়ের জ্ঞান-বিজ্ঞানযোগে ৩নং শ্লোকে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

"হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন আর হাজার হাজার সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিৎ একজন আমাকে অর্থাৎ আমার ভগবত্ স্বরুপ তত্ত্ব অবগত হন।" 

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ আমারা এক আদেশে চলি না বিধায় আজ আমাদের সনাতন সমাজের এই করুন অবস্থা সকলে যদি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ঈশ্বরের উপাসনা না করে এক আদেশে এক নিয়মে করতো তাহলে কখনোই এক জন আরেক জনের পিছনে লেগে থাকতো না।

🔁 আমিঃ মূর্তি পুজা থেকে আবার আদেশে চলে গেলেন কেন? এক আদেশে চলেও এই পৃথিবীতে অনেকেই এক নেই। ক্লাসের ডিসিপ্লিন সকলের জন্য এক কিন্তু কে কিভাবে জ্ঞান অর্জন করে সেটা উপলব্ধি করবে তার কোন ডিসিপ্লিনারী পদ্ধতি হয় না। তাই এহেন "এক আদেশ" টাইপ কথাবার্তা কেবল অবান্তরই।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ বেদে যেখানে সাকারবাদই নেই সেখানে আপনি আছেন মূর্তি পূজা নিয়ে?

🔁 আমিঃ বেদ ও বেদান্তেও সগুণ সাকার ব্রহ্মের কথা বলা হয়েছে। নিরাকার ও সাকার দুইই ব্রহ্মের সৃষ্টি। কেউ যদি নিরাকার বলতে কেবল "কোন আকারই নেই" বলে তবে সেটা অস্তিত্বহীন কারণ এমন ভাবনা কেবল কল্পনায়ই সম্ভব।। বাতাসও নিরাকার আবার জলও নিরাকার।। বাতাসকে বেলুনে ভরে পরিমাপ করা যায় আবার জলকে গ্লাসে ভরে পরিমাপ করা যায়। বাতাসকে চাপে জলে পরিনত করা যায় আবার জলকে চাপে বরফে পরিনত করা যায়৷ নিরাকার ও সাকার উভয়ই কেবল একটি বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার নির্দেশক।। কেউ বরফকে গলিয়ে বাস্প করে উড়িয়ে দিলেও সমস্যা নেই আবার কেউ বাতাসকে বরফে পরিনত করে রেখে দিলেও সমস্যা নেই। পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত চলমান। যাদের অফুরন্ত অপ্রয়োজনীয় সময় তারাই এগুলো নিয়ে মতভেদ তৈরী করতে পারে।।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ উপাসনার জন্য মূর্তির প্রয়োজন ত নেই। অন্যান্য ধর্মের লোকজন মূর্তি ছাড়া কিভাবে উপাসনা করে?

🔁 আমিঃ জগতে নিরাকারবাদী বহু সম্প্রদায় আছে, যাহারা অবতারবাদ মানেন না এবং উপসনা কিংবা সাধণার জন্য কোনরূপ সাকার বিগ্রহ বা প্রতীকের প্রয়োজন হয় না৷ অনেকে আবার নিরাকারবাদ গ্রহণ করেও অবস্থাবিশেষে প্রতীকের (অউম, ধর্মচক্র, স্টার অফ ডেবিড, ৭৮৬) আবশ্যকতা স্বীকার করে। তাঁরা ঈশ্বরের বাহ্যিক মূর্তি স্বীকার করেন না কিন্তু তাঁরাও মনে মনে কোন না কোন মূর্তি কল্পনা করে থাকেন অথবা হৃদাকাশে কোন প্রতীকের কল্পনা করেন। মানুষের ব্রহ্মজ্ঞান না হওয়া অব্দি নামরূপের অতীত কোন অতীন্দ্রিয় বস্তুর ধারণাও করতে পারে না, সুতরাং যে পর্যন্ত না সাধক প্রকৃতির অতীত হয়ে অতীন্দ্রিয় তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে ব্রহ্মপ্রাপ্তী হচ্ছে সে পর্যন্ত তাকে বা তাদেরকে সাকার প্রকৃতির মধ্য দিয়েই যেতে হবে, স্থুলের মধ্য দিয়েই তাকে সূক্ষ্মে যেতে হবে, অন্য কোন গতি নাই (স্বঘোষিত হয়ে সত্য স্বীকার না করলে ভিন্ন কথা)। এই বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ একটা কথা বলেছিলেন,
"দুই প্রকার মানুষের রুপ-কল্পনার বা মূর্তির প্রয়ােজন হয় না -যে ধর্মের কোন ধার ধারে না; আর সিদ্ধপুরুষের, যিনি এই-সকল অবস্থার মধ্য দিয়া গিয়াছেন। আমরা এই দুই অবস্থার মধ্যে রহিয়াছি। ভিতরে ও বাহিরে আমাদের কোন-না-কোনরুপে আদর্শ বা মূর্তির প্রয়ােজন—উহা কোন পরলােকগত মানুষের হইতে পারে, অথবা কোন জীবিত নর বা নারীর হইতে পারে। ইহা ব্যক্তিত্বের উপাসনা—শরীর-কেন্দ্রিক, তবে ইহা খুব স্বাভাবিক। সূক্ষ্মকে স্থূলে পরিণত করার দিকে আমাদের ঝোঁক। সূক্ষ্ম হইতে যদি আমরা স্থূল না হইয়া থাকি, তবে কিভাবে এখানে আসিলাম ? আমরা স্থূল ভাবপ্রাপ্ত আত্মা, এইভাবেই আমরা এই পৃথিবীতে আসিয়াছি।
সুতরাং মূর্তি ভাব যেমন আমাদিগকে এখানে আনিয়াছে, তেমনি মূর্তির সাহায্যেই আমরা ইহার বাহিরে যাইব। ইহা হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সদৃশবিধানের মতো—
“বিষস্য বিষমৌষধম'।"

নিজের মনকে স্থির করে কোন বিষয়ে নিয়ে চিন্তা করলেও দেখা যায় যে মনের মধ্যে কোন মূর্তি গঠন না করে থাকা যাচ্ছে না। ঈশোপনিষদের ৪ নং মন্ত্রে যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে মন যখন কোন জায়গার কথা কল্পনা করে তখন সেখানে আগেই আত্মা উপস্থিত থাকে অর্থাৎ সেই জায়গার একটা প্রতিরূপ মনের পর্দায় ভেসে উঠে। এখানে সাকারবাদীর সাথে পার্থক্য হচ্ছে সাকারবাদী নিজের চিন্তাশীল মন দিয়ে একটা বাহ্যমূর্তি তৈরী করে কিন্তু নিরাকারবাদীরা সেটা মনেই রাখে। আরেকটা পার্থক্যও আছে সেটা হলো সাকারবাদীরা কখনোই নিরাকারবাদীকে বাতিল ঘোষণা করে না কিন্তু নিরাকারবাদীরা দম্ভভরে সাকারবাদীদের ভ্রান্ত বলে ঘোষণা করে।
ঈশ্বর নিরাকার মানে কোন আকার নেই এমন নয় বরং নিরাকার মানে নির্দিষ্ট কোন আকার নেই। কোন আকার নেই মানে ত কোন অস্তিত্বই নেই করে ফেলা হচ্ছে৷ যেমন আমরা যদি বলি ব্রহ্ম শূণ্যেও আছে আবার মহাশূন্যেও আছে। এখন কি বলা হবে শূণ্য ত জিরো, শূন্য হাত মানে ত হাতে কিছুই নেই৷ এখন যদি শূন্যকে একটু বিশাল করি তবে ত সেটা মহাশূন্য (Space) হয়ে যাবে। এই মহাশূন্যের বিশালতা পরিমাপ করা যাবে? শূন্য যদি আসলে শূণ্য (Zero) হত তাহলে মহাশূন্য (Space) কিভাবে হলো? আসলে এই ব্রহ্মের আকার অসীম যার আদি মধ্য অন্ত কিছুই দেখা যায় না। জড় চোখ দিয়ে তো একদমই নয়, দিব্যচোখ দিয়েও এই অসীম আকারের পরিমাপ সম্ভব না। মহাভারতের অর্জুন দিব্যচোখ নিয়েও পরমেশ্বরের বিশ্বরূপের আদি অন্ত মধ্য কিছুই খুজে পায় নি৷ এটাই ঈশ্বরের নিরাকারতত্ব। এখন যদি কেউ নিরাকারকে "কোন আকারই নেই" মনে করে কিংবা শূন্যকে কেবল জিরোই মনে করে তবে সেটা তার নিজের উপলব্ধি, সেটা সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই।
অন্যধর্মের লোকজন ইদানীং বেদের দুইটা মন্ত্র থেকে দুইটা স্পেসিফিক শব্দকে কোট করে বলতে চায় বেদে মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ৷

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ বেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই। আপনারা কি বেদ বিরোধ্য মূর্তি পূজায় পাপাচার করছেন না?

🔁 আমিঃ যজুর্বেদ ৩২/৩ এর "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" এর ব্যাপারে বলছেন? যাজ্ঞিক অর্থে মূর্তি। আদিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক অর্থে তুল্য।।

প্রতিমা শব্দের অনুবাদ করলে বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক মনির উইলিয়ামস তাঁর অনুবাদ গ্রন্থে "প্রতিমা" এর অর্থ করেছেন ছবি, তুল্য, মূর্তি, প্রতীক, স্ট্যাচু ইত্যাদি করেছেন। এখন যজুর্বেদের ৩২/৩ মন্ত্রের অনুবাদ করতে গিয়ে প্রতিমা শব্দের অর্থ মূর্তিই কেন করতে হবে? শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৪/১৯ মন্ত্রেও প্রতিমাকে তুল্য (শঙ্করভাষ্য) হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বেদ ও উপনিষদের আরও অনেক মন্ত্রে ব্রহ্মের তুল্য কেউ (কেউ বলতে কিন্তু আলাদা সত্তা বুঝাচ্ছে, মূর্তি কিংবা প্রতীক নয়) নেই বলা হয়েছে প্রাসঙ্গিক কারণেই। এখন এই "প্রতিমা" শব্দটাকেই প্রাধান্য দিয়ে সেই বিতর্কিত ধর্ম প্রচারক সনাতন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মূর্তি পূজা ও মন্দিরসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে৷ আমাদের নিজেদের মধ্যেও কেউ কেউ একই পথ ধরতে চাচ্ছে। আচ্ছা যদি ধরেও নেই উনার কোন মূর্তি নেই কিন্তু তার মানে কি দাড়ায় যে মূর্তিতে তিনি নেই যেখানে তিনি সর্বব্যাপী!

আপনি যে বাকে ভাষ্য করবেন সে বাকেই আপনার ভাব প্রতিষ্ঠা হবে তাই বলে অন্যের ভাবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাও যৌক্তিক নয়।।

যারা কেবল ওঙ্কারের উপাসনা করে তারাও ওঙ্কারকে পরমব্রহ্মের প্রতীক হিসেবেই মান্য করে।। ওঙ্কারের লকেটরূপ মালাও কেউ গলায় ধারণ করতে আবার মনের ভেতর ওঁ প্রতীকেরও কল্পনা করে।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ কোন শাস্ত্রীয় রেফারেন্স নেই। কেবল চাপার জোরে মূর্তি পুজাকে বৈধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসলেই ভন্ড আপনারা।

🔁 আমিঃ শাস্ত্রের রেফারেন্স আপনি যেভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করতে পারেন৷ বেদে যুক্তির কথা বলা হয়েছে তাই আমি যুক্তি দিয়েই আপনার সাথে কথা বলছি। একটা বহুল প্রচলিত উদাহরণ দিচ্ছি আপনাকে। মূর্তি পুজোর তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে প্রথমত গণিতে গভীর জ্ঞান থাকা দরকার । তার সাথে মানব মনের প্রকৃতি জানা দরকার। গণিতের একটা সাধারন সংজ্ঞা হল বিন্দুর দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও বেদ কিছুই নেই। তাহলে তো বিন্দু দেখতে পাওয়ার কথা নয়। কারন অনু পরমাণুর ব্যাস আছে তবুও এদের দেখা যায়না তাহলে বিন্দু দেখা যাবে কি করে? তবুও কলমের একটা খোঁচা দিয়ে বিন্দু বোঝানো হয়। তানাহলে যে প্রাথমিক ভাবে কোনো শিক্ষার্থী বিন্দুর ধারণাই গড়ে তুলতে পারে না। আর এই বিন্দুর উপরই জ্যামিতির সবকিছুই দাড়িয়ে আছে।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ সামান্য এক মূর্তিতেই আপনারা আবদ্ধ থাকেন এর বাইরে যাওয়ার সক্ষমতা আপনাদের নেই।

🔁 আমিঃ যারা মূর্তি পূজা করে তারা খুব কমই আছে যারা বলে এই মূর্তিতেই কেবল ঈশ্বর তাহলে ত আর হাজার হাজার মন্ডপে দুর্গা পুজা হত না। আপনি অন্যের ভাব নিয়ে যেভাবে বলছেন তাতে ধরেই নিয়েছেন আপনি তার ভাব নিয়ে সম্যক ধারণা রাখেন। এই ধরনের চিন্তা আধ্যাত্মিক লোকদের থেকে আসে না। আর একমাত্র আধ্যাত্মিক ব্যক্তির কাছেই ঈশ্বরের কোন মূর্তির প্রয়োজন হয় না কারণ তিনি ব্রহ্মেই লীন হয়ে যান।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ নিজেরাই বলেন সর্বত্র ঈশ্বর আছেন তাহলে আলাদা করে মূর্তিতে ঈশ্বর নামানোর প্রয়োজন কি?

🔁 আমিঃ কাষ্ঠেও নিত্য অগ্নি উপস্থিত অথচ দেখা যায় না।কিন্তু সঠিক ঘর্ষণেই তাহাতে আগুন উৎপন্ন হয়। মূর্তিতেও তিনি নিত্য উপস্থিত। সঠিক ভক্তি ও সাধনে সে মূর্তিতেও ঈশ্বরকে জাগ্রত করা যায়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব পেরেছিলেন।


🔁 আত্মজ্ঞানীঃ শাস্ত্রে বলা হয়েছে ঈশ্বরের চোখ নেই তবুও তিনি দেখেন তাহলে ঈশ্বরের চোখ আকেন কেন মূর্তিতে?

🔁 আমিঃ যাজ্ঞিক ভাবনায় যেটা চোখ আধ্যাত্মিক ভাবনায় সেটাই দৃষ্টি। চোখ হচ্ছে কেবল মাধ্যম দৃষ্টি হচ্ছে ফলাফল। ঈশ্বরের চোখ নেই কারণ সেটার প্রয়োজন নেই। যোগী যখন সমাধীস্তরে ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন তখন কি তাঁর চোখের প্রয়োজন হয়? ঈশোপনিষদে একটা মন্ত্র আছে আত্মা মন হইতেও বেগবান। ওখানে ব্যাখ্যা আছে একটা। মানুষ তার মনের চোখে মহাশূন্যেও পারি দিতে পারে কিন্তু সেখানে গিয়ে মন দেখে আত্মা আগেই সেখানে অবস্থিত। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার কোথাও চোখের ব্যবহার নেই কিন্তু।।

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ মহাবিশ্বের সমগ্র অঞ্চলে তিনি ব্যপ্ত সেখানে মূর্তিতে আপনারা যাকে নামান তিনিও কি সেই ওঙ্কার?

🔁 আমিঃ জলের মূল গঠন কি জানেন? H20.
এটাই জলের স্বীকৃত নাম যেমন পরমেশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ওঁ। এখন বলো জলের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণা কত ছোট? মাইক্রোস্কোপিক? সেই ছোট কণার নামও H2O. এবার যদি ধরি জলের সবচেয়ে বড় কণা মহাসমুদ্র (সৃষ্টির শুরুতে জলরাশিই ছিল) তাহলে সেই মহসমুদ্রের জলও H2O. অর্থাৎ সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণায়ও H2O আবার সবচেয়ে বৃহত্তম কণায়ও H2O.
একইভাবে মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণায়ও তিনি ওংকার আবার মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কণায়ও তিনি ওংকার। তিনি সর্বত্রই এক ও সম৷

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ আপনারা ঈশ্বরের সাকার রূপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পুরুষ সুক্তের অসংখ্য মস্তক ও অসংখ্য হাতের কথা বলেন। মূর্তি বানানোর সময় সেই অসংখ্য মস্তকের সঠিক গণনা কিভাবে করেন?

🔁 আমিঃ আকাশে এক ঝাক পাখি উড়ে গেলো। এক শিল্পী সেটা দেখে ক্যানভাসে ধারণ করল। আকাশে কয়টা পাখি ছিল আর ক্যানভাসে কয়টা পাখি ধরল তাতে কি শিল্পীর অনুভূতি প্রকাশে কোন তারতম্য ঘটালো?

🔁 আত্মজ্ঞানীঃ থাকেন মশায় আপনাদের মূর্তি পূজা নিয়ে। অন্ধকারেই হাবুডুবু খান, মুক্তি নেই আপনাদের।

🔁 আমিঃ ঠিক আছে, আমরা অন্ধকারেই থাকি। আপনি বরং অহেতুক তর্ক না করে আধ্যাত্মিকতার উচ্চস্তরে পৌছে মোক্ষলাভ করুন। ঈশ্বর আপনার সহায় হউক।

©স্টিমন অনিক



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ