শিবলিঙ্গের মাহাত্ম্য

                                                  

শিবলিঙ্গের মাহাত্ম্য।

(শিবলিঙ্গ নিয়ে প্রায়ই কাউকে কাউকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। তাই শিবলিঙ্গের মাহাত্ম্য তুলে ধরার সামান্য প্রয়াস)

শিবলিঙ্গ কি?

সংস্কৃত लिङ्गं,(লিঙ্গ); শব্দের অর্থ হলো "প্রতীক" বা চিহ্ন ব্যাকরণ অনুসারে লিঙ্গ চার প্রকার, যথা-পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, উভয়লিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ। সুতরাং ভাষাগত যে তথ্যের দ্বারা কোন মানুষকে প্রাণীকে পুরুষ বা স্ত্রী প্রজাতি হিসেবে, কিংবা কোন প্রাণহীন জিনিসকে বস্তুগত বিষয় হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে সনাক্ত করা যায় তাই লিঙ্গ।

বস্তুত শিবলিঙ্গ বলতে কোন জননেন্দ্রিয় বোঝায় না। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক এই কারণে শিবলিঙ্গ শব্দটির অর্থ সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক ১৯০০ সালে প্যারিসে ধর্মীয় আলোচনায় স্বামী বিবেকানন্দ অথর্ববেদ-এর একটি মন্ত্রের উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর মতে, আদি অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ। তাই শিবলিঙ্গের আকৃতি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের (Observable Universe Shape) অাকৃতি একই এবং সেটা ইলিপসো তথা উপবৃত্তাকার যাহার আদি অন্ত খুজে পাওয়া যাবে না।

শিবলিঙ্গের স্বরূপঃ

শিবলিঙ্গের সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে। আর একেবারের উপরের অর্ধ-উপবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে। বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরিপিঠ, যা মূলত যোনিপ্রতীক এই তিনটি অংশই পরস্পর সমান তথা এক-তৃতীয়াংশ।

🔺🔻 এখন প্রশ্ন হতে পারে ব্রহ্মা, বিষ্ণু শিব কি আলদা সত্ত্বা?

না, এই তিন সত্ত্বাই এক পরমেশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ।

পরমেশ্বরের চারটি বিশেষ গুণবাচক নাম বেদে পাওয়া যায়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, রুদ্র একই ঈশ্বরের চারটি গুনবাচক নাম।।।

ঈশ্বর সর্বস্রষ্টা তাই ব্রহ্মা, সর্বব্যাপক তাই বিষ্ণু, সর্বমঙ্গলকর্তা তাই শিব, দুষ্টের সংহার কর্তা তাই রুদ্র।।।।

একই সত্ত্বার বিভিন্ন নাম।।।

ঋগবেদ /১৬৪/৪৬ যজুর্বেদ ৩২/ পরমেশ্বরকে ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, প্রজাপতি, মিত্র, শুক্র, চন্দ্রিমা, যমসহ বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে।

সমগ্র জগতে পরমেশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশের মধ্যেও যে তিনি অবিভক্ত এই বিষয়ে শ্রীমদভগবদগীতায় বলা হয়েছে।

"অবিভক্তং ভূতেষু বিভক্তমিব স্থিতম্৷
ভূতভর্তৃ তজ্জ্ঞেয়ং গ্রসিষ্ণু প্রভবিষ্ণু চ৷৷"
- শ্রীমদভগবদগীতা (১৩/১৭)

অর্থ: পরমাত্মাকে যদিও সমস্ত ভূতে বিভক্তরুপে বোধ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। তিনি সর্বভূতের পালক, সংহার কর্তা সৃষ্টিকর্তা।

তাহলে এটা স্পষ্ট যে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এই শিবলিঙ্গে সমাহিত। সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার প্রতীক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শিবলিঙ্গ।

💥 আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য শ্রীমদভগবদগীতার দুইটা শ্লোক তুলে ধরা হলো।

"হে ভরত, ব্রহ্ম এই জড় জগতের উৎপত্তির কারণ, এবং সেই ব্রহ্মে আমি গর্ভদান করি ফলে সর্বভূতের সৃষ্টি হয়।

হে কৌন্তেয়, সমস্ত যোনিতে যত মূর্তি প্রকাশিত হয় ব্রহ্মরুপ যোনিই তাদের জননী স্বরুপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারী পিতা।"
- শ্রীমদভগবদগীতা (১৪/-)

এখন যদি শিবলিঙ্গের গঠনের দিকে তাকাই। ব্রহ্মই সকল সৃষ্টির কারন তাই শিবলিঙ্গের একদম নিচে হচ্ছে ব্রহ্মভাগ। ব্রহ্মভাগে গর্ভদান করেন শ্রীবিষ্ণু অর্থাৎ ব্রহ্মরুপ যোনিতেই তিনি সৃষ্টির বীজ বপন করেন তাই শিবলিঙ্গের বিষ্ণুভাগে প্রতিষ্ঠিত হয় গৌরিপিঠ তথা যোনিপ্রতিক ইহাই জননীস্বরুপা প্রকৃতি। অতঃপর সৃষ্টি হয় মহাবিশ্ব তথা শিবভাগের৷ মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি পুঞ্জিভূত এই শিবভাগে।

খুব স্পষ্ট করে দেখলে শিবলিঙ্গের উপরে স্থাপিত এই শিবভাগের আকৃতি কিন্তু পুরুষের জননাঙ্গের মত নয়, এটা মহাবিশ্বের আকৃতির ন্যায় উপবৃত্তাকার

শিবলিঙ্গের তিনটা অংশের একদম নিচে ব্রহ্মা, মাঝখানে বিষ্ণু একদম উপরে অর্ধ-উপবৃত্তাকার আকৃতিতে শিব। সম্পূর্ণ লিঙ্গের আকৃতি উপবৃত্তাকার। উপবৃত্তাকার আকৃত অনন্ত মহাবিশ্বকে প্রকাশ করে। এই উপবৃত্তাকার আকৃতির লিঙ্গ একাধারে সৃষ্টি ধ্বংসকে নির্দেশ করে।

🔹এই বিষয়ে যজুর্বেদ ৩২/ মন্ত্রে বলা হয়েছে,

"জ্ঞানি ব্যাক্তিরা সেই পরমাত্মাকে জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন যার মধ্যে এই সমগ্র জগত  আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তার মধ্যেই এই সমগ্র জগত একত্রে মিলিত (সংকুচনশীল মহাবিশ্ব/ধ্বংস) হয় এবং তার মধ্যেই তা বিছিন্ন (সম্প্রসারণ মহাবিশ্ব/সৃষ্টি) হয়।"

[যিনি শিব তিনিই হরি (বিষ্ণু) হরি (শিব) হর (রুদ্র) দুটি রুপ একরুপে পালন কর্তা অন্য রুপে সংহারক। টিকি হল হরির প্রতিক এবং জটা হল হরের প্রতীক।]

এবার একটু বিশ্লেষণে করি বিষয়টা।

মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারতে উল্লেখ করেছিলেন শিব হলো সাব-এটমিক বস্তুর চেয়েও ক্ষুদ্রতর আবার মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তুর চেয়েও বৃহত্তর।
অর্থাৎ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সংকোচন উভয়ই শিব।

শিব শান্ত ধ্যানাবস্থায় থাকেন। তিনি শান্ত থাকা বলতে মহাবিশ্বের স্থিতি বুঝায়।

শিব তথা মহাবিশ্বের প্রকাশকে প্রকৃতি বলে। এই প্রকৃতির দুই রূপ রেনুকা (রেনু) রুদ্রাণী। রেনুকা শিবের ভাব রুদ্রাণী হলো রুদ্রের ভাব।

শ্রীবিষ্ণুর নাভীমূল থেকে বের হওয়া শতদল পদ্মে অবস্থান করেন ব্রহ্মা এটা দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে ব্রহ্মা তথা ব্রহ্মাণ্ড সম্প্রসারিত হচ্ছে কিন্তু শ্রীবিষ্ণু ব্রহ্মাণ্ডকে স্থিতিশীলতা প্রধান করছেন তাই শ্রীবিষ্ণু সর্বব্যাপ্ত ও স্থিতিকর্তা। যেহেতু ব্রহ্মা (হিরণ্যগর্ভ) থেকেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি তাই ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টিকর্তা।

[হিরণ্যগর্ভ সূক্তে বলা হয়েছে-

"সর্বপ্রথম হিরণ্যগর্ভই সৃষ্টি হল অর্থাৎ সর্বপ্রথম জলময় প্রাণের উৎপত্তি হয়।"

(ঋগ্বেদ-১০/১২১/)

"ভূরি পরিমাণ জল সমস্ত বিশ্বভূবন আচ্ছন্ন করে ছিল, সেখানে অগ্নির উৎপত্তি হল। এভাবে গলিত উত্তপ্ত তরল থেকে প্রাণরূপ দেবতার উদ্ভব হয়।"

(ঋগ্বেদ-১০/১২১/)

"গলিত পদার্থের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটল। এককবিন্দু থেকে সকল কিছু প্রসারতি হতে শুরু করল। তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল। বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র তৈরি হল। তারপর সৃষ্ট ক্ষেত্রে সাতধাপে সংকোচন-প্রসারণ সম্পন্ন হল। তারপর সৃষ্টি হল ভারসাম্যের।"

(ঋগ্বেদ -১০/৭২/-, -)]

নাসাদিয় হিরণ্যগর্ভ সুক্তে এটা স্পষ্ট যে একই বিন্দু (পরমাত্মা) থেকেই অনন্তের (মহাবিশ্বের) সৃষ্টি।

শিবের চারপাশে রেনুকার স্থলে যখন রুদ্রাণী (ধ্বংসাত্মক প্রকৃতি) অবস্থান করে তখন শিবের রুদ্ররুপের প্রকাশ ঘটে তথা মহাবিশ্বের ধ্বংস (সংকোচন) শুরু হয় এবং আবারও একই বিন্দুতে মিলিতে হয়। এজন্যই শিবের রুদ্ররূপকে বলা হয় সংহারকর্তা।

অর্থাৎ শিবলিঙ্গ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরই প্রতিকীরূপ তথা পরমেশ্বরের পূর্ণপ্রতীক একটা শিবলিঙ্গ দ্বারাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি বিনাশকে সঙ্গায়িত করা যায়।

মহাবিশ্বের এই প্রক্রিয়া চলমান তাই শিবের না আছে জন্ম, না আছে মৃত্যু। রেনুকার প্রভাবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তথা সৃষ্টি আর রুদ্রাণীর প্রভাবে মহাবিশ্বের সংকোচন তথা বিনাশ।

এজন্যই শ্রীমদভগবদগীতায় অষ্টম অধ্যায়ের ১৯ ১৮ নং শ্লোকে বলা হয়েছে।

"হে পার্থ, সেই ভূত সমুহ পুণঃ পুণঃ উৎপন্ন হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয়প্রাপ্ত হয়।"

" ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত আকৃতি বিশিষ্ঠ বস্তু অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রীর আগমনে তা পুনরায় লয় প্রপ্ত হয়।"

🔸🔸ব্যাক্তিগত বিশ্লেষণঃ

আধুনিক কসমোলজিতে শিবলিঙ্গের স্বরুপঃ

শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে। বিজ্ঞানী নিলস বোরের পরমাণু মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলে এই তিনটি খাঁজ আসলে পরমাণুর তিনটি উাপাদানপ্রোটন, নিউট্রন ইলেকট্রনের প্রতীক হিসেবে চিত্রায়িত করা যায় এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ।

[কোয়ান্টাম ফিজিক্স নিয়ে কাজ করার সময় এরভিন শ্রোডিঙ্গার নীলস বোর দুজনেই বেদান্ত নিয়ে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে নীলস বোর বলেছিলেন, " আমি উপনিষদ পড়ি উত্তর খোজার জন্য"]

মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারতে উল্লেখ করেছিলেন শিব হলো সাব-এটমিক বস্তুর (ইলেকট্রন, প্রোটন নিউট্রনচেয়েও ক্ষুদ্রতর আবার মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তুর চেয়েও বৃহত্তর। এছাড়াও ভাগবত পূরাণের /১১/- নং শ্লোকে পরমাণুর গঠন মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে পরমাণুর ধারণা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

শিবলিঙ্গ হচ্ছে একটা পরমাণু।

বিষ্ণু হচ্ছে পজিটিভ চার্যযুক্ত প্রোটন, ব্রহ্মা নেগেটিভ চার্যযুক্ত ইলেকট্রন এবং শিব নিরপেক্ষ (চার্যবিহীন) নিউট্রন।

যেহেতু শিব চার্যবিহীন নিউট্রন তাই তিনি শান্ত ধ্যানাবস্থায় থাকেন। তিনি শান্ত থাকা বলতে পরমানুর স্ট্যাবিলিটি বুঝায়।

লিঙ্গের চারপাশে গোলাকার চাকতির মত অংশকে শক্তিস্তর বলে। এই শক্তিস্তরকে রেনুকা (রেনু) রুদ্রাণী বলে। রেনুকা শিবের ভাব রুদ্রাণী হলো রুদ্রের ভাব। এই শক্তিস্তর হচ্ছে মহাবিশ্বের প্রকৃতি।

শিবের সাথে সমশক্তি নিয়ে অবস্থান করেন বিষ্ণু। লিঙ্গের চারপাশে ঘূর্ণায়মান শক্তিস্তরে (প্রকৃতি) ঋণাত্মক চার্জ নিয়ে অবস্থান করে ব্রহ্মা। শ্রীবিষ্ণুর নাভীমূল থেকে বের হওয়া পদ্মে অবস্থান করে ব্রহ্মা এটা দিয়ে বুঝানো হয়েছে বিষ্ণুর চারপাশে সমচার্য (সমশক্তি) সম্পন্ন অসংখ্য ব্রহ্মা (ইলেকট্রন) তথা ব্রহ্মাণ্ড। অর্থাৎ মহাবিশ্বে যত ব্রহ্মাণ্ড আছে বিষ্ণুর পজিটিভ চার্জও তত। আমরা জানি অনু গঠনে প্রধান ভুমিকা রাখে ইলেকট্রন তাই ব্রহ্মাকে বলা হয়ে সৃষ্টিকর্তা। বিষ্ণু পজিটিভ চার্জ নিয়ে পরমাণুর ব্যালেন্স করে তাই তিনি স্থিতিকর্তা।

শিবের চারপাশে রেনুকার স্থলে যখন রুদ্রাণী অবস্থান করে তখন শিবের রুদ্ররুপের প্রকাশ ঘটে অর্থাৎ নিউট্রন ভেঙে মহাবিনাশী নিউক্লিয়ার ফিশন শুরু হয়। রুদ্রাণী হলো ধ্বংসাত্মক প্রকৃতি তথা শিবের রুদ্ররুপের কারণ। এজন্যই শিবের রুদ্ররূপকে বলা হয় সংহারকর্তা।

অর্থাৎ শিবলিঙ্গ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরই প্রতিকীরূপ তথা পরমেশ্বরের পূর্ণপ্রতীক। একটা শিবলিঙ্গ দ্বারাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি বিনাশকে সঙ্গায়িত করা যায়।

মহাবিশ্বের এই প্রক্রিয়া চলমান তাই শিবের না আছে জন্ম, না আছে মৃত্যু। রেনুকার প্রভাবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তথা সৃষ্টি আর রুদ্রাণীর প্রভাবে মহাবিশ্বের সংকোচন তথা বিনাশ।

এজন্যই শ্রীমদভগবদগীতায় অষ্টম অধ্যায়ে বল হয়েছে।

"হে পার্থ, সেই ভূত সমুহ পুণঃ পুণঃ উৎপন্ন হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয়প্রাপ্ত হয়।"

[উপরোক্ত বিশ্লেষণ একান্তই আমার ব্যাক্তিগত, কেউ কেউ আপেক্ষিক তত্ত্বের সাহায্যেও শিবলিঙ্গের  বিশ্লেষণ করে, কারন প্রত্যেকেরই স্ব স্ব বিশ্লেষণ পদ্বতি থাকে। ]

শিবলিঙ্গে জল ঢালা হয় কেন?

শিবলিঙ্গে নিরন্তর (Continuous) জলাভিষেক করা হয় কেন? এর পিছনে আধ্যাত্মিক কারণও আছে আবার বৈজ্ঞানিক কারণও আছে।

বৈজ্ঞানিক কারনঃ

আপনি যদি Bhabha Atomic Research সেন্টারের Nuclear reactor বা পারমাণবিক চুল্লির রচনাটি ভালো করে দেখেন,তো জানতে পারবেন এই Nuclear reactor এর আকার শিবলিঙ্গের আকার প্রায় একই রকম। এই Nuclear reactor টির গঠন শিবলিঙ্গের গঠন প্রায় একই রকম হওয়াটা কোনো সংযোগ বা কাকতালীয় নয়।

ভারতের নিউক্লিয়ার রিয়াক্টরগুলি ছাড়াও সবকটি (১২ টি) জোতির্ময় শিবলিঙ্গের স্থানে সব থেকে বেশি রেডিয়েশন পাওয়া যায়। এর অর্থ হলো শিবলিঙ্গের সাথে এনার্জির সম্পর্ক আছে অর্থাৎ শিবলিঙ্গ গুলিও একটি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর মতোই রেডিও একটিভ এনার্জিতে পরিপূর্ণ থাকে।অরিজিনাল এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ লিড গ্রানাইট (গলিত পাথর হাজার এমনকি লক্ষ বছর ঠান্ডা ঘনীভূত হয়ে গ্রানাইটে পরিনত হয়) দিয়ে তৈরী বিদায় লিঙ্গগুলো প্রচন্ড ্যাডিওক্টিভিটি দেখায়। আর এই কারণেই মহাকালের এই প্রলয়কারী উর্যাকে শান্ত রাখার জন্যই আদিকাল থেকেই শিবলিঙ্গে নিরন্তর (Continuous) জলাভিষেক করা হয়।

পারমানবিক গঠনজনিত কারনঃ

পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউট্রন তথা শিব। শিব তথা নিউট্রন যতক্ষণ শান্ত (নিউট্রাল) ততক্ষণ পরমাণু (মহাবিশ্ব) স্থিতিশীল। যেকোন পারমাণবিক চুল্লীতেই নিউট্রনকে নিউট্রালাইজড করে রাখার জন্য ওয়াটার চ্যাম্বারে রাখা হয়। তাই শিবলিঙ্গেও শিব যেন রুদ্রভাবে (নিউক্লিয়ার ফিশন) না পৌছায় তাই নিরন্তর জল ঢালা হয়।

আধ্যাত্মিক দর্শনঃ

শিব যতক্ষণ শান্ত ততক্ষণ মহাবিশ্ব স্থিতিশীল। শিব যখনই রুদ্রভাব প্রাপ্ত হয় তখনই শুরু হয় মহাপ্রলয়। শিবকে শান্ত রাখতেই শিবলিঙ্গে নিরন্তর জলাভিষেক করা হয় রূপক অর্থে।

🔴⚪ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় "Lingam/Lingham" ভুক্তিতেও শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হয়নি। অধ্যাপক ডনিগার পরবর্তীকালে তাঁর গবেষণাধর্মী বইদ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রিবইতে নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, "কোনো কোনো ধর্মশাস্ত্রে শিবলিঙ্গকে ঈশ্বরের বিমূর্ত প্রতীক বা দিব্য আলোকস্তম্ভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এইসব বইতে লিঙ্গের কোনো যৌন অনুষঙ্গমূলক অর্থ নেই। তাই শিবলিঙ্গ কোনক্রমেই স্ত্রী-পুরুষের মিলিত অঙ্গ বা পুরুষাঙ্গ নয়। প্রকৃতপক্ষে শিবলিঙ্গে এমন এক নিগূঢ় অনির্বচনীয় শক্তি আছে, যা সহজেই ভক্তবৃন্দের ভেতর মহাদেবের প্রতি ভক্তি আরও বেশি নিবিষ্ট করে। বিশেষভাবে লক্ষ্য করলে এই ভক্তির ভাব অনুধাবন করা যায়। আর এজন্যই, শিবলিঙ্গের এমন সুন্দর তাৎপর্য একমাত্র বিশুদ্ধ চিত্তের অধিকারী ধর্মচারী ভক্তবৃন্দরাই বুঝতে পারে।"

মন্তব্যঃ শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা। এই মিলন-এর অর্থ কোনভাবেই শারীরিক মিলন নয়, বরং এক অতিপ্রাকৃত মিলন। প্রসঙ্গত কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় লিঙ্গ শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন।



External Links:

🔗https://www.colombotelegraph.com/…/shiva-lingam-some-scie…/….

🔗https://youtu.be/Gg5A5jOS6gc

🔗https://youtu.be/6IM1WWdRsAZUXM

🔗https://youtu.be/_X6dRsAZUXM

©স্টিমন অনিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ