ভাগবত পুরাণে কেন চন্দ্রকে সূর্যের অপেক্ষা দ্রুতগামী বলা হয়েছে?


যত দিন যাচ্ছে, অনার্যদের মিথ্যাচার, নির্বুদ্ধিতা, অজ্ঞতা আরও তত বেশি বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে। তাদের অনার্য মতবাদে একটি অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো যেন-তেন প্রকারে সনাতন ধর্মের আদরণীয় বিভিন্ন শাস্ত্রসমুহকে অপমান করা এবং সেখান থেকে খণ্ডিতাংশ তুলে ধরে অপপ্রচার করা যে কাজটা ব্রাদার রুহুল করে। আর ইদানীং শুরু করছে ভুল ন্যারেটিভ ক্রিয়েট করে সনাতন শাস্ত্রের নির্ভুল জ্যোতির্বিজ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। এই ধারাবাহিকতায় তারা ভাগবত পুরাণকে অবৈজ্ঞানিক প্রতিপন্ন করার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের ন্যুনতম জ্ঞান না নিয়েই ভাগবতের বিভিন্ন শ্লোককে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। 


এদের অবস্থা অনেকটা নিচের এই মহাকাশ বিজ্ঞানীর মতো।

যাইহোক আমরা এক এক করে সেগুলোর সব খণ্ডন প্রস্তুত করছি এবং প্রকৃত সত্য সনাতন সমাজে তুলে ধরার প্রয়াস করছি। 

সাম্প্রতিক সময়ে তারা ভাগবতের জ্যোতির্বিজ্ঞানের যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেটা হলো ভাগবতের পঞ্চম স্কন্ধের বাইশতম অধ্যায়ের আট নম্বর (৫/২২/৮) শ্লোক দ্রষ্টব্য। 

ওই শ্লোকে বলা হয়েছে, 

"সূর্যমণ্ডলের লক্ষ যোজন উপরিভাগে চন্দ্র গ্রহ দৃষ্ট হন। চন্দ্রদেব তাঁহার উগ্রাচরণশীলত্ব দ্রুতগামী হইয়া দুই পক্ষের সূর্যের সম্বৎসর, সওয়া দুই দিবসে সূর্যের একমাস ও এক একদিনে সূর্যের এক এক পক্ষ ভোগ করেন।"

অনার্যদের অভিযোগ হলো এই শ্লোকে যা বলা হয়েছে এমনটা সম্ভব নয়। অর্থাৎ চাঁদের গতিবেগ সূর্যের চেয়ে বেশি নয়, বিশেষত এতটা বেশি নয় যে চাঁদ  সওয়া দুই দিনে সূর্যের একমাসের দূরত্ব অতিক্রম করবে অথবা তারা নিজেরাও জানে না তাদের আপত্তি কোথায়! তারপর একটা সাইট থেকে কি একটা কপি করে কিছু একটা দেখাতে চেয়েছে যেটা হয়তো এরা নিজেরাই বুঝে নি।

ব্যাখ্যাঃ অনার্যদের বলছি আপনারা যখন কিছু সমালোচনা করবেন সেটা একটু বিচার বিশ্লেষণ করে করবেন,  প্রাসঙ্গিক কোন বিশ্লেষণ না করে অযথা সেটার সমালোচনা করে নিজেদের নির্বুদ্ধিতাকে সর্ব সম্মুখে প্রকাশ করবেন না। আর সবসময় সবকিছুর সমালোচনা করতেই হবে এমন ত নয় বরং সমালোচনা ছাড়া যতটুকু নিজেদের জ্ঞানের পরিধির মধ্যে থাকবে ততটুকু নিয়ে থাকাটাই শ্রেয়। তার চেয়ে স্বাধ্যায় না করে আপনারা যে কেবল ব্রাদার রুহুলের মতো চারপাশে বইয়ের স্তুপ সাজিয়ে ফটোশুট করছেন সেটাই করুন ভাগবতের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে সমালোচনায় যাবেন না।

আপনাদের অভিযোগ হল চাঁদকে সূর্যের চেয়ে দ্রুতগামী বলা হয়েছে, কিন্তু কোন দৃষ্টিতে বলা হয়েছে সেটা কি বোঝার চেষ্টা করেছেন? কীরকম দ্রুতগামী সেটা তো বলাই হয়েছে ওই শ্লোকে। সেগুলো  কি বোঝার চেষ্টা করেছেন, নাকি সমালোচনা করতে পারলেই নিজেদের জ্ঞানী প্রমাণ করা যায়? 

‌সমস্যা নেই, আমরা ব্যাখ্যা করে দিচ্ছি। পুরাণে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনা করা হয়েছে সেটা পৃথিবীর রাশিচক্র ও চিত্রা, বিশাখা ইত্যাদি সাতাশটি নক্ষত্রকে ভিত্তি করে। আমরা আগের পোস্টে দেখিয়েছিলাম কীভাবে সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে রাশি পরিবর্তন করে। সেটা যদি কেউ বুঝে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন সূর্যের রাশি পরিবর্তন পুরোপুরি পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবী প্রতিমাসে এক রাশির সামনে থেকে অন্য রাশির সামনে যায় বলে সূর্যও পৃথিবীর সাপেক্ষে প্রতি মাসে এক রাশির সামনে থেকে অন্য রাশির সামনে যায়। এই সাপেক্ষে পৃথিবী থেকে দৃষ্ট সূর্যের রাশি পরিবর্তনের সময়কাল একমাস। অর্থাৎ সূর্য এক একটি রাশিতে এক এক মাস কাটায়। 

‌এরপর আসা যাক পৃথিবীর সাপেক্ষে চন্দ্রের রাশি পরিবর্তন নিয়ে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বারোমাস সময় লাগায় বলে সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে আপাত গতি বা আপেক্ষিক গতি নিয়ে পৃথিবীর চারিদিকে বারোমাসে একবার পাক খায়। সমগ্র রাশিচক্র পরিক্রমণ করতে সূর্যের বারোমাস লাগে। কিন্তু চন্দ্রের ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করার দরুন সে খুব দ্রুত পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থান পরিবর্তন করে। চন্দ্র একমাসে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।

চন্দ্রের স্থান পরিবর্তনের জন্য চন্দ্রকেও পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশি ও সাতাশটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যেতে দেখা যায়। চন্দ্র প্রায় সাতাশ দিনে পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘুরে আসে। এই সাতাশ দিনেই তাকে বারোটি রাশির সামনে ও সাতাশটি নক্ষত্রের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়। তো চন্দ্র পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশিকে অতিক্রম করতে সময় নিচ্ছে সাতাশ দিন। তাহলে তার এক একটি রাশিকে অতিক্রম করতে সময় লাগছে গড় (২৭÷১২) = ২.২৫দিন বা সওয়া দু দিন। 

ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য আমরা পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্রের একটি ডায়াগ্রাম এঁকেছি সেটি লক্ষ করুন।

চিত্রঃ পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য ও চন্দ্রের রাশি পরিবর্তন

উপরের ছবিটি দেখুন, CD রেখাংশটি পৃথিবীর সাপেক্ষে চন্দ্রের রাশিগত অবস্থান নির্দেশ করছে। এখন ওই রেখাংশটি ধনু রাশিকে নির্দেশ করছে, তার মানে চন্দ্র এখন পৃথিবীর সাপেক্ষে ধনুরাশিতে অবস্থান করছে। যেহেতু চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে ভ্রমণ করার দরুন স্থান পরিবর্তন করছে সেহেতু ওই রেখাংশটিও চন্দ্রের সাথেই স্থান পরিবর্তন করছে। চন্দ্র যখন আরও কিছুটা পথ যাবে তখন ওই তীরটি ধনু রাশির থেকে মুখ সরিয়ে মকর রাশির দিকে যেতে থাকবে ও একসময় মকর রাশিকে নির্দেশ করবে। তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে চন্দ্রের রাশিগত অবস্থান হবে মকর রাশি। এইভাবেই চন্দ্র আর কিছুটা পথ গেলে রেখাংশটির মুখ মকর থেকে সরে কুম্ভের দিকে হবে ও একসময় কুম্ভকে নির্দেশ করবে, তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে চন্দ্রের রাশিগত অবস্থান হবে কুম্ভ রাশি। এইভাবেই চন্দ্র যখন তার পরিক্রমণ পথ সম্পূর্ণ করবে তখন ওই রেখাংশটিও বারোটি রাশিকে নির্দেশ করে ফেলবে। অর্থাৎ চন্দ্র তার পরিক্রমণ পথ সম্পূর্ণ করলে সে পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশিকে পরিক্রমণ করে চলে আসবে। 

আরও সহজভাবে বোঝার জন্য পুরো ব্যাপারটাকে একটি ঘড়ির মতো ভাবতে পারেন, ঘড়ির কাঁটা তার পরিক্রমণ পথে ১ থেকে ১২ পর্যন্ত সংখ্যাকে নির্দেশ করে চলে, এবং সে যখন তার পরিক্রমণ পথের Circle কে complete করে ফেলে তখনই তার দ্বারা ১ থেকে ১২ পর্যন্ত সংখ্যাকে নির্দেশ করা সম্পূর্ণ হয়। তেমনি চন্দ্র যখন তার পরিক্রমণ পথ সম্পূর্ণ করবে তখনই সে পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশিকে অতিক্রম করে আসবে। 

চন্দ্র পৃথিবীর চারিদিকে পরিক্রমণ করতে সাতাশ দিন মতো সময় নেয়।  সেই হিসেবে পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশিকে অতিক্রম করতেও সাতাশ দিন সময় নেয়। প্রতিটি রাশিকে অতিক্রম করতে চাঁদের সময় লাগে (২৭ ÷ ১২) = ২.২৫ দিন বা সওয়া দু দিন। তবে এখানে উল্লেখ্যযোগ্য যে, এই সওয়া দুই দিনের হিসাব হলো একটি গড় হিসাব। যেহেতু ঘূর্ণায়মান পৃথিবীও স্থান বদলাচ্ছে সেহেতু ওই রেখাংশটির স্থান পরিবর্তনও কেবল চাঁদ নয়, পৃথিবীর ওপরও অনেকটা Depend করছে। এইজন্য এই হিসাবে একটু কম-বেশি হয়। 

এই একই কারণে চন্দ্রের স্থান পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা তিথি গুলোর দৈর্ঘ্যও কম বেশি হয়। যারা  পঞ্জিকা নির্মাণের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করেন তারা এগুলোও হিসাব করেন, আমরা এত জটিলতায় নাই বা গেলাম। 

এরপর AB  রেখাংশটির কথা ভাবুন। সূর্য সর্বদাই সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে, আর সে পৃথিবীর চারিদিকেও ঘুরছে না। তাহলে AB  রেখাংশটির স্থান পরিবর্তন পুরোপুরি পৃথিবীর স্থান পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করছে। চিত্রে দেখা যাচ্ছে, AB রেখাংশটি মিথুন রাশিকে নির্দেশ করছে। অর্থাৎ এখন পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের রাশিগত অবস্থান মিথুন রাশি। পৃথিবী সরতে সরতে যখন ধনু থেকে মকরে আসবে তখনই ওই AB রেখাংশটি মিথুন থেকে কর্কটে মুখ ঘুরিয়ে কর্কটকে নির্দেশ করবে, ও একসময় কর্কট রাশিকে নির্দেশ করবে, তখন পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের রাশিগত অবস্থান হবে কর্কট রাশি। এইভাবেই পৃথিবী তার যাত্রাপথ সম্পূর্ণ করলে ওই রেখাংশটিও বারোটি রাশিকে নির্দেশ করা সম্পূর্ণ করবে। অর্থাৎ পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের বারোটি রাশি পরিভ্রমণ করা শেষ হবে। এখন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বারো মাস সময় নেয়। সেই কারণে সূর্যেরও বারোটি রাশিকে অতিক্রম করতে বারো মাস লাগে। (এটাও ঘড়ির কাঁটার মতো করে বুঝুন) তাহলে সূর্যের এক একটি রাশিকে অতিক্রম করতে সময় লাগে (১২÷১২) = ১মাস

এরপর পৃথিবীর সাপেক্ষে চন্দ্র ও সূর্যের রাশি পরিবর্তনের সময়কালে তুলনা করা যাক। 

সূর্যের এক একটি রাশিকে অতিক্রম করার সময়কাল একমাস, সেখানে চন্দ্রের রাশি পরিবর্তনের সময়কাল হলো সওয়া দু’দিন। সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশিকে অতিক্রম করতে সময় নেয় একবছর। এই একবছর সময়কালকে এক সম্বৎসর বলে। আবার চন্দ্র পৃথিবীর সাপেক্ষে বারোটি রাশিকে পরিক্রমণ করতে সময় নেয় একমাস তথা দুই পক্ষ। তো বারটি রাশি হলো সূর্যের বারোমাস তথা একবছরের যাত্রাপথ, আর চন্দ্রের একমাস তথা দুই পক্ষের যাত্রাপথ। সেই সূত্রেই ভাগবত পুরাণ বলছে, চন্দ্র একমাস বা দুই পক্ষে সূর্যের একবছরের পথ যায়। 

আবার সূর্য যেখানে পৃথিবীর সাপেক্ষে এক একটি রাশিকে অতিক্রম করতে এক মাস সময় সময় নেয়, চন্দ্র সেখানে সওয়া দু'দিনে এক একটি রাশিকে অতিক্রম করে ফেলে। অর্থাৎ, এক একটি রাশি হলো সূর্যের এক এক মাসের যাত্রাপথ আর চন্দ্রের সওয়া দিনের যাত্রাপথ। এই জন্যই ভাগবত বলছে চন্দ্র সওয়া আড়াই দিনে সূর্যের একমাস ভোগ করেন।

এরপর, আসি একদিনে এক পক্ষ ভোগ করার বিষয়টি। পৃথিবীর সাপেক্ষে প্রতিবেশী জ্যোতিষ্কসমূহের অবস্থান কেবল রাশিচক্র নয় বরং চিত্রা, বিশাখা ইত্যাদি সাতাশটি নক্ষত্র দিয়েও বিচার করা হয়। চন্দ্র যেহেতু সাতাশ দিনে তার পরিক্রমণ করে সেহেতু তার একটি একটি নক্ষত্রকে অতিক্রম করতে সময় লাগে (২৭ ÷ ২৭) = ১ দিন, আবার পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যও তার আপাত গতির দ্বারা নক্ষত্র গুলোকে অতিক্রম করছে। যেহেতু পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ৩৬৫ দিন সময় লাগায়, সেহেতু সূর্যও আপাত গতির দ্বারা পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে ৩৬৫ দিন সময় লাগায়। সূর্যও তার যাত্রাপথে সাতাশটি নক্ষত্রকে অতিক্রম করে। এক্ষেত্রে সূর্যের এক একটি নক্ষত্রকে অতিক্রম করতে সময় লাগে (৩৬৫ ÷ ২৭) = ১৩.৫১ দিন বা ১৪ দিনের মতো। 

চন্দ্র একটি নক্ষত্রকে অতিক্রম করতে সময় লাগায় ১ দিন, আরর সূর্য সময় নেয় ১৪ দিন। অর্থাৎ ১ টি নক্ষত্র চন্দ্রের একদিনের যাত্রাপথ, আর সূর্যের ১৪ দিন বা একপক্ষের কাছাকাছি সময় কাল। এইজন্যই ভাগবত বলছে, চন্দ্র একদিনে সূর্যের একপক্ষ দূরত্ব যায়।

তো আমরা দেখলাম এখানে পথ বলতে যার কথা বলা হচ্ছে সেটা পৃথিবীর সাপেক্ষে জ্যোতিষ্কগুলোর অবস্থান নির্ধারক রাশি পথ ও নক্ষত্র পথ আর গতি বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা হলো সূর্য, চন্দ্রের রাশি ও নক্ষত্র পরিবর্তনের গতি। 

বারো রাশি ও সাতাশ নক্ষত্র কী? 

যদিও আগের পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে রাশি কী তবুও আরেকবার সংক্ষেপে বলে দিই, প্রতিটি রাশি হলো এক একটি নক্ষত্র মণ্ডল ও সাতাশটি নক্ষত্র হলো আকাশের সাতাশটি তারকা। যারা পৃথিবী থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তারা এত দূরে অবস্থিত যে, পৃথিবী থেকে তাদের গতিশীলতা উপলব্ধিই করা যায় না। এইজন্যই পৃথিবীর আকাশে এদের সর্বদাই নির্দিষ্ট স্থানে দেখা যায়। যেহেতু নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর আকাশে আপাত Constant তাই তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে পৃথিবীর প্রতিবেশী সূর্য, চন্দ্র, অনান্য গ্রহসমূহ যাদেরকে সর্বদাই পৃথিবীর আকাশে চলাচল করতে দেখা যায় তারা পৃথিবীর সাপেক্ষে কোন অভিমুখে গমন করলো, কোথায় কীরুপ অবস্থান নিল, তা নির্ধারণ করা হয়। তাই এই ১২ রাশি বা ২৭ নক্ষত্র কোনভাবেই কাল্পনিক নয়।

আমরা আমাদের প্রথম পর্বে রাশিচক্র নিয়ে আলোচনা করেছিলাম ভিডিওসহ তখন অনার্যদের একজন কুতর্ক জুড়েছিলেন যে আমরা নাকি রাশিচক্রের কাল্পনিক ধারণা উপস্থাপন করেছি। তিনি আবার সূর্যের গতিবেগ নিয়ে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. দীপেন ভট্টাচার্যের ভিডিও দেখতে বলেন, আমরা ওই ভিডিওতে দেখতে পাই উনি সূর্যের অবস্থান বোঝানোর জন্য কিছু নক্ষত্র মণ্ডলকে চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে বৃষরাশির (Sagittarius) এবং ধনুরাশির (Scorpius) নক্ষত্র মণ্ডলকে তিনি চিহ্নিত করেছেন। তো নক্ষত্র মণ্ডলকে কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করলে যে বিভিন্ন আকৃতি পাওয়া যায় এটা উনিও স্বীকার করেছেন, শুধু তাই নয় তিনি তাঁর ভিডিও তে রীতিমতো নক্ষত্র মণ্ডলের কাল্পনিক ছবিও এঁকেছেন, পাঠকগণ নিজেরাই দেখে নিন। এই অনার্যরা আসলেই সর্বদা খণ্ডিতাংশ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। 


সপ্তর্ষি মণ্ডলকে জিজ্ঞাসা (?) চিহ্ন রুপে বিজ্ঞান বইতে পড়ানো হয়, একটি নক্ষত্র মণ্ডলের আকার শিকারীর মতো বলে তাকে বিজ্ঞানে কালপুরুষ বলা হয়, তো বিজ্ঞানীরাও তারামণ্ডলের কাল্পনিক রুপ স্বীকার করেন।


কালপুরুষ

পৃথিবীর সাপেক্ষে জ্যোতিষ্কগুলোর অবস্থান মানবজীবনের ওপর প্রভাব ফেলে কিনা বা কেউ ভাগ্য গণণা, কোষ্ঠী বিচার মানবে কিনা সেটা নিয়ে আলাদা আলোচনা হতে পারে কিন্তু পৃথিবীর সাপেক্ষে জ্যোতিষ্কগুলোর অবস্থান জানার জন্য রাশিচক্রের ও সাতাশ নক্ষত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

উপসংহারঃ আমরা যেসব তথ্য দিয়েছি ও দিচ্ছি, সেগুলো কোনটাই আমাদের বানানো বিশ্লেষণ নয়। যাঁরা বর্তমানে জ্যোতিষ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করছে তাদের বক্তব্যই তুলে ধরা হলো নিচের দু'টো ভিডিওতে। সূর্যের রাশি পরিবর্তনের ভিডিও তো দেওয়াই হয়েছে আগের পোস্টে, এখন চন্দ্রের রাশি পরিবর্তন, নক্ষত্র পরিবর্তন ও সূর্যের নক্ষত্র পরিবর্তনের দিন সংখ্যার প্রমাণ ওনাদের বক্তব্য থেকেই দেব। 

১. চন্দ্রের রাশি পরিবর্তনের ব্যাখার ভিডিও----

২. সাতাশ নক্ষত্রের সম্পর্কে ভিডিও-----

https://youtube.com/watch?v=tF8SV7OMoSk&feature=share

এখন যে অনার্যরা তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হেতু ভাগবত পুরাণের জ্যোতির্বিজ্ঞান বুঝতে ও বিশ্লেষণ করতে না পেরে হাসাহাসি করে তাদের জন্য বিশিষ্ট জ্যোতিষ বিশ্লেষক যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি (অনার্যরাও তাদের ব্লগে এনার জ্যোতিষ ব্যাখ্যা দিয়ে নাক-কান রক্ষা করে) বলেছেন,

"পুরাণের পাঠক ও শ্রোতার মতিগতি ও রুচি অনুসারে উদ্দেশ্য সফল বা বিফল হইতে পারে। আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞানদৃষ্ট চিত্তে ঐ উদ্দেশ্য সফল হইবার সম্ভাবনা নাই, কিন্তু সেকালের লোকদিগের নিকট উহার ফল অল্প ছিলো না। 

কিন্তু যে কথা শুনিয়া এখনকার বালকেরা হাস্য করে, সে কথার আলোচনা করিয়া প্রাচীনেরা শিক্ষালাভ করিত। তাহারা কি এতোই বালকোচিত কথা-শুশ্রুষা প্রকাশ করিতেন? তাহারা কি ইদানীস্তনের বালকের তুল্য ছিলেন? কিন্তু দেখা যায়, শ্রুতি স্মৃতি ও পুরাণ পর্যায়ক্রমে প্রমাণ বলিয়া গ্রাহ্য হইয়া থাকে।

এই সকল বিষয় বিবেচনা করিয়া সহজেই বোধ হইবে যে, আমাদের দৃষ্টি প্রাচীনকালের দৃষ্টির অনুরূপ নহে। আমরা যে আখ্যানের কোন তাৎপর্য পাইতেসি না, তাহারা তাহা পাইতেন। বস্তুত প্রাচীনকালের আচার ব্যবহার নিত্য নৈমিত্তিক ক্রিয়ার মূল বা তাৎপর্য অবধারণ আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছে। বিদেশী ব্যাক্তি যেমন সংস্কৃত ভাষায় বুৎপন্ন হইলেও আমাদের ধর্ম কর্ম আমাদের মতো বুঝিতে পারেন না, তেমনই সেখালের তুলনায় আমিরা একালে বিদেশি হইয়া পড়িয়াছি।" 

রইলো বাকি স্বঘোষিত বিজ্ঞানী অনার্যদের লম্ফঝম্প। ভাগবতের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে এই অর্বাচীনদের মন্তব্য বিবেচ্য নয় বরং আমরা একটু দেখি ৩য় বৃহত্তম মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO এর সাবেক প্রধান ড. এ এস কিরন কুমারের বক্তব্য। পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত ড. কিরন কুমার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে বক্তব্য দেন,

“The Vedic and ancient Greek writings constitute the core of ancient wisdom…the Upanishads, the Bhagavad Gita, the Brahman Sutra, the Srimad Bhagavatam and the Mahabharata constitute the primary source of ancient wisdom. We should not disregard our ancient texts which could yield – if verified, studied and researched properly – vital knowledge.”

আমাদের পরবর্তী পর্বে থাকবে "চন্দ্র কিভাবে সূর্যের উপরে অবস্থান করে!"

© SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি
🖋️ শ্রী গৌতম দন্ডপাট
সহযোগিতায়ঃ শ্রী অনিক কুমার সাহা 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ