সনাতন ধর্ম ও দান এর গুরুত্ব।
দান করা মহা পুণ্যের কাজ দান করা পৃথিবীতে প্রধান পুণ্য গুলোর মধ্যে অন্যতম। দানবীর কর্নের কথা আমরা সকলেই শুনেছি। যে তার দানের পুণ্যের কারণে মোক্ষলাভ করেছিলেন। সনাতন ধর্মের শাস্ত্র অনুযায়ী গরীব দুঃখীদের দান করে একজন মানুষ তার ইহজীবনের পাঁচটি মহাঋনের মধ্যে একটি শোধ করে।
পবিত্র বেদ সর্বদাই দান করাকে উৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের ১১৭নং সূপ্তটি সম্পূর্ণই দানের মহিমা নিয়ে দৃষ্ট যার কারণে সুপ্তটির নাম দানস্তুতি সুপ্ত।
আজ দান সম্পর্কীত কয়েকটি মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করবো?
অথর্ববেদ ৩/২৪/৫
"শাত হস্ত সমাহার, সহস্র হস্ত সংকীর্ণ ""
অর্থাৎ আয় করতে হাত টি কে শত টি হাতে বৃদ্ধি করো আর দান করতে হাতটি কে সহস্র হাতে রুপান্তরিত করো।
অথর্ববেদ ৩/৩০/৬
" হে মানুষ সষম জীবনাচরন অনুসরন কর, ধরিত্রী থেকে আহরিত খাবার ও পানীয় সমভাবে বন্টন কর, একটি চাকার শিকগুলো সমভাবে কেন্দ্রে মিলিত হলে যেমন গতির সঞ্চার হয়, তেমনি সাম্য মৈত্রীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলেই অগ্রগতি অবধারিত "
এখন ঋকবেদে এ দান সম্পর্কে কি বলা আছে তার দিকে লক্ষ্য করা যাক,
ঋক বেদ ১০/১১৭/৫
"ধনীদের উচিত যাচকে( দুঃস্থ দের) দান করা, তাদের দুরদৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া উচিত কেননা ধনসম্পদ হলো রথের চাকার মত, এখন যা এখানে পর মূহুর্তেই তা অন্যখানে গতিশীল হয়"
ঋক বেদ ১০/১১৭/৬
" মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বধ ইত স তস্য।।
নার্যমনং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী।।"
অর্থ: "যে ব্যাক্তি দুস্থ দের সাহায্য করেন না, অজ্ঞানী এবং অন্তঃদৃষ্টিহীন তার সকল উন্নতি বৃথা, সকল সম্পত্তি অনর্থক। অন্যদের সাহায্য না করে অভুক্ত রেখে যে খায় সে মূলত পাপই ভোজন করে।।"
কিন্তু দান যেখানে সেখানে না জেনে করাও উচিত নয়। অপাত্রে দান আবার পাপের কারন হয়ে দাড়ায়।
যে দান থেকে প্রাপ্ত সম্পদের অপব্যবহার করে তার অপকর্মের দায় কিন্তু দানকারীর হয়।
এ জন্য ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন।
শ্রীমদভগবদ গীতা ১৭/২০
দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেহনুপকারিণে।
দেশে কালে চ পাত্রে চ তদ্দানং সাত্ত্বিকং স্মৃতম্।।
অনুবাদঃ দান করা কর্তব্য বলে মনে করে প্রত্যুপকারের আশা না করে উপযুুক্ত স্থানে, উপযুক্ত সময়ে এবং উপযুক্ত পাত্রে যে দান করা হয়, তাকে সাত্ত্বিক দান বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে মনু বলেছেন।
"যে ব্যাক্তি পাথরের তৈরি নৌকায় চড়ে জনপথ পাড়ির চেষ্টা করেন তার সমাপ্তি যেমন সলিল সমাধিতে হয় ঠিক তেমনি অযোগ্য গ্রহীতা কে দানকারী দাতাও অজ্ঞানতার গভীরে নিমজ্জিত হয় "।
মনুসংহিতা
৪/২৩৩- "
সব্বেষামেব দানানাং ব্রক্ষদানং বিশিষ্যত।
বয্যন্ন গোমহীবাস্তিলকাঞ্চন সর্পিসাম।।
অর্থ: যত ধরনের দান এই পৃথিবীর তে আছে জল দান, অন্ন দান,ধেনু দান, ভুমিদান, বস্র দান, তিল দান, স্বর্ন দান, এই সকল দানের মধ্যে জ্ঞান দান অথাৎ শাক্ষা দান সর্বশ্রেষ্ঠ দান।
৪/২৩৫
যে ব্যক্তি সৎকার পূর্বক প্রদত্ত দান গ্রহন করেন এবং যিনি সৎকার পূর্বক দান করেন তারা উভয় স্বর্গ লাভ করেন। এর বিপরীতে হলে ( অথাৎ অবজ্ঞার সাথে দান করলে ও গ্রহন করলে) দাতা ও গ্রহীতা উভয় নরকে গমন করে।
জয়ন্ত সেন
0 মন্তব্যসমূহ