💠 স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব -২

 💠 স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব

🔲 সাম্প্রতিক কালে কিছু আর্য নামধারী অনার্য আছে যারা সাকার উপাসনা তথা মুর্তি পূজার ঘোর বিরোধী। এরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে স্বামী বিবেকানন্দ,ঋষি বংকিম এনাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন  অপপ্রচারে নেমেছে। তবে এনারা তাদের অপপ্রচারে এক বিশেষ টেকনিক অবলম্বন করে যেটা অনেকটা তাকিয়াবাজী টাইপ। মানুষ এতে সহজে বিভ্রান্ত হয় এবং তাকিয়াবাজরা সফল হয়ে যায়।

🔲 এই জাতীয় কয়েকটি অপপ্রচারের জবাব নিয়ে আজকের ধারাবাহিক পোস্ট। এখানে বিশেষ ভাবে বলে রাখা দরকার তারা নিরাকারবাদের নামে মধ্যযুগীয় স্টাইলে মূর্তি ভাঙতে উৎসাহিত করতে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র এমনকি আজন্ম মূর্তি পুজক স্বামী বিবেকানন্দকেও ব্যবহার করে। তবে এরা মূলত স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়েই বেশী অপপ্রচার চালায় এবং তাঁর মন্তব্যের খন্ডিত অংশ থেকে শুরু করে জাল গ্রন্থও ব্যবহার করে। অবশ্য এটাই তাদের শিক্ষা, মুখে সত্যের বুলি কিন্তু অন্তরে মিথ্যার খনি।

 এরা অপপ্রচার দুইভাবে করে থাকে।
সেগুলা হলো:
 রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (উদ্বোধন কার্যালয়)কতৃক অনুমোদিত পুস্তক এর বিশেষ বিশেষ খন্ডিত বাক্য (আগে-পিছের বক্তব্য বাদ দিয়ে) প্রচার সুবিধামতো প্রচার করে।
 যেসকল গ্রন্থ মিশন অনুমোদিত নয়, সেই পুস্তক হতে তথ্য উপস্থাপন করে।

🔳 এখন প্রথমত অপপ্রচার এর পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করব। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভাল, স্বামী বিবেকানন্দের কোন বক্তৃতা বা কোন একটি স্বতন্ত্র রচনার শুরু থেকে শেষ অবধি না পড়ে বা না জেনে যদি কেউ মধ্যস্থানের একটি খন্ডিত বাক্য শোনে তবে সে নি:সন্দেহে বিভ্রান্তিতে পড়বে।

🔘 উদাহরণস্বরূপঃ "আমি সিগারেট খাই না" থেকে 'না' বাদ দিলে অর্থ সম্পূর্ণ বদলে যায়।

🔲 কিছু দিন আগে আর্য নাম ধারী কিছু যবনশ্রেনীর অনার্য ব্যাপক হারে প্রচার করতে শুরু করেছিল যে স্বামীজি নাকি সব মূর্তি ভেংগে ফেলতে বলেছিলেন! এই খন্ডিত বাক্য নিয়েই তারা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস কে ব্যাপক হারে আঘাত (সফল তাকিয়াবাজী) করতে সক্ষমও হয়। অথচ বিষয় টা হলো ভগিনী ম্যারিকে লিখা এক চিঠিটে ভিন্ন প্রসঙ্গে ও ভিন্ন অর্থে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই অংশের খন্ডন নিম্মোক্ত লিংকে দেওয়া হলোঃ

https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/2020/09/blog-post_74.html

🔲 এখন এই কুপ্রচারক গণ জানে যে এই সমস্ত পুস্তক সবার কাছে থাকে না। তাই তারা চিঠি বা বক্তৃতার খন্ডিত বাক্য প্রয়োগের মাধ্যমেই তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যস্ত। তারা কখনোই পুরো চিঠি বা বক্তৃতা সাধারণ জিজ্ঞাসু মানুষের সামনে আনে না। তারা তাদের প্রয়োজনে স্বামীজিকে ঠিকই ব্যাবহার করে আবার স্বামীজিকে জড়িয়ে চরম কুৎসাও রটনা করে। তাই আপনারা এই ধরনের অনার্যদের কুপ্রচারকে বিশ্বাস করার আগে অন্তত একবার নিজে সত্য যাচাই করে নিবেন।

🔳 এবার আসা যাক অপপ্রচারের দ্বিতীয় কৌশল সম্পর্কে। এক্ষেত্রে অপপ্রচারকারীরা কিছু বিকৃত ও স্বতন্ত্র ব্যক্তির মনগড়া গ্রন্থ বা উপন্যাস হতে তথ্য উপস্থাপন করে। সে সমস্ত পুস্তকের কোন স্বীকৃতি দেয়া হই নি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রকাশনা কার্যালয় (উদ্বোধন কার্যালয়) হতে। এই রকম দুটি পুস্তকের নাম হলো।

 সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৩৪-২০১২);কতৃক লিখিত "প্রথম আলো" উপন্যাস।
 সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৮৯১-১৯৫৪) কতৃক লিখিত "বিবেকানন্দ চরিত" নামক প্রোপাগাণ্ডা টাইপ জীবনী গ্রন্থ হতে।

 আশা করি পাঠকগণ এই দুইজন লেখকের জন্ম-মৃত্যু সাল দেখেই বুঝে যাবেন যে তারা স্বামীজিকে আদৌ কোনদিন সম্মুখে দেখেনি কিংবা স্বামীজির সাথে সময় অতিবাহিত করে নি। অথচ তাদের একজন স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে কিছু প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কাল্পনিক উপন্যাস লিখে ফেলেছেন আর আরেকজন ত একটা জাল জীবনী গ্রন্থই (রামকৃষ্ণ মিশনের একজন মহারাজ কর্তৃক সঠিক জীবনী গ্রন্থের ছবি নিচে দেওয়া হল) লিখে ফেলেছেন।





 এই লেখক গণের কেউই স্বামীজীর সম সাময়িক নন। এবার আপনারাই বিবেচনা করুন স্বামীজি সম্পর্কে জানতে এনাদের পুস্তকের উপর নির্ভর করা কতটা যুক্তিপূর্ণ! তাদের দ্বারা স্বামীজি সম্পর্কে জীবনী ও উপন্যাস লেখা আর কৃত্তিবাসের রামায়ণ লেখার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ কৃত্তিবাস রামায়ণ লিখতে গিয়ে মূল বাল্মীকি হতে কিছু তথ্য নিয়েছেন আর নিজের মনগড়া অনেক কাহিনী ঢুকিয়েছেন, যার দ্বারা মানুষ আজও বিভ্রান্ত হচ্ছে। এই লেখক গণও তেমন স্বামীজির জীবনী কে অনেক বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করেছেন। নিচে কয়েকটি প্রমাণের সাহায্যে সত্য তথ্য তুলে ধরা হলো

 সুনীল গংগোপাধ্যায় তার "প্রথম আলো" উপন্যাসে লিখেছেন যে, স্বামীজি নাকি স্ট্রোক করে মারা যান, অথচ এই তথ্যটা কলকাতার তথকথিত স্যাকুলার লেখকের সম্পূর্ণ মনগড়া। কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের একদম নুন্যতম জ্ঞান থাকলেও জানা যায় স্ট্রোকে মারা গেলে সেটাকে আকস্মাৎ মৃত্যু বলে৷ অথচ স্বামীজি প্রায়ই বলতেন, আমি ৪০ পেরুব না। 



অর্থাৎ স্বামীজি মহাসমাধি লাভের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন আর শ্রী রামকৃষ্ণ আগে থেকেই বলতেন, নরেন যখন নিজেকে জানতে পারবে,তখন আর সে থাকবে না(অর্থাৎ মহাসমাধি লাভ করবে) তাহলে আপনারাই বলুন, এটা সুনীল বাবুর স্বামীজিকে নিয়ে অপপ্রচার নয় কী??

 এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন কতৃক অনুমোদিত স্বামীজির জীবনীমূলক ৩ খন্ডের প্রামাণিক গ্রন্থ "যুগনায়ক বিবেকানন্দ" গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডের (অমরনাথ ও ক্ষীর ভবানী) ভ্রমণের বর্ণনার এক জাগায় বলা আছে, স্বামীজি অমরনাথ শিবের কাছ থেকে ইচ্ছা মৃত্যুর বর/আশীর্বাদ পেয়েছেন।

 তাহলে আপনারা স্বয়ং বিবেচনা করুন, যেখানে স্বামীজির মহাসমাধি গ্রহণের সময় পূর্বনির্ধারিত ছিল সেখানে এই সুনীল বাবু সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ভাবে নিজের মনগড়া মতামত দিয়ে স্বামীজি সম্বন্ধে কতবড় মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে দিল! অনার্য ঠকবাজগুলো এই বিকৃত তথ্যকে ফলাওভাবে প্রচার করেই আপনাদের বিভ্রান্ত করছে।
তাই এসব বিকৃত বই হতে সাবধান ও সচেতন থাকুন।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় আরেকটি উদাহরণে। সম্প্রতি কুপ্রচারকগণ প্রচারে নেমেছে সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার কর্তৃক রচিত তাকিয়াবাজ গ্রন্থ "বিবেকানন্দ চরিত" হতে কিছু তথ্য নিয়ে (এই বইটি মিশন কতৃক অনুমোদিত নয়)।


তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে স্বামীজি নাকি এমন একটা আশ্রম স্থাপন করতে চেয়েছিলেন যেখানে কোন বাহ্য পূজা হবে না এবং শ্রীরামকৃষ্ণের (সেখানে একটি বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে, "এখানেও বৃদ্ধ আসন ঘাড়িয়া বসেছে") কোন মূর্তিও থাকবে না। আর এখানে একসময় নাকি স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণদেবের পূজা বন্ধ করে দেন। এই তথ্যটি তারা পেয়েছে সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার কতৃক লিখিত এই বিভ্রান্তিকর তাকিয়াগ্রন্থ হতে। তাই মিশন কতৃক অননুমোদিত বই হতে সাবধান।



 এবার আসা যাক স্বামীজি রামকৃষ্ণের পূজা বন্ধ করেছিলেন-কথাটা কতটা গ্রহণযোগ্য!
তার আগে জানা দরকার রামকৃষ্ণ সম্পর্কে স্বামীজির মনোভাব কেমন ছিল"
"রামকৃষ্ণকে যে বুঝতে পারে না তার জন্ম বৃথা।আমি তার জন্ম জন্মান্তরের দাস।এই আমার পরমভাগ্য,তাহার একটি কথা বেদ-বেদান্ত অপেক্ষা অনেক বড়"
- স্বামী বিবেকানন্দ
রামকৃষ্ণ কথামৃত;ভূমিকা

🔹 এবার তাহলে আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন যে যার কাছে তার গুরুদেবই বেদ বেদান্ত হতে ওপরে, সে এই কথা কীভাবে বলতে পারে! আর সবাই অবগত আছেন যে বেলুড় মঠে স্বামীজি নিজেই বাহ্য পূজার আয়োজন করেন আড়ম্বরে আর তিনি নিজেই রামকৃষ্ণের ছবি স্থাপন করেন সেখানে। তাহলে আপনারাই ভাবুন এই তাকিয়াবাজ লেখক কত বড় মিথ্যাচার করেছে! তাই আপনারা এই সকল জাল আর বিভ্রান্তিকর গ্রন্থ হতে সাবধান থাকুন, কেবল মিশন কতৃক অনুমোদিত বই সমূহ পড়ুন। এইসকল তাকিয়াবাজ গ্রন্থের কাটিপিস ব্যবহার করছে সনাতনী নামধারী মূর্তি পুজা বিরোধী একদল তাকিয়াবাজ কদার্য।

🚫 তাদের আরেকটা অপপ্রচার হচ্ছে ওঙ্কার উপাসনা নিয়ে। স্বামীজির ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে করা মন্তব্যের খন্ডিত অংশ তুলে ধরে তারা প্রচার করছে যে স্বামীজি নাকি এমন এক মন্দিরের কথা বলেছেন যেখানে কেবল ওঙ্কার উপাসনাই হবে। সম্পূর্ণ বক্তব্যে স্বামীজি আসলে কি বলেছেন তার ব্যাখ্যা নিচের লিংকে দেওয়া হলো।


https://sanatanphilosophyandscripture.blogspot.com/2020/09/blog-post_74.html

🏹 বি:দ্র:- এই "বিবেকানন্দ চরিত" বই এর লেখক সত্যেন্দ্রনাত মজুমদার ছিলেন একজন কথিত আর্যসমাজী। আর কথিত আর্য সমাজের কাজই হলো মিথ্যা আর বানোয়াট তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দলভারী করা। আর এই লেখক যে কথিত আর্য সমাজী, তার প্রমাণ বই-এর ২৯৬ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয়েছে। আর সবাই ত জানেন রামকৃষ্ণ মিশন আর কথিত আর্য সমাজ সম্পুর্ণ ভিন্ন ভাবধারার। তাই নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই তারা এই বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে এবং তাদের কাছে সদা বিতর্কিত স্বামীজিকেই ব্যবহার করছে। মিশন কতৃক অনুমোদিত বই সেগুলাই, যে গুলাতে স্বামী বিবেকানন্দ কতৃক প্রণীত বিশেষ চিহ্নটি থাকে, এই চিহ্ন ব্যতীত অন্য বই গুলা মিশন কতৃক অনুমোদিত নয়।

🔱 কাল ভৈরব



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ