ওঙ্কার উপাসনা নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশনা

 

🔶 ওঙ্কার উপাসনা নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশনা।

★ স্বামীজি কি বলেছিলেন ওঙ্কার উপাসনা নিয়ে?
"আমরা যে মন্দির প্রতিষ্ঠা করিবার কথা বলিতেছি, উহা অসাম্প্রদায়িক হইবে, উহাতে সকল সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উপাস্য ওঙ্কারেরই কেবল উপাসনা হইবে। যদি কোন সম্প্রদায়ের ওঙ্কার উপাসনায় আপত্তি থাকে, তবে তাহার নিজেকে হিন্দু বলিবার কোন অধিকার নাই।"
★ তারপর কি বলেছিলেন?
"যে কোন সম্প্রদায় ভুক্ত হোক না কেন, সকলেই নিজ নিজ সম্প্রদায়গত ভাব অনুসারে ঐ ওঙ্কারের ব্যাখ্যা করিতে পারে, কিন্তু সর্ব সাধারণের উপযোগী একটা মন্দিরের প্রয়োজন। অন্যান্য স্থানে তোমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পৃথক পৃথক দেব প্রতিমা থাকতে পারে, কিন্তু এখানে ভিন্ন মতালম্বী ব্যক্তিগণের সহিত বিরোধ করিও না। এখানে আমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায় সমূহের সাধারণ মতসমূহ শিক্ষা দেয়া হবে, অথচ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ঐ স্থানে আসিয়া তাহাদের মত সমূহ শিক্ষা দেবার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকিবে, কেবল একটি বিষয়ে নিষেধ -অন্য সম্প্রদায়ের সহিত মতবিরোধ থাকিলে বিবাদ করতে পারিবে না। তোমার যাহা বক্তব্য আছে বলিয়া যাও, জগৎ উহা শুনিতে চায়। কিন্তু অন্যান্য ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমার কি মত, জগতের তাহা শুনিবার অবকাশ নাই, ওটি তোমার নিজের মনের ভিতরেই থাকুক।"

(স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খন্ড, ভারতের ভবিষ্যৎ, পৃষ্ঠা-২০১)

মন্তব্যঃ অনেকেই আজকাল স্বামীজির এই অসাধারণ বক্তব্যকে আংশিকভাবে প্রচার করছে নিজ স্বার্থে অথচ সম্পূর্ণ বক্তব্যে কি অসাধারণ বৃহত্তর ঐক্যের মর্মবানী লুকিয়ে আছে! তিনি চেয়েছিলেন এমন এক প্লাটফর্ম যেখানে সকল মত ও পথ এসে মিলিত হবে তাদের স্ব স্ব ভাব নিয়ে। সকল মত ও পথকে তিনি পরমব্রহ্মের শ্রেষ্ঠ নাম ওঙ্কারে আবদ্ধ করবেন। সেখানে সকলে যার যার নিজের ভাবকে ধারণ করবেন ও প্রচার করবেন তবে অন্যের ভাবকে অশ্রদ্ধা ও অসম্মান করবেন না।
★ সনাতনী কোন মত কি ওঙ্কারকে অস্বীকার করে?
স্বামীজি ত স্পষ্টই বলেছেন যে সকল সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উপাস্য ওঙ্কার। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করতে বলা হয় "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমোঃ" মহেশ্বর শিবকে উপাসনা করতে বলা হয় "ওঁ নমো শিবায়" এমনকি শাক্তমতে মায়ের পুজার সকল মন্ত্রেই "ওঁ" উচ্চারিত হয় আগে। সনাতনের সকল মত ও পথকে এই ওঙ্কারেই বেধে রাখা হয়েছে। স্বামীজির এই বক্তব্য দিয়ে যারা এমনটা বোঝাচ্ছে যে সকল মত ও পথ বাদ দিয়ে কেবল ওঙ্কারই জপ করবে তারা আসলে হীন উদ্দেশ্যে এই বক্তব্য ব্যবহার করছে। স্বামীজি বরং সকল মত ও পথকে স্ব স্ব ভাব নিয়ে ওঙ্কার মন্দিরে একত্রিত হতে বলেছেন।
★ আমি কেন এই বিষয়ে কথা বলছি?
কারণ আমিও স্বামীজির এই বক্তব্যকে ধারণ করতে চাই। এমন একটা প্লাটফর্ম চাই যেখানে সকল মত ও পথ স্ব স্ব ভাব ও দর্শন দিয়ে বৃহত্তর সনাতন দর্শনকে সমৃদ্ধ করবে। প্রত্যেকে তার স্ব স্ব ভাব নিয়ে উন্নতির প্রয়াস করবে কিন্তু অন্যের ভাবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সংকীর্ণতার আবহে আবদ্ধ হবে না।। সেই উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন নিয়েই "Sanatan Philosophy and Scripture" এগিয়ে যাওয়ার প্র‍য়াস করবে।।

©স্টিমন অনিক।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ