ব্রহ্মের ব্যাপ্তি
এক বিন্দু থেকেই অনন্তের বিস্তার আবার বিস্তারিত অনন্ত
সেই এক বিন্দুতেই সমাহিত
হয়। এই বিন্দুও শূন্য
আবার অনন্তও শূন্য। এই শূন্যই পরমব্রহ্ম।
এই শূন্য মানে প্রচলিত গাণিতিক
শূন্য নয়, এই শূণ্য
মানে অনন্ত অর্থাৎ মহাশূন্য।
এই বিষয়ে পবিত্রে বেদের একটি মন্ত্র রয়েছে।
"জ্ঞানি
ব্যাক্তিরা সেই পরমাত্মাকে জ্ঞান
দৃষ্টিতে দর্শন করেন যার মধ্যে
এই সমগ্র জগত অাশ্রয় গ্রহণ
করেছে। তাঁর মধ্যেই এই
সমগ্র জগত একত্রে মিলিত
হয় এবং তাঁর মধ্যেই
তা বিছিন্ন হয়।"
- যজুর্বেদ
(৩২/৮)
দ্বিতীয়
মুণ্ডকের প্রথম খন্ডের ২৩ নং মন্ত্রে
এই বিষয়ে একটা বিশ্লেষণ আছে।
প্রজ্জ্বলিত
অগ্নি হতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সকল
বের হয়ে যেমন আবার
অগ্নিতেই ফিরে যায় তেমন
অক্ষর ব্রহ্ম হতে অসংখ্য জীব
জন্ম নিয়ে আবার ব্রহ্মেই
বিলীন হয়। স্ফুলিঙ্গগুলো যেমন
অগ্নিরই অংশ এবং অগ্নিরই
স্বরূপ সেরকম জীবগণও ব্রহ্মেরই অংশ এবং ব্রহ্মেরই
স্বরূপ। কিন্তু 'অংশ' শব্দ সাধারণত
যে অর্থে ব্যবহৃত হয় সেই অর্থে
ব্রহ্মের কোন অংশ হতে
পারে না কারণ ব্রহ্ম
অবিভাজ্য। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক জীবই ব্রহ্মের এক
একটি পরিচ্ছন্ন রূপ, ব্রহ্মের অনুপ্রকাশ।
স্ফুলিঙ্গগুলো
যেমন অগ্নিকে আশ্রয় করে থাকে, অগ্নির
আশ্রয় ব্যতীত থাকতে পারে না সেরূপ
ব্রহ্মের আশ্রয়ে বিদ্যমান, ব্রহ্ম থেকে স্বতন্ত্র হয়ে
জীব থাকতে পারে না।
এই বিষয়ে শ্রীমদভগবদগীতার অষ্টম অধ্যায়ের ১৮ নং শ্লোকে
বলা হয়েছে।
"অব্যক্তাদ্ব্যক্তয়ঃ
সর্বাঃ প্রভবন্ত্যহরাগমে৷
রাত্র্যাগমে
প্রলীয়ন্তে তত্রৈবাব্যক্তসংজ্ঞকে৷৷"
অর্থ:
ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত আকৃতি বিশিষ্ঠ বস্তু অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয়
এবং ব্রহ্মার রাত্রীর আগমনে তা পুনরায় লয়
প্রপ্ত হয়।
★অনাদি,
অনন্ত, সর্বব্যাপী ব্রহ্মকে রাখব কোথায়?
বেদান্ত
বিশ্লেষণঃ
ঈশ্বর
সর্বজ্ঞ ও সর্ববিদ অর্থাৎ
সাধারণভাবে এবং বিশেষভাবে সবকিছুই
জানেন। এই জগতের সৃষ্টি,
স্থিতি ও লয় সবকিছুই
ঈশ্বরের মহিমা। তিনিই চন্দ্র ও সূর্যকে ঘূর্ণায়ময়ান
রেখে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর ব্যালেন্স রক্ষা করতেছে, তিনিই সমস্ত নদীকে প্রবাহিত করে সমুদ্রে মিলিত
করতেছে, তিনি ঋতুসমূহকে নিয়ন্ত্রণ
করতেছে।
ব্রহ্ম
মানুষের হৃদকুঠুরে চৈতন্যরূপে সর্বদা অভিব্যক্ত আছেন। তাই এই হৃদপিন্ডকে
বলা হয় ব্রহ্মপুর। এই
ব্রহ্মপুরে যে বিশাল শুণ্যস্থান
আছে সেটাই হৃদাকাশ। এই হৃদাকাশেই যোগীগন
আত্মাকে জ্যোতিরূপে উপলব্ধি করেন। হৃদাকাশ ভিন্ন এই অনন্ত, অনাদি
ও সর্বব্যাপী ব্রহ্মকে আর কোথায় প্রতিষ্ঠা
করা সম্ভব?
-মুণ্ডকোপনিষদ
(২/২/৩৯)
মন্তব্যঃ
ব্রহ্মকে উপলব্ধি করতে হলে শুদ্ধ
জ্ঞাননেত্র আবশ্যক। শুদ্ধ জ্ঞাননেত্রকে উন্মুক্ত করতে হলে মনের
লাগাম টানা আবশ্যক কারন
যে মনে উগ্রতা, অসম্মান
ও অশ্রদ্ধা বিদ্যমান সেই মনরূপী হৃদাকাশে
ব্রহ্মের স্থান হয় না।
এই গভীর দর্শন বুঝতে
হলে হৃদাকাশকে বিশাল করতে হবে, বিশাল
শূণ্যকে মহাশূন্যে নিয়ে যেতে হবে।
তাই
ত কবি দ্বিজভূষণ লিখেছেন,
"ওরে
ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
ক্ষ্যাপা
ছেড়ে দিলে সোনার গৌর
আমরা
আর পাব না, আর
পাব না -
তোমায়
হৃদ মাঝারে রাখিব, ছেড়ে দেব না!
তোমায়
হৃদ মাঝারে রাখিব, ছেড়ে দেব না!"
©স্টিমন
অনিক।
0 মন্তব্যসমূহ