ধর্ম, ইজম নাকি রিলিজিয়ন কোন পথে হাটছেন?

 



ধর্ম, ইজম নাকি রিলিজিয়ন কোন পথে হাটছেন?

প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে ধর্ম, ইজম/মতবাদ রিলিজিয়ন/বিশ্বাস কিন্তু এক নয়।

ধর্মঃ ধর্ম সেটা যেটা আমরা ধারণ করি অর্থাৎ আমার মধ্যেকার বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ করবে আমার ধর্ম কি!

ধর্ম /

ধৃ + মন্ /

ধর + মন্ /

ধরন্ + মনন্

আমার মনের ধরন/ধারণা।

আমার মনে তথা নিজের মধ্যে যা ধারণ করি, সেটাই আমার ধর্ম। ধর্ম আমার নাম কিংবা উপাধিতে নয় বরং আমার আচরণে প্রকাশ পাবে৷

ইজমঃ ইজম তথা মতবাদ হচ্ছে একটা স্পেসিফিক আদর্শগত দলবদ্ধ সংগঠন৷ এখানে একজন স্পেসিফিক ব্যাক্তির আদর্শকে উপজীব্য করে এগিয়ে যাওয়া হয় এবং সেই আদর্শিক গুরু বা মেন্টরকে সবকিছুর উর্ধে ভাবা হয়।

রিলিজিয়নঃ এরপর আসে রিলিজিয়ন তথা বিশ্বাস৷ মতবাদের চুড়ান্ত স্তর হচ্ছে রিলিজিয়ন তথা বিশ্বাস। কখনো কখনো উত্তরাধিকারসূত্রে সরাসরিই বিশ্বাস জন্ম নেয়৷ রিলিজিয়নে কোন যুক্তি খাটে না বিশ্বাসই মুখ্য। ঈশ্বর একজন আছেন তিনি সবকিছুর মালিক আমার পূর্বপুরুষ সঠিক ছিল তাই আমিও সেই বিশ্বাসে আছি এটাই হচ্ছে রিলিজিয়ন।

শাব্দিক বলেন কিংবা বিশ্লেষণগত মাপকাঠিতেও ধর্ম আর রিলিজিয়ন সম্পূর্ণ আলাদা।

ধর্ম কিভাবে এলো?

প্রাচীন মানুষরা জীবনের প্রথম দিন থেকেই ধর্মে আবদ্ধ৷ সংঘবদ্ধ বসবাস, পশুশিকার থেকে পশুপালন সবই তারা ধারাবাহিকভাবে ধারণ করে করে বিবর্তনের শিকার হয়েছে। যারা গুহামানব ছিল তারা প্রকৃতিকে রক্ষাকর্তা মানত এবং প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল তারা কোন মতবাদে না গিয়ে সরাসরি রিলিজিয়ন তথা বিশ্বাসে চলে গিয়েছিল।

এখন যদি ধর্মকে সার্বজনীন হিসেবে চিন্তা করি অর্থাৎ প্রত্যেকের জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা তবে পরমেশ্বর সমগ্র মানবজাতির জন্য একটা স্পেসিফিক নির্দেশনা তথা জ্ঞানের প্রকাশ পাঠিয়েছেন বেদ আকারে৷ বেদ পেয়ে সমাজ সংসার জ্ঞানের আলোয় সমৃদ্ধ হলো। তখন থেকে ভেদ একটাই ধর্ম অধর্ম। যেহেতু বেদ ছিল সরাসরি পরমেশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত মানবিক ধর্ম তাই এটার নাম হলো সনাতন ধর্ম। সনাতন বলতে বুঝানো হয়েছে চিরন্তন। অর্থাৎ যেটা ছিল, আছে থাকবে। এরপর সেই ধর্ম সমাজের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল। কেউ ধর্মকে বেছে নিয়েছে কেউ অধর্মকে আবার কেউ কোনটাই নয়। তারপর ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করার মনোভাব তৈরী হলো। একেকজনকে কেন্দ্র করে তৈরী হলো মতবাদ তথা ইজম। মুসাকে কেন্দ্র করে ইহুদিজম, ইসাকে কেন্দ্র করে খ্রস্টানিজম , মোহাম্মদ (সাঃ) কে কেন্দ্র করে ইসলামিজম। এবং নতুন মতবাদ আসার পরবি ইনারা প্রত্যেকে পূর্ববর্তীকে বাতিল করেছে। এইটা হচ্ছে আব্রাহামিক ধারা। পরবর্তীতে অনুসারীদের বিশ্বাসের কারণে সবগুলো এখন রিলিজিয়ন হয়ে গেছে৷

অন্যদিক সনাতন থেকে জন্ম নিল হিন্দুইজম, বুদ্ধইজিম, জৈনজম। এগুলোও প্রথমে মতবাদ থেকে এখন পূর্ণাঙ্গ রিলিজিয়নে রূপ নিয়েছে। হিন্দুইজম থেকে আবার নতুন নতুন ইজমের শুরু হয়েছে গুরুইজমের নামে৷ কেউ কেউ গুরুইজমের নামে আলাদা রিলিজিয়নও বের করে ফেলছে। শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলোকেও অনেকে নিজ মতবাদের নামে প্রচার করে ইজম তথা গুরুইজমের বিস্তার করছে ফলে প্রকৃতি সনাতন থেকে সনাতন সমাজ দূর থেকে দূরেই চলে যাচ্ছে।

ইজম রিলিজিয়ন অনেক এসেছে, আসতেছে আসবে কিন্তু ধর্মই একটাই সেটা হচ্ছে সনাতন ধর্ম। এই বিষয়টা অনুধাবন না করতে পারলে হাজার হাজার ইজম রিলিজিয়নের ভীরে প্রকৃত সনাতনই হারিয়ে যাবে।

এই বিষয়গুলো উপলব্ধি করা দরকার। সনাতনের অন্তর্ভুক্ত সকল ইজমের সমন্বয়ের ভিত্তিতে বৃহত্তর সনাতন ঐক্যের প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকে ইজম রিলিজিয়নে আবদ্ধ না থেকে নিজেকে ধর্মের প্রতি সমর্পন করি। আমি যদি ধর্মের হই তবেই ধর্ম আমার হবে। শাস্ত্রীয় শব্দগুলোকে পুথিতে সীমাবদ্ধ না রেখে সেটাকে উপলব্ধি করে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারলে সেটাই হবে ধর্ম।

©স্টিমন অনিক।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ