শাস্ত্রোক্ত শব্দসকল ও শব্দের গভীরতা


 

💠শাস্ত্রোক্ত শব্দসকল ও শব্দের গভীরতা।💠

 

শব্দ সর্বদাই শক্তিশালী। শব্দের সঠিক অর্থ করতে হলে শব্দের গভীরতা অনুধাবন করা আবশ্যক বলে মনে করি। প্রাচীন বিজ্ঞানীরা যখন বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন সূত্র আবিস্কার করেছিলেন সেগুলো লিপিবদ্ধ করে গেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা সেসকল সূত্রের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেই রকেট, ঘড়ি, টেলিভিশন, মুবাইলফোন, কম্পিউটার আবিস্কার থেকে শুরু করে আরও অনেক নিত্যনতুন ধারণার জন্ম দিয়ে গেছেন সেসব সূত্র প্রয়োগ করে ভবিষ্যতে হয়ত আরও অনেককিছুই আবিস্কার হতে থাকবে৷ জ্ঞানের উৎকর্ষতার জন্য ভাবনাকে প্রতিনিয়ত সঞ্চারণশীল রাখতে হয়। সংকীর্ণ কিংবা আবদ্ধ চিন্তাভাবনা দিয়ে শব্দসকলের গভীরতাও বুঝা যায় না এবং কল্যাণকর নতুন কিছুর জন্মও দেওয়া যায় না। শাস্ত্রোক্ত শব্দসকলের গভীরতাও অনুধাবন করা আবশ্যক, বৈখরী বাকে চিন্তন করলে শাস্ত্রে কেবল কতকগুলো শব্দই মিলবে মাত্র।

 

🔸 এবার একটা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

 

আমার এক ছোটভাই আমার পরামর্শেই কিছুদিন আগেই শাস্ত্র অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেছে৷ আমি যেহেতু নিয়মিতই শাস্ত্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি তাই সে আমাকে প্রশ্ন করল, "দাদা, তুমি নিজের মত করে এসব কি লিখো শাস্ত্রে ত এসব লিখা খুজেও পাই না।" আমি তাকে বললাম ভ্রাতা শাস্ত্রের বাইরে কেন হবে, শাস্ত্র থেকেই ত লিখি। সে বলল, "মূলশাস্ত্রে তোমার লিখার অনেক কিছুই পাই না। নাটরাজ, শিবলিঙ্গ টাইপের লিখা লিখো যেগুলো মূল শাস্ত্র খুজেও পাই না।"

 

ভ্রাতা কিন্তু আমার আসলে ঠিকই বলেছে। আসলেই কিন্তু ভাবনার বিষয় বটে। শুনেছিলাম রকেট উৎক্ষেপণের মূলসূত্র নিউটনের গতির তৃতীয়সূত্র। অনেক খুজেও সেই সূত্রে রকেট নাম ত দূরে থাক রকেট আকৃতির কোন বস্তুরও কল্পনা করতে পারলাম না৷ ভাগ্যিস বার্নার ফন ব্রাউনের ভাবনাটা সূত্রের শব্দসকলেই আবদ্ধ ছিল না। নিউটনের এই তৃতীয় সূত্র কেবল রকেট উৎক্ষেপনেই সীমাবদ্ধ নেই বরং আরও অসংখ্য বিষয়ে ও আবিস্কারে এই সূত্রের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।

 

🔸 এখন শাস্ত্রতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা যাক।

 

বেদ-উপনিষদের ভাষ্য তথা শাস্ত্রার্থ চার রকমের। বৈখরী, পশ্যন্তী, মধ্যমা ও পরা। বৈখরী বাক বেদার্থের অত্যন্ত স্থুল রূপ। উদাহরণস্বরূপ, বৈখরী বাকে বেদের অগ্নি মানে আগুন। পশ্যন্তী বাকে অগ্নি মানে জীবের তপস্যার তেজ। মধ্যমা বাকে অগ্নি মানে পরমাত্মার তেজ। আর পরা বাকে বেদের অগ্নি মানে স্বয়ং পরমাত্মা। আবার বেদের মধু মানে মৌমাছির সঞ্চিত রস তরল বলা হয়েছে। আসলে মধ্যমা বাকে মধু মানে তপস্যার ফল অমৃতত্ব, পশ্যন্তী বাকে মধু মানে পরমাত্মাপ্রাপ্তির সুখ, পরা বাকে মধু মানে স্বয়ং পরমাত্মার একটা বৈশিষ্ট্য। মধ্যমা, পশ্যন্তী ও পরা বাকগুলোতে শব্দার্থগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আধার-আধেয় সম্পর্ক।

 

🔸 এবার চলুন শাস্ত্রীয় কিছু মন্ত্র ও উপাখ্যানের তথাকথিত অশ্লীলতা নিয়ে আলোচনা করা যাক। 

যদিও প্রত্যেকের চিন্তা তাদের স্বতন্ত্র রূপ প্রকাশ করে তাই শাস্ত্রের তথাকথিত অশ্লীলতা সত্যিকার অর্থে আপেক্ষিক। পিতার সাথে মাতার মিলনে সন্তান জন্ম হয়, একইভাবে পুরুষের সাথে প্রকৃতির মিলনে মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছে৷ যেমন স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তথা বৈখরী বাকে শিবলিঙ্গ হচ্ছে নারী ও পুরুষের যৌনমিলনের প্রতীক। আরেকটু গভীরে গেলে পাওয়া যাবে পুরুষ ও প্রকৃতির মিলন। এবার তত্ত্বটা আরও গভীরে গিয়ে মেলালে সৃষ্টিতত্ত্ব মিলে যায়।

 

🔘 পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তাই বলছেন,

 

"হে ভরত, ব্রহ্ম এই জড় জগতের উৎপত্তির কারণ, এবং সেই ব্রহ্মে আমি গর্ভদান করি ফলে সর্বভূতের সৃষ্টি হয়।

হে কৌন্তেয়, সমস্ত যোনিতে যত মূর্তি প্রকাশিত হয় ব্রহ্মরুপ যোনিই তাদের জননী স্বরুপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারী পিতা।"

- শ্রীমদভগবদগীতা (১৪/৩-৪)

 

কিন্তু কেউ কেউ শিবপুরাণে খুজে পান চরম অশ্লীলতা। শিব মহাপুরাণের ধর্ম সংহিতার ১০/৭৮-৮১ নং শ্লোক দেখিয়ে সেখানে উনারা মহেশ্বর শিবের অশ্লীলতা খুজে পান। চলুন দেখে নেই সেখানে কি লেখা। শিবলিঙ্গের উৎপত্তি নিয়ে ও তার পূজা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা দেওয়া আছে। বস্তুত এই বর্ণনা গুলি সাধারণ দৃষ্টিতে ভিন্ন লাগলেও, দর্শনগত ও তত্ত্বগত দিক থেকে এগুলি কোনোটিই আলাদা নয়। শিবলিঙ্গের ধারণাটি এসেছে শৈবদর্শনের উপরে আধারিত ব্রহ্মতত্ব ও যোগদর্শনের উপরে আধারিত কুণ্ডলীনিতত্ত্বের ভিত্তিতে৷ তাই এই দুটি তত্ত্বের বিচারে শিবলিঙ্গের ব্যাখ্যা গুলি করা হয় এবং শিবলিঙ্গ সম্পর্কিত পৌরাণিক উপাখ্যান গুলির অন্তর্নিহিত অর্থ উক্ত দুটি তত্বের বিচারেই নির্ণয় করা হয়।

 

তাহারা শিবপুরাণ খুলে দেখায় মহেশ্বর শিব নাঙ্গা হয়ে শরীরে ভস্ম মেখে দারুবনে অস্বাভাবিক অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। যদি এটির অলৌকিক বা দৈবিক দৃষ্টিকোণ সাপেক্ষে বিচার করি তবে পাবো সম্পূর্ণ ঘটনাটি যোগ দর্শনের কুণ্ডলীনি সম্পর্কিত তথ্যকেই অন্তর্নিহিত করেছে। এছাড়া ইহা অপর একটি দৃষ্টান্ত, যে শিব মায়ার বিস্তার করে ভস্মভূষিত নাঙ্গা যোগীর বেশই ধারণ করেছিলো। এই কুণ্ডলিনী কোনো মানব শারীর সংস্থাজনিত অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ নয়! বরং ইহা শরীরের অন্তর্গত স্নায়ুতন্ত্র এবং স্নায়ুগ্রন্থী, যোগবিদ্যা ও বিভিন্ন দর্শনগত মতবাদের উপরে প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্ব যাকে শরীরের মধ্যে খালি চোখে দেখা না গেলেও, ইহা চরম সত্যের ন্যায় নিজের অস্তিত্বকে প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ করে। আর যদি ব্রহ্মতত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ করি তবে তিনি তাঁর ভ্রম ও মায়া দ্বারা শিবভক্ত ঋষিদের পরীক্ষা করতে এসেছিলেন যারা তাদের আরাধ্যকে চিন্তে না পেরে ভ্রান্ত ও কোপিত হয়ে মহাদেবকে অভিশাপ দিয়ে বসলেন।

 

"শাপে বর" তত্ত্ব অনুধাবন করতে না পেরে তার দেখাল সামান্য ঋষিদের অভিশাপে পরমেশ্বর শিবের লিঙ্গ ভূপাতিত হলো!

 

🔸 এখন মূলধারচক্রের সাহায্যে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।

 

মূলাধারে চতুষ্কোণ পৃথ্বীমণ্ডল এবং এই মণ্ডলাংশে ব্রন্দাস্থান ও ইন্দ্রস্থান থাকলেও এই। লিঙ্গ এক ত্রিকোণমণ্ডল ছাড়া কোথাও অবস্থান করে না। ত্রিকোণমণ্ডল হল যোনিপীঠে প্রতিক, আর এই পীঠই হল দেবী উমা বা দেবী পার্বতীর প্রতিক, রুদ্রহদয়োপনিষদের ২৩ নং শ্লোক এর উল্লেখ আছে।

 

মূলধারচক্র হল মানব দেহের আধার স্বরূপ এবং এই চক্র স্থিত লিঙ্গকে বেষ্টন করে কুণ্ডলীনি শক্তি বিরাজিত থাকে, যা চিৎশক্তি স্বরূপ। তাই এই লিঙ্গ মানুষের সুখ শান্তিকে প্রভাবিত করে। অর্থ্যাৎ, অলৌকিক বা দৈবিক দৃষ্টিকোণ সাপেক্ষে উপাখ্যানটিকে বিচার করলে পাওয়া যাচ্ছে, এই উপাখ্যানে বর্ণিত শিবের লিঙ্গের ভূপতিত হওয়া বলতে এখানে মূলাধার চক্রস্থিত স্বয়ন্তুলিঙ্গ স্থিত সত্তার স্থানচ্যুতকে বোঝানো হয়েছে। খষিদের অভিশাপ হল এই স্থানচ্যুতের কারন মাত্র, আর যখন এই লিঙ্গস্থিত সত্তাটির স্থানচ্যুত হয়, তখন ইহা সহস্রার চক্রের ত্রিকোণমণ্ডল বা শক্তিমণ্ডল (দেবী পার্বতীর আরেক স্বরূপ) ছাড়া আর অন্য কোথাও স্থির হয় না। তাই ইহা স্বাধিষ্ঠান চক্র স্থিত বরুণমণ্ডল, মণিপুর চক্র স্থিত বহ্নিমণ্ডল, অনাহত চক্র স্থিত বায়ুমণ্ডল, বিশুদ্ধ চক্র স্থিত আকাশ মণ্ডলকে ভেদ করে যাত্রা করে, কিন্তু স্থিরতা লাভ করে না। এরজন্য পৌরাণিক উপাখ্যান স্থানচ্যুত লিঙ্গটি ত্রিলোক ভ্রমণ করছে কিন্তু স্থিরতা লাভ করতে পারে নি। এখন এই বিষয়ের গভীরতা অনুধাবন করলে রুদ্ররূপ মহেশ্বরের লিঙ্গ স্থিত হয় মাতা পার্বতীর যোনিপিঠে৷ গভীর তাৎপর্য হলো পুরুষ ও প্রকৃতির মিলনে সৃষ্টির উৎপত্তি ও ভারসাম্য।

 

তবে কি আমরা ফেলাসের পুজা করি?

 

একদম না। সনাতন দর্শনে এহেন সংকীর্ণ ভাবনার স্থা নেই। আমরা আসলেই তত্ত্বের পুজা করি। কি সেই তত্ত্ব?

 

শিবলিঙ্গের সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে। আর একেবারের উপরের অর্ধ-উপবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে। বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরিপিঠ, যা মূলত যোনিপ্রতীক। এই তিনটি অংশই পরস্পর সমান তথা এক-তৃতীয়াংশ।

 

এখন যদি শিবলিঙ্গের গঠনের দিকে তাকাই। ব্রহ্মই সকল সৃষ্টির কারন তাই শিবলিঙ্গের একদম নিচে হচ্ছে ব্রহ্মভাগ। ব্রহ্মভাগে গর্ভদান করেন শ্রীবিষ্ণু অর্থাৎ ব্রহ্মরুপ যোনিতেই তিনি সৃষ্টির বীজ বপন করেন তাই শিবলিঙ্গের বিষ্ণুভাগে প্রতিষ্ঠিত হয় গৌরিপিঠ তথা যোনিপ্রতিক। ইহাই জননীস্বরুপা প্রকৃতি। অতঃপর সৃষ্টি হয় মহাবিশ্ব তথা শিবভাগের৷ মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি পুঞ্জিভূত এই শিবভাগে।

খুব স্পষ্ট করে দেখলে শিবলিঙ্গের উপরে স্থাপিত এই শিবভাগের আকৃতি কিন্তু পুরুষের জননাঙ্গের মত নয়, এটা মহাবিশ্বের আকৃতির ন্যায় উপবৃত্তাকার।

 

শিবলিঙ্গের তিনটা অংশের একদম নিচে ব্রহ্মা, মাঝখানে বিষ্ণু ও একদম উপরে অর্ধ-উপবৃত্তাকার আকৃতিতে শিব। সম্পূর্ণ লিঙ্গের আকৃতি উপবৃত্তাকার। উপবৃত্তাকার আকৃত অনন্ত মহাবিশ্বকে প্রকাশ করে। এই উপবৃত্তাকার আকৃতির লিঙ্গ একাধারে সৃষ্টি ও ধ্বংসকে নির্দেশ করে।

 

🔵 এই বিষয়ে যজুর্বেদ ৩২/৮ মন্ত্রে বলা হয়েছে,

 

"জ্ঞানি ব্যাক্তিরা সেই পরমাত্মাকে জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন যার মধ্যে এই সমগ্র জগত অাশ্রয় গ্রহণ করেছে। তার মধ্যেই এই সমগ্র জগত একত্রে মিলিত (সংকুচনশীল মহাবিশ্ব/ধ্বংস) হয় এবং তার মধ্যেই তা বিছিন্ন (সম্প্রসারণ মহাবিশ্ব/সৃষ্টি) হয়।"

 

শিবের চারপাশে রেনুকার স্থলে যখন রুদ্রাণী (ধ্বংসাত্মক প্রকৃতি) অবস্থান করে তখন শিবের রুদ্ররুপের প্রকাশ ঘটে তথা মহাবিশ্বের ধ্বংস (সংকোচন) শুরু হয় এবং আবারও একই বিন্দুতে মিলিতে হয়। এজন্যই শিবের রুদ্ররূপকে বলা হয় সংহারকর্তা।

 

অর্থাৎ শিবলিঙ্গ হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরই প্রতিকীরূপ তথা পরমেশ্বরের পূর্ণপ্রতীক। একটা শিবলিঙ্গ দ্বারাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশকে সঙ্গায়িত করা যায়।

 

মহাবিশ্বের এই প্রক্রিয়া চলমান তাই শিবের না আছে জন্ম, না আছে মৃত্যু। রেনুকার প্রভাবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তথা সৃষ্টি আর রুদ্রাণীর প্রভাবে মহাবিশ্বের সংকোচন তথা বিনাশ।

 

🔵 এজন্যই শ্রীমদভগবদগীতায় অষ্টম অধ্যায়ের ১৯ ও ১৮ নং শ্লোকে বলা হয়েছে।

 

"হে পার্থ, সেই ভূত সমুহ পুণঃ পুণঃ উৎপন্ন হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রি সমাগমে লয়প্রাপ্ত হয়।"

 

" ব্রহ্মার দিনের সমাগমে সমস্ত আকৃতি বিশিষ্ঠ বস্তু অব্যক্ত থেকে অভিব্যক্ত হয় এবং ব্রহ্মার রাত্রীর আগমনে তা পুনরায় লয় প্রপ্ত হয়।"

 

🔸 বেদেও অলংকারিক মন্ত্রের অনেক প্রয়োগ আছে৷

 

ঋগবেদের ১০ম মন্ডলের ৮৫নং সুক্তের ৬-১৬ মন্ত্রগুলোতে সূর্যের মেয়ে সূর্যার সোমের সাথে বিয়ে, বিয়েতে অশ্বিনীগণের বরযাত্রী হিসেবে আগমন, রথে চরে সূর্যার পতিগৃহে গমন, প্রশংসা স্তোত্র দ্বারা রথের অক্ষ, স্তোত্রের ছন্দ দ্বারা সূর্যার মাথার ঘোমটা। তাছাড়া রৈভি মন্ত্রসমুহ নববধূর উপহার এবং নারাশংসী মন্ত্রসমুহে নববধূর অলংকার, সৌভাগ্য ও মহিমা ব্যাক্ত করা হয়৷ এই অলংকারিক মন্ত্রের সাহায্যে সূর্যের প্রকাশ ভোর হতে রাত্রীর হিসেব নিকেশ তথা আহ্নিক গতি এবং ভূমন্ডলে সূর্যের কার্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি বিবাহ বিধিও প্রণয়ন করা হয়েছে।।

 

🔳 আরেকটি বিষয় অনেকে বলে সূর্য প্রণামে আমরা কেন সূর্যের দিকে মুখ করে জল অর্পন করি, তিনি কি সেই জল গ্রহণ করে?

 

সনাতনে কৃতজ্ঞতাবোধ খুব স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। সূর্য সমস্ত জগৎ হতে জল শোষণ করেন এবং সেই জল শোধন করে বিশুদ্ধ জল হিসেবে আবার ভূমন্ডলেই বর্ষিত করেন। অর্থাৎ এই জল অর্পন কেবল কৃতজ্ঞতা থেকেই কারণ আমরা যা কিছু ঈশ্বরে অর্পন করি তিনি সেটা আরও বহুগুণে ফিরিয়ে দেন।।

 

এইজন্য শাস্ত্রের অলংকারিক মন্ত্র ও রূপক উপাখ্যানসমূহের তাৎপর্য বুঝতে হবে নাহলে শাস্ত্র অধ্যয়ন বৃথাশ্রম।।

 

ঈশ্বর কৃপা করুক। 🙏

©স্টিমন অনিক।

 

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ