সনাতন শাস্ত্র ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভ্রূণতত্ত্ব (Embryology)

 

ভ্রূণতত্ত্ব কি?

পুং-জনন কোষ (শুক্রাণু) ও স্ত্রীজনন কোষ (ডিম্বাণু) এর নিষেকের ফলে ভ্রূণের উৎপত্তি, বিকাশ ও পূর্ণতা লাভের ফলে নারীর গর্ভে (Womb) শিশুর যে জন্মপ্রক্রিয়া আধুনিক বিজ্ঞানে তাই-ই ভ্রূণতত্ত্ব হিসেবে পরিচিত।


অর্থাৎ পুরুষ যখন নারীর গর্ভে বীজ (শুক্রাণু) বপন করে সেটাই নারীদেহে বিকশিত হয়ে (ভ্রূণ) সন্তানের (জীব) জন্ম হয়। এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি এমনকি সকল জীবের সৃষ্টিও একই প্রক্রিয়ায় হয়েছে। সনাতন শাস্ত্রে এই সকল বিষয়ের মধ্যে একটি চমৎকার সমন্বয় রয়েছে যা নিচে তুলে ধরা হলো।
ভ্রুণের উৎপত্তিঃ

মহাবিশ্ব ও জগৎ সৃষ্টির চিরন্তন প্রক্রিয়াকে স্পষ্ট করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদভগবদগীতায় (১৪/৩) বলেছেন,
"মম যোনির্মহদ্ ব্রহ্ম তস্মিন্ গর্ভং দধাম্যহম্।
সম্ভবঃ সর্বভূতানাং ততো ভবতি ভারত।।"
সরলার্থঃ হে ভারত! প্রকৃতিরূপ ব্রহ্ম হলো যোনিস্বরূপ এবং সেই ব্রহ্মে (গর্ভে) আমি গর্ভাধান (বীজ) করি, যার ফলে সমস্ত জীবের জন্ম হয়।
অর্থাৎ নারীগর্ভের ডিম্বাণুতে শুক্রাণুর নিষেকের ফলেই যে জীবের জন্ম হয় সেটাই স্পষ্ট হলো গীতার এই শ্লোকে।
একই ইংগিত পাওয়া যায় মনুসংহিতার ৯/৩৩ শ্লোকে যে শ্লোক নিয়ে একদল স্থুল ভাবনায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।
"ক্ষেত্রভূতা স্মৃতা নারী বীজভূতঃ স্মৃতঃ পুমান্।
ক্ষেত্রবীজসমাযোগাৎ সম্ভবঃ সর্বদেহিনাম্।।"
সরলার্থঃ নারী হলো ক্ষেত্রস্বরূপ, পুরুষ হলো বীজস্বরূপ। জমিতে বীজ বপনে যেমন শষ্য উৎপন্ন হয় নারী ও পুরুষের মিলনে তেমন জীবের জন্ম হয়।
অর্থাৎ এখানেও ক্ষেত্রস্থ ডিম্বাণু ও বীজের (শুক্রাণু) মিলনের ফলে ভ্রূণের জন্ম প্রক্রিয়াটি প্রতিপন্ন হয় যা ভ্রূণতত্ত্বের প্রাথমিক ধাপ৷
সনাতন শাস্ত্রে যে ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের ধারণা উপমার্থে ব্যবহৃত হয় তার স্পষ্ট ইংগিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদভগবদগীতার ১৩/৩ নং শ্লোকেই দিয়েছেন, "ক্ষেত্রজ্ঞং চাপি মাং বিদ্ধি সর্বক্ষেত্রেষু ভারত..." অর্থাৎ, হে ভারত! আমাকেই সমস্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে।
সম্পূর্ণ বিষয়টি আরও চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে উপনিষদে। ঋগবেদীয় ঐতরেয় উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম খণ্ডের প্রথম মন্ত্রে (২/১/১) আছে,
"পুরুষে হ বা অরমাদিতো গর্ভো ভবতি যদেতদ্রেতঃ।
তদেতৎ সর্বেভ্যঃ অঙ্গেভ্যস্তেজঃ সম্ভূতমাত্মন্যেবাত্মানং বিভর্তি।
তদ্যতা স্ত্রিয়াং সিঞ্চত্যথৈনৎ জনয়তি। তদস্য প্রথমং জন্ম।।"
সরলার্থঃ জীব প্রথমে পুরুষ শরীরেই গর্ভ (বীজ) রূপে থাকে। পুরুষ দেহের শুক্রাণুই সে-ই গর্ভ এবং ইহা (শুক্রাণু) পুরুষ দেহের সমস্ত অবয়ব হতে উৎপন্ন তেজ। পুরুষ যখন এই শুক্রাণু স্ত্রীর দেহে সিঞ্চন করে তখন ইহাই নারীর গর্ভাশয়ে ভ্রূণ জন্ম দেয়৷ তাই পুরুষের শুক্রাণু নির্গমনই জীবের প্রথম জন্ম৷
অর্থাৎ শুক্রাণু যখন পুরুষ দেহ হতে নির্গত হয় তখনই জীবের প্রথম জন্ম হয় এবং তা নারীর দেহ সিঞ্চিত হলে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে পূর্ণতা পায় এবং ভ্রূণের জন্ম হয়।
ভ্রূণের বিকাশঃ

আধুনিক ভ্রূণবিদ্যা অনুসারে ভ্রূণে প্রথমে মুখ ও নাসারন্ধ্র দেখা গেলেও কোন চোখের উৎপত্তি হয়না। ভ্রূণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ মি.মি. হলে তাতে চোখ দেখা যায় তবে কান এর উত্পত্তি হয় আরো পরে। এইসবই হয় দ্বিতীয় মাসের মধ্যে। ৮-৯ সপ্তাহে Integumentary system অর্থাৎ ত্বকীয় তন্ত্রের এপিডার্মিস এর উৎপত্তি শুরু হয়। আবার ১৯৭২ সালে ইংল্যন্ডের গ্লাসগোতে অবস্থিত কুইনস মাদার হসপিটালের ডা. রবিনসন ডায়াসোনার এপারেটাস এর সাহায্যে প্রমান করেন যে দ্বিতীয় মাসের শেষে জড়ায়ুস্থ সন্তানের হৃদপিণ্ডের সঞ্চালন শুরু হয়।
তাহলে আধুনিক বিজ্ঞানের বর্ননা অনুযায়ী ভ্রূণ বিকাশের ক্রমটা দাড়াচ্ছে এরকম-

মুখ>ভোকাল কর্ড>নাক>চোখ>কান> ত্বক>হৃদপিণ্ড


ঐতেরেয় উপনিষদ এর প্রথম অধ্যয়ের প্রথম খণ্ডের ৪নং মন্ত্রটি দেখে নেয়া যাক।
"....যথান্ডম মুখাদ্বাগ (মুখাত্ বাক) বাচোহগ্নির্নাসিকে নিরভিদ্যেতাং নাসিকাভ্যাং প্রাণঃ প্রানাদ্বায়ুরক্ষিনী নিরভিদ্যেতামক্ষিভ্যাং চক্ষুশ্চ্ক্ষুষ আদিত্যঃ কর্ণৌ নিরভিদ্যেতাং কর্ণাভ্যাং শ্রোত্রং নিরভিদ্যত ত্বচো....হৃদয়ং নিরভিদ্যত হৃদয়া..."
অর্থাৎ, প্রথম মুখ বেরিয়ে এলো, মুখ থেকে বাক (Vocal cord) এর উত্পত্তি। এরপর নাসিকার দুটি ছিদ্র হলো (নাসারন্ধ্র, পরে চক্ষুর দুটি ছিদ্র প্রকট হলো। তারপর কর্ণের দুটি ছিদ্র বেরিয়ে এলো এবং এরপরেই চর্ম প্রকটিত হলো। তারপর হৃদয় (হৃদপিণ্ড) প্রকট হয়।
এই মন্ত্র হতে আমরা ক্রমটি পাই নিম্মরূপঃ

মুখ>বাক(Vocal cord)>নাক>চক্ষু>কান>ত্বক>হৃদপিণ্ড
আধুনিক বিজ্ঞান ও উপনিষদের মন্ত্রে ভ্রূণের বিকাশের ক্ষেত্রে একই ক্রম পরিলক্ষিত হয়। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে হাজার বছর আগে মহর্ষি মহিদাস কোনরূপ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছাড়া গর্ভাশয়ে অবস্থিত ভ্রূণের বিকাশ নিয়ে কিভাবে নিরীক্ষণ করেছিলেন?
ভ্রূণের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে আরও বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় মহর্ষি পিপ্পলদা রচিত অথর্ববেদীয় গর্ভোপনিষদে। জার্মান দার্শনিক পল ডুইসেন স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত প্রচার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যে ৬০ টি উপনিষদের জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন তার মধ্যে গর্ভোপনিষদও রয়েছে।
এছাড়াও মহাভারতের শান্তিপর্বে এবং অধ্যত্ম রামায়ণে ভ্রূণতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তবে ভ্রূণতত্ত্ব নিয়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে যথোপযুক্ত বর্ণনা পাওয়া যায় পুরাণাদি শাস্ত্রে। ভাগবত পুরাণ, মার্কণ্ডের পুরাণ ও শিব পুরাণে ভ্রূণের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে রয়েছে চমৎকার বর্ণনা। নিচের আলোচনায় সেটাই তুলে ধরা হলো।

পুরাণাদি শাস্ত্রে ভ্রূণের উৎপত্তি ও বিকাশঃ
নবজাতকের আগমনী বার্তায় যখন সকলের মন আনন্দে ভরে উঠে তার পর থেকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার অপেক্ষায় চলতে থাকে কত প্রতীক্ষা। সে ছেলে না মেয়ে, সে এখন কী করছে, এখন কতটা বেড়ে উঠলো এগুলো নিয়ে পরিবারের বিশেষত পিতামাতার কত না জল্পনা চলতে থাকে। এখন আধুনিক যান্ত্রিক বিজ্ঞানের যুগে আমরা গর্ভস্থ শিশু কোন সময় কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে পারি, কিন্তু হাজার বছর পূর্বেও আমাদের সনাতন শাস্ত্র বিশেষত পুরাণে ভ্রূণের উৎপত্তি ও ভ্রূণের ধারাবাহিক বিকাশের স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে যা নিচে তুলে ধরা হলো।
মার্কণ্ডেয় পুরাণের ১১শ অধ্যায়, শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের ৩য় স্কন্ধের ৩১তম অধ্যায় ও শিব পুরাণের ধর্ম সংহিতায় ৪২তম অধ্যায়ে ভ্রণের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে চমৎকার বর্ণনা রয়েছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের নিরীক্ষণের সাথে হুবহু মিলে যায়।
ভ্রূণের উৎপত্তি নিয়ে মার্কণ্ডেয় পুরাণের ১১শ অধ্যায়ের ১ং শ্লোকে বলা হয়েছে,
"মনুষ্য তার স্ত্রীর রজঃতে যে বীজ নিক্ষেপ করে, স্বর্গ বা নরক থেকে বিমুক্তমাত্র জীব তাকে আশ্রয় করে।"
পুরাণের এই তথ্যটি ঐতেরেয় উপনিষদের মন্ত্রের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে।
ভাগবত পুরাণেও একই কথা বলা আছে। ভাগবত পুরাণের ৩য় স্কন্ধের ৩১তম অধ্যায়ের ১নং শ্লোকে রয়েছে,
"ঈশ্বরের অধীনস্থ জীব তার নিজ কর্মের দ্বারা তাড়িত হয়, সে স্থুল দেহ ধারণের জন্য পুরুষের শুক্রাণুকে আশ্রয় করে স্ত্রীর গর্ভের দিকে গমন করে।"
শিব পুরাণে বলা হয়েছে,
"সঙ্গমকালে যখন পুরুষের শুক্রক্ষয় হয় তখন জীবগণ স্ব স্ব কর্মের বশীভূত হয়ে সুক্ষ্ম ইন্দ্রিয় পরিবৃত হয়ে শুক্রকে আশ্রয় করে স্ত্রী অঙ্গে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়।"
অর্থাৎ এই তিন পুরাণের শ্লোক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে ভ্রূণতত্ত্বের প্রাথমিক ধাপটিই এখানে স্পষ্ট হচ্ছে।
অতঃপর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে হয় নিষেক হয় যা আধুনিক বিজ্ঞানে ভ্রূনতত্ত্বের দ্বিতীয় ধাপ সেটাও আছে পুরাণে। নিষেককালে সঙ্গমের নিমিত্তে ছুটে আসা পুরুষদের শুক্রের (বীজ) সাথে স্ত্রীদের ক্ষেত্রস্থ রজের (ডিম্বাণু) মিলন হয়।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে বলা হয়েছে,
"জীবাত্মার প্রবেশ ঘটে বলে ঐ বীজদ্বয় স্থিরভাব প্রাপ্ত হয়ে যথাক্রমে বিন্দু, বুদবুদ ও পেশির আকার ধারণ করে"



এখানে ভ্রূণের পরিস্ফুটনের স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। তারপর আসে ভ্রূণের বিকাশের বিষয়টা।
ভ্রূণের পরিস্ফুটন ও বিকাশের বর্ণনায় শিব পুরাণে বলা হয়েছে,
"সেই মিশ্রণ (শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক) একদিনে আলোড়িত ও স্ফীত হয়ে পঞ্চ দিবসে বুদবুদ আকার ধারণ করে, এরপর একমাসের মধ্যে গ্রীবা, মস্তক, স্কন্দ, উদর, পৃষ্ঠ প্রভৃতি ক্রমশ প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়, দ্বিতীয় মাসে ক্রমে হৃদস্পন্দন শুরু হতে থাকে। পরের মাস থেকে হাত, পা, কটিদেশ সংঘটিত হতে থাকে, এইসময়ই ভ্রূণ মোটামুটি মানুষ আকারে আসে, তিনমাসে শরীর সন্ধি, চারমাসে অঙ্গুলি আর ক্রমে পঞ্চম মাসে মুখ, নাসিকা, কর্ণ, গুহ্য, ছয় মাসে কর্ণছিদ্র, সপ্তম মাসে পায়ু, উপস্থ, নাভি সুদৃঢ় হতে থাকে, অষ্টম মাসে কেশ, সমস্ত অঙ্গ, অবয়ব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর মাতৃনালিকা (Umbilical Chord) দ্বারা ষড় বিধু খাদ্যরস দ্বারা পরিপুষ্ট হয়ে ক্রমশ পরিবর্ধিত হতে থাকে। ভ্রূন পূর্ণ অবস্থা প্রাপ্ত হলে তার পূর্বজন্মের স্মৃতি প্রাপ্ত হয় এবং নিদ্রা ও স্বপ্নের মাধ্যমে পুনঃ পুনঃ জন্ম-মৃত্যু চক্রে ভ্রমণের কথা তার মনে পড়ে, মনে মনে ভাবে এই জন্মে নিশ্চয়ই সংস্কার লাভ করে আমি মুক্ত হবো।"

ভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণেও অনুরূপ ব্যাখাই রয়েছে।
অতঃপর শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার ব্যাপারে ভাগবত পুরাণের ৩য় স্কন্দের ৩১তম অধ্যায়ের ৮ ও ২২ং বলা হয়েছে,
"অষ্টম মাস থেকে শিশু গর্ভের বাইরে বেরুনোর জন্য মায়ের তলপেটে মাথাকে ঘোরাতে থাকে, এই সময় ঘাড় বাঁকানো অবস্থায় থাকে।"
পুরাণ শাস্ত্রের বর্ণনায় একাধিক বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

১/ পুরাণাদি শাস্ত্রে বলছে দ্বিতীয় মাসে ভ্রূণে হৃদস্পন্দ শুরু হয়। আধুনিক বিজ্ঞানেও বলা হচ্ছে ষষ্ঠ সপ্তাহে বা দ্বিতীয় মাসের শেষ দিকে ভ্রূণের হৃদস্পন্দন শুরু হয়।

২/ এছাড়া পুরাণে বলা হচ্ছে অষ্টম মাসে শিশু স্বপ্নালু অবস্থায় থাকে, যা বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত। বিজ্ঞান বলছে ৩৩তম (৮ম মাসে) সপ্তাহে ভ্রূণ মাতৃগর্ভে স্বপ্নালু অবস্থায় থাকে।

এই বিষয়ে আর‌ও জানতে এই ভিডিওটা দেখতে পারেন।

তখন স্বপালু অবস্থায় শিশুর কি হয় এই ব্যাপারে সনাতন শাস্ত্র সিদ্ধান্ত দিচ্ছে যে, এইসময় তার পূর্ব পূর্ব জন্মের কর্ম সকল মনে পরে, আর নিদারুণ গর্ভযন্ত্রণা ভোগ করে ভাবে এইবার জন্ম নিয়ে মুক্তির জন্য দৃঢ় সংকল্পে কর্ম করবে।

পূর্ব জন্মের কথা মনে করতে পারে না?
স্বপ্ন সবসময় পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা হয়। একটি শিশু ভ্রূণাবস্থায় যার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই সে কীভাবে স্বপ্ন দেখে? অর্থাৎ সে পূর্ব জন্মের অভিজ্ঞতা থেকেই স্বপ্ন দেখে। এখানে কিন্তু জন্মান্তরবাদও প্রমাণ হয়ে যায়।
তাহলে জন্মানোর পর সে আর কিছু মনে করতে পারে না কেন?
এর উত্তরে মার্কণ্ডেয় পুরাণ বলছে, "জন্মের পর সে বৈষ্ণবী মায়ার সংস্পর্শে আসে আর পূর্বের সব কিছু ভুলে যায়।"

৩/ তাছাড়া ষষ্ঠ মাসে কর্ণছিদ্রের উল্লেখ রয়েছে পুরাণে। বিজ্ঞানও বলেছে যে শিশু ছষ্ঠ মাস থেকে শুনতে পায়।


প্রাচীন সনাতনী প্রত্নতত্ত্বে ভ্রূণের উৎপত্তি ও বিকাশঃ
উপরের আলোচনায় সনাতনী বিভিন্ন শাস্ত্র হতে আমরা ভ্রূণতত্ত্ব তুলে ধরেছি। প্রাচীন ভারতে যে সত্যিই এগুলোর চর্চা হতো এবং সনাতনী ঋষিরা এগুলো নিয়ে সম্যক ধারণা রাখতেন তার স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় হাজার বছরের প্রাচীন কিছু সনাতনী মন্দিরে যা সাক্ষ্য দেয় যে প্রাচীন ভারতীয় গবেষকরা বিষয়গুলোকে কেবল শাস্ত্রেই লিপিবদ্ধ করে যান নি বরং তৎকালীন সময়ে বিজ্ঞান গবেষকদের মধ্যে সেই ভাবনার দৃশ্যায়নও করতে পেরেছিলেন।
১/ প্রায় ১,০০০ বছরের প্রাচীন মন্দির হলো বড়মূর্তিশ্বর মন্দির যা তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। সে মন্দিরের দেয়ালে ভ্রূণতত্ত্বের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপকে খোদাইয়ের মাধ্যমে দৃশ্যায়ন করে রাখা হয়েছে হাজার বছর ধরে যা আমাদের জন্য ভ্রূণতত্ত্ব নিয়ে প্রাচীন গবেষণার স্পষ্ট নিদর্শন।


২/ প্রায় ১,৩০০ বছরের প্রাচীন মন্দির হলো কাল ভৈরবনাথ মন্দির। এই মন্দিরটিও তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। এই মন্দিরে ভ্রুণের বিকাশ ও ভ্রূণের সর্বশেষ স্তরটিও দেয়ালে খোদাইয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে রাখা হয়েছে। এমনকি পরিপূর্ণ ভ্রূণের যে নাড়ী (Umbilical Chord) থাকে সেটারও স্পষ্ট ডিটেইলস পাওয়া যায় সেই মন্দিরের দেয়ালে।


৩/ এছাড়াও হাজার বছরের একটি প্রাচীন মন্দিরে নিষেকের পর প্রাথমিক ধাপে ভ্রূণের যে বিকাশ হয় সেটাও স্টেপ টু স্টেপ খোদাই করা আছে।

আধুনিক বিজ্ঞানেও অনুরূপ দৃশ্যায়ন।


আরও বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিওটা দেখতে পারেন। এই ভিডিওটা দেখার পর অবশ্য আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যাবে এবং প্রাচীন মন্দিরগুলোর খোদাইকৃত দেয়ালে অশ্লীলতা নয় বরং বিজ্ঞান দেখতে পাবেন।


বেদ, মনুসংহিতা, উপনিষদ, মহাভারত, অধ্যত্ম রামায়ণ ও পুরাণাদি (মার্কণ্ডেয় পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, শিব পুরাণ) শাস্ত্রের আলোকে ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভ্রূণের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে এতো সুন্দর বর্ণনা আর কোন ধর্ম শাস্ত্র ও সংস্কৃতিতে পাওয়া সম্ভব নয়। অথচ একদল অনাচারী এই অসাধারণ তত্ত্বের খণ্ডিতাংশ প্রচার করে সনাতন শাস্ত্রকে নিয়ে কটুক্তি করার দৃষ্টতা দেখায়। আমাদের মধ্যেও অনেকেই কোনরূপ যাচাই-বাছাই না করে সংস্কারহীনদের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করে সনাতন শাস্ত্রসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সকল শ্রেণীর সংশয় ও ভ্রান্তি নিবারণ করতেই SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটির এই প্রয়াস।

© SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি
🖋️ শ্রী অনিক কুমার সাহা
সহযোগিতায়ঃ শ্রী গৌতম দন্ডপাট
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ