ছান্দোগ্য উপনিষদের ৩/১৪/১ মন্ত্রে বলা হয়েছে,
"সর্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"
অর্থাৎ, এই সবকিছুই ব্রহ্ম কারণ সমস্ত কিছু তাঁহা হইতেই উৎপন্ন হয়, তাঁহাতেই লীন হয় এবং তাঁহাতেই জীবিত থাকে। তিনি আকাশের মত সর্বব্যাপী, অখণ্ড ও রূপাদিবিহীন। তাই বলা হয় যে মনই ব্রহ্ম, আকাশই ব্রহ্ম তথা সবকিছুই ব্রহ্ম।
ঈশ্বর যে সর্বত্র আছেন এটা পরিস্কার করার জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ভগবান নৃসিংহ দেবের আবির্ভাব।
বাস্তব জীবনের একটা গল্প বলি।
শাস্ত্রবিদ্যায় বরাবরই আমি কম পারদর্শী তাই আমি শাস্ত্রের শব্দসকলের সাথে চারপাশের পর্যবেক্ষণের একটা সমন্বয় করার চেষ্টা করি। এজন্য আমি যদি দুইটা শব্দও পড়ি সেটা মুখস্থ না করে আত্মস্থ করার প্রয়াস করি। ঘটনাক্রমে আমার এক ছোটভাই কিছু প্রশ্ন করেছিল আমাকে সেগুলো হুবুহু নিচে তুলে ধরা হলো।
🔹 অমিত (ছদ্মনাম)ঃ দাদা, ঈশ্বর কি সর্বত্রই আছেন? যদি সর্বত্রই থাকেন তবে আমরা কেন তাঁকে অনুভব করতে পারি না, দেখতে পারি না?
🔸 আমিঃ হ্যা, তিনি সর্বত্রই আছেন এবং তোমার মন যদি তাঁর প্রতি একাগ্র থাকে তবে তুমি তাঁকে সর্বত্রই অনুভব করতে পারবে। পুরাকালে হিরণ্যকশিপু নামে এক দৈত্য ছিল আর প্রহ্লাদ নামে তার শ্রীহরি ভক্ত একটা সন্তান ছিল। যেহেতু প্রহ্লাদ হরিভক্ত তাই হিরণ্যকশিপু সর্বদা নিজের সন্তানকে হত্যা করতে প্রয়াস করতেন। অসংখ্যবার হত্যা চেষ্টা চালানোর পরও শ্রীহরির কৃপায় প্রহ্লাদ প্রতিবারই বেঁচে যায়। একদিন হিরণ্যকশিপু নিজেই তার সন্তানকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন এবং প্রহ্লাদকে জিজ্ঞেস করলে তুর হরি কোথায় তাকে বল তুকে বাঁচাতে!
প্রহ্লাদ উত্তর করলেন "হরি ত সর্বত্রই আছেন, তিনি এখানেও আছেন তাই তাঁকে ডাকার কিছুই নেই, আমি সবসময়ই তাঁর শরণাগত।" হিরণ্যকশিপু তখন একটা স্তম্ভ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই স্তম্ভে আছে কি? প্রহ্লাদ উত্তর করলেন "আমার হরি সর্বত্র আছেন, দৃষ্টিসীমার ভেতরেও আছেন, দৃষ্টিসীমার বাইরেও আছেন। তিনি আমার চিন্তায়ও আছেন, চিন্তার বাইরেও আছেন। তিনি আকাশ, পাতাল, দ্যুলোক সর্বত্রই আছেন তাই তিনি এই স্তম্ভেও আছেন।"
এই কথা শুনে হিরণ্যকশিপু হাতের গদা দিয়ে স্তম্ভে আঘাত করে স্তম্ভ ঘুড়িয়ে দিলেন। সেই স্তম্ভ থেকেই বেড়িয়ে এলেন নৃসিংহরূপি ভগবান শ্রীহরি এবং হিরণ্যকশিপুকে বধ করলেন।
অর্থাৎ ঈশ্বর সর্বদা সর্বত্রই অবস্থান করেন কেবল তাঁকে খুঁজে নিতে হবে৷
🔹 অমিতঃ দাদা, এটা ত বুঝলাম। কিন্তু ঈশ্বর যদি এত ক্ষুদ্ররূপে বর্তমান হন তবে তাঁর অনন্ত রূপের কি হবে?
🔸 আমিঃ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবই পরমব্রহ্মের অনুপ্রকাশ৷ চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, জীব ও জড়ে সর্বত্র তিনিই অবস্থান করেন।
🔹 অমিতঃ অনুপ্রকাশ যদি ক্ষুদ্রপ্রকাশ হয় তবে ত সেটা অনন্ত ব্রহ্মের তুলনায় খুবই নগন্য।
🔸 আমিঃ অমিত, বলো ত এই সম্পুর্ণ পৃথিবীতে যে অনন্ত পরিমাণ অক্সিজেন আছে সেটার তুলনায় তোমার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কি নগন্য?
🔹 অমিতঃ অবশ্যই নগন্য, আমি সামান্য পরিমাণ অক্সিজেনই গ্রহণ করি যেটা অনন্ত পরিমাণ অক্সিজেন ভান্ডারের কাছে খুবই নগণ্য।
🔸 আমিঃ এই সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন যদি আমি সরিয়ে দেই তবে কি তোমার জন্য পৃথিবীর বাকী অনন্ত পরিমাণ অক্সিজেন পর্যাপ্ত হবে?
🔹 অমিতঃ দাদা কি যে বলেন! সরিয়ে দেন না, প্রমাণ হয়ে যাক!
আমি সাথে সাথে একটা পলিথিন নিয়ে অমিতের মাথাটা পলিথিন দিয়ে এয়ারটাইট করে দিলাম। মাত্র ২০ সেকেন্ডেই অমিত ছটফট করতে শুরু করল। সাথে সাথেই আমি পলিথিনটা খুলে দিলাম৷
🔹 অমিতঃ দাদা, এটা কি করলেন আপনি?
🔸 আমিঃ কেন অমিত? তুমিই ত বললে তোমার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরিয়ে নিতে। এই যে সামান্য পরিমাণ অক্সিজেনকে তুমি তুচ্ছ করলে তোমার প্রয়োজনে এই অক্সিজেনের গুরুত্ব কতটা বুঝলে ত!! সমগ্র পৃথিবীর অনন্ত পরিমাণ অক্সিজেন কিন্তু তোমার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেল। ক্ষুদ্র বলতে কিছুই নেই। ঈশ্বরের ক্ষুদ্র প্রকাশও অনন্ত ঈশ্বরের ন্যায়ই সর্ব শক্তিমান। তুমি অনন্ত ঈশ্বর দিয়ে কি করবে? তোমার প্রয়োজনে তিনি ত সর্বত্রই আছেন।
অর্থাৎ, "সর্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম" বলতে আমি এভাবেই চিন্তা করি যে তিনি সর্বত্রই সমভাবে বিরাজমান। ভগবান নৃসিংহ দেবের আবির্ভাবের এই তাৎপর্য্য।
"উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং
জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রং
মৃর্ত্যোর্মৃত্যুং নমাম্যহম্ ॥"
জয় শ্রী নৃসিংহদেব 🙏
🖋️শ্রী অনিক কুমার সাহা
প্রচারেঃ SPS শাস্ত্র গবেষণা কমিটি
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)
0 মন্তব্যসমূহ