তথাকথিত যুক্তিবাদীদের (কদার্য) লজিক্যাল ফ্যালাসিঃ

 


তথাকথিত যুক্তিবাদীদের (নাস্তিক্য) লজিক্যাল ফ্যালাসিঃ

যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান অর্থ এমন কিছু হয় যে ঈশ্বর সবকিছুই করতে পারবেন, তাহলে "omnipotent paradox" এর সমাধান কী হবে?

Omnipotent paradox:

★ঈশ্বর কি চাইলে এমন কোনো ভারি বস্তু বানাতে পারবেন যা তিনি নিজেই বহন করতে পারবেন না?
★ঈশ্বর কি চাইলে আরেকটা ঈশ্বর সৃষ্টি করতে পারবেন বা নিজেই আত্মহত্যা করতে পারবেন?
এই লজিক্যাল ফ্যালাসি নিবারণে আরও দুইটি লজিক্যাল ফ্যালাসি তুলে ধরবো প্যারডি ও গল্পের মাধ্যমে।
নাস্তিকদের লজিক্যাল ফ্যালাসি নিয়ে আমার নিজের লিখা একটি প্যারডি ও গল্প। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
🔘 রাজা আয়কান্নাকুন্নি ও পন্ডিত খোলখোল্লাহিঃ
রাজা আয়কান্নাকুন্নি (ছদ্মনাম) ছিলেন প্রবল পরাক্রমশালী যোদ্ধা। যুদ্ধক্ষেত্রে তার দ্বারা সম্ভাব্য সবকিছুই করা সম্ভব ছিলো। তিনি তার জীবদ্দশায় কোন যুদ্ধে ধরাশায়ী হন নি। একদিন তিনি তার রাজ দরবারে ঘোষণা দিলেন যে আমার মতো মহাপরাক্রমশালী যোদ্ধা এই জগতে নাই। কেউ বলুক যে যুদ্ধক্ষেত্রে সম্ভাব্য এমন কি আছে যা আমার দ্বারা সম্ভব নয় তাহলে আমি সেটাও করে দেখাবো নাহলে পরাজয় মেনে নিবো।। এই খবর শুনে বিপক্ষ দলের পরামর্শক পন্ডিত খোলখোল্লাহি (ছদ্মনাম) তার রাজাকে ঘোষণা দিলেন যে, রাজা আয়কান্নাকুন্নিকে পরাজিত করার মারণাস্ত্র এখন আমার হাতে, আমি আমার পান্ডিত্য দিয়ে তার রাজ সভায়ই তাকে পরাজিত করে ফিরবো। এই বলে গর্বের সাথে নিজের মাথায় নিজেই টুংটাং টোকা দিতে দিতে রাজা আয়কান্নাকুন্নির রাজ দরবারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো পন্ডিত খোলখোল্লাহি। পন্ডিত খোলখোল্লাহির মনে চাপা আনন্দ যে আজ রাজা আয়কান্নাকুন্নির পরাজয় নিশ্চিত।।
পন্ডিত খোলখোল্লাহি রাজ দরবারে গিয়ে রাজা আয়কান্নাকুন্নিকে প্রশ্ন করলো আপনি ঘোষণা দিয়েছেন যে যদি আপনাকে জানানো হয় যে যুদ্ধক্ষেত্রে কি এমন সম্ভাব্য ঘটনা আছে যা আপনি আজও করতে পারেন নি সেটা আপনাকে কেউ জানালে আপনি হয় সেটা করে দেখাবেন নাহলে পরাজয় মেনে নিবেন।। যুদ্ধক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঘটনার মধ্যে পরাজয়ও একটা সম্ভাব্য ঘটনা অর্থাৎ কোন যুদ্ধে কেউ না কেউ পরাজিত হবে এটা নিশ্চিত। আমার জানামতে আপনি এখন অব্দি কোন যুদ্ধে পরাজিত হন নি তাই আপনি এই ঘটনাটি ঘটিয়ে দেখান নাহলে আমি মহাপন্ডিত খোলখোল্লাহির সামনে পরাজয় স্বীকার করে নিন।
রাজা আয়কান্নাকুন্নি খুব বিমর্ষ চেহারা করে খোলখোল্লাহির সামনে আসতে শুরু করলেন এবং খোলখোল্লাহি মনে মনে জয়োল্লাসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে যা ঘটলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না মহাপন্ডিত খোলখোল্লাহি। রাজা আয়কান্নাকুন্নি কাছে এসেই পন্ডিত খোলখোল্লাহির কানের ঠিক নিচে সপাটে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন এবং বললেন যে তুমি কোথায় শুনেছো একজন পরাক্রমশালী যোদ্ধা যার জীবদ্দশায় আজ অব্দি কোন যুদ্ধে ধরাশায়ী হওয়ার ঘটনা নেই যুদ্ধক্ষেত্রে তার পরাজয়ের সম্ভাব্যতা থাকবে? আমি যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজিত মহাযোদ্ধা তাই আমার যুদ্ধে পরাজয়ের সম্ভাব্যতা শূন্য।। দূর হও এখান থেকে অকালকুষ্মাণ্ড, এই বলে রাজা আয়কান্নাকুন্নি পন্ডিত খোলখোল্লাহিকে রাজ দরবার থেকে বের করে দিলেন।।
পন্ডিত খোলখোল্লাহি আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছে আর ভাবছে, এই কি হলো! এই কি হলো! 🙄
🔘 অনিস্ক ও নরাধিমার গল্পঃ
মারিধরো গ্রামে অনিস্ক ও পাশের গ্রামে নরাধিমার বসবাস। অনিস্ক চমৎকার সব কাঠের ভাস্কর্য বানাতো, অনন্য তার স্থাপত্যশৈলী। অনিস্ক একদিন বিশাল এক অনিন্দ্যসুন্দর কাঠের ভাস্কর্য ও একটি কাঠের চারতলা বাড়ী বানালো। আশেপাশের সব এলাকায় সাড়া পড়ে গেলো অনিস্কের স্থাপত্যকর্মের, সবাই তাকে মহান শিল্প স্রষ্টা নামেও ডাকতে শুরু করলো।
ঠিক সেই মুহুর্তে মারিধরো গ্রামে আগমন হলো নরাধিমার। নরাধিমার মনে দ্বেষ জন্মালো অনিস্কের স্থাপত্যকর্ম দেখে এবং সে দাবী করলো এই শিল্পকর্ম অনিস্কের না।
অনিস্ক ও নরাধিমার সাক্ষাৎ হলে নরাধিমা অনিস্ককে জিজ্ঞেস করলো এই স্থাপত্যগুলো তোমার হলে তুমি ত মহাশক্তিধর কারণ এত বড় বড় ভাস্কর্য ত সাধারণ মানুষের দ্বারা বানানো সম্ভব না। অনিস্ক তার কারণ জানতে চাইলে নরাধিমা বললো যে তাহল তুমি এগুলো মাথায় তুলে দেখায় ত অথবা ধ্বংস করে পুনরায় নির্মাণ করে দেখাও।
অনিস্ক এবার সপাটে এক ঘা বসিয়ে দিলো নরাধিমার গালে।তারপর অনিস্ক বললো যে বড় বড় স্থাপত্য বানানো হয় মানুষের দর্শন কিংবা ব্যবহারের জন্য সেগুলো মাথায় নিয়ে ঘুরে-বেড়ানোর জন্য নয়। স্থাপত্য বানিয়ে সেটা ভেঙে ফেলা মূর্খের কাজ, আমার স্থাপত্যশৈলীর প্রমাণ দিতে একই স্থাপত্য আমি পুনরায় নির্মাণ করতে পারি। তুমি দূর হও হে পাখন্ডি কারণ মূর্খের কাছে শিল্পীর যোগ্যতার প্রমান দিতে নেই।
আমাদের চারপাশে পন্ডিত খোলখোল্লাহি ও নরাধিমাদের আনাগোনা বাড়ছে এবং বাড়ছে এদের লজিক্যাল ফ্যালাসি। এদেরকে গুরুত্ব দিলেই ভাববে এরা বড় যুক্তিবাদী তাই রাজা আয়কান্নাকুন্নি ও স্থপতি কনিস্কের মতো হাতের ব্যবহার বাড়িয়ে কেবল সপাটে মারতে হবে ঠিক কানের নিচে (রূপক অর্থে)।।

হিরণ্যকশিপুর ঘটনাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন কেউ?

হিরণ্যকশিপুকে না ঘরের বাইরে মারা যাবে না ভিতরে, তাকে না কোন দেবতা না কোন যক্ষ না কোন কিন্নর না কোন পশু না কোন মানুষ মারতে পারবে। তাকে না রাতে মারা যাবে না দিনে। তাকে না ভূমিতে মারা যাবে না আকাশে। এরকম আরো অনেক গুলো শর্ত ছিল ব্রহ্মা দেবের দেয়া বরদানে।আপাতদৃষ্টিতে তাকে মারা প্রায় অসম্ভব। সেটা আমাদের দৃষ্টিতে। কিন্তু শ্রীহরি তো তাকে মেরেছিলেন, তাই না?? তিনি ঘরের বাইরেও না ভিতরেও না, ঘরের চৌকাঠে বসে, আকাশেও না ভূমিতেও না, স্বয়ং তাঁর কুলে শুইয়ে, কোন অস্ত্র ও না শস্ত্র ও না তাঁর নখ দিয়ে মেরেছিলেন।। শ্রীহরি না দেব না মনুষ্য অবতার না পশু না কিন্নর বরং স্বয়ং নৃসিংহ/নরসিংহ অবতার হয়ে এসেছিলেন।
তাহলে প্রত্যেক সমস্যার সমাধান ঈশ্বরের কাছে অবশ্যই আছে। তাই আপাতদৃষ্টিতে যা আমাদের কাছে অসম্ভব প্রয়োজন বোধে তা ঈশ্বরের জন্য সম্ভব হয়ে যায়। তাহলেে একজন সনাতনী হিসেবে এই যে ঈশ্বর এমন কিছু বানাতে পারবে কিনা যেটা তিনি তুলতে পারবেন না, প্রশ্নটাই ত অবাস্তব।
©স্টিমন অনিক


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ