জন্মান্তরবাদ

 




💠 জন্মান্তরবাদ যে সত্য তার স্বপক্ষে কি যুক্তি কি তোমার?

 

উত্তরঃ যেটা চিরন্তন সত্য সেটার স্বপক্ষে আবার যুক্তি কেন লাগবে? আচ্ছা যুক্তি যখন চাচ্ছেন তখন তিনটা প্রশ্ন দিয়েই জন্মান্তরবাদের সমাধান দিচ্ছি।।

 

🔹 প্রশ্ন-১ঃ পৃথিবীতে মানুষ তার ফল ভোগ করে কি শুধু কর্মের ভিত্তিতে নাকি ভাগ্যও আছে?

 

🔹 প্রশ্ন-২ঃ সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিও দুঃখ (নরক) ভোগ করে কেন পৃথিবীতে? একটা নিষ্পাপ শিশু জন্ম থেকেই কোন পাপের ফলে অন্ধ হয়?

 

🔹 প্রশ্ন-৩ঃ গাছপালা জীবজন্তুরও জীবন আছে, তাহলে তাদের কর্মফলের হিসেব কিভাবে হয়?

 

🔶উত্তরঃ আমি তিনটি প্রশ্নের উত্তরই "জন্মান্তরবাদ" দিয়ে ব্যাখ্যা করব৷ বেদ শ্রীমদভগবদগীতায় স্পষ্ট বলা হয়েছে জন্মান্তরবাদ কর্মফল নিয়ে

 

কর্মফল হচ্ছে কর্মের অধীন, কর্ম তার কর্তার অধীন কর্তা হচ্ছে আমি আপনিসহ সকল জীবজন্তু, পশুপাখি, গাছপালা

 

শ্রীমদভগবদগীতার /১৩ তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন পরমেশ্বর হচ্ছেন অকর্তা এবং অব্যয় তাই কর্মফলে ঈশ্বরের কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছা নেই তিনি কেবলই ফলদাত

 

মানুষ যা কিছু ভোগ করে তা অবশ্যই তার নিজের কর্মফল তাহলে এখানে ভাগ্য কিভাবে আসে?

আমরা বিশ্বাস করি ভাগ্য ঈশ্বরের হাতে কিন্তু ঈশ্বর ভাগ্য লিখেন না, ঈশ্বর কেবল আমাদের কর্মের হিসেব লিখেন এবং কর্মের ভিত্তিতে ফল দান করেন আমরা যেটাকে ভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য বলে মানি সেটা আসলে ইহজীবন কিংবা পূর্বজন্মের কর্মফল কারন পরমেশ্বর কখনোই পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারেন না এবং তিনি সর্বদাই ন্যায়বিচারক তাই যে ব্যক্তি আজ কোটি টাকার মালিক কিংবা যে একদম চরম দরিদ্র এখানে প্রত্যেকের স্ব স্ব কর্মফল দায়ী

এখানে ভাগ্য নিয়ে এলেই বলতে হবে ঈশ্বর ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাগ্য লিখেছেন যেটা পক্ষপাতদুষ্ট হবে কিন্তু প্রকৃত অর্থে সবই আপনার আমার কর্মফল কারন কর্তা আমি কিংবা আপনি, ঈশ্বর নয়

 

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একই কথা বলতে হয় শিশু যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে শতভাগ নিষ্পাপ থাকে তাহলে কোন শিশু জন্ম নিয়েই এই অপরূপ পৃথিবী দর্শন করে আবার কোন শিশু জন্মই হয় দৃষ্টিহীন হয়ে।।

তাহলে ঈশ্বর এই বিভেদ কেন করলেন?

একই যুক্তি এখানেও কারন ঈশ্বর কর্তা নন তিনি কেবল ফলদাতা প্রত্যেকের পূর্ব জন্ম অতীত হয়েছে তাই এই জনমে সে কি অবস্থায় জন্ম নিবে, গরীব পিতামাতা নাকি ধনী পিতামাতার ঘরে জন্ম নিবে সবই তার পূর্ব জন্মের কর্মফল মহাভারতের গান্ধারী পূর্ব জন্মের কর্মফল হেতু ১০০ পুত্রের জননী হয়েও সকলকে হারিয়েছিলেন।।

 

🔸 এই বিষয়ে একটা বেদমন্ত্র আছে,

"কদাচন স্তরীরসি নেন্দ্র সশ্চসি দাশুষে

উপোপেন্নু মঘবন্ ভূয় ইন্নু তে দানং দেবস্য পৃচ্যতে।।"

- সামবেদ (৩০০)

ভাবার্থঃ হে ঈশ্বর! প্রাণী সমূহকে কর্মের ফল প্রদানকারী তুমি কারও কর্মকে না তো নিষ্ফল করো, আর না কোনো নিপরাধকে দণ্ড দাও কিন্তু এই জন্ম এবং পুনর্জন্মে সকল প্রাণীবর্গ তোমার ব্যবস্থা দ্বারা কর্মানুসারে ফল ভোগ করে।।

 

🔸 এই প্রক্রিয়াকে সনাতন ধর্মগ্রন্থে "জন্মান্তরবাদ" বলা হয়েছে কারন শ্রীমদভগবদগীতায় স্পষ্ট বলা হয়েছে,

 

"অবিনাশি তু তদ্বিদ্ধি যেন সর্বমিদং ততম্৷

বিনাশমব্যয়স্যাস্য কশ্চিত্কর্তুমর্হতি৷৷"

- শ্রীমদভগবদগীতা (/১৭)

অর্থ: সমস্ত শরীরে পরিব্যাপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা, যেনে রেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়

এই জীবাত্মার বিনাশ নেই, জীবাত্মা কেবল শরীর পরিবর্তন করে এবং পুনঃ পুনঃ জন্ম হয়ে জীবের কর্মফল ভোগ করে।।

 

তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে কি বলবেন? সৃষ্টির অন্য জীব মানুষের মধ্যে তাহলে ঈশ্বর বিভেদ করল কেন? আমরা পেলাম মনুষ্য জীবন আর ওরা পেল তুচ্ছ পশু-পাখির জীবন!

 

পরমেশ্বর কারও সাথেই বৈষম্য করেন নি একটা বেদমন্ত্র দিয়ে স্পষ্ট করি

 

"ওম্ সূর্য্য চক্ষুর্গচ্ছতু বাতমাত্মা দ্যাং গচ্ছ পৃথিবীং ধর্মণা।। অপো বা গচ্ছ যদি তত্র তে হিতমোষধীষু প্রতিতিষ্ঠা শরীরৈঃ।। "

- ঋগ্বেদ (১০/১৬/)

অনুবাদঃ হে মৃতজীব, তোমার চক্ষু সূর্যে প্রাণ বায়ুতে মিলিত হউক তোমার আত্মা ধর্মকর্মানুসারে আকাশ, পৃথীবি, সলিল অতবা বনপ্সতিতে নিবাসকারী প্রাণিগনের মধ্যে যে যোনীর যোগ্য, তাহা প্রাপ্ত হউক

অর্থাৎ সকল জীব তাদের স্ব স্ব কর্ম অনুযায়ীই যোনী প্রাপ্ত হন

 

[ তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে মনুষ্য যোনী কেন উত্তম?

উত্তরঃ একমাত্র মানুষেরই আছে প্রতিক্রিয়াশীল পঞ্চন্দ্রীয়

 

/ চক্ষু= সত্যকে দর্শন করে

/ কর্ণ = সত্যকে শ্রবণ করে

/ নাসিকা= সত্যকে গ্রহণ করে

/ জিহ্বা = সত্যকে প্রকাশ করে

/ ত্বক = সত্যকে অনুভব করে

 

এই পঞ্চন্দ্রীয়ে যদি সত্য অনুপস্থিত থাকে তবে সে কোনভাবেই মানুষ নয় তাই মনুষ্য দেহ মাত্রই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব নয়

 

মানুষের আরেকটা ইন্দ্রিয় আছে সেটা হলো কমন সেন্স তথা "বিবেক"

অন্যদিকে পশুন তিনটি গুণ যথা আহার, নিদ্রা মৈথুন]

 

🔳 তাহলে এভাবে জন্ম-মৃত্যুর চক্র কি চলমান?

 

🔸 নাহ, বেদ শ্রীমদভগবদগীতায় এর থেকে মুক্তির পথও আছে

"যে মে মতমিদং নিত্যমনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ৷

শ্রদ্ধাবন্তোনসূয়ন্তো মুচ্যন্তে তেহপি কর্মভিঃ৷৷"

- শ্রীমদভগবদগীতা (/৩১)

অর্থ: আমার নির্দেশ অনুসারে শ্রদ্ধাবান হয়ে যিনি তার কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান করেন, তিনি কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন

 

কর্মই ধর্ম, কর্ম করে যাও ফলদাতা স্বয়ং ঈশ্বর তাই সঠিক ফল অবশ্যই পাবে।। ভাগ্য (সৌভাগ্য কিংবা দূর্ভাগ্য) বলে কিছুই নেই সবই আমাদের কর্মফল, ইহাই জন্মান্তরবাদের চিরন্তন সত্য

 

🔻🔺 গাছেরও জীবন আছে এবং জন্মান্তরবাদের সত্যতা এখন বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে নিচে কিছু রেফারেন্স দেওয়া হলো

 

🔗 https://youtu.be/94VadpMYQgE?t=5

🔗https://www.youtube.com/watch?v=tUpmuqmeETk

🔗https://www.youtube.com/watch?v=9w2MCpzE8u0

🔗https://www.express.co.uk/news/science/716499/reincarnation-REAL-proof-life-after-death

🔗https://www.youtube.com/watch?v=wL3Jvc-3UXs

©স্টিমন অনিক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ